(১)
বই মেলায় এক স্টল থেকে বই কিনে বের হয়েছি,দেখি দুই যুবক একটা বই নিয়ে আলাপ করছে।প্রথম যুবক দ্বিতীয় যুবককে বলছে---সিক্রেটস অব জায়োনিজম নামে একটা বই বের হয়েছে।বইটা কি নিয়ে জানোস?
দ্বিতীয় যুবক জবাব দিল--আরে এইটা জানোস না।আমি জানি ব্যাপারটা।তোরে বলতেছি,শোন।জায়োনিজম হইলো ভারতের জৈন ধর্মালম্বীদের একটা মতবাদ,ওদের বিশ্বাস।
(২)
কাজের বুয়াঃ কিছু টাকা দেন ছেলেরে স্কুলে ভর্তি করামু।
মুরুব্বীঃকোন স্কুলে ভর্তি করবা।
বুয়াঃপেরাইভেট একটা স্কুলে।
মুরুব্বীঃসরকারিতে ভর্তি করাও,টাকা কম লাগবে।
বুয়াঃনা খালাম্মা,সরকারিতে সার্টিফিকেট ভালো,কিন্তু পড়াশোনা ভালো না।
সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি।
একজন শিক্ষিত কিন্তু তার কাছে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অল্প খরচে লেখা পড়া করার উপায়।আরেকজন অশিক্ষিত কিন্তু তার কাছে পয়সার চেয়ে শিক্ষার গুরত্ব বেশি।
(৩)
অনেক বছর আগের কথা।আমার এক বন্ধু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছে,কারন যে বিষয়ে এমবিএ করবে সেটা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ভর্তি পরীক্ষা কেমন কঠিন হয়?সে বললো,প্রশ্ন ভয়ংকর কঠিন হয়।তার নিজের ৭০% এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর সঠিক হয়ে থাকতে পারে।কিন্তু সেটা ব্যাপার না। ব্যাপার হলো যে ভর্তিচ্ছুক পরিক্ষার্থি ভর্তি পরীক্ষায় ২০ পেয়েছে সেও চান্স পেয়েছে,যে ৭০ নম্বর পেয়েছে সেও চান্স পেয়েছে।
আমি তাকে বললাম তাহলে এতো কঠিন প্রশ্ন করে লাভ কি?তারা তো ভালো-খারাপ সবাইকেই নিচ্ছে?
বন্ধুটি বললো,লাভ আছে।মানুষ যখন প্রশ্ন-পত্র দেখবে তখন ভাববে হেভী কঠিন প্রশ্ন করছে --ভার্সিটিটা ভালো তো।আর ভার্সিটিও শো করবে যে তারা কতো কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ছাত্র বাছাই করছে।ভেতরের খবর তো কেউ জানবে না।
(৪)
আমার কাজিন একটা বেসরকারী ভার্সিটিতে পড়তো।আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,তোমাদের ডিপার্টমেন্টের মনঞ্জুস্রী চৌধুরি বলে কোন টিচারকে চেনো?সে বললো,- না।নতুনরা যাওয়া আসার মধ্যে থাকে।নতুন হলে চিনবো না।
আমি বললাম,-নতুন নয়,অনেক সিনিয়র তিনি।
এবার সে বললো,দাড়ি আছে উনার?আমাদের বিভাগে একজন সিনিয়র শিক্ষক আছেন,দাড়িওয়ালা।
আমি বুঝলাম তার ভার্সিটিতে ওই নামে কেউ নেই।হয়তো কখনো ছিল বা কখনোই ছিল না--তার নামটা শুধু ব্যাবহার করা হয়েছে।শিক্ষাবিদ ড.মনজ্ঞুস্রী চৌধুরি বাংলাদেশের মহিলা সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম।ফাইভ-সিক্সের বাংলা বইতে তার লেখা আমরা ছোটবেলায় পড়েছি।তার মতো সাহিত্যিক যদি কোন ভার্সিটিতে পড়িয়ে থাকেন তাহলে অন্তত সেই ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের তা জানার কথা। রাবির দর্শন বিভাগের ছাত্ররা কি জানবে না হাসান আজিজুল হকের কথা?
এসব ভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসাবে যেসব বড় বড় নাম দেওয়া থাকে তা ভার্সিটির বিপনন বাড়ানোর একটা কৌশল ছাড়া কিছু না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