somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা মানসিক পাগলের গল্প।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কথা:

কোন গল্পই জীবনের মত না আবার কোন জীবনই গল্পের মত না। যেটা যেরকম সেটা সেই রকমই।

আমার বাড়ী ছিল একটি রেল ষ্টেশনের কাছেই। আমি অনেক পাগল দেখেছি। কিছুদিন পর পুরোনরা কোথায় যেন হারিয়ে যেত নতুন পাগল আসত।

আমার স্কুলে যাওয়ার পথে একটি মুদিদোকান ছিল। সেখানে দোকানীর সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হত। হঠাৎ করে তার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। (সম্ভবত তার মা মারা গিয়েছি।)আমাদের বাসার পাশেই বস্তি ছিল। সেখানের ছেলে মেয়েরা বিশেষ বেলুন ফোলাত সেটা নিয়ে খেলত। আমি বাসায় বলার পর সবাই বলেছিল ওটা মুখে দিলে মুখে ঘা হবে। একদিন আমার সেই মুদি বন্ধুকে বলেছিলাম। সে আমাকে একটি বিশেষ বেলুন দিয়েছিল বিনে পয়সায়। অনেক খুশি হয়েছিলাম। ….. যাই হোক। অনেকদিন পর দেখলাম সে রাস্তায় রাস্তায় ময়লা জামা কাপর পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সারাক্ষন বির বির করে কি যেন বলছে। আমি তার সাথে কথা বলতে চাইলাম। সে আমাকে চিনল না।

এই রকম আরেকজন সুস্থ্য মানুষকে দেখলাম পাগল হয়ে যেতে। উম্মাদ না, ঠিক পথে বসে থাকত। আমি ভাবতাম কিভাবে তাদের এমন হল। শেষ ব্যক্তি তার স্বাস্থ্য প্রথম অবস্থায় খুবই ভাল ছিল। বছর তিনেকের মধ্য তাকে আমি শুকতে শুকতে কাঠ হয়ে যেতে দেখেছি। সে রাস্তায় শুয়ে থাকত। কেউ করুনা করে যদি কিছু দিত তবে তার আহার হত। ….. আমার মনে অনেক দাগ কেটেছি। শেষ যেবার দেখেছি তার দু/তিন দিন পরেই শুনেছি সে রাস্তায়ই মারা গেছে।
তাদের পাগল হয়ে যাওয়ার কারন আমি জানিনা। আমি একটা দোকানে পার্টটাইম কাজ করতাম। সে দোকানে কম্পিউটার কম্পোজ থেকে শুরু করে ভিডিও এ্যডিটিং, সার্ভিস সেইল সবই হত। সেই দোকানের পাশেই প্রায়ই বসে থাকত সিকান্দর। তার কথা কখনোই বুঝতাম না। সম্ভবত সে বার্মা থেকে এসেছে। একদিন আমি একটা মিউজিক ভিডিও দেখেছিলাম। সে দোকানে ঢুকল। আমার কে জিজ্ঞাস করল, বউ?? আমি বুঝলাম মিউজিক ভিডিওর নায়িকা আমার স্ত্রী কিনা জিজ্ঞাস করছে। আমি হাসতে হাসতে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা। পাগলে কি বল?

তো আমার কিছু ভুল বাক্য, সামন্য জীবনের অংশ এবং এই পাগলদের স্মৃতি নিয়ে লিখে ফেললাম গল্পটা।

ধন্যবাদান্তে,
মানহুস
-------------------------------------০-------------------------------------

একটা মানসিক পাগলের গল্প

ভুমিকা
একদেশে এক মানসিক পাগল ছিল। সম্ভবত এখনো আছে। তার ধারণা সে একজন “জেনেটিক মানসিক পাগল”। ব্যাখ্যাটা এমন ‘জেনেইটক’ কারন তার স্বভাব রুচি এবং চলাফেরার সাথে তার পিতার অনেক মিল ছিল। তার পিতার মতো সেও কোন কিছু গুছিয়ে রাখতে পারেনা, সে তার জীবনে মাত্র একটি কলম পুরোপুরি শেষ করতে পেরেছিল তার পিতাও কলম শেষ হওয়ার আগেই কলম হারিয়ে ফেলত।

