somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ ছেড়ে আসার পুর্ব মূহুর্তের অনুভূতি:((

১৫ ই মে, ২০১১ রাত ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন আছেন ব্লগার ভাইয়েরা।অনেকদিন পর ব্লগে আসলাম।দেশ ছেরেছি এক মাস হচ্ছে আর ব্লগ ছেরেছি বহুদিন।তবে ব্লগে ফিরে এসেছি কিন্তু দেশে তো আর আপাতত যাবার সুযোগ নাই।অবশ্য যাবার একটা সুযোগ হয়েছিল।মিশরে একটা বৃত্তি পেয়েছিলাম কিন্তু কিছু দিনের মধেই মন পরিবর্তন হয়ে গেল।এই ইউনিভার্সিটি এত সুন্দর যে আমার যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।তো যাই হোক,দেশ ছাড়ার পূর্ব মুহুর্তের অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ব্লগে আসলাম।

ভার্সিটি থেকে অফার পাওয়ার পর থেকে খুব এক্সাইটেড ছিলাম।মালয়েশিয়া যাবো,কত সুন্দর জায়গা! অন্তত দেশের অসহ্য জ্যাম,রাস্তার ধুলাবালি,যানবাহনের পে পো আওয়াজ এসব থেকে বেঁচে থাকতে পারব। সময় যতো ঘনাতে লাগলো দেশের প্রতি ততই মায়া বাড়তে লাগলো।যেদিন চলে আসব সেদিনের কথা তো বলে বুঝানো যাবে না কতোটা খারাপ লেগেছিল।আমার ফ্লাইট ছিল বিকেলে কিন্তু সকালেই আমার পেটে ভাত যাচ্ছে না আর দুপুরে খাব কি করে? আর দুপুরের কথা কি বলব,অনর্গল চোখ দিয়ে পানি পরছে সবার কথা ভেবে,খেতে পারছিলাম না।যার দিকে তাকাই তার চোখেই পানি।অপর দিকে আমার বন্ধুরা এয়ারপোর্টে এসে বসে আছে এবং বার বার ফোন দিচ্ছে যাবো কখন। তো রেডি হলাম।আমার আম্মু কোনদিন এয়ারপোর্টে যায়নি এমনকি যাবার ইচ্ছাও করেনি।অথচ সেই আম্মু এসে বলছে আমি এয়ারপোর্টে যাব।তখন আমার ভেতরটা ঢুকরে কেঁদে উঠলো,এই মা কে ছেড়ে কিভাবে থাকব? আসার সময় দেখি আমার বোনগুলো ঢুকরে কাঁদছে।আমার ছোট দুই বোন,একজন ঢাকা ভার্সিটিতে 'ল' তে পড়ে আরেকজন রাজউক কলেজে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।তাদের কান্না দেখে আমার আর ঘর থেকে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছিলনা। যাই হোক,সবার সাথে কোলাকোলি করে বের হলাম,আমি আমার ভাইদের সাথে কোনদিন কোলাকুলি করি নাই (লজ্জা লাগত আমার কোলাকুলি করতে)। কিন্তু সেদিন কিভাবে যেন তা সম্ভব হল আল্লাহই ভালো জানে! গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্ট যাত্রা করলাম।গাড়িতে উঠার পর আমার ভাবির মেসেজ।তারও একই অবস্থা।সেও কাঁদছে।সে তখন তার বাবার বাড়িতে ছিল।বার বার ফোন দিচ্ছে আর আমার ভাতিঝিকে দিয়ে কথা বলাচ্ছে।সে কান্নার কারনে কথা বলতে পারছিলনা।ভাবি আমাকে সব সময় তার ছোট ভাইয়ের মত দেখত।আর এদিকে আম্মু কাঁদছে আর উপদেশ দিচ্ছে আর আব্বুও পাশাপাশি উপদেশ দিচ্ছে কিভাবে থাকব কি করব। যাই হোক,এয়ারপোর্টে গিয়ে দেখি আমার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে সাথে আমার সবচেয়ে ক্লোজ মামাত ভাই তামজিদ।তাদের দেখে মনটা আরো কেঁদে উঠলো।কত সময় তাদের সাথে কাটিয়েছি।কতই না হেলফুল ছিল তারা।তাদের সাথে করে আমার বন্ধু সা'দ এর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।সা'দ আমার সাথে মালয়েশিয়া যাবে।এর মধ্যে আবার বড় ভাইয়া ফোন করল তিনি আসবে।সে এসেই বলল ভেতরে ঢুকে যেতে।(ভাইয়ার কথা একটু বলে নেই,আমার বাবার মত একজন কলেজ অধ্যক্ষের পক্ষে আটজনের একটা পরিবার চালানো কঠিন ছিল।ভাইয়া কর্মজীবনে ঢুকার পরেই আমাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা শুরু হয়।আমার বাবার ইনকামে আমাদের হাত খরচ চলে কিন্তু পরিবারের পুরোটা খরচ দেন ভাইয়া।আর তিনি প্রচন্ড রাগি মানুষ।যার ফলে পরিবারের সবাই তাকে খুব ভয় পায়।সত্যিই তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।কারণ অনেক ভাইকেই দেখি পরিবারের খোজ খবর নেয় না।সেখানে আমার ভাইয়া পুরোটা পরিবার চালাচ্ছে।)
আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল দীর্ঘক্ষন ধরে।তারপর ভাইয়া এবং আব্বুর সাথে কোলাকুলি করে ভেতরে ঢুকে গেলাম।আমার সাথে আমার ভগ্নিপতি ডালিম ভাই ভেতরে গেলেন।আমার ইমিগ্রেশন পার হবার আগ পর্যন্ত ভেতরে ডালিম ভাই ছিলেন।

