somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অন্তরালে....

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্তরালে....
শারমিন আক্‌তার

-ঐ সারাদিন কোনটে আছলু রে ?
- গরু চরাছো ।
- মিছা কতা । গরু চরাছিস নয় ? তাহলে গরু গেল কোটে ?
আলিম মিয়া কথা কয়টা শেষ করা মাত্রই ছেলে ¯^পনের গালে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো ।
- ওহ !
জড়সড় হয়ে গেল স্বপন । ভয়ে এক ফোঁটা কঁদলোও না সে। ঠাঁয় দাড়িয়ে রইলো । সেখান থেকে এক পা নড়ার সাহসও হলনা তার ।
স্বপনের মা তার কাছে এসে কিছুটা নরম গলায় বলল
-স্বপন গরু কোটে থুয়ে আছিস বা ? সারাদিন গেল গরুটা একবারও বাড়িত আসে নাই । আর তুই কোটে আছলু সারাদিন ?
মায়ের কন্ঠে কিছুটা নম্রতার আভাস পেয়ে স্বপন এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলো
- মা মজনুর খড়ত আছে গরুটা । গরু চরাতে চরাতে মুই সাকিলের সাথে বাটুল দিয়ে পাখি মারবা গেছনু । আর এই পাকে শয়তান মজনু শালা গরুটা ধরে নিয়ে গেছে । কারও খ্যাত খাই নাই মা । এমনি এমনি ধরে নিয়ে গেছে ব্যাটা। আর খড়ৎতে গরু নিয়ে আসপা গেছনু সাকিলের তে দশ ট্যাকা নিয়ে । দেই নাই গরুটা । চল্লিশ ট্যাকা চাছে । এই তনে তো গরুটা আর নিয়ে আসপা পার নাই ।
ছেলের কথাগুলো এতক্ষণ বেশ ধৈযের সাথে শুনলো আলিম মিয়া । এবার সে বেশ রেগে গেল । পাগলা কুত্তার মত তেড়ে গিয়ে স্বপনের গলা এক হাতে চেপে ধরে পিছনের দিকে ঠেলতে ঠেলতে বলল
-চল্লিশ ট্যাকা নাগবি নয় । চল্লিশ ট্যাকা । ট্যাকা কি গাছত ধরে ? নাকি তোর নাঙে দিয়ে যায় ? সারাদিন টৈ টৈ করে ঘুরে বেড়াবু । আর খড়ত তে গরু আনবা নাগবি নয় ? কুত্তার বাচ্চা......?
-আ.....ব্বা ! আ...ব্বা ! খু...উ..ব না..গছে ।
খুব চাপা স্বরে অনেক কষ্টে কথাগুলো বলল স্বপন ।
-নাগছে নয় ? একন নাগছে ?
দেয়ালের সাথে আরও জোরে স্বপনকে চেপে ধরলো আলিম মিয়া । আলিম মিয়ার স্ত্রী দ্রুত স্বামী ও সন্তানের কাছে এগিয়ে গিয়ে সবামীর হাত থেকে ছেলেকে ছাড়ানোর চেষ্ট করতে করতে বলল
-কি করোছেন ? ছলের গলাততে হাত ছাড় । ওর দম বন্ধ হয়া যাবি তো । ছাড়তো....
স্বামীর হাত থেকে ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টাই চালালো সে । আলিমের শক্ত হাত থেকে ছেলেকে ছাড়াতে পারলো না কোন ভাবেই । বরং শক্ত হাতের ঝঁটকায় পড়ে গেল মাটিতে । এদিকে মাটির দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা ছেলের বুক ও পেটের উপর এলো পাথাড়ি লাথি মারতে লাগলো আলিম মিয়া ।
হঠাৎ সে খেয়াল করলো দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরা ছেলের শরীরটাকে আর সহজে ধরে রাখতে পারছে না সে । একবার “ মা’’ বলেই মাটিতে পড়ে গেল নিস্তেজ শরীরটা ।
স্বপনের অসাড় শরীর পড়ে আছে দেয়াল ঘেসে । আলিমের এবার হুস ফিরলো । সে চমকে উঠে বলল
-অ্যা !স্বপন কি হছে বা ? কি হছে তোর ?
স্বপনের শরীরটাকে এবার সত্যিকারের স্নেহময় বাবার মত জাঁপটে ধরে বেশ মমতা মাখা কন্ঠে নরম সূরে আলিম মিয়া বলল
- বাজান স্বপন ! কতা ক বা । কতা ক । কি হছে তোর ?
স্বপনের মুখে স্নেহের পরশ মাখাচ্ছে আলিম মিয়া । কিন্তু তার আদর ও ভালবাসায় এতটুকু সাড়া নেই স্বপনের ।অসাড় শরীর অসাড়ই পড়ে রইলো । আলিম মিয়া এবার খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো ।স্বপনের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-এক গেলাস পানি নিয়ে আয় তো।
স্বপনের মা দৌড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো । স্বপনের বাবার হাতে পানির গ্লাস দিতে দিতে বলল -
-কি হছে ? মোর স্বপন কতা কছে না ক্যা ? কি হছে ?
আলিম মিয়া বউয়ের কথায় কর্ণপাত না করে দ্রুত ছেলের মুখে পানি ছিটাতে লাগল । না এবারও কোন সাড়া নেই । আলিম মিয়া এবার পাজা কোলা করে ছেলের শরীরটার অর্ধেকটা নিজের কোলে উঠালো । স্বপনের মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে কিছুটা ফাঁক করে নিজের মুখ দিয়ে বাতাস দিল বেশ কয়েক বার । না এতেও কোন সাড়া নেই। তবে কি..... ?
আলিম মিয়া ছেলের জ্ঞান ফেরানোর জন্য আর কোন পদক্ষেপ নিতে পারলো না । ছেলের পাশেই দু হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে ধপাস করে বসে পড়লো । আলিম মিয়ার স্ত্রী আর কোন প্রশ্ন করলো না আলিমকে । এবার সে স্বপনের নিস্তেজ শরীরটাকে আঁকড়ে ধরে গলা ফাঁটানো স্বরে বলতে লাগলো
-স্বপন !স্বপনরে ......কি হল বা...?
আলিম মিয়ার মা এ সময় কথা ছুটে আসল । দ্রুত ছেলের বউয়ের মুখ চেপে ধরে বলল
-চুপ কর বউ। চুপ কর ।
তারপর আস্তে আস্তে মৃদু স্বরে স্বপনের মাকে বলল
-ব্যাটার সাথে সাথে কি স্বামীকোও হারাবা চাস ? চুপ কর । চুপ কর । তাহলে সংসার চালাবি কে ? মানুষ জানাজানি হলে তোরিই ক্ষতি ।
আলিম মিয়া লোকটা খুব একটা খারাপ লোক নয় । গ্রামের সবাই তাকে ভাল লোক বলেই জানে । কিন্তু রাগ উঠলে বেচারা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । কি করে না করে সে ব্যাপারে কোন হুস থাকে না ।

