শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে কিউবার রাজধানী হাভানায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি ছিলেন তিন সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ দলের নেতা। অপর দু’জন সদস্য ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ শামসুল হক এবং ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ। সাচিবিক সহায়তার জন্যে দলে ছিলেন অন্যান্য দক্ষ কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞ।
এই সফরটি ছিল ব্যারিষ্টার সুলতান আহমদের জন্যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে নিবিড় ব্যক্তিগত সম্পর্কের অন্যতম প্রধান সোপন। এ সম্মেলনটিতে দু’জন দু’জনকে অতি নিকট থেকে দেখার এবং বোঝার সুযোগ পান এবং সুলতান আহমদ শহীদ জিয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেন।
বিমানে তিনজন সম্মেলন সম্পর্কীয় বহু বিষয়ে আলোচনার সুযোগ পান। সফরটি ছিল রাষ্ট্রপতির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উন্নয়নের একটি বড় সুযোগ হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমান এই সম্মেলনকে গ্রহণ করেছিলেন।
কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পূর্ব পরিচয় নিবিড় ছিল না। তিনি বাংলাদেশকে কতটুকু গুরুত্ব দেবন এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান ছিলেন অনিশ্চিত। সম্মেলনের পাঁচটি সহসভাপতি পদের একটি তখন অলংকৃত করেছিল বাংলাদেশ। স্বাগতিক দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সভাপতিত্ব করেছিলেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো।
জিয়াউর রহমান আশা করেছিলেন যে, ফিদেল ক্যাস্ট্রো যেন সম্মেলনে আলোচ্য মুল বিষয়ে বাংলাদেশের অভিমতের উপর গুরুত্ব দেন এবং সকল বিষয় তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের বহু বৃহৎ এবং অধিকতর প্রভাবশালী দেশকেই যে ফিদেল ক্যাস্ট্রো বেশি গুরুত্ব দেবেন এরূপ সম্ভাবনা ছিল বেশি।
এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক কি করা যায় সে বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান এবং ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ দু’জন বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করেন। কোন কোন অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি বুমেরাং হয়ে যেতে পারে সে ভয়ও করেন। যদি ঠিকমত লেগে না যায় তবে হাস্যাস্পদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ কথাও ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী শহীদ রাষ্ট্রপতিকে বলেন। বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তুলছিল।
মহাসমুদ্রের আকাশপথে এক পর্যায়ে দেখ গেল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিমানের টয়লেটে গেলেন। ভাব ভঙ্গিতে মনে হলো ওযু করে এসেছেন। কিছু না বলে বেলা এগারটা নাগাদ দেখা গেল তিনি জায়নামায বিছিয়ে নামাযে দাঁড়িয়ে আছেন। অসময়ে নামায তাও আবার বিমানের মধ্যে। কয়েক রাকাত নামায পড়লেন এবং বেশ লম্বা মুনাজাত ধরলেন।
নামায শেষে জিয়াউর রহমান সীটে এসে বসলেন। সুলতান আহমদ চৌধুরী জানতে চাইলেন রাষ্ট্রপতি কি সালাতুদ্দোহা বা চাশত-এর নামায পড়েছেন। রাষ্ট্রপতি ব্যারিষ্টার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি চাশত-এর নামায পড়েন কি না। চাশত নামায সম্পর্কে দু’চার কথার পর বোঝা গেল তাঁরা কেউই চাশত নামায পড়েন না।
