হারুকি মুরাকামি জনপ্রিয় জাপানি লেখক।তার বই ৫০ এর অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে,বিক্রি হয়েছে লাখ লাখ কপি।তার কাফকা অন দ্যা শোর অসাধারন উপন্যাস।তার চেয়েও অসাধারন এর কলকাতা অনুবাদ।এই উপন্যাসের মাধ্যমে মুরাকামির লেখার সাথে আমার পরিচয়।এর পর পড়ে ফেললাম তার উপন্যাস হেয়ার দ্যা উইন্ড সিং।এই ছোট বইটি পড়তে আমার ৪ বছর সময় লেগেছে।মানে ৪ বছর আগে পড়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছিলাম।কিছুদিন আগে জিয়া হাসানের অনুবাদে বইটি পড়া শেষ হল।
বইটি প্রথম থেকেই খাপ ছাড়া,খাপ ছাড়া।জো'র বারে বসে গল্প কথক আর তার বন্ধুর ধনী লোকদের মন্ডুপাত করা দিয়ে উপন্যাসের শুরু।দিনের পর দিন সেখানে তাদের আড্ডা মারা চলতে থাকে।গল্প কথক বা তার বন্ধু সম্পর্কে পাঠক অন্ধকারে।তারা কে,কি করে,তাদের ব্যক্তিত্ত্ব,মানসিকতা কোন কিছুর উল্লেখ নেই।আচমকা এই দুই চরিত্রের উদয়।
পরে গুগল করে দেখলাম শোন বাতাসের সুর মুরাকামির প্রথম উপন্যাস এবং দুর্বলতম উপন্যাস।
তারপর মুরাকামির উপন্যাসে যা হয়।নায়ক,নায়কের বন্ধু, চেনা-অচেনা সবাই ক্লাসিকাল মিউজিকের ভক্ত।তারা উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপিয়ান মিউজিশিয়ানদের মিউজিক শোনে,গান শোনে।সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে।কোন রেকর্ডের কোন গান টা ভাল,কোন রেকর্ডে কোন গান আছে।কোনটার চেয়ে কোনটা ভাল।কোন মিউজিক শুনলে কি অনুভূতি হয়।কোন রেকর্ড লেবেল কোন লং প্লে ডিস্ক বের করেছে,এসব নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষন করে যা গল্পের জন্য অপ্রয়োজনীয়।পাঠকের জন্য বিরক্তিকর।তার সব বইতে এই বিরক্তিকর বিষয়টা আছে।মুরাকামি ব্যক্তিগত জীবনে ক্লাসিকাল ও জ্যাজ মিউজিকের ভক্ত।এর জের উপন্যাসে বিরক্তিকর ভাবে টেনে না আনলে ভাল হত।উপন্যাসে তার মিউজিক বিষয়ক আলোচনার সাথে পাঠক নিজেকে বা গল্পকে রিলেট করতে পারে না।
মুরাকামির লেখায় আরেকটা গৎ বাধা বিষয় হল---গল্প কথকের সব সময় একটা বন্ধু থাকে যে লেখক হতে চায়।তার উছিলায় লেখা-লেখি নিয়ে বিস্তর আলোচনা থাকে।এমন সব লেখকের আলোচনা থাকে যারা এ দেশে পরিচিত নন।এক্ষেত্রেও পাঠক ঠিক আগ্রহ পান না সে সব শুকনো আলোচনায়।
তার লেখায় অনিবার্য ভাবেই থাকে যৌনতা,অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক,কোন কোন ক্ষেত্রে সমকামিতা এবং এসবের বর্ননা।সম্ভবত এগুলোই এখন বিশ্ব বাজারে ভাল চলে।
মুরাকামির বইয়ের ভাল অনুবাদ পাওয়া মুশকিল। সর্বশেষ তার লেখা স্পুটনিক সুইট হার্ট পড়েছি।উপন্যাসের শেষের দিকে কিছু লাইন দু'বার করে পড়তে হয়েছে।বইটিতে তথ্যগত ভুল আছে।গল্পের শুরুতে নায়িকা সুমেরের বয়স ২২, গল্প কথক নায়কের বয়স ১৮। যদিও তারা একই ইয়ারে পড়ে।গল্পের শেষে সুমেরের বয়স ২২,নায়কের বয়স হয়ে যায় ২৫।
মুরাকামির লেখায় কিছু জটিল দর্শন ও মনস্তত্ত্ব থাকে।অনেক ক্ষেত্রে অনুবাদের কারনে সেগুলো আরো বেশি জটিল আকার ধারন করে।
মুরাকামির সব উপন্যাসেই একটা মেলানকোলি ভাব ছড়িয়ে থাকে।সবাই খুব সিরিয়াস মুডে থাকে।স্বাভাবিক হাসি-ঠাট্টা প্রায় অনুপস্থিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৫২