somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজারবাগ শরীফঃ যুগশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহর দরবার শরীফ (২)

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

 আচ্ছা ভারতীয় উপমহাদেশে পীর সাহেবেরা কেন শক্ত স্থান দখল করে ছিল?
- অনেকে ভারতীয় উপমহাদেশে পীর-মুরিদি বেশি দেখতে পান। কিন্তু এর কারণ আছে। ইসলাম মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে ইলিয়াস সাহেবের তাবলীগী করেও আসে নি, আবার মওদূদী-নিজামী-সাঈদীর রগ কাটা বাহিনীর জালাও পোড়াও করেও আসে নি। ইসলাম এদিকে এসেছে ওলী-আল্লাহদের হাত ধরে, পীর-মাশায়িখদের, সূফী-দরবেশদের হাত ধরে এসেছে। তাই আল্লাহর ওলীদের মাজার শরীফ বিভিন্ন স্থানেই চোখে পড়ে যায়, সুবহানাল্লাহ। ইসলাম যাদের মাধ্যমে এসেছে, যাদের মাধ্যমে কাফিরেরা কুফরী ছেড়ে দিয়ে মুসলমান হল, তাদের দেখানো পথেই তো মানুষ সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ খুজবে, সেটাই কি স্বাভাবিক নয়!

 কিন্তু, তার মানে কি এই যে, শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই পীর আছে, সারা পৃথিবীতে আর কোথাও পীর নেই?
-আচ্ছা, ইসলামের ইতিহাস কি একটু শুনাতে পারবেন? সারা পৃথিবীতে ইসলামের ভ্রমণের ইতিহাস কি বলতে পারবেন? ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস খুব বেশি দীর্ঘকাল ছিল না। আর ইসলামের বয়সও তুলনামূলক খুব বেশি নয়। আরব মহাদেশ ছাড়িয়ে ইসলামকে সুদৃঢ়ভাবে শুধু স্পেনেই দেখতে পাওয়া যায়, যেটাও অবহেলায় মুসলমানেরা হারিয়েছে। যখন এক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আরেক সীমানায় ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে, সেখানে ইসলাম পায়ে হেটে যায় নি। বরং সেখানে ইসলাম অবশ্যই কোন একজন ওলী-আল্লাহর হাত ধরেই নতুন জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে। কখনও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, কখনও শুধু তালীম-তালকিনের মধ্য দিয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু কুরআন শরীফ তো বাজারেই পাওয়া সম্ভব, তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কেন ব্যক্তি বিশেষের প্রয়োজন? মূলত, কিতাবে ইলম পাওয়া যায়, কিন্তু পীর মাশায়িখেরা ইলমের নূর বহন করেন। তাই যুগে যুগে ইসলাম পীর-মাশায়িখদের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়েছে। আর মুসলমান জগতে নক্ষত্রের উদাহরণ দিতে গেলে, কোন ব্যক্তির নাম বলা সম্ভব যিনি পীর বা মুরীদ ছিলেন না! মূলত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম, হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জুননুন মিছরি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কে পীর ছিলেন না! উনাদের সকলের অবস্থান তো ভারতীয় উপমহাদেশে ছিল না। মূলত পীর-মুরিদি তো ব্যবসা নয়। মুরীদকে পীর সাহেব ইসলামের নূর শিক্ষা দেন, অন্তর ইছলাহ করার তালিম দেন। আরব দেশ থেকে যে রাস্তা ধরে ইসলামের যাত্রা চলেছে সে রাস্তা পীর সাহেবদের হাতেই গড়ে ওঠা। আর সে রাস্তাগুলো যেসব এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, সেখানে স্পেনের মত দুরবস্থা বরণ করে নিতে হয়েছে। বর্তমান মুসলিম সমাজের করুণ পরিণতির জন্য সেই সূফী-দরবেশদের অনুপস্থিতি মূলত দায়ী। আর সমাজের দোষ হল, তারা ইসলামের ধারক-বাহক সেই সূফী-দরবেশদের সম্মান দিচ্ছে না।

 সাধারণ মানুষের কি পীর শব্দের সাথে এলার্জি আছে, নাকি রাজারবাগের পীর সাহেবের সাথে বিরোধ আছে?
- সাধারণ মানুষ তো সাধারণ। তারা স্রোতের সাথে মিলে থাকে। স্রোত যেদিকে তারাও সেদিকে চলে। তাই সাধারণ মানুষকে দোষ দেওয়ার কিছু নাই। সাধারণ মানুষ রাজারবাগী পীর সাহেবের বিরোধিতা করবে কোন দুঃখে। যদি সাধারণ মানুষের সাথে দ্বন্দ্ব থেকেই থাকে তবে সেটা পীর শব্দের সাথে। পীর শব্দ শুনলে বেশি নয়, কয়েক যুগ পূর্বেও সাধারণ মানুষেরা ভক্তি করত, শ্রদ্ধা করত। কিন্তু কি যেন একটা হল, পীর শব্দের সাথে হঠাত করেই এলার্জি ছড়িয়ে পড়ল।

 কিন্তু পীর শব্দের সাথে কেন এই এলার্জি?
- পীর শব্দের সাথে এলার্জি হওয়ার পেছনে চারটি কারণ রয়েছে। মূলত এই এলারজি কৃত্রিম। দুই শ্রেণী এই এলারজি তৈরীর জন্য দায়ী।
১) ওহাবী-খারিজি (যারা ওলী-আল্লাহ বিরোধী গোমরাহ)
২) কাফিরদের প্রচারিত মিডিয়া
আরেকটি কারণ রয়েছে- সেটা হল
৩) ওলী-আল্লাহর অপ্রতুলতা ও নিষ্ক্রিয়তা
৪) কিছু ভন্ড পীরের আবির্ভাব।
ওহাবী-খারিজি-আহলে হাদিছ এই সব গোমরাহ বাতিল ফিরকা মূলত কাফিরদের ষড়যন্ত্রের অবৈধ সন্তান। নতুবা ইসলামের ধারক-বাহক ওলী-আল্লাহ, পীর, গাউছ, কুতুবদের সাথে কি করে এরা দুশমনি করতে পারে! এরা সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করছে। আরেকটি সমস্যা হল সাধারণ মানুষের মধ্যে ফাসিক-ফুজ্জারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নাটক-সিনেমা দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত। হয়তবা কথাটি খারাপ শুনায়, কিন্তু এটাই বাস্তব। আর নাটক-সিনেমাতে পীর সাহেবদেরকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মহান ওলীয়ে মুর্শিদদেরকে অসম্মানের সাথে নাটক-বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিলেও এভাবেই সূফী-দরবেশদের ব্যাপারে সামাজিক এলার্জির কৃত্রিম বিষ তৈরী করা হয়েছে। আর এই এলারজি নতুন মাত্রা পেয়েছে ভন্ড নামধারী পীরদের কারণে। যেমনঃ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিপূর্ণ সুন্নতের অনুসারী ছিলেন এবং গান-বাজনা,বেপর্দা এবং মূর্তির বিপক্ষে ছিলেন।এবং ভারতীয় উপমহাদের ইসলামের আবাদ করেন।কিন্তু উনার মাযার শরীফে এখন উনার কথা বলে গান-বাজনা,বেপর্দা হয়ে থাকে। অনেক পীর মারিফতের ধুয়া তুললেও শরীয়তের নির্দেশ মানে না, তারাই মূলত ভন্ড। তবে ভন্ডদের ভন্ডামী তুলনা দিয়ে হক্বের বিরোধিতা করা নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৫১
২০টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×