মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে এই গ্রহের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষদের একজন। যে কোন ধরণের বিপদ কাটাতে তিনি যে কেবল দল ও আশ্রয়দাতার ব্যাকিং পান, তাই নয় - ভাগ্যও তাকে অকৃপণ ভাবে সহায়তা করে। ১৯৭৫ সালে তাঁর পরিবারের উপর যখন ভয়াবহ ম্যাসাকার হয়, তার মাত্র ১৫ দিন আগে ঢাবি'র ভিসি আব্দুল মতিন প্রায় হাতে পায়ে ধরে তাকে দেশে থেকে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু বিদেশ বিভুয়ে স্বামীর খেতে পড়তে কষ্ট হচ্ছে - এই বলে তিনি একরকম জোর করেই ইতালীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। ফলাফল, আজকে তিনি বেঁচে বর্তে বাংলাদেশের সৎ ও কর্মনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ঠিক তেমনি ২০০৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকার যখন কোনভাবেই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে না পেরে বিএনপি জামায়াত জোটকে প্রায় ক্ষমতার ধারে কাছে নিয়ে ফেলছিল, সেসময় জাতিসঙ্ঘের 'আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাংলাদেশকে ছাঁটাই করার' ভয়াবহ হুমকী পেয়ে ১/১১ এর নামে সেনা শাসকদের টেকওভার রীতিমত হারানো পুতুল তাদের হাতে জোর করে তুলে দেয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোটা আন্দোলনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। বাপের পাঠানো টাকায় থাকা খাওয়া কতগুলো নির্বোধ প্রকৃতির ছেলেপেলে কি নিয়ে আন্দোলন করবে দিশে না পেয়ে বিসিএস চাকরিতে কোটা নিয়ে একটা অসংগঠিত আন্দোলন শুরু করে দিল। তাদের দাবী ছিল একটাই - কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে। এই আন্দোলন যখন চরম পর্যায়ে চলে যায়, প্রধানমন্ত্রী তখন সরকারী সফরে দেশের বাইরে ছিলেন। ক্ষমতা টালমাটাল দেখে তিনি তরিঘড়ি দেশে চলে আসেন এবং সংসদে দাঁড়িয়ে পরম উৎসাহের সাথে ঘোষণা দিলেন, "কেউ না চাইলে কোটা থাকবেনা"
ব্যাস। গরম গরম আন্দোলনের মাথায় তিনি স্রেফ মোহিতো ঢেলে দিলেন। আন্দোলনকারীরাও বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তারা সুস্পষ্ট ঘোষণা চেয়েছিল - প্রধানমন্ত্রী তা দিয়েছেন। এরপর তো আর আন্দোলন করা চলেনা। আবার অনেকদিন ধরে রাস্তাঘাটে পুলিশের মার আর ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে ক্লান্ত আন্দোলনকারীদের একাংশ পিছুটান দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা তাদেরকে সোনালী সুযোগ এনে দিল।
কিন্তু রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ আন্দোলনকারীরা মোটেও আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাস এবং রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিকে আমলে আনেননি। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দেশের রাজনীতির গোপাল ভাঁড় হিসেবে পরিচিত। তাঁর কথাবার্তা তাৎক্ষণিক হাস্যরসের যোগান দিলেও নিকট ভবিষ্যতে তা অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায়। আওয়ামী লীগের চরিত্র সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, "আওয়ামী লীগের নেতারা কথা বললে মিথ্যা বলে, প্রতিজ্ঞা করলে তা ভঙ্গ করে, এবং জনগনের আমানতের খেয়ানত করে।"
যদিও জনগনের আমানতের খেয়ানত করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট, কিন্তু মিথ্যা বলা এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করায় আওয়ামী লীগের ধারে কাছে কেউ কোনদিন আসতে পারবেনা। এ কথা নিশ্চয়ই ভেঙে বলার বা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই। সেই আওয়ামী লীগের নেত্রী যখন অঙ্গীকার করেন, কোটা থাকবেনা, তখন তাঁর কথায় কতটুকু নির্ভর করা যায়? যখন তিনি বলেন, মেয়েরা রাস্তায় বেরিয়া আসায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি তিনি শঙ্কিত হয়ে উঠছিলেন, তা কতটুকু বিশ্বাস করা যায়, যখন দেখি ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রকাশ্য রাস্তায় ছাত্রীদের মলেস্ট করছে?
আমার তো মনে হয়, শিকড় বাকড় ছাড়া এই আন্দোলন জমানোর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে মহিমান্বিত করা। আপনাদের কি ধারণা?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