পরদিন সকাল বেলা আলিমের বাসায় অনেক লোকের সমাগম ঘটলো । আলিমের স্ত্রীকে ঘিরে মহিলা ও বাচ্চারা দড়িয়ে আছে । অলিমের স্ত্রী কাঁদছে আর নাঁকি সূরে বলছে
-ও মোর স্বপন ! বা....জান তুই ক্যান গ...লাত দড়ি দিলু বা ? ও বাজান । ক্যা...ন গ..লাত দ..ড়ি দিলু ?
কিছুক্ষণ দম নিল । যেন অনেক ক্ষণ কান্না কাঁটি করে বেচারা বেশ হাঁপিয়ে উঠেছে । আবার বলতে লাগলো সূরে সূরে
-বা...পে না হয় এ্যানা চ..ড় মারি...ছে । তাই ব...লে গ..লাত দড়ি দিবা নাগবি বা ? ও বাপ রে .....
ও দিকে অলিম মিয়া গ্রামের কয়েক জন গন্য মান্য লোক নিয়ে থানায় গেছে । ছেলের গলায় দড়ি দেয়ার বিষয়টা নিয়ে থানায় অগে থেকে বলে রাখতে । যাতে পরে কোন ঝাঁমেলা না হয় ।
অলিমের বাড়ির গোয়াল ঘরের ছাদের সঙ্গে টাংঙানো দড়িতে ঝুলছে স্বপনের অসহায় নিস্পাপ শরীরটা । যা অনেক দিন এই পৃথিবীর আলো বাতাসে বেড়ে উঠে হয়তো শত বছর বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল । খেলা ছলে বন্ধুদের সাথে যেভাবে বট গাছের লতায় দোল খেত স্বপন; এখনও যেন সে ভাবেই বাতাসে দোল খাচ্ছে তার নিস্তেজ প্রাণহীন দেহটা ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×