এক
তার অনেক স্বপ্নছিল। (আপনি জানেন কি? পাগলেরও স্পপ্ন থাকে) সে প্রতি মুহুর্তে গ্রহ নক্ষত্র রাজনীতি, পরী, আকাশ, পাখি, মাছ, সমুদ্র, জংগল, কতকিছু যে সে ভাবত মাঝে মঝে কি ভাবত সেটাই ভুলে যেত। অনেক সময় মহাশূণ্যে পারি দিত। মাঝে মাঝে তার ভাবনা আটকে যেত কৃষ্ণগহবরে। সেখান থেকে তার বের হয়ে আসতে কষ্ট হত। রোমান্টিক ছবি দেখলে তার মনে হত সে যদি ওই নায়কের মত হতে পারত। আবার নায়ক মার খেলে, নায়কের বোনক তুলেনিয়ে গেলে সে আর নায়ক হতে চাইতনা। মাঝেমাঝে তার বুক ভাংগা কান্না আসত তার অনেক কষ্ট হত কেন তার জীবনে এখন পর্যন্ত কোন রোমান্স হয় নি?

প্রতারণার শিকার অনেক নারীকে সে মনে মনে তিরস্কার করেছে। কারণ প্রেমিক হিসাবে তাকে কেন বেছে নেয়নি তারা? তাদের জন্য পাগলের খুবই আফসোস হত। আংগুর ফল টক এই ধরনের কোন ব্যাপার কিনা সে জানেনা। তার একটা মন সবসময় ‘প্রেম পিরিতী’ থেকে দুরে থাকতে চাইত। সমর্থন করতে চাইত না বিয়ের আগের ভালবাসাকে। তার তো অনেক সহপাঠী ছিল অনেকেই ধোকা খেতে এবং দিতে দেখেছে এবং যারা মোটামুটি অন্তরিক ছিল তারা পরবর্তিতে হাফিয়ে উঠেছিল। এক কথায় কোন ভালবাসার সুন্দর পরিনতী সে ছি:নেমা ছাড়া বাস্তবে দেখেনি। দু-একটা পরিনতী যা দেখেছে তার থেকে মৃত্যু অনেক ভাল বলে সে মনে করে।

দুই
মানসিক পাগলের প্রতিবেশীর বাসায় ভাড়া থাকত এক মজনু। অনেকদিন থাকার পর লাইলী হিসাবে বাড়ীওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম/ভালবাসা শুরু করল। বাড়িওয়লা ছিল খুবই কিপটা। ঘটনা জানার পর বাড়িওয়ালা মজনুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল। যদিও কয়েকমাসের ভাড়া বাকীছিল। মজনু লাইলী দু'জন দু জনার জন্য পাগল হয়ে দিওয়ানা মাস্তান গান শুরু করে দিল। মোবইলের ইউস তখনো শুরু হয়নি। মজনুর কষ্টে দেখে এবং তার অনুরোধে অনেকবার পিয়নের কাজ করেছিল পাগল। পাগলের অনেক প্রচেষ্টা ও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তাদের বিয়ে হল। তারা থাকত পাগলদের বাড়ীতে। এমন কোন দিন নাই ৩/৪ বার ঝগড়া হয়না। একদিন তো লাইলি মজনু খুব মারামারি করল এবং মজনুই জিতল। লাইলীতো পরাজয় মেনেনিতে পারেনা তাই অপেক্ষায় থাকল কখন রাত হয়। লাইলি মজনুকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যখন সে ঘুমাল মজনুর পায়ের সাথে রশি বেধে সিলিং ফ্যানে বেধে ফুল স্পীডে ফ্যান চালু করে দিল। বেচার মজনু অনেক আরামে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা অনুভব করে দৌড় দিল। পুরো ঘটনা বুঝতে বুঝতে মজনু নাক ফাটিয়ে ফেলল। লাইলী অনেক মজা পেল। অনেক বোঝানোর পরেও কোন কাজ হয়নি। অবশেষে ডিভোর্স। লাইলী এখন খারাপ নেই, দুই মেয়ে নিয়ে মদন কুমারের সাথে সংসার করছে। বাপের শেষ কথা লাইলি মেনে নিয়েছিল। এরকম অনেক অনেক ঘটনা এবং পাগল যেহেতু পিয়নের ভুমিকায় অনেক কাজের অভিজ্ঞতা ছিল। (অপরেরর কোন চিঠী না পরার আইন থাকায় পাগলেরর সেটা বেশি বেশি করত) এবং বিয়ের আগে প্রেম প্রিরিতি না করার জন্য প্রভাবিত হয়। কি আর করা পাগলের মন।

