বাংলাদেশে তুর্কি ধারাবাহিকের সূচনা সুলতান সুলেমান সিরিজের মাধ্যমে। এক সময়ের পরাক্রম তুরস্কের সুলতান, তাদের বর্নাঢ্য জীবন ও সম্রাজ্য বিস্তার সম্বন্ধে এদেশের জনগণ সামান্যই অবগত ছিল।ফলে সিরিয়ালটি দর্শকপ্রিয়তা পায়।বর্তমানে এটি ৩য় বারের মতো পুনপ্রচার করা হচ্ছে।
রাজা বাদশাহ কেন্দ্রিক ধারাবাহিক ছাড়াও তুর্কি সামাজিক পারিবারিক কাহিনি নির্ভর ধারাবাহিকগুলো একসময় প্রচারিত হতে শুরু করে।টিভি দর্শক বাদেও অনেকে নেট থেকে ডাউনলোড করে জান্নাত সিরিজটি দেখেছেন সে সময়।এরপর তুর্কি সিরিজের ঢল নামে বাংলাদেশে।
এসব সিরিজে কিছু কমন গৎ বাধা বিষয় থাকে।আসুন দেখা যাক এ সব সিরিজে কি থাকে----
১)নায়িকার/নায়িকার মার একটা বিবাহ বহির্ভুত সন্তান থাকে যাকে নিয়ে নায়িকা/নায়িকার মা স্ট্রাগল করবে। লক্ষ্য করবেন বিবাহ বহির্ভুত সন্তানটি মেয়ে হলে সেটি নায়িকা হয়,ছেলে হলে সেটি মাইনর ক্যারেক্টার হয়।একটা বিবাহ বহির্ভুত শিশুর উপস্থিতি প্রায়শই তুর্কি ধারাবাহিকে দেখা যায়।
২)নায়ক কাছের বন্ধু দ্বারা প্রতারিত হয়।দীর্ঘ দিন পর নায়ক প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসে।নায়কের বন্ধুও প্রতারিত হয়ে প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসতে পারে।
এই ফর্মুলায় যেভাবেই হোক নায়কের শত্রুরা পূর্বে নায়কের বন্ধু ছিল।
৩)নায়ক/নায়কের গুরু ডন হলে তাদের চেয়েও বড় ডনের আবির্ভাব ঘটে শহরে।নায়ক ব্যবসায়ি হলে আরো বড় ব্যবসায়ির আগমন ঘটে।নায়ক স্ট্রাগল করতে থাকে।দর্শকের নাভিশ্বাস উঠে যায়---নায়ক বাচবে তো?
৪)নায়ক বা নায়িকার বাবা মার দ্বিতীয় বিয়ে থাকে।দুই পক্ষের ছেলে মেয়ে ও দুই সংসার নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
৫)যখন আর কাহিনি বানাতে পারে না তখন একটা হীরের নেকলেস চুরি যায়।সেটা বিভিন্ন জনের হাতে ঘুরতে থাকে।এক সময় নেকলেস মালিকের কাছে ফেরত আসে,নেকলেস সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হয়।
৬)ঐতিহাসিক নাটক হলে হাম্মাম খানায় মেয়েদের গোসল দৃশ্য থাকবে।রাজা বাদশার কাহিনি হোক বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনি হোক হাম্মাম খানার পরিবেশ ও সেখানে গোসলের দৃশ্য একই রকম থাকে।
৭)গোপন তথ্য জেনে ফেলায় বেশুমার দাসী,খাস দাসী গুপ্ত হত্যার শিকার হয় রাজপ্রাসাদে।সুলতান তদন্তের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত।বিচার আর হতে দেখা যায় না।বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুধু এদেশেই নয়,বিদেশেও বিদ্যমান ছিল।
৮)নায়িকা ধনীর দুলালী হলে ভালবাসবে হত দরিদ্র রাস্তার ছেলেকে।নায়ক ধনীর দুলাল হলে ভালবাসবে গরীবের মেয়েকে।
৯)যে যত দরিদ্র তার আত্ম-সম্মানবোধ ততো বেশি।
রাস্তায় কোটি লিরার প্যাকেট পড়ে থাকলে নায়িকার বাবা সেটা ছুয়েও দেখবে না।
১০)প্রায় সিরিয়ালেই স্মৃতি হারানোর প্লট থাকে।নূন্যতম একবার,এমনকি একাধিকবারও থাকতে পারে।
১১)প্রায় সামাজিক/পারিবারিক নাটকে আলগা সাসপেন্স তৈরি করতে কিডন্যাপিং ঘটনা থাকে।কোন কোন সিরিয়ালে কিডন্যাপিং ডাল-ভাত সমতূল্য হয়ে যায়।সিরিজের বিভিন্ন চরিত্র বিভিন্ন সময়ে অপহৃত হয়।
এখন যেসব তুর্কি সিরিজ প্রচারিত হচ্ছে সেগুলো হিন্দি সিরিয়ালের সামান্য উন্নত সংস্করন।হিন্দি সিরিয়ালের মতো এগুলোর গল্প টেনে লম্বা করা হয়। কাহিনিতে যথেষ্ট গোজামিল থাকে।শুরুর দিকে একটা গল্প থাকলেও একসময় কাহিনি ফর্মূলার ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকে।তবে তুর্কি সিনেমাগুলো অসাধারন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ২:০৮