সুলতান আহমদ চৌধুরী রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন তা হলে তিনি ঐ সময়ে কি নামায পড়লেন। জবাবে জিয়াউর রহমান একটু গম্ভীর মনে হলো। তিনি জবাবে দিলেন অতি সাধারণ সাদামাটা ভাষায়।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বললেন যে, ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকা সম্বেন্ধে তিনি চিন্তিত। নিজে যা করার তা তো তিনি করবেনই। কয়েক রাকাত নফল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে তদবির করে রাখলেন সাহায্যের জন্যে। যেখানে তার চেষ্টার কিছু হবে না, যেখানে তিনি ব্যর্থ হবেন, সেখানে আল্লাহ্ যেন তাকে সাহায্য করেন- নামাযের পর মুনাজাতে এ দরখাস্তই আল্লাহ্র দরবারে তিনি পেশ করেছেন। কথাগুলো ছিল সহজ, সরল। ব্যারিষ্টার সুলতানের মনে হয়েছিল যে তা ছিল শহীদ জিয়ার গভীর বিশ্বাস এবং প্রত্যয়দীপ্ত।
হাভানা বিমান বন্দরে রাষ্ট্রপতি ফিদেল ক্যাস্ট্রো এসেছেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্বাগত জানাতে। জানালা দিয়ে টারমাকের দিকে কতাকালেন জিয়াউর রহমান। গালভর্তি দাড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, ফিদেল ক্যাস্ট্রো সাহেব দাড়ি রেখেছেন ভাল কথা। দাড়িগুলো একটু ট্রিম করে রাখলে তাকে আরও সুন্দর দেখাতো। ছিমছাম থাকতে কত সময় লাগে।
সুলতান সাহেব বললেন, “ছিমছাম থাকা তো বুর্জোয়া মূল্যবোধ। দেখছেন না ফিদেল ক্যাস্ট্রো জেনারেলের পোশাক এবং টুপি না পরে সিপাহীর পোশাক পরে আছেন। তাই হয়তো উপমহাদেশীয় সেনা কর্মকর্তা এবং নায়কদের মতো ছিমছাম থাকতে পছন্দ করেন না এবং সময়ও পান না।”
জিয়াউর রহমান স্বীকার করলেন, হয়ত তাই হবে। কিন্তু কথার জোর ছিল না। মনে হলো তিনি একমত হননি। শহীদ জিয়া সরল জীবন যাপন করতেন। বাহ্যিক দিক দিয়ে থাকতেন অত্যন্ত পরিপাটি। তার স্যুটের ক্রীজ দেখে মনে হতো না যে ভেতরের গেঞ্জিটা বহুধা ছিদ্রযুক্ত।
একটু পরে জিয়াউর রহমান সুলতান সাহেবকে বললেন, রাষ্ট্রপতি ক্যাস্ট্রোর দেহ সংলগ্ন পিস্তলের খাপ দু’টির দিকে তাকাতে। স্বাগত স্বরে অনেকগুলো কথা বললেন, "এ সিস্টেমে মনে হয় কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। বিপ্লবের অত বছর পরও যদি নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য কাউকে বিশ্বাস না করা যায় এবং নিজেকে সর্বত্র পিস্তল হাতে ঘুরতে হয় তা তো সিস্টেমের দুর্বলতা।"
"যে নেতা দেশের জন্য কাজ করবেন, রাত দিন খাটবেন-দেশের জন্যে মরতে সদা প্রস্তুত থাকবেন, তাঁর নিরাপত্তার জন্যে প্রাণ দিতে তো কিছু লোকের প্রস্তুত থাকা দরকার। এরূপ বিশ্বস্ত কিছু লোক অবশ্যই আছে, আবিস্কার করা দরূহ ব্যাপার। তবে ক্যাস্ট্রো সাহেবেরা যে সিস্টেমে দেশ পরিচালনা করেন, তাতে যে অপরকে আগে মারতে পারবেন সে-ই দীর্ঘজীবী হবেন।"
শহীদ রাষ্ট্রপতি বললেন, "নিজ জীবন রক্ষার জন্যে আল্লাহর উপর এবং তাঁর বান্দার উপর আস্থা না রেখে ভালো কাজ করার নীতিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। অবশ্য নিরাপত্তা, সতর্কতা এবং সাবধানতা অবলম্বন তো আল্লাহরই নির্দেশ।"
হাভানা জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অন্যান্য সহ-সভাপতির সঙ্গে ডায়াসেই স্থান পেয়েছেন। এ অধিবেশনে সম্মেলনের সাফল্য সম্বন্ধে শুভেচ্ছামূলক বক্তব্য রাখার জন্য আহূত হন যুগোশ্লাভিয়ার প্রবীণ জোট নিরপেক্ষ নেতা মার্শাল জোসিপ বরিস টিটো।
