আসসালামু আলাইকুম।
দুনিয়ায় আজ ঈমানদার লোকের খুব অভাব। মসজিদ ভর্তি মুসল্লী অথচ তার মাঝে খাঁটি ঈমানদার ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। মুখে লম্বা দাড়ি-পরনে ধবধবা পাজমা-পঞ্জাবী মাথায় পাগড়ী আর নুরানী চেহারা নিয়েও আল্লাহর কুফরীতে লিপ্ত। দিন রাত ওয়াজ নসিহাত করে মানুষকে উপদেশ দিলেও মানার ব্যাপারে অনীহা। আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক কোরআন মুখস্ত করে যেন মানুষের বাড়িতে গিয়ে সখিনা খতম দিয়ে পয়সা কামাতে পারে; কোরআন যেমন দ্রুততার সহিত পড়ে ঠিক তেনি নামাজও। আল্লাহর নবী যেখানে তিনদিনের কম কোরআন খতম দিতে নিষধ করেছেন কারন তার কম সময়ে খতম দিলে কোআনের কিছুই বুঝা যাবে না। আমরা বাঙ্গালীরা আরবী ভাষায় কেউ কিছু পড়ছে বা বলছে শুনলেই সন্তুষ্ট হই , আমাদের অর্থ বোঝার দরকার হয় না। আল্লাহ পাক আল কোরআনের মধ্যে আমাদের কি আদেশ-নিষধ বা উপদেশ দিয়েছেন তা না জেনে না বুঝে হাজার বার কোরআন খতম দেই। এজন্যই আমাদের অন্তর থেকে আল্লাহ ভীতি দিন দিন উঠে যাচ্ছে।
একটা গল্প মনে পড়ল, একদা এক হুজুর ওয়াজ করছেন; হে মুমিন মুসলমান তোমরা যিনার নিকট বর্তী হয়ো না, কাল ক্বেয়ামতের মাঠে আল্লাহ পাক যিনা কারীকে বিশাল আকৃতির তুলা মান্দার গাছের সাদৃশ্য কাটাযুক্ত গাছ বেয়ে উলঙ্গ অবস্থায় উঠাবেন আর নামাবেন......ইত্যাদি ইত্যাদি। মাহফিলে অনেক পুরুষ-মহিলা উপস্থিত ছিল। একদিন ওয়াজকারী রাতের আধারে আমেনার ঘরে এলেন এবং তাকে কু-প্রস্তাব করলেন, আমেনা তাকে বললঃ হুজুর আপনিতো বলেছিলেন যিনা-ব্যভিচারীদের আল্লাহ শিমুল তুলাগাছে ল্যাংটা করে উঠাবেন আর নামাবেন, অথচ আজ আপনি আমাকে কু-প্রস্তাব দিচ্ছেন? আপনার ডর করে না? হুজুর উত্তর শুনে বললো, "ওরে আমেনা তুমি জাননা, আমার পূর্বে বহুলোক যিনা-ব্যভিচার করেছে যা হাতে গুণে শেষ করা যাবে না, আল্লাহ ওদেরকে ঐ কাটা গাছে উঠাতে উঠাতে আর নামাতে নামাতে সব কাটা ভোত হয়ে যাবে। তখন তুমি আর আমি ঐ গাছে স্যাড় স্যাড় করে উঠব আর নামব, আমাদের গায়ে কাটার খোঁচা লাগবে না" এখন আসোরে আমেনা.....আমিতো আর সইতে পারছি না।"
আল্লাহ মাফ করুন, আসলে এটা গল্প হলেও আমাদের জীবনের সাথে হুবাহু মিলে যায়। আমরা শুধু মানুষকে বিনা পয়সায় উপদেশ দান করে বেড়াই অথচ নিজে মানি না। যারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে বা প্রশংসা শুনার জন্য ভাল কাজ করে তাদের ব্যপারে আল্লাহ পাকের রয়েছে কঠোর সতর্কবাণীঃ
মহান আল্লাহর বানীঃ "তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর জন্য 'ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাঁর জন্য দ্বীনকে খালিস করতে, একনিষ্ঠ ও একমুখী করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।" (সূরা আল বাইয়িনাহঃ৫)
মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ "হে ঈমানদার গণ! নিজেদের দান-খয়রাতকে তোমরা অনুগ্রহের কথা বলে এবং কষ্ট দিয়ে সেই লোকদের মতো নষ্ট করে দিও না, যে নিজের ধন-সম্পদ শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য খরচ করে।" (সূরা আল বাক্বারাহঃ২৬৪)
মহান আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ "শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য এরা ঠোঁট নাড়ে, আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।" (সূরা আন-নিসাঃ১৪২)
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হয়ে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে আমি বলতে শুনেছিঃ ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে লোকের বিচার করা হবে সে একজন শহীদ। তাকে উপস্থিত করা হবে। দুনিয়ায় যেসব নিয়া'মত তাকে দেয়া হয়েছিল সেগুলো তাকে দেখানো হবে এবং তা সে চিনতে পারবে। তাকে বলা হবে, এসব নিয়া'মাতকে তুমি কিভাবে কাজে লাগিয়েছো? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বললে, বরং তুমি এ কারণে জিহাদ করেছো যে, তোমাকে লোকেরা বীর উপাধি দিবে। অবশ্য তা বলাও হয়েছে। অতঃপর আদেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। অন্যলোক জ্ঞান লাভ করেছিল। তাকে উপস্থিত করা হবে, অতঃপর যেসব নিয়া'মাত তাকে দেয়া হয়েছিল তা দেখানো হবে। সে তা সনাক্ত করবে। আল্লাহ পাক বলবেনঃ তুমি এসব নিয়া'মাত কিভাবে কাজে লাগিয়েছো? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞানার্জন করেছি, তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বললে, বরং এ কারণেই তুমি জ্ঞানার্জন করেছ যে, লোকেরা জ্ঞানী বলবে। আর এজন্যই কুরআন তিলাওয়াত করেছ যে, তোমাকে ক্বারী বলা হবে এবং তা বলাও হয়েছে। এরপর এ লোকেদের ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে হেঁচড়ে টেনে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। অন্য এক লোককে আল্লাহ ধন-সম্পদের যথেষ্ট প্রাচুর্য দান করেছিলেন। তাকে দেয়া নিয়া'মাতসমূহ তার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে এবং সে তা চিনতে পারবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, এ ধন-সম্পদ তুমি কিভাবে ব্যবহার করেছো? সে বলবে, হে আল্লাহ! যেসব পথে ব্যয় করাকে তুমি পছন্দ কর, তার প্রতিটি পথেই আমি অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বললে, বরং এজন্যই তুমি অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছো যে, তোমাকে দানশীল বলা হবে। আর তা বলাও হয়েছে। তার সম্পর্কে আদেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। (মুসলিম হাঃ ১৯০৫)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে লোক এমন জ্ঞান লাভ করলো, যার দ্বারা মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জ করা যায়, কিন্তু সে তা শুধুমাত্র দুনিয়াবী সুখ-শান্তি ও সুযোগ-সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করলো, ক্বিয়ামাতের দিন সে জান্নতের সুবাসও পাবে না। (আবূ দাঊদ, হাঃ ৩৬৬৪)
আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন