প্রিন্টার্স লাইনে বইয়ের দাম দেখে হালকা স্ট্রোকের মতো হয়ে গেল;বইখানা হাত থেকে খসে স্টলের টেবিলে পরে গেল।তবে নিজের পতন রোধ করা গেল। একটা ২৫০ পৃষ্ঠার বই--প্রচ্ছদ মূল্য ৬০০ টাকা। মেলায় ২৫% কমিশন দিলে দাম হবে ৪৫০ টাকা।যা সব দিক বিচারে অত্যন্ত বেশী।দেশে অনুবাদ বইয়ের বিপুল চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে লেখক-প্রকাশকরা মনের সাধ মিটিয়ে ব্যাবসা করে নিচ্ছে।সব কিছুর একটা ব্যাবসায়িক দিক থাকে।সমস্যা সেটা না।সমস্যা হলো তারা ব্যবসাটা একজন-দুইজন পাঠকের সাথে করতে চায়।দশজন পাঠকের সাথে ব্যাবসা করলে বইয়ের দাম যেমন কম রাখা যায়,তেমনি বইয়ের বিক্রিও বাড়ে।রাতারাতি বড়লোক হওয়ার নেশাটা এদেশে এখন সবার মাঝে কাজ করে।তিন হাজার কপি বই বিক্রি করার চেয়ে তারা ৫০০ কপি বই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা শ্রেয় মনে করে।তাদের আশার জায়গাটা হলো---বাংলাদেশ মানুষের দেশ।মানুষ যদি ভুল করেও তাদের বই কেনে তাহলেও তাদের ৫০০ কপি বই বিক্রি হয়ে যাবে।আর লেখকদের সেই অবার্চীন ডায়লগ তো আছেই--“যারা কেনার তারা দাম দিয়েই কিনবে।”খুবই ক্লিশে,দুর্বল,হাস্যকর সেই ডায়লগ।
অনেকে বলবেন অনুবাদক কষ্ট করে অনুবাদ করেন--সেটার দাম আপনি দেবেন না?অবশ্যই দেব,তার আগে লেখক-প্রকাশক কে নিশ্চিত করতে হবে তারাও মূল লেখককে(যাদের বই অনুবাদ করা হচ্ছে) রয়্যালটি বুঝিয়ে দিচ্ছেন বা তার কাছ থেকে অনুবাদ করার অনুমতি নিয়েছেন।বাজারে বর্তমানে সবদিক বিবেচনা করলে একটা ২৫০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম সর্ব্বোচ্চ ৩৫০ হতে পারে(কমিশনের পরে)।বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সহ আরো অনেক প্রকাশনী এর চেয়ে কম মূল্যে সেরা সেরা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ---
১.সোনা বা ডায়মন্ডের মতো ক্যারেটের মাধ্যমে বই বিক্রি হবে ।সেলস ম্যান ক্রেতাকে বলবে,“এই বইটা নিয়ে যান।একদম খাটি বই--২৪ ক্যারেটের।এটা না নিলে ওটা নেন।ওটাতে একটু খাঁদ আছে--২২ ক্যারেটের।দুইটাই ভালো বই।
২.কিস্তিতে বই বিক্রি হবে।দু-তিন মাসের কিস্তিতে বই বিক্রি হবে।
৩.বই কিনলে টিভি,ফ্রিজ ফ্রী দেওয়া হবে বলে বই বিক্রি হবে।
৪.নিদেন পক্ষে বই কিনলে র্যাফেল ড্র বিজয়ী হওয়ার লোভ দেখিয়ে বই বিক্রি হবে।ইতোমধ্যে রিভিও লেখার মাধ্যমে অর্থ পুরষ্কার দেওয়ার রীতি চালু হয়ে গিয়েছে।
৫.মানুষজন ভাগায় বই কিনবে।দু’জন বা চারজন রুমমেট মিলে বা বন্ধু মিলে একটা বই কিনবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৩