মার্শাল টিটো বসেছিলেন তাঁর দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে দেশের নাম সাজাবার ফলে তাঁর দেশের প্রতিনিধির স্থান ছিল বেশ পেছনে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা শেষ করে মার্শাল টিটো তাঁর নিজস্ব আসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বক্তৃতা ভালো হয়েছিলো বলে হাত তালি পড়েছিল খুব। শুভাকাঙ্খীদের হাত তালি চলছিল তাঁর নিজস্ব আসনে পৌঁছা পর্যন্ত।
হঠাৎ দেখা গেল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ডায়াসে সহ-সভাপতিদের জন্য নির্দিষ্ট আসন ছেড়ে চলেছেন সম্মেলনের পেছনের সারির দিকে। অনেকটা মার্শাল টিটোকে লক্ষ্য করে। একজন সহ-সভাপতির ডায়াস থেকে নেমে যাওয়া অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। দেখা গেলো জিয়াউর রহমান মার্শাল টিটোকে অনুসরণ করছেন। মার্শাল টিটো সীটে গিয়ে বসেছেন। জিয়াউর রহমান টিটোর কাছে গিয়ে উপস্থিত। অত্যন্ত আন্তরিকতা এবং আগ্রহের সঙ্গে টিটোকে তাঁর বক্তৃতার জন্য ধন্যবাদ দিলেন। করমর্দন করলেন। জিয়াউর রহমান হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় মার্শাল টিটো উঠে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে করমর্দন করছেন। তাকেও ধন্যবাদ দিচ্ছেন। মার্শাল টিটোর ডান হাত শহীদ জিয়ার ডান হাতে। এ সুযোগে শহীদ জিয়া তাঁর বাম হাত মার্শাল টিটোর পিঠে লাগিয়ে তাঁদের মধ্যে যে গভীর হৃদ্যতা তা প্রতিফলিত করলেন। জিয়াউর রহমানের হৃদ্যতায় মার্শাল টিটো অভিভূত হলেন। সহ-সভাপতিদের মধ্য হতে একমাত্র জিয়াউর রহমানই ডায়াস থেকে নেমে এসে মার্শাল টিটোকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। এ বিষয়টি সম্মেলনের অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।
মার্শাল টিটো বক্তৃতা শেষ করে যখন পোডিয়াম থেকে নেমে যাচ্ছেন, তখনই জিয়াউর রহমান এগিয়ে এসে তার সঙ্গে করমর্দন করতে পারতেন। কিন্তু তা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো না, যদি তিনি ডায়াসেই মার্শাল টিটোর সঙ্গে করমর্দন করতেন।
হাভানা পৌঁছে প্রেসিডেন্ট জিয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে টেলিফোনে সৌজন্যমূলক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং তার পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। সম্মেলনের উদ্দেশ্য এবং সিদ্ধান্ত কী কী হতে পারে এ সম্বন্ধে অন্যান্য সরকার প্রধানের মতামত জিজ্ঞাসা করেন এবং নিজের মত ব্যক্ত করেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেলো রাষ্ট্রপতিগণ টেলিফোনে কোন নীতি সম্পর্কীয় আলোচনার স্বাভাবিক কারণেই নিরুৎসাহী ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে পারস্পরিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন তা’ও জানালেন।
যাঁরা রাজি হলেন তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি সম্মেলনের উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখলেন। অনেকের সঙ্গে তিনি সংক্ষিপ্ত সৌজন্য সাক্ষাৎ করে নিলেন।
