একবার Ottoman সুলতান চতুর্থ মুরাদ তার দিলের মধ্যে অশান্তি অনুভর করতে লাগলেন। রাজপ্রাসাদের প্রধান প্রহরীকে তলব করলেন। খবর পেয়ে প্রধান প্রহরী উর্ধশ্বাসে ছুটে এসে হাজির। বিনয়াবনত হয়ে আনত নয়নে জিজ্ঞেস কর
– কী হয়েছে জাঁহাপনা?
-দিলের মধ্যে অশান্তি অনুভব করছি!
-কারণ কী?
-জানিনা!
কী করা যেতে পারে জাঁহাপনা?
চলো, একটু বাইরে ঘুরে আসি। উল্লেখ্য, মাঝেমধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের হাল-তবিয়ত জানা সুলতানের অভ্যাস ছিল।
সুলতান প্রধান প্রহরীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। শহরের এক প্রান্তে লোকালয়ের দিকে রওয়ানা হলেন। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে এক ব্যক্তির নিথর দেহ পতিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। সুলতান দ্রুত কদমে এগিয়ে আসলেন। শরীরে নাড়া দিলেন। কিন্তু এ কি, লোকটি মারা গেছে! আবার পথিক লোকজন পাশকেটে চলাফেরা করছে কিন্তু কেউই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছেনা! সুলতান যারপরনাই আশ্চর্য হলেন রাস্তা অতিক্রমকারী লোকদের এহেন ব্যবহার দেখে!
তিনি দারাজ কন্ঠে হাক ছুঁড়লেন- এই তোমরা এদিকে আসো…
-কী হয়েছে আপনার? ডাকছেন কেন?
-এই ব্যক্তি এখানে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কেন? আর তোমরাই বা একে উঠিয়ে নিচ্ছ না কেন? এই ব্যক্তির পরিচয় কি? তার পরিবার কোথায়?
– এই লোকটি যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী!
-আরে এ কি মুহাম্মদ সা. এর উম্মত নয়?! একে উঠাও। তার পরিবারের কাছে নিয়ে চলো। লোকেরা লোকটিকে উঠিয়ে তার পরিবারের কাছে নিয়ে আসলো।
স্বামীর নিথর লাশ দেখতেই স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ল। বিলাপ করতে লাগল আর বলতে থাকল, আল্লাহ তোমার উপর রহম করুক হে আল্লাহর ওলি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই তুমি একজন সৎকর্মী! সুলতান বিলাপকারিনী মহিলার এই কথাটি শুনছিলেন আর যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হচ্ছিলেন!
কিছুক্ষণ পর লোকজন চলে যাওয়ার পর সুলতান নিজের আশ্চর্যের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার জন্য মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কিভাবে আল্লাহর ওলি হয়, অথচ লোকেরা বলল যে, সে একজন যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী?! শুধু তাই নয়, লোকেরা তোমার স্বামীর লাশকে ছুঁইতেও চাচ্ছেনা?!
-আমি তা জানতাম। এরপর মহিলা তার স্বামীর কাহিনী বলতে শুরু করল-
-আমার স্বামী প্রতিদিন রাতে মদের দোকানে যেতেন। যতটুকু পারতেন মদ খরিদ করে ঘরে নিয়ে আসতেন। অতঃপর তা টয়লেটে ঢালতেন আর বলতেন, আমি যতটুকু সম্ভব ততটুকু গোনাহের উপকরণ হালকা করছি!
তদ্রুপ তিনি বারবনিতা মহিলার ঘরে যেতেন। তাকে তার নির্দিষ্ট বিনিময় দিয়ে দিতেন। তাকে বলতেন, এই রাত শুধু আমার ভাগ। দরজা লাগিয়ে দাও সকাল পর্যন্ত। ভোর হলে চলে আসতেন আর বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমি বারবনিতা ও নষ্ট যুবকদের কিছুটা হলেও গোনাহকে হ্রাস করলাম!
ঐ স্ত্রী আরও বলল, লোকজন তাঁকে মদ খরিদ করতে ও বারবনিতার ঘরে যেতে দেখত, তাই তারা তার ব্যাপারে মন্তব্য করত। আমি একবার তাঁকে বললাম, আপনি যদি মারা যান, তাহলে আপনাকে গোসল করানো, কাফন-দাফন করা ও জানাযার নামাজ পড়ার কোন মুসলমান ব্যক্তিকে পাবেননা। তিনি মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, তুমি এই ভয় করছ? ইনশাল্লাহ আমার জানাযার নামাজ পড়বেন স্বয়ং সুলতান, ওলামা ও আউলিয়াগন!
সব শুনে সুলতান হুহু করে কেঁদে ফেললেন! তিনি বললেন, কসম আল্লাহর! তিনি সত্য বলেছেন। আমিই সুলতান মুরাদ। ইনশাআল্লাহ আগামিকাল আমি তাঁকে গোসল দেব। কাফন-দাফন করব। জানাযার নামাজ পড়ব। পরদিন সত্যিই সুলতান, ওলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম ঐ ব্যক্তির জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রঃ (الإمبراطورية العثمانية-Ottoman Empier এর বরাতে ‘মাযকারাতুস সুলতান মুরাদ আর-রাবি’অ)
©Ainul Haque Qasimi
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪০