পীরভক্তরা কোন কোন পীরকে 'গওস' নামে অভিহিত করে থাকে। কেবল তাই নয়, শয়খুল-মাশায়েখ আব্দুল কাদের জিলানীকে অনেকে গওসুস্-সাকালায়িন বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
'গওস' শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'আকুল ফয়িাদ শ্রবণকারী, বিপদআপদ থেকে মুক্তকারী ও উদ্ধারকারী। সাকালায়িন মানে জিন ও ইনসান। গওসুস্-সাকালায়িন মানে মানব ও দানবের আকুল ফরিয়াদ শ্রবণকারী, মানব ও দানবের বিদহন্তা ও উদ্ধারকারী।
যেখানে তাওহীদের মূল শিক্ষাই হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া পতিত পাবন, উদ্ধারকর্তা, বিপদহন্তা ও আকুল ফরিয়দ শ্রবণকারী কেউ নেই, সেখানে পাঠক একবার চিন্তা করুন, মানুষ কেমন করে এসব গুণের অধিকারী হতে পারে। কিন্তু পীর ভক্তরা আল্লাহর এসব গুণে মানুষের অধিকারী সাব্যস্ত করে ছেড়েছে।
পীরদের কিতাবে লেখা আছে, সমস্ত জীবজন্তু যাঁর মাধ্যমে সাহায্য ও আহার পায়, এমনকি ফেরেশতাগণও যাঁর মাধ্যমে সাহায্য পায়, তাঁকেই বলা হয় 'গওস'। পীরদের কিতাবে আরও লেখা আছে, পৃথিবীতে তিনশ উনিশজন নজির আছেন, তন্মধ্যে সত্তরজন নকিব আছেন, চল্লিশজন আব্দাল আছেন, সাতজন কুতুব, চারজন আওতাদ এবং একজন 'গওস' আছেন।
দুনিয়াতে যুদ্ধবিগ্রহ, খাদ্য সংকট, অশান্তি ও মহামারী দেখা দিলে তামাম জীবজন্তুর প্রতিনিধি তিনশ উনিশজন নজিবের কাছে ছুটে যান, নজিবরা তখন সত্তরজন নকিবের কাছে ফরিয়াদ জানান, সত্তরজন নকিব তখন চল্লিশজন আব্দালের কাছে আবেদন পেশ করেন, চল্লিশজন আব্দাল তখন সাতজন কুতুবের দ্বারস্থ হন, সাতজন কুতুব তখন চারজন আওতাদের কাছে দৌড়ে যান, চারজন আতাদ কখন 'গওস'- এর কাছে সাহায্যের জন্য আকুল ফরিয়াদ পেশ করেন। 'গওস' তখন সব সমস্যার সমাধান করে দেন।
'গওস' সম্পর্কে এই যে ধারণা, খৃষ্টানরা ঠিক ঈসা (আঃ) সম্পর্কে এই ধারণাই পোষণ করে থাকে, আর সীমালঙ্ঘনকারী রাফেযীরা আলী সম্পর্কেও অনুরূপ ধারণা পোষণ করে থাকে।
কোন কোন মানুষ সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ করা যে, কুরআন ও হাদীসের মতে শির্ক- এতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ আল্লাহই হচ্ছেন অন্নদাতা, আল্লাহই হচ্ছেন বিপদমুক্তকারী, আকুল ফরিয়াদ শ্রবনকারী, সরাসরি সাহায্যকারী, এক কথায় আল্লাহই হচ্ছেন 'গওস'।
নজিব, নকিব, আব্দুল, কুতুব, আওতাদ ও গওস প্রভৃতি কথা কুরআন ও হাদিসের কোন জায়গায় উল্লেখ নেই। পীর ও পীর ভক্তদের এই প্রমাণহীন ধারণা ও উক্তি সম্পর্কে ইমাম ইবনু তায়িমিয়া বলেছেন- "গওস, কুতুব সম্পর্ক সবই বাতিল'। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতে এ সবের কোনই প্রমাণ নেই। পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে সাহাবা ও তাবেয়ীগণ এমন কথা বলেননি। মহামতি ইমামগণ যেমন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম সওরী, ইমাম আওযায়ী, ইমাম জহরী, ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম নাসায়ী ও ইমাম তিরমিযী (রহঃ) প্রভৃতি কেউ একথা মুখে উচ্চারণ করেননি। বড় বড় শাইখগণ, যেমন জুনায়েদ বাগদাদী, হাসান বসরী, ইবরাহীম বিন আদহাম, মারুফ কর্খী ও আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ইনারাও কেউ এসব কথা বলেননি। হাদীস শাস্ত্র-বিশারদগণের কেউই এ মর্মের কোন হাদীস রিওয়ায়াত করেননি। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে হাদীস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে, একথা আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেননি, তাহলে সে হবে মিথ্যাবাদীদের অন্যতম। এই জন্র বলা হয় তিনটি জিনিষ মিথ্যা- ১) নাছিরীদের তোরণ, ২) রাফেজীদের প্রতীক্ষ্যমান, ৩) মুর্খদের 'গওস'। একদাল পীর এরূপ ধারণা পোষণ করে থাকেন যে, গওস ও কুতুব যিনি- তিনি আল্লাহর ওলীদের সাহায্য করেন আর তাদেরকে তিনি ভালভাবে চিনেন। বলা বাহুল্য- এ ধারনাও বাতিল। কোন মানুষকে 'গওস' কুতুব বলা বিদ'আত- আল্লাহর আদেশের খিলাপ। এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবেয়ী ও ইমামগণ কেন কথাই বলেননি। (ফতোয়া ইবনু তাইমিয়াহ)
মোটকথা পীরতন্ত্র এমন এক আজব চিজ যা মানুষকে 'গওস' বানিয়ে একেবারে আল্লাহর আসনে বসিয়ে ছেড়েছে। নাউযুবিল্লাহ !!
তাই মুসলমান ভাইয়দের কাছে অনুরোধ; আপনারা বেশী বেশী করে আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (সাঃ) সহীহ হাদীস পড়ুন। অহেতুক পীর দের মুরিদ হবার জন্য এদিক সেদিক ছোটাছুটি করবেন না। আপনার সমস্যার সমাধান একমাত্র আল্লাহ পাকই করতে পারেন, অন্য কেউ না। বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সরাসরি, এখানে কোন মাধ্যম প্রয়োজন নাই। আল কোরআনে অসংখ্য বার একথা বলা হয়েছে।
সূরা ইউনুসের ১৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, "তারা আল্লাহ ব্যতিত যাদের পুজায় লিপ্ত রয়েছে, তারা তাদের লাভ ও ক্ষতি কিছুই করতে পারে না, আর এই অপকর্মের কৈফিয়ত স্বরূপ তারা বলে থাকে, ওরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশকারী মাত্র।"
সূরা আয-যুমারের তৃতীয় আয়াতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক বলেন, "উপসনাকে শুধু আল্লাহর জন্য নির্ধারিত কর। যারা আল্লাহকে ছেড়ে আরও পৃষ্ঠপোষকের দল গ্রহণ করেছে, তারা বলে থাকে আমরা ওদের পূজা অর্চনা এই আশাতে করি যে, তারা 'ওসীলা' হযে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে পৌঁছে দিবে।"
আসুন আমরা সঠিক ইসলামকে জানি। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই দ্বীনের ১০০% গন্ডমূর্খ। যে কারনেই আমাদের ঈমান-আকীদার এই হাল। অধিকাংশ মানুষ আজ মুসলমান হওয়া সত্বেও মুশরিক।