somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উসমানীয় সুলতান মুরাদ-৪ এর সময়কার হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা

১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একবার Ottoman সুলতান চতুর্থ মুরাদ তার দিলের মধ্যে অশান্তি অনুভর করতে লাগলেন। রাজপ্রাসাদের প্রধান প্রহরীকে তলব করলেন। খবর পেয়ে প্রধান প্রহরী উর্ধশ্বাসে ছুটে এসে হাজির। বিনয়াবনত হয়ে আনত নয়নে জিজ্ঞেস কর
– কী হয়েছে জাঁহাপনা?
-দিলের মধ্যে অশান্তি অনুভব করছি!
-কারণ কী?
-জানিনা!
কী করা যেতে পারে জাঁহাপনা?
চলো, একটু বাইরে ঘুরে আসি। উল্লেখ্য, মাঝেমধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের হাল-তবিয়ত জানা সুলতানের অভ্যাস ছিল।

সুলতান প্রধান প্রহরীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। শহরের এক প্রান্তে লোকালয়ের দিকে রওয়ানা হলেন। হঠাৎ রাস্তার মধ্যে এক ব্যক্তির নিথর দেহ পতিত অবস্থায় দেখতে পেলেন। সুলতান দ্রুত কদমে এগিয়ে আসলেন। শরীরে নাড়া দিলেন। কিন্তু এ কি, লোকটি মারা গেছে! আবার পথিক লোকজন পাশকেটে চলাফেরা করছে কিন্তু কেউই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছেনা! সুলতান যারপরনাই আশ্চর্য হলেন রাস্তা অতিক্রমকারী লোকদের এহেন ব্যবহার দেখে!



তিনি দারাজ কন্ঠে হাক ছুঁড়লেন- এই তোমরা এদিকে আসো…
-কী হয়েছে আপনার? ডাকছেন কেন?
-এই ব্যক্তি এখানে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে কেন? আর তোমরাই বা একে উঠিয়ে নিচ্ছ না কেন? এই ব্যক্তির পরিচয় কি? তার পরিবার কোথায়?
– এই লোকটি যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী!
-আরে এ কি মুহাম্মদ সা. এর উম্মত নয়?! একে উঠাও। তার পরিবারের কাছে নিয়ে চলো। লোকেরা লোকটিকে উঠিয়ে তার পরিবারের কাছে নিয়ে আসলো।

স্বামীর নিথর লাশ দেখতেই স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়ল। বিলাপ করতে লাগল আর বলতে থাকল, আল্লাহ তোমার উপর রহম করুক হে আল্লাহর ওলি! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সত্যিই তুমি একজন সৎকর্মী! সুলতান বিলাপকারিনী মহিলার এই কথাটি শুনছিলেন আর যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হচ্ছিলেন!

কিছুক্ষণ পর লোকজন চলে যাওয়ার পর সুলতান নিজের আশ্চর্যের গোলকধাঁধা থেকে বের হওয়ার জন্য মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্বামী কিভাবে আল্লাহর ওলি হয়, অথচ লোকেরা বলল যে, সে একজন যিন্দিক, মদখোর, ব্যভিচারী?! শুধু তাই নয়, লোকেরা তোমার স্বামীর লাশকে ছুঁইতেও চাচ্ছেনা?!

-আমি তা জানতাম। এরপর মহিলা তার স্বামীর কাহিনী বলতে শুরু করল-

-আমার স্বামী প্রতিদিন রাতে মদের দোকানে যেতেন। যতটুকু পারতেন মদ খরিদ করে ঘরে নিয়ে আসতেন। অতঃপর তা টয়লেটে ঢালতেন আর বলতেন, আমি যতটুকু সম্ভব ততটুকু গোনাহের উপকরণ হালকা করছি!

তদ্রুপ তিনি বারবনিতা মহিলার ঘরে যেতেন। তাকে তার নির্দিষ্ট বিনিময় দিয়ে দিতেন। তাকে বলতেন, এই রাত শুধু আমার ভাগ। দরজা লাগিয়ে দাও সকাল পর্যন্ত। ভোর হলে চলে আসতেন আর বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমি বারবনিতা ও নষ্ট যুবকদের কিছুটা হলেও গোনাহকে হ্রাস করলাম!

ঐ স্ত্রী আরও বলল, লোকজন তাঁকে মদ খরিদ করতে ও বারবনিতার ঘরে যেতে দেখত, তাই তারা তার ব্যাপারে মন্তব্য করত। আমি একবার তাঁকে বললাম, আপনি যদি মারা যান, তাহলে আপনাকে গোসল করানো, কাফন-দাফন করা ও জানাযার নামাজ পড়ার কোন মুসলমান ব্যক্তিকে পাবেননা। তিনি মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, তুমি এই ভয় করছ? ইনশাল্লাহ আমার জানাযার নামাজ পড়বেন স্বয়ং সুলতান, ওলামা ও আউলিয়াগন!

সব শুনে সুলতান হুহু করে কেঁদে ফেললেন! তিনি বললেন, কসম আল্লাহর! তিনি সত্য বলেছেন। আমিই সুলতান মুরাদ। ইনশাআল্লাহ আগামিকাল আমি তাঁকে গোসল দেব। কাফন-দাফন করব। জানাযার নামাজ পড়ব। পরদিন সত্যিই সুলতান, ওলামা ও আউলিয়ায়ে কিরাম ঐ ব্যক্তির জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রঃ (الإمبراطورية العثمانية-Ottoman Empier এর বরাতে ‘মাযকারাতুস সুলতান মুরাদ আর-রাবি’অ)

©Ainul Haque Qasimi
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×