তিন
ছোট কাল থেকেই পাগল বড় হয়ে কি হবে ভেবে পেতনা। তবে বড় হলেই তার বাবার মত সিগারেট খাবে এবঙ দাড়ি সেইভ করবে এই রকম উদ্দেশ্য ছিল। বিয়েতো অবশ্যই করবে সবাই করে এটাতো বালার প্রয়োজন নেই। পাগল সব কিছু হতে চাইত। সব কিছুই। অভিনেতা, রিক্সাওয়ালা, মাস্তান, নেশাখোর, ডাক্তার, কৃষক, ধার্মিক, শিক্ষক, ভিক্ষুক, সৈনিক (নৌ, বিমান, স্থল) সব কিছুই।

চার
পাগল স্বপ্ন দেখত, ভাবত তার বউকে। অপেক্ষায় থাকত কখন সেই দিন আসবে। সুন্দর না হলেও চলবে কিন্তু চেহারায় অবশ্যই মায়া থাকতে হবে। এক এক দিন বউকে এক এক নাম ধরে ডাকবে। জগৎ এর সব সুন্দর নাম গুলো তার বউ এর হবে। "বউ" শব্দটা শুনতেই পাগল কেমন যেন রোমান্চিত হত। রাতে বউকে নিয়ে হাত ধরে সে মাইলের পর মাইল হাটবে। (যদিও নিরাপত্তার কারনে বিবেচনা করা হবে, স্বপ্ন দেখতেতো আর দোষ নেই।) সকালে বউয়ের সাথে হাটতে বের হবে, প্রাত:ভ্রমন। যাতে দুই জনের শরীর এবং মন ভাল থাকে। সিনেমাতে নায়ক যেমন নায়িকাকে কোলে নিয়ে গান গায় সেও চেষ্টা করবে। আচ্ছা বউ এর ওজন যদি বেশি হয়? ত ত তবুও সে চেষ্টা করবে।

পাগল তার বউকে যথা সাধ্য সাহায্য করবে। তার মা যে ধরনের কাজ করত, সে অনেক কিছু শিখে রেখেছে তাকে সাহায্য করার জন্য। পাগল তার ছোট্ট পরিবারের সথে কাউকে রাখবেনা কারন সে দেখেছে যৌথ পরিবার হওয়ার করনে তার মা কোন দিনই শান্তিতে থাকতে পারেনি। তার মা যে কষ্ট করেছে সে তার বউকে তার থেকে অনেক দুরে রাখবে। তার বউয়ের সাথে কখনো সে চিটিং করবেনা। হুমায়ুন যেমন গুলতেকিনের সাথে করেছিল। আরেকটা সুপার ণ্যাচারেল ভাবনা পাগলকে আরো পাগল বানিয়ে ফেলে। তার একটা সন্তান হবে। যদিও তার বউ এর কষ্ট হবে তারপরেও সন্তানের মুখ দেখার পর যে আনন্দ পাবে তার কি কোন তুলনা হয়? তার সন্তনের জন্য পৃথীবির সকল সুখ সে এনে দেবে এমন চিন্তা ছিল। তার সন্তান স্ববলম্বি হওয়ার পর্যন্ত তার সাথে থকবে সে। প্রথম কান্না থেকে শুরু; প্রথম দাড়ানোর চেষ্টা; প্রথম স্কুল যাত্রা; সব কিছুই সে দু'চোখ ভরে দেখবে। সে তার সন্তানের চিন্তার জগৎ অনেক বড় করে দেবে, হাজার হাজার ফোল্ডার তৌরীকরেদেবে তার ব্রেনে। তার প্রধান শিক্ষক হবে সে নীজেই। তাকে শিখানোর জন্য সে নীজেও শিখব।