ইমিগ্রেশন এর কথা আর কি বলব? শুধু আল্লাহ'র কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাদের হেদায়েত দেয়।শুধু শুধু আমাদের এক ঘন্টা ঘুড়িয়েছে শুধুমাত্র টাকা খাওয়ার জন্য।X(যদিও টাকা পায়নি।আর এর মধ্যে মিনিমাম একশ'র মত ফোন এসেছে যদিও পুলিশ ভাইদের কল্যাণে একটা ফোনও ধরতে পারি নাই।
তারপর ওয়েইটিং রোমে চলে গেলাম সেখান থেকে সবাইকে ফোন দিতে লাগলাম।এর মধ্যে ভাইয়ার ফোন পেলাম এবং আমার চোখের পানি আবার ঝরা শুরু করল (এতিমধ্যে পুলিশি ঝামেলায় মন অনেকটা শক্ত হয়ে গিয়েছিল কিন্তু তার ফোন আমার চোখের পানি রাখতে পারেনি)।তার কথাগুলো আমার যখনি মনে পড়ে চোখের পানি আমি রাখতে পারি না।তার কথাগুলো ছিল,"ভালো করে যা,ঠিক মত থাকবি।টাকার জন্য কখনো খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখবি না।আর আমার ইনকাম যতদিন আছে ততদিন কোন চিন্তা করবি না।আর টাকা লাগলে আমাকে ফোন দিবি,আব্বুকে না।"

তারপর বিমানে উঠার পর আমার চোখের পানি অনর্গল পরতে লাগল।সবার কথা মনে পড়ছে।মনে হচ্ছে সারা জীবনের জন্য আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।কারণ আমার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হয়ে দেশে আসার ইচ্ছা নেই।এই কারনে আরো বেশি কষ্ট হচ্ছে।এখন থেকে আমি বাংলাদেশের মেহমান।/:)

আমার পরিবারের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।কারণ তারা আমাকে এতো টাকা খরচ করে বিদেশে পড়ানোর যে সাপোর্ট দিয়েছে তা সত্যিই কৃতজ্ঞতার দাবি রাখে।আপনারা দোয়া করবেন যেন সেই টাকা আমি কাজে লাগাতে পারি।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×