somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোগল সম্রাটঃ জহিরুদ্দিন বাবর

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বই পর্যালোচনাঃ বাবর
লেখকঃ পিরিমকুল কাদিরভ
জহিরুদ্দিন বাবর।ভারতবর্ষে মোগল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে যিনি সুপরিচিত।তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ভারতবর্ষে ৩০০ বছর শাসন করেছে।যদিও বাবর ছিলেন জাতীতে তুর্ক,তার মুখের ভাষা এবং লিখিত বইগুলোর ভাষা ছিল তুর্কি ভাষা।তার আত্মজীবনী বাবর নামা তুর্কি ভাষাতেই লেখা হয়েছে।
বাবর এক ভাগ্য বিড়ম্বিত বাদশাহ'র নাম।ভাগ্য তাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।কখনো তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে, কখনো তাকে ব্যার্থতার অতল গহবরে আছড়ে ফেলেছে।
বাবরের বাবা উমর শেখ ছিলেন ফরগানার শাসক।তার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পর মাত্র বার বছর বয়সে বাবর সিংহাসনে বসেন।বাবর চাইতেন সমরখন্দের মত তার শহরেও বড় বড় দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, সরাইখানা, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট,বাগান, ফোয়ারা ইত্যাদী নির্মান করতে, যাতে সৌন্দর্যে সমরখন্দ কে ছাড়িয়ে যায় আন্দিজান-ফারগানা।এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।এ উদ্দেশ্য থেকে এবং সমরখন্দ তার পূর্বপুরূষের বাসভূমি বলে তিনি সমরন্দে অভিযান চালান।সাত মাস শহর অবরোধের পর সমরখন্দ দখল করেন।সমরখন্দ দখলে আসলেও বেগদের বিদ্রোহে আন্দিজান হাত ছাড়া হয়ে যায়।শুরু হয় বাবরের সংগ্রামের জীবন।আন্দিজান বাচাতে গেলে সমরখন্দ দখল করে নেয় বুখারার শাসক শয়বানী খান।বাবর একাধিক বার সমরবখন্দ দখল করেন এবং একাধিকবার হাতছাড়া করেন।মাতৃভূমিতে থাকাকালীন পুরোটা সময় জুড়ে বাবরকে শয়বানী খানের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।শয়বানী খান মাভেরাননহরের একের পর এক এলাকা দখল করে নিতে থাকলে বাবর পালাতে থাকেন।
এক পর্যায়ে বাবরকে হিসার পালিয়ে আসতে হয় আর এখানে হিসার ও কাবুলে তার ভাগ্য খুলে যায়।আফগানিস্তানে তিনি সম্রাজ্য স্থাপন করেন।কিন্তু কাবুল বা হিসার সমৃদ্ধ অঞ্চল নয়। সেজন্য তার দৃষ্টি পড়ে সমৃদ্ধ ভারতের উপর এবং পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীর এক লক্ষ সৈন্যকে পরাজিত করে ভারত জয় করে নেন।এই যুদ্ধে বাবর তুলগামা পদ্ধতী অবলম্বন করেন,যা তিনি শিখেছিলেন শয়বানী খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে।
বাবর বইটিতে আছে মহামূল্যবান রত্ন কোহিনূরের প্রসঙ্গ,নিজ প্রাণের বিনিময়ে পুত্র হুমায়ূনের প্রান ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ।নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তানের হায়াত দানের বিষয়ে লেখক চমৎকার একটি লৌকিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।রাজা বাদশাহরা যে কত বিচক্ষন হন তার প্রমান পাওয়া যায় এ ঘটনার বর্ননায়।

বাবরের চরিত্রে কবি ও শাসক দুটি সত্ত্বা অস্তিত্বশীল ছিল।তিনি অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখে গিয়েছেন।কবিতা অনেক শাসকই লিখেছেন,সেগুলো হারিয়েও গিয়েছে।বাবরের কাব্যগ্রন্থ দিওয়ান এবং আত্ম-জীবনী বাবর নামা হারিয়ে যায়নি।বাবর শিল্পী,কবি,স্থাপত্যবীদ ,নকশাকার, বিজ্ঞানী,ইতিহাসবিদদের সমাদর করতেন।তিনি এসব গুনী ব্যাক্তিদের আমন্ত্রন করে নিজ রাজ্যে নিয়ে আসতেন,তাদের কাজের সুযোগ করে দিতেন। কবি আলিশেরে নবাই কে তিনি তার গুরু হিসাবে পেতে চেয়েছিলেন। আবার তিনি শাসক হিসাবে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।কবি ও শাসকের অপূর্ব সংমিশ্রন ছিল তার চরিত্রে।
বাবর ভারতকে তার দ্বিতীয় জন্মভূমি মনে করতেন।তার পূর্বসুরী তৈমুর লঙের মত ভারত লুঠ করে চলে যাননি।ভারতে তিনি সম্ভাবনা দেখেছিলেন মহান কিছু করার এবং বড় সমাজ্য গড়ার।

জহিরুদ্দিন বাবরকে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী কাবুলে পাহাড়ের উপর বাগানে সমাহিত করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×