বই পর্যালোচনাঃ বাবর
লেখকঃ পিরিমকুল কাদিরভ
জহিরুদ্দিন বাবর।ভারতবর্ষে মোগল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে যিনি সুপরিচিত।তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ভারতবর্ষে ৩০০ বছর শাসন করেছে।যদিও বাবর ছিলেন জাতীতে তুর্ক,তার মুখের ভাষা এবং লিখিত বইগুলোর ভাষা ছিল তুর্কি ভাষা।তার আত্মজীবনী বাবর নামা তুর্কি ভাষাতেই লেখা হয়েছে।
বাবর এক ভাগ্য বিড়ম্বিত বাদশাহ'র নাম।ভাগ্য তাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।কখনো তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে, কখনো তাকে ব্যার্থতার অতল গহবরে আছড়ে ফেলেছে।
বাবরের বাবা উমর শেখ ছিলেন ফরগানার শাসক।তার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পর মাত্র বার বছর বয়সে বাবর সিংহাসনে বসেন।বাবর চাইতেন সমরখন্দের মত তার শহরেও বড় বড় দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদ, সরাইখানা, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট,বাগান, ফোয়ারা ইত্যাদী নির্মান করতে, যাতে সৌন্দর্যে সমরখন্দ কে ছাড়িয়ে যায় আন্দিজান-ফারগানা।এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।এ উদ্দেশ্য থেকে এবং সমরখন্দ তার পূর্বপুরূষের বাসভূমি বলে তিনি সমরন্দে অভিযান চালান।সাত মাস শহর অবরোধের পর সমরখন্দ দখল করেন।সমরখন্দ দখলে আসলেও বেগদের বিদ্রোহে আন্দিজান হাত ছাড়া হয়ে যায়।শুরু হয় বাবরের সংগ্রামের জীবন।আন্দিজান বাচাতে গেলে সমরখন্দ দখল করে নেয় বুখারার শাসক শয়বানী খান।বাবর একাধিক বার সমরবখন্দ দখল করেন এবং একাধিকবার হাতছাড়া করেন।মাতৃভূমিতে থাকাকালীন পুরোটা সময় জুড়ে বাবরকে শয়বানী খানের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।শয়বানী খান মাভেরাননহরের একের পর এক এলাকা দখল করে নিতে থাকলে বাবর পালাতে থাকেন।
এক পর্যায়ে বাবরকে হিসার পালিয়ে আসতে হয় আর এখানে হিসার ও কাবুলে তার ভাগ্য খুলে যায়।আফগানিস্তানে তিনি সম্রাজ্য স্থাপন করেন।কিন্তু কাবুল বা হিসার সমৃদ্ধ অঞ্চল নয়। সেজন্য তার দৃষ্টি পড়ে সমৃদ্ধ ভারতের উপর এবং পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীর এক লক্ষ সৈন্যকে পরাজিত করে ভারত জয় করে নেন।এই যুদ্ধে বাবর তুলগামা পদ্ধতী অবলম্বন করেন,যা তিনি শিখেছিলেন শয়বানী খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে।
বাবর বইটিতে আছে মহামূল্যবান রত্ন কোহিনূরের প্রসঙ্গ,নিজ প্রাণের বিনিময়ে পুত্র হুমায়ূনের প্রান ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গ।নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তানের হায়াত দানের বিষয়ে লেখক চমৎকার একটি লৌকিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।রাজা বাদশাহরা যে