somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিএসপি সুবিধা বাতিল যুক্তরাষ্ট্রের মারাত্মক --bangla news 24.com

২৪ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রমিকদের প্রাপ্ত অধিকার দিতে ব্যর্থ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বিশেষ অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন।

কেবল প্রথমবার নয়, ওবামা প্রশাসনের এ রকম কিছু আনাড়ি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের কারণে প্রায়ই আমাকে অবাক হতে হয়।

সন্দেহ নেই, সাম্প্রতিককালের দুর্ঘটনায় (রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ড) প্রায় ১৫শ’ শ্রমিক নিহত হওয়ার দুঃসংবাদই ওবামাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

কিন্তু তার সিদ্ধান্ত কি ফলপ্রসূ হয়েছে? সেকেলে কায়দায় বাংলাদেশি কারখানা মালিকদের শাস্তি দিতে তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা একেবারেই ব্যর্থ বলা যায়।

ভাল খবর হলো ওবামা বাংলাদেশের দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন। তবে যারা দাস-দাসীর মতো একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করে বিশ্বের মানুষের জন্য কাপড় তৈরি করে নিজেদের এবং নিজেদের দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে চলেছেন তারা এই পদক্ষেপে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা কি জানতে পারবেন ওবামা? জানতে পারলে হয়তো আরও বেশি আঘাত পাবেন তিনি।

ওবামা হয়তো ভেবেছিলেন, তিনি যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না, যে কারণে জিএসপি বাতিলের পূর্বে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যে পদক্ষেপ নিলেন তা অনেক কঠিন হয়ে গেলো।

কারণ তার এই সিদ্ধান্তই যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রদানে পদক্ষেপ নিতে কোনো ভূমিকা রাখার তাগাদা দিচ্ছে না। বরং তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ থেকে ১২শ’ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের পোশাক আমদানি করা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে নেতিবাচক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ যোগাতে পারে। বিশ্বমানের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করতে পারে এবং বাংলাদেশের বাজার থেকে কোম্পানিগুলোকে সরে আসার চিন্তায়ও ফেলে দিতে পারে।

ইতোমধ্যে ‍তার নেতিবাচক প্রমাণও মিলছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি পোশাক ক্রেতা কোম্পানি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশ বলতে এখন কেবল নেতিবাচক বার্তায়ই দেয়।’ অর্থাৎ তারা আর বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে না।

মার্কিন এই কোম্পানিটির সঙ্গে অনেক বিদেশি কোম্পানিও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশ থেকে পোশাক ক্রয়ের সুযোগ খুঁজছে।

একটু ইতিহাসের গল্প বলি। পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশের জন্ম দেখেছি আমি। স্বাধীনতা লাভ করলেও এর অর্থনীতি একেবারেই ভঙ্গুর ছিল। তখন কিছু পণ্য রপ্তানি করার যোগ্যতা অর্জন করলেও প্রায় সব রকমের মৌলিক পণ্য, খাবার এবং পোশাকের জন্য আমদানির মুখোমুখি হতে হতো বাংলাদেশকে।

স্বাধীনতা লাভের পর দেশটির ভঙ্গুর যোগাযোগ ব্যবস্থা‌ ছিল এর অর্থনীতির প্রধান প্রতীক। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর কেবল মানসিক শক্তি ও উদ্দীপনা ছাড়া আর কী ছিল দেশটির?

অথচ আজকের গল্প অনেক সাফল্যের। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। এজন্য অজস্র ধন্যবাদ দিতে হয় এখানকার পোশাক কারখানায় কাজ করা নারী শ্রমিকদের। বিশ্বের অর্থনৈতিক বাজারে বাংলাদেশ যে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করছে তার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছেন এই নারী শ্রমিকরা। দেশটির মাথাপিছু আয় প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ শতাংশ বাড়ছে, এ দিক থেকে সংঘবদ্ধ অর্থনৈতিক রাষ্ট্রসমূহের (গ্লোবাল ইকোনমিক লিগ টেবিল) তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম!

নিজেদের পরিশ্রমের কল্যাণে ইতোমধ্যে গোল্ডম্যান সাচ’ এন-১১ গ্রুপে (এগারটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ) স্থান করে নিয়েছে দেশটি। অর্থাৎ একবিংশ শতকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পর গতিশীল ১১ রাষ্ট্রের মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এই তালিকার নামগুলো নিয়ে বেশ প্রশ্ন রয়েছে তবু মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে নিজের নাম বসাতে পেরেছে মাত্র চার দশক আগের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ রাষ্ট্রটি।

১০ বছর আগেও কি কেউ বাংলাদেশের এমন উন্নয়ন কল্পনা করেছিল? কিন্তু এখানকার নারী শ্রমিকরা দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন পোশাক কারখানায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে তারা জীবন-যাত্রার মানে এনেছেন বিশাল সাফল্য। গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, নারী শিক্ষা এবং শিশুর পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশি দেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে।

ওবামা কি চান তার এই ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ দারিদ্র্য জয়ের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে দিক। সরাসরি লাঠি ব্যবহার করার চেয়ে মুলা ঝোলানো কি ওবামার পক্ষ থেকে অনেক ভাল পদক্ষেপ হতো না? তিনি কি পারতেন না যুক্তরাজ্য সরকারের মতো তাদের পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রপ্তানিকারক দেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিতে?

ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে সঠিক আচরণ করেছে। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুরক্ষার শর্ত দিয়েছে তারা। অথচ যুক্তরাষ্ট্র একদমই অন্য পথে হাঁটলো? একটুও বিবেচনা করার বোধ জাগেনি নীতি-নির্ধারকদের!

একটি সতর্ক সংকেত দিলে পোশাক কারখানাগুলো শ্রমিকদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতো। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কি কারাখানা মালিকদের সঠিক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দেবে?

সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরাই সবচেয়ে কম পারিশ্রমিকে পোশাক উৎপাদন করে থাকেন। ৪৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে একজন বাংলাদেশি শ্রমিক পেয়ে থাকেন ৩৭ মার্কিন ডলার (প্রায় দুই হাজার ৯শ’ টাকা), যেখানে একজন কম্বোডিয়ান নাগরিক পেয়ে থাকেন ১২০ মার্কিন ডলার (নয় হাজার সাড়ে তিনশ’ টাকা), ভিয়েতনামি নাগরিক ১৪৫ মার্কিন ডলার (১১ হাজার তিনশ’ টাকা) এবং একজন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক পেয়ে থাকেন ৩০০ মার্কিন ডলার (২৩ হাজার তিনশ’ টাকা)।

দারিদ্র্য জয়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করা বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে কোথায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম কিম? বৈশ্বিক দারিদ্র্য কমানোর জন্য তিনি অনেক বড় বড় বিবৃতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু যে দেশের শ্রমিকরা দারিদ্র্য জয়ের লক্ষ্যে লড়াই করছেন তখন কেন তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না? কোনো বক্তব্য পেলাম না তার ব্যাংকের পক্ষ থেকেও, বক্তব্য নেই এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকেরও, এমনকি এ ব্যাপারে চুপসে গেছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোও!

তাহলে কি তারা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আহবানের অপেক্ষায় বসে আছেন যে, রাজনৈতিক দুর্নীতিতে জর্জরিত আমাদের উদ্ধার করুন! লজ্জা!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×