পাঁচ
কিন্তু সমস্যা একটাই সেটা অর্থ। পাগলের এখন বোঝে অর্থ ছাড়া দুনিয়া কত কঠিন। পৃথীবির সবচাইতে বড় বৃত্ত পৃথীবি এর সবচাইতে মজার এবং কমপ্লক্স বৃত্ত হচ্ছে মধ্যবৃত্ত। কিন্তু আগে এমন ছিল না যখন মানুষ টাকা ছাড়া বাঁচাতে পারত, যখন সমাজ এতটা উন্নত ছিল না।
ছোটকাল থেকেই তার খুব ইচ্ছা ছিল বি. এ. পাশ করার তার ধারণা ছিল বি. এ. পাশ করার পর মানুষ বিয়ে করে। আরো অনেক অনেক বেশি পড়ার ইচ্ছা ছিল । কারন ভাল মানুষ, ভাল স্বামী, ভাল পিতা হতে হলে শিক্ষা এবং অর্থ দুটোই প্রয়োজন।

ক্লাসে পাগল পড়া পারতনা। পরীক্ষায় পাশ করতে পাগলের অনেক সংগ্রাম করতে হত। অবশেষে, পাগল বুঝতে পারল তাকে দিয়ে পাড়াশোনা হবেনা, এটা বুঝতে তার তিনবার মেট্রিক পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। তার পিতার এবং ভাইয়ের সাথে সেও মুদি দোকানদারী শুরুকরে দিল। পাগল অবসরে ভাবত তার ভবিষ্ৎ। খুবই সাধারণ ছিল, একটা বউ .....একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে। প্রথম প্রথম দোকানে মহিলা কাষ্টমার আসলে সে খুবই নার্ভাস ফিল করত। পাগল তথ্য সংগ্রহ করতে চাইত। তবে কেউ যাতে না বোঝে সেই ভাবে। কেউ বুঝতনা কিন্তু পাগলের কাছে জমা হত তথ্য। অবিবাহিত মহিলা কাষ্টমার হলে পাগল চিন্তা করত তার সম্ভাবনার কথা। স্বপ্ন দেখত একটা ..... সুন্দর পরিবার এবং শান্তির।

ছয়
এই এলাকার সব ছোট ছোট বাচ্চারা তার কাছে আসত চকলেট/ বিস্কিটের জন্য। খুবই ভাল লাগত তার। আর এলাকার পাগল গুলো ছিল তার খুবই আপন। পাগল ছিল রাতকানা রাতে হাটার সময় কয়েকবার এলকার কুকুর গুলোকে পারিয়েছে। তাই কুকুর গুলো তাকে দেখলেই ভয়ে পালায়। কুকুরও অনেক কিছু বোঝে। হয়ত তরা বোঝে সে ইচ্ছা করে ঐ কাজ করেনি।

"বাকি চাহয়া লজ্জা দিবেন না" এই কথা লেখা থাকার পরেও কেউ বাকি চাইলে পাগল না দিয়ে থাকতে পারত না তাই সে তার বাবা ও ভাইয়ের গালাশুনত মাঝে মাঝে মারও খেত। সবজায়গায় প্রতিযোগিতা ব্যবসাতে ক্রমাগত লোকসান হতে থাকল। এটি তাদের একমাত্র রুজির পথ ছিল। হিসাবের খাতায় হিসাব থাকত কিন্তু অনেক টাকাই পাওয়া যেত না। বন্ধু বান্ধব, প্রতিবেশী, আত্মীয় সবাইকে আন্তরিক ভাবে সাহায্য করতে চাইত। নীজের ক্ষতি হলেও তাতে তার আপত্তি ছিল না। এক সময় পাগল বুঝতে পারে, মানুষ যেই ভাবে সাহায্য চায় তাকে ঠিক সেই ভাবে সবসময় সাহায্য করা উচিত নয়। পগাল অনেক কিছুই বুঝতে পারল। আবার মনযোগী হয়ে ব্যবসা শুরু করতে লাগল। ছোট হউক সে একজন ব্যবসায়ী এটা ভাবতে তার ভাল লাগত। তার ছেলেক যদি কেউ প্রশ্ন করে, তোমার বাবা কি করে? তখন সে ছেলে বলবে, আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। কি চমৎকার, তাই না?

পাগল চেষ্টা করে তার দোকান আরো ভালভাবে চালানোর। দোকানের খরচ, সংসারের এত খরচ, মা-বাবার চিকিৎসা সব অর্থের একমাত্র উৎস এই দোকান। ভাগ্য ভাল তাদের একটা থাকার মত বাড়ি আছে না হলে যে কি হত?? এই সম্বল ছাড়া তাদের আর কিছুই ছিল না। তার বাবা যৌথ পরিবারের হেড ছিল। সবাই যার যার মত ভাল আছে কিন্তু তার হেড পুরো খারাপ হয়ে গেছে। ভাই বোনদের দেখতে দেখতে নিজের পরিবারের তেমন একটা খেয়াল রাখতে পারেননি। অবশেষে জানতে পারলেন তার সেবার মান ভাল ছিলনা। তখন থেকে কার জন্য কি কি করতে পারেন নি তার হিসেব শুরু করেও এখনো শেষ করতে পারেননি।

কিন্তু এভাবে কি চলা যায়। তার ভবিষ্যৎ পরিবার এর জন্য তার ছেলের জন্যতো কিছু করা দরকার। একটা বিয়েতে প্রচুর খরচ। তারপর সন্তান জন্ম থেকে শরুকরে খরচ আর খরচ....।

ব্যবসাতে আরেকটু পূজি হলে অনেক লাভবান হত। অনেক মাল স্টক শেষ হয়ে যায়। কিন্তু টাকার অভাবে বেশি করে কিনা যায়না। পাগল তার ফুপু আর চাচাদের কাছে সাহায্য চায়। কিন্ত সে যে রকম চায় তা পায়না। তাদের সামর্থ আছে কিন্তু কেন তারা তা করেনা? পাগল জানেনা। কিন্তু সেতো চেষ্টা করে তার বাবাও করেছিল। সবাই তাকে বিদেশ যেতে পরামর্শ দেয়। কিন্ত সে কখনো বিদেশ যেতে চায়না। তার কাছে অর্থ এত বড় না যার জন্য সে দেশ ত্যাগ করবে। অবশ্য বিয়ের পর বউয়ের সাথে তাজমহল দেখার ১০০% চেষ্টা সে করবে।

এই অভাবের সাথে এবং তার পরিবার সাথে কোনরকম তার দিন যাচ্ছিল। পাগলের মা সে প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকত। সংসারে একটা বোঝার মতই ছিল। ঠিকভাবে চিকিৎসা চলত না। বড় বড় ডাক্তার অনেক বড় খরচের পর জানতে পারল ক্যান্সার। বেশিদিন আর টিকতে পারবেনা। ঔষধ কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারে। পাগলের ভাই এবং সে নীজেও প্রায়ই ঔষধ আনতে ভুলে যেত। পাগলের মাও ঔষধ খেতে চাইতনা। অনেক কষ্টপেত। অবশেষে নীজেই মুক্তি পেল।