কিউবা ইনটিলিজেন্স সিস্টেম ছিল খুবই সক্রিয়। কোন্ রাষ্ট্রপতি কার সঙ্গে কথা বলেন, সাক্ষাৎ করেন এ সমস্ত বিষয়ে তারা খোঁজ-খবর রাখতেন। দেখা গেলো শীর্ষ সম্মেলনে আগত রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে সবচেয়ে কর্মব্যস্ত ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মব্যস্ততার প্রতিক্রিয়া হতে বেশি বিলম্ব হলো না। সম্মেলনের আলোচ্যসূচি সম্বন্ধে আলোচনার জন্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সময় চাইলে আলোচনায় বসতে ফিদেল ক্যাস্ট্রো রাজি হবেন কি না এ সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ না হয়ে সময় চাইতেও জিয়াউর রহমান সংকোচ বোধ করছিলেন। দেখা গেলো ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিজেই উদ্যোগি হয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, আলোচনার প্রস্তাব করলেন এবং তাঁর হোটেল স্যূটে এসে তাঁর সঙ্গে সম্মেলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করলেন।
ফিদেল ক্যাস্ট্রোর প্রস্থানের পর প্রেসিডেন্ট জিয়াকে দেখা গেলো বেশ তৃপ্ত এবং প্রশান্ত। লোকজন চলে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সুলতান সাহেবকে বললেন, সম্মেলন সম্পর্কে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে কতটুকু আগ্রহী হবে এ সম্পর্কে আমি সন্দিহান ছিলাম। এখন দেখলাম ফিদেল ক্যাস্ট্রো নিজে এসে উপযেচে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। বলতে পারেন, যা আপাতঃদৃষ্টিতে অসম্ভব বা সংশয়মূলক, তা কি করে সম্ভব হলো?”
ব্যারিষ্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী বললেন, আপনার সঙ্গে আলোচনা করাই তো স্বাভাবিক। তিনি সম্মেলনের সভাপতি। আপনি অন্যতম সহ-সভাপতি। সে মাপকাঠিতে তো ঠিকই হয়েছে। জিয়াউর রহমান জিজ্ঞাসা করলেন, আর কি কারণ হতে পারে? সুলতান সাহেব উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিনিধিদলের ভূমিকা, বিশেষ করে, সম্মেলনের সহ-সভাপতি হিসাবে জিয়াউর রহমানের কর্মব্যস্ততা, ইত্যাদি।
জিয়াউর রহমান জানতে চাইলেন, আর কি থাকতে পারে? সুলতান আহমদ সাহেব বললেন, কিন্তু জিয়াউর রহমানকে খুব সন্তুষ্ট মনে হলো না। অগত্যা সুলতান সাহেব বললেন, মার্শাল টিটোর সাথে সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে করমর্দন এবং হৃদ্যতাও কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
এবার জিয়াউর রহমান বললেন, আপনি অনেক কিছু বললেন, সব কিছুরই কিছুটা অবদান আছে। কিন্তু আসল কথাটাই বলতে পারছেন না।”
সুলতান সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, আসল কথাটা কি?” প্রেসিডেন্ট জিয়া বললেন, সেই যে বিমানে অসময়ে নামায পড়ে আল্লাহকে বলে রেখেছিলাম, আমার যা করার ততটুকু আমি করব, যেখানে আমি ব্যর্থ হবো, সেখানে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর ইজ্জতের খাতিরে, আমার দেশের মান-ইজ্জত বৃদ্ধিকল্পে আল্লাহর যা করণীয় তা যেন তিনি করেন। এই দরখাস্ত যে পেশ করে রেখেছিলাম, আমার মনে হয় সেটাই হলো উপযাচক হয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর আমার সঙ্গে সাক্ষাতের আসল কারণ।”
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয় সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং আস্থাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ এটাকে তার রাজনীতি বা কূটনীতি বলে ধারণা করে থাকেন। রাজনীতি এর মধ্যে থাকতে পারে। কিন্তু এটা যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গভীর প্রত্যয় এবং ঈমানের অঙ্গ ছিল ( এ বিষয়ে এ নিবন্ধ লেখকের নিকট ঘটনা বর্ণনাকারী মরহুম ব্যারিষ্টার সুলতান আহমদ চৌধূরীর বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না।
(লেখকঃ বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব)