কেমন আছেন ব্লগার ভাইয়েরা।অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম।দেশ ছেরেছি এক মাস হচ্ছে আর ব্লগ ছেরেছি বহুদিন।তবে ব্লগে ফিরে এসেছি কিন্তু দেশে তো আর আপাতত যাবার সুযোগ নাই।অবশ্য যাবার একটা সুযোগ হয়েছিল।মিশরে একটা বৃত্তি পেয়েছিলাম কিন্তু কিছু দিনের মধেই মন পরিবর্তন হয়ে গেল।এই ইউনিভার্সিটি এত সুন্দর যে আমার যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।তো যাই হোক,দেশ ছাড়ার পূর্ব মুহুর্তের অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ব্লগে আসলাম।
ভার্সিটি থেকে অফার পাওয়ার পর থেকে খুব এক্সাইটেড ছিলাম।মালয়েশিয়া যাবো,কত সুন্দর জায়গা! অন্তত দেশের অসহ্য জ্যাম,রাস্তার ধুলাবালি,যানবাহনের পে পো আওয়াজ এসব থেকে বেঁচে থাকতে পারব। সময় যতো ঘনাতে লাগলো দেশের প্রতি ততই মায়া বাড়তে লাগলো।যেদিন চলে আসব সেদিনের কথা তো বলে বুঝানো যাবে না কতোটা খারাপ লেগেছিল।আমার ফ্লাইট ছিল বিকেলে কিন্তু সকালেই আমার পেটে ভাত যাচ্ছে না আর দুপুরে খাব কি করে? আর দুপুরের কথা কি বলব,অনর্গল চোখ দিয়ে পানি পরছে সবার কথা ভেবে,খেতে পারছিলাম না।যার দিকে তাকাই তার চোখেই পানি।অপর দিকে আমার বন্ধুরা এয়ারপোর্টে এসে বসে আছে এবং বার বার ফোন দিচ্ছে যাবো কখন। তো রেডি হলাম।আমার আম্মু কোনদিন এয়ারপোর্টে যায়নি এমনকি যাবার ইচ্ছাও করেনি।অথচ সেই আম্মু এসে বলছে আমি এয়ারপোর্টে যাব।তখন আমার ভেতরটা ঢুকরে কেঁদে উঠলো,এই মা কে ছেড়ে কিভাবে থাকব? আসার সময় দেখি আমার বোনগুলো ঢুকরে কাঁদছে।আমার ছোট দুই বোন,একজন ঢাকা ভার্সিটিতে 'ল' তে পড়ে আরেকজন রাজউক কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।তাদের কান্না দেখে আমার আর ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছিলনা। যাই হোক,সবার সাথে কোলাকোলি করে বের হলাম,আমি আমার ভাইদের সাথে কোনদিন কোলাকুলি করি নাই (লজ্জা লাগত আমার কোলাকুলি করতে)। কিন্তু সেদিন কিভাবে যেন তা সম্ভব হল আল্লাহই ভালো জানে! গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্ট যাত্রা করলাম।গাড়িতে উঠার পর আমার ভাবির মেসেজ।তারও একই অবস্থা।সেও কাঁদছে।সে তখন তার বাবার বাড়িতে ছিল।বার বার ফোন দিচ্ছে আর আমার ভাতিঝিকে দিয়ে কথা বলাচ্ছে।সে কান্নার কারনে কথা বলতে পারছিলনা।ভাবি আমাকে সব সময় তার ছোট ভাইয়ের মত দেখত।আর এদিকে আম্মু কাঁদছে আর উপদেশ দিচ্ছে আর আব্বুও পাশাপাশি উপদেশ দিচ্ছে কিভাবে থাকব কি করব। যাই হোক,এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি আমার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে সাথে আমার সবচেয়ে ক্লোজ মামাত ভাই তামজিদ।তাদের দেখে মনটা আরো কেঁদে উঠলো।কত সময় তাদের সাথে কাটিয়েছি।কতই না হেলফুল ছিল তারা।তাদের সাথে করে আমার বন্ধু সা'দ এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।সা'দ আমার সাথে মালয়েশিয়া যাবে।এর মধ্যে আবার বড় ভাইয়া ফোন করল তিনি আসবে।সে এসেই বলল ভেতরে ঢুকে যেতে।(ভাইয়ার কথা একটু বলে নেই,আমার বাবার মত একজন কলেজ অধ্যক্ষের পক্ষে আটজনের একটা পরিবার চালানো কঠিন ছিল।ভাইয়া কর্মজীবনে ঢুকার পরেই আমাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা শুরু হয়।আমার বাবার ইনকামে আমাদের হাত খরচ চলে কিন্তু পরিবারের পুরোটা খরচ দেন ভাইয়া।আর তিনি প্রচন্ড রাগি মানুষ।যার ফলে পরিবারের সবাই তাকে খুব ভয় পায়।সত্যিই তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।কারণ অনেক ভাইকেই দেখি পরিবারের খোজ খবর নেয় না।সেখানে আমার ভাইয়া পুরোটা পরিবার চালাচ্ছে।)
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল দীর্ঘক্ষন ধরে।তারপর ভাইয়া এবং আব্বুর সাথে কোলাকুলি করে ভেতরে ঢুকে গেলাম।আমার সাথে আমার ভগ্নিপতি ডালিম ভাই ভেতরে গেলেন।আমার ইমিগ্রেশন পার হবার আগ পর্যন্ত ভেতরে ডালিম ভাই ছিলেন।
ইমিগ্রেশন এর কথা আর কি বলব? শুধু আল্লাহ'র কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাদের হেদায়েত দেয়।শুধু শুধু আমাদের এক ঘন্টা ঘুড়িয়েছে শুধুমাত্র টাকা খাওয়ার জন্য।
তারপর ওয়েইটিং রোমে চলে গেলাম সেখান থেকে সবাইকে ফোন দিতে লাগলাম।এর মধ্যে ভাইয়ার ফোন পেলাম এবং আমার চোখের পানি আবার ঝরা শুরু করল (এতিমধ্যে পুলিশি ঝামেলায় মন অনেকটা শক্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তার ফোন আমার চোখের পানি রাখতে পারেনি)।তার কথাগুলো আমার যখনি মনে পড়ে চোখের পানি আমি রাখতে পারি না।তার কথাগুলো ছিল,"ভালো করে যা,ঠিক মত থাকবি।টাকার জন্য কখনো খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখবি না।আর আমার ইনকাম যতদিন আছে ততদিন কোন চিন্তা করবি না।আর টাকা লাগলে আমাকে ফোন দিবি,আব্বুকে না।"
তারপর বিমানে উঠার পর আমার চোখের পানি অনর্গল পরতে লাগল।সবার কথা মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে সারা জীবনের জন্য আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।কারণ আমার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হয়ে দেশে আসার ইচ্ছা নেই।এই কারনে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।এখন থেকে আমি বাংলাদেশের মেহমান।
আমার পরিবারের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।কারণ তারা আমাকে এতো টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ানোর যে সাপোর্ট দিয়েছে তা সত্যিই কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে।আপনারা দোয়া করবেন যেন সেই টাকা আমি কাজে লাগাতে পারি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



