সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে ঝড় যাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন মনে হচ্ছ এ ঝড়ে হাওয়া দেবার জন্য যেন আমরা সবাই উঠে পড়ে লেগেছি। কেউ কেউ মিথ্যা তথ্যসম্বলিত ই-মেইল বুঝে না বুঝে চারদিকে ছড়াচ্ছি , কেউ বা অতি উৎসাহে ভিডিও কিম্বা অডিও আপলোড করছি- প্রতিযোগিতা যেন সবার আগে এক্সক্লুসিভ কোন খবর ছড়ানোর। আর এ করতে গিয়ে কেউ কেউ আমরা তথ্য অধিকার থেকে শুরু করে বাক স্বাধীনতা পর্যন্ত সব তাত্ত্বিক যুক্তি দিতেও ছাড়ছি না। বুঝতেও চাচ্ছিনা স্বাধীনতা মানে তার যথেচ্ছ ব্যবহার নয়। এই ঢাকে এবার বাড়ি দিলেন বাংলাদেশ সরকার। ইউ টিউব এবং অন্য কিছু সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট বাংলাদেশ থেকে যাতে প্রবেশ করা না যায় তার ব্যবস্থা নিয়েছেন সরকার। কারণ ও সব সাইট এ কিছু ক্লাসিফাইড ভিডিও আর অডিও আপলোড করেছেন কিছু অতি উৎসাহি ব্যক্তি। সরকারের ধারণা হয়ত এ ভাবে এই সব আন্যায় আচরণ বন্ধ করা যাবে।
সরকার যে উদ্দেশে বর্তমান পদক্ষেপ নিয়েছেন তা যুক্তিযুক্ত । মিথ্যা আর অর্ধসত্য তথ্য ছড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু কাজটি করবার আগে তারা একবারও কি ভাবলেন না ইন্টারনেট সেল ফোন নেটওয়ার্ক নয়- একে বন্ধ করা আসলে সম্ভব না। শুধু গেইটওয়ে তে স্ক্রিপ্ট লিখে ওয়েব ২ এর প্রবেশাধিকারে বাধা দেয়া যাবে না। বাইপাস করার অসংখ্য পদ্ধতি এখন সবারই জানা আছে প্রায়। তাই এ হাস্যকর পদক্ষেপে সরকার শুধুমাত্র অপদস্থই হলেন।
হঠাৎ এই হঠকরি সিদ্ধান্তে সরকার যে তার প্রাযুক্তিক অদক্ষতাই দেখালেন তা নয় বরং আমরা যাদের হাতে আমাদের দেশের নেটওয়ার্ক রক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছি তাদের পেশাগত জ্ঞানের সীমাব্ধতারও প্রকাশ ঘটালেন। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ যা করতে পারতেন তা হল যে সব সাইটে বাংলাদেশের জন্য হানিকর উপকরণ আপলোড করা হচ্ছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবার জন্য অনুরোধ করা। আমরা বেশ বুঝতে পারছি এই সামান্য বিষয়টি সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না বিটিটিবির। তারা হয়ত ভেবেছিলেন ইন্টারনেট মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক এর মতই যখন খুশি বন্ধ করা যায়!
আর একটি বিষয়ও ভাবতে হবে । যে সব সূত্র থেকে আপলোড চলছিল তা খুঁজে দেখা খুবই জরুরি। ষড়যন্ত্রের শেকড় যে সেখানেও ছড়ান! প্রধান মন্ত্রী আর সেনাবাহিনীর বৈঠক কে বা কারা রেকর্ড করলেন তা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে এই বৈঠক পাবলিক মিটিং ছিল না। এর রেকর্ড প্রচার তাই অত্যন্ত বিপদজনক। যারা এ কাজ করেছেন তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া জরুরি। এমন একটি মিটিং এ মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখতে দেয়া কোনভাবেই যুক্তিপূর্ণ ছিল না। এ ঘটনা আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বেহাল অবস্থার ই বহিপ্রকাশ।
সাইবার সিকিওরিটি আজকের দুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তারই এক অংশ। বাংলাদেশ তার প্রস্তর যুগের প্রাযুক্তিক জ্ঞান দিয়ে এ ভাবে বেশিদিন নিরাপদ থাকবেনা। তাই নীতিনির্ধারণের সময় এখনই । আশাকরি সরকার তার ভুল বুঝতে পারবেন এবং সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৭:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




