somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘গরু বিষয়ে আমি পুরাই গরু’- সৈয়দ রাকিব

২৫ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহা মুসিবতে পড়েছি। মাঝরাতে এক বন্ধু ফোন করে বলে দোস্ত তোর তো আগামী কয়েকদিন অফিস নেই তাই না? আমি বলি, হ্যাঁ। কিন্তু তুই কেমনে জানলি? সে বলল, আরে আমি তোর ছোট বেলার বন্ধু না, তোর খবরাখবর আমি রাখি। মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম। ব্যস্ততার কারণে দেখা কম হলেও আমরা আসলে পাশেই আছি। আশা করছিলাম, একটু পরই বলবে তাইলে চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু না, সে আমাকে তার গরু কেনার জন্য হাটে যাওয়ার বুকিং দিয়ে দিল। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এই বলে সতর্ক করে দিল যে, তাকে দেয়া সময় আমি কোনোভাবেই অন্য কাউকে দিতে পারব না এবং এই সিডিউল আমি যদি ফাঁসাই তাহলে আমার নাকি নিউজ হ্যাজ! (খবর আছে)। হুমকিতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চোখ থেকে ঘুম ছুটে গেল, যখন দেখি সেই বন্ধু ফেসবুকে আমারে ট্যাগ মেরে স্ট্যাটাস দিয়ে দিল যে, আমি তার সঙ্গে গরু কিনতে যাচ্ছি! অনলাইনে থাকা অন্যরাও লাইক মারা শুরু করল। এই ফোন রাখতে না রাখতেই আরেকজন এ্যাই জাফরি কইল তুই নাকি তার সঙ্গে গরু কিনতে যাইতেছস? তাইলে আমার সঙ্গে গরু আনতে যাবি কিন্তু। আমি ঢোক গিললাম। তুই ঢোক গিলতেছস ক্যান? দেখ, কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করবি না তুই কিন্তু আমার বাচ্চা কালের ফ্রেন্ড! অথচ আমার সঙ্গে এই বন্ধুর পরিচয় ভার্সিটিতে উঠে! আসলে ভার্সিটিতে তো বাচ্চারাই পড়ে, তাই না! আমার লম্বা ছুটি শুরু হয়েছে। গরুর লেজের মতোই লম্বা। একটানা ১৫ দিন। বছরে একবার পাওয়া যায়। তাই আমার চেয়ে সুখী আমার ছোটভাই আর বন্ধু-বান্ধব। কারণ আর কিছুই না! গরুর হাটে যাওয়ার জন্য একজন পার্মানেন্ট লোক পাওয়া গেছে। এতদিন অফিসের উছিলায় নিজের গরু কেনার ভারটাও ছোটভাইয়ের ওপর চাপানো যেত। এখন তো তাও বলা যাবে না। বলে রাখা ভালো, ঢাকায় ঈদ করে এলাকায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব বার জন, সেমি ঘনিষ্ঠ আরও জনাদশেক আর বন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলিয়ে তা পঞ্চাশে জনে গিয়ে দাঁড়াবে... সেদিন সন্ধ্যার আড্ডায় তো আমি পুরাই আঁতকে উঠলাম। কারণ আমি আমার প্রায় সব বন্ধুর গরু-ছাগল কেনার লিস্টে অই অবলা জীবের পাশাপাশি আমার নাম কমন দেখতে পেলাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমার আর আগামী কয়েকদিন বাসায় ফেরা হবে না। একেকজন একেক সময় গরু-ছাগল কিনতে যাবে, একেক হাটে! তাদের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য আমাকে হাটেই বসে থাকতে হবে, মাঝে মাঝে নিজেকে হাট থেকে হাটে স্থানান্তর করতে হবে... এখন উপায় কি? আমি যে ভালো গরু কিনতে পারি না, তা ওইসব গরুকে বোঝাতে পারলাম না। গত বছর হাটে গিয়ে বিরাট ধরা খেয়েছিলাম। সেটাও বললাম। কিন্তু তারা এটাকে কোনো গুরুত্বই দিল না। প্রমাণস্বরূপ গত বছরের গরুর ছবিটাও দেখালাম। তাদের এক কথা, আমাকে যেতেই হবে। আগে যদি জানতাম, ঈদের আগে এভাবে ছুটি নিতাম না। শেষ পর্যন্ত আমার সাধের ছুটি কিনা গরুর হাটে...
কিছু একটা তো করতেই হবে। গেলাম একজনের সঙ্গে হাটে, উদ্দেশ্য গরু কেনা... আমার উদ্দেশ্য ভিন্ন। গরুর যখন দামাদামি শুরু হয়, তখন আমি উদাস হয়ে অন্য গরুর মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি, কোনো কথা বলি না। বন্ধু আমার উপর বিরক্ত হয়, কি রে তুই তো কোনো কথাই বলিস না, তোকে কি এমনেই আনসি নাকি? পরের গরুর কাছে গিয়ে আকাশ-পাতাল দাম বলে ফেলি। এবারও বন্ধু আমার উপর বিরক্ত। তুই এগুলা কি দাম বলতেছস? আমি উদাস হয়ে বলি। আগেই তো বলছিলাম ‘আমি গরু বিষয়ে পুরাই গরু’। সারাদিন আমাদের কেটে যায়, গরু কেনা আর হয় না, হবে কেমনে? আমি কি আর গরু কেনার চেষ্টা করছি নাকি!! সবাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। গরু ছাড়াই আমরা ফিরে আসি। এলাকায় কথা ছড়াতে বেশি সময় লাগে না যে আমরা গরু আনতে ব্যর্থ। আর আমি যে একেবারেই গরু চিনি না, সেটা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। আমি তো এটাই চাইছিলাম। এরপর এর ঘটনা আরও মজার। যারা যারা আমাকে তাদের লিস্টে ধরেছিল তাদের সঙ্গে গরুর হাটে নিয়ে যাবে, তারা নিজে থেকেই আমাকে বলতে লাগল ‘থাক তুই অনেকদিন পর লম্বা ছুটি পেয়েছিস রেস্ট নে... হাটে যেতে হবে না। আমি দুঃখভারাক্রান্ত মনে বলি, সেকি— তোরা পারবি তো?
তারা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, পারব! খুব পারব।
[email protected]


দৈনিক আমার দেশ এর রম্য সাময়িকী "ভিমরুল-৩৪৫" এ প্রকাশিত
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×