সাত
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবী ঘুরছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন লাখ লাখ মানুষ হারিয়ে গেছে পৃথীবি থেকে তখনও। বাংলাদেশে মুক্তি যুদ্ধে যখন লাখ লাখ মানুষ মারা গেল তখনো। যখন টুইন টাওয়ার ধ্বংস হল তখনো। মৃত্যু একটা অস্বাভাবিক রকম স্বাভাবিক ব্যাপার। থেমে থাকেনা কোন কিছুই জীবন চলে নিজস্ব গতিতে। মায়ের মৃত্যুর পর পাগল নিজেকে সামলে নিয়েছিল। পাগাল মাঝে মাঝে ভাবত মা না থাকাতে ভালই হয়েছে। পাগলের দাদী সাথে তার মায়ের যে ঝগরা হত সেই ধরনের ঝগরা তার বউয়ের সাথে হওয়ার সম্বাবনা নেই। বিশ্ব সত্যিই খুব আধুনিক হচ্ছে। পাগলের মা বেচে থাকলে হয়ত পাগলের সাথেই থাকত। আবার নিজের ভাবনার জন্য নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করে। মা তাকে কত ভালবাসতেন কত আদর করতেন। দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে পাগলের।

অনেক অনেক ভাবনা চিন্তা ব্যাপক অনিয়ম এক সময় পাগল অসুস্থ্য হয়ে পরে। মায়ের মৃত্যুর পর তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়। তাদের সাথে সে এ্যডজাষ্ট করতে পারতনা। পাগল ভাবে আবার শুরু করবে নতুন ভাবে কাল থেকেই। কিন্তু শুরু করা হয় না।

পাগল ভাবে ইস সে যদি পরিবারের বড় ছেলে হত? তাহলে কতই না ভাল হত....

এক পর্যায় পাগল অসুস্থ্য হয়ে পরে। পাগলের ভাইয়ের অনিচ্ছা সত্বেও তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। বড় ভাইয়ের অনিচ্ছা ছিল পয়সা খরচ হবে তাই। আর পাগলের অনিচ্ছা ছিল সে ডাক্তার ভয় পেত, ইনজেকশন দেয়তো তাই। ডাক্তার অনেক গুলো পরীক্ষা নীরিক্ষা দেয়। পাগল বুঝতে পারে তার ভাইয়ের অনেক কষ্ট হচ্ছে... মধ্যবৃত্ত পরিবার চালতে খরচ অনেক বেশি। কি আর করা শেষ পর্যন্ত ভাই সব সে করবে মাঝে থাকবে দ্বীধা দন্দ্ব।

কয়েকদিন পর রিপোর্ট আসে। কি যেন অসুখের নাম?? পাগল জানেনা। তাকে যানানো হয়নি। পাগলের ভাই তাকে যা বলেছে। অনেক টা এরকম। "এই অসুখের জন্য সে নীজেই দায়ী, কেন সে নীজের দিকে খেয়াল রাখেনি। প্রচুর টাকার দরকার কে এত টাকা দিবে, আর দিলেও সে পুরোপুরি সুস্থ্য হতে পারবেনা।"

পাগলের ভাবনা আরো বেরে গেল। কেন এমন হল তার জীবনের সাথে। তার স্বপ্ন !! কি হবে? কি হবে? জীবনটাকে মিউজিক ভিডিওর মত মনে হয়....।

আরো আরো কিছুদিন গেল চিন্তাই হয়ত পাগলের ঔষধ ছিল। পাগল অনেকটাই ভালবোধ করছিল। কিন্তু ডাক্তার তাকে সময় বেধে দিয়েছিল। ..... হেপাটাইটিস সি এবং এর শেষ মুহুর্ত। দিন গনতে হবে পাগলকে।

