নাম মানুষের এমন জিনিস যা সেই মানুষের চেয়ে অন্যরা বেশি ব্যাবহার করে।এদেশে মানুষ ছেলেমেয়ের নামকরনের জন্য শ্রুতিমধুর,শুভ অর্থবহ নাম খোজে ।এখন অবশ্য আরেকটা ক্রাইটেরিয়া যোগ হয়েছে---নাম আন-কমন হতে হবে।বছর দশেক আগে কি একটা ট্রেন্ড চালু হল,সবাই গণহারে ছেলেদের নাম আহনাফ আর মেয়েদের নাম রাইসা রাখা শুরু করলো।এরপর শুরু হল প্রিয়াংকা যুগ। যে মেয়ের নাম সখিনা সেও বলতে শুরু করলো তার নাম পিয়াংকা(অনেকে প্রিয়াংকা উচ্চারণ করতে পারে না)।অর্থাৎ নাম বা নিক হতে হবে প্রিয়াংকা।তারও বহু আগে নব্বইয়ের দশকে একবার শুরু হল আরবী কায়দায় ইবনে,বিনতে দিয়ে নাম রাখার চল।
হুমায়ূন আহমেদ জানাচ্ছেন আমেরিকান লোকদের বিচিত্র নামের কথা। তার পরিচিত দুজন লোকের নাম ছিল যথাক্রমে ফক্স টেইল ও অক্স ব্যাক।
ঢাকার একটি নামকরা কলেজের রসায়নের এক টিচার তার তিন ছেলের নাম রেখেছিলেন জৈব যৌগের নামে--ইথেন,মিথেন,প্রোপেন। অবিশ্বাস্য ঠেকলেও বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না।স্যার প্রাইভেট পড়ানোর সময় তার ছাত্রদের সামনেই তার ছেলেদের ইথেন,মিথেন,প্রোপেন বলে ডাকতেন।
অন্যপ্রকাশের মাজহার হুমায়ূন আহমেদের কাছে তার ছেলের জন্য নাম চাইলেন। হুমায়ূন আহমেদ নাম দিলেন অরন্য। মাজহার এই নাম রাখতে রাজী হলেন না। ছেলের নাম অরন্য রাখলে ছেলের স্বভাবে বন্য ভাব চলে আসতে পারে।
নামের প্রভাব সবসময় ইতিবাচক নাও হতে পারে।অনেকে ছেলের নাম রাখে সালেহ অর্থাৎ ভালো। অথচ ছেলের যন্ত্রনায় টেকা দায়।ছেলে দুষ্টের শিরোমণি।
হুমায়ূন আহমেদকে একবার তার পরিচিত একজন তার সন্তানের জন্য নাম ঠিক করে দিতে বললেন।শর্ত দুটো-- নাম ‘আ’ দিয়ে শুরু হতে হবে এবং নামের অর্থ নদী হতে হবে।হুমায়ূন আহমেদ তাকে বললেন,‘আড়িয়াল খা নাম রাখুন।নাম আ দিয়ে শুরু এবং নামের অর্থ নদী।’
এগুলো মোটামোটি সবারই জানা।আর পুরনো কথায় না যাই।
অনেক বাচ্চার নাম রেলগাড়ীর মত দীর্ঘ থাকে।নাম জিজ্ঞেস করলে নিজের নাম বলে নিজেই হাপাতে থাকে। যেমন--অনেকের নাম হয় মোহাম্মদ আবু আফতাব ছালে মোহাম্মদ ফজলে এলাহী আতা।নামের মধ্যে দুইবার মোহাম্মদ,কোন মানে হয়?
অনেকের বাল্যকালে একাধিক নাম থাকে।বাবার দিকের আত্মীয়রা এক নামে ডাকে,মার দিকের আত্মীয়রা আরেক নামে ডাকে।আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে একবার নতুন একটা ছেলে আসলো।৬-৭ বছর বয়স। পিয়াস,তমাল,সঞ্জয়সহ তার মোট ২৬ টা নাম ছিল।কোনটা তার ঠাকুর মা রেখেছে,কোনটা রেখেছে তার পিসে;কোনটা পিসি,কোনটা খুড়ি,কোনটা মাসি,কোনটা ওমুক দিদি,কোনটা তমুক দিদি রেখেছে।আমরা মাঝে মাঝেই তার সবগুলো নাম শুনতে চাইতাম।সে উৎসাহের সাথে এক মিনিটের কম সময়ে একটানে তার বাকি নামগুলো মুখস্তের মতো করে উগড়ে দিত।
আমাদের সেই বিল্ডিংয়ের নীচ তালায় এক আন্টি ছিল।উনি তার মেয়ের নাম ঠিকমতো বলতে পারতেন না। কেউ তার মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন তার মেয়ে নাম ‘ ফিংকি(পিংকি)’।আন্টির বাড়ি ছিল নোয়াখালি।
মানুষ এমন অনেক নামকরন করে যা লেখালেখি বা সাহিত্য সংক্রান্ত।লেখালেখি সংক্রান্ত মানুষের নাম---
১.কবিতা
২.পদ্য
৩.রচনা
৪.কাব্য
৫.লিখন
৬.লেখা বা চিত্রলেখা।
৭.সনেট
৮.ভূমিকা
৯.সূচনা
১০.রুপকথা।(নাটকিয় নাম,বাস্তবে পাই নাই)
১১.লেখক(লেখক ভট্টাচার্য)
এর বাইরে কিছু থাকলে আপনারা যুক্ত করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ২:৩৮