একদিন ঝগরার এক পর্যায় পাগল ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। অসুখটা কি তার বিয়ে না লাইসেন্স। পাগল ভাবে তার জীবনের একটাই লক্ষ্য কিভাবে ভ্রষ্ট হল। আচ্ছা সে যদি বিয়ে করে তার সন্তানেরই কি এই অসুখ হবে? কত কত প্রশ্ন? আচ্ছা সে যদি কাউকে না জানিয়ে একটা বিয়ে করে ফেলে, কাউকে জানাবেনা তার অসুখটা তবে কি বেশি অন্যায় হবে। তবে কি প্রতারণা করা হবে তার স্ত্রীর সাথে? ........

আট
.......... ভাবতে ভাবতে আরো দশটি বছর কেটে গেল। একদিন ঘুম থেকে উঠে পাগল আবিষ্কার করল সে বেচে আছে। তার গয়ে একটা ছালার বস্তা। ১৯৯৯ সংখ্যাটি মনে ছিল তার ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে দেখেছিল। আর এখন চায়ের দোকানের ক্যালেন্ডারে। ... অনেক দিন হয়ে গেলে। এই জীবনটা খারাপ না নীজের মত করে থাকা যায়। মানবতার কোনা উপকার না হলে তেমন একটা ক্ষতি সে করছেনা।

ডাক্তারের কথা মনে পরল তার। অনেক দিন দাত মাজা হয় না এই অবস্থায় ঐ ডাক্তাকে একটা চুমো দিতে পারলে ভাল হত। সেই রকম মাঝে মাঝে ইংলিশ মুভিতে দেখায় না। ম্যান ইজ মরটেল - মানুষ মাত্রই ভুল। ডাক্তারতো ভূল করতে পারে। ডাক্তারাওতো মানুষ। তাই পাগল ডাক্তাকে ক্ষমা করে দিল।

আরো অনেক দিন গেল পাগল এই জীবন ধারাতে অভ্যস্ত হয়ে গেল। মাঝে মাঝে তার ভাইকে দেখা যায় টাকা ছুরে মারছে তার দিকে। একেই কি বলে দায়িত্ববোধ। পাগল টাকা গুলো ষ্টেশনের ভিক্ষুকে দিয়ে দেয়। সে খুব খুশি হয়। বিনিময়ে ভিক্ষুক তাকে চা/বিস্কুট খাওয়ায়। অবশ্য পরিচিত পাগল হিসাবে সবাই তাকে সম্মান করে। চা ফ্রি, দিনে আর কয়বার চা খাওয়া যায়। অনেক হোটেলেই মাঝে মাঝে ডেকে তাকে ভাত দেয় হয়। ভাতগুলো মাখানো থাকে কষ্ট করে মাখতেও হয়না।

মাঝে মাঝে একটা হোটেলে একটা গান চালানো হয়,
- পাগলারে ছাড়িয়া পাগলী গেল চলিয়া,
পাগলার মন ঘরে থাকেনা ....."

খুবই সুন্দর গান।

শেষ
আরো অনেক দিন গেল ..
হঠাৎকরে বিশাল পরিবর্তন আসে পাগলের মধ্যে। সে এখন নিয়মিত প্রার্থনা করে। সৃষ্টিকর্তার সাথে তার কথোপকথন হয়। অনেক কিছুই সে জানতে চায়। তার খুবই ভাললাগে। তবে সে সৃষ্টি কর্তার কাছে নিজের জন্য কিছুই চায়না। সৃষ্টি কর্তাকে সে ধন্যবাদ দেয় এত সুন্দর পৃথিবীতে পাঠানো জন্য। সৃষ্টিকর্তা মজা করে একদিন বলেছিল, তার বউ অন্যগ্রহ থেকে আনা হবে। সে আস্তে আস্তে বলল না, এই গ্রহেই হলে চলবে।

একদিন একটা ঘটনা ঘটল পাগল বসে আছে রেললাইনের পার্শ্বে। ট্রেন আসছিল হঠাৎ পাগল দেখল একটি মেয়ে হাটছে রেললইনে আনমনে। কেন? ট্রেন চলে গেলেই তো তার ক্ষতবিক্ষত বিভৎস শরীর পরে থাকবে। পাগল উঠে দাড়াল .... কিছু বুঝার আগে তাকে ঝাপটে ধরে পরে গেল এক পাশে।

অনেক কিছুই বলল মেয়েটিকে কিন্তু শব্দ আসছিলনা মনে মনে বলছিল। কেন তুমি এটা করছ। ধাক্কাটে যে বিদ্যুতিক শর্কের মত ছিল। মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুই বলল না। তার চোখে কান্না ছিল। ..... এই মেয়ে কেন তুমি ধ্বংস করতে চাইছ নিজেকে। কেন?

সরাদিন গগলের কেমন যেন গেল। অন্যরকম কোন নারীর এত কাছাকাছি সে কখনো আসেনি। সিনেমাতে সে দেখেছে কিন্তু সে জানে ওটা ক্যমেরার সাহায্যে করা হয়। স্বামী স্ত্রী ছাড়া এত কাছে কেউতো আসেনা। তবে এই মেয়েটিই তার স্ত্রী? ধাক্কার মধ্যেও এত মজা থাকে?

পাগল ব্যাপারটা তার ভিক্ষুক দোস্তাকে বলল। ভিক্ষুক জিজ্ঞাস করল এই মেয়েটির পেট কি বড় ছিল কিনা? পাগল কিছু বলতে পারল না। সে জিজ্ঞাস করল কেন? উত্তরে সে জানাল হয়ত কেউ প্রেমের নামে তার সাথে প্রতারনা করেছে।

মেয়েটি কি কাউকে ভালবাসত? পাগল ভাবে কেন এরকম হয়? ভাবনার সাথে তার স্বপ্নও যোগ হয়। আচ্ছা সৃষ্টিকর্তাকে কি বলবে তার সাথে ঐ মেয়েটির সাথে... একটা যোগাযোগ করিয়ে দিতে। সংসার করার স্বাধ তার এখনো আছে। সৃষ্টিকর্তা চাইলে কি না হয়। কিন্তু পাগলের লজ্জা লাগে। আচ্ছা সৃষ্টিকর্তাতো নাকি মনের কথাও বলতে পারে।

বাস্তব জগতে কতই না নাটক হয়। তার জীবনের কি আর কোন নাটকের সুযোগ আছ? পাগল এখন সার্ট পেন্ট পরে এক জোরা কেডস্‌ ও পরেছে। ভাইয়ের টাকায় সেদিন চুল দাড়ি কাটিয়েছে। ভাইকে সেদিন বলল বিয়ে করবে সে।

মেয়েটির বাসা চিনে পাগল সেদিন অজান্তেই গিয়েছিল তার পিছু পিছু।

আপনাদের তো বলা হয়নি। পাগল একদিন স্বপ্নে দেখেছিল, সৃষ্টিকর্তা তাকে বলছে ঐ মেয়েকেই তার জন্য তৈরী করা হয়েছে।

একদিন পথে তার সাথে দেখা হয়ে যায় পাগলের। তার চেহারায় বরই সৌন্দয্য। পাগল তাকে দেখতে পেয়েই মটির দিকে তাকিয়ে থাকল। সে কাছে আসল, বলল আপনি পাগল হয়ে গেলেন কেন? আপনি আবার আগের মত জীবন শুরু করছেন না কেন? সেদিনের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ....

পাগলের মনে মনে বলেছিল 'তোমার জন্য'।

পাগল অপেক্ষায় থাকে জীবনের কাঙ্খিত একটা গোলের জন্য। এবং সে জানে সে পারবে।

------০------
পূর্ব প্রকাশিত:


---------------------০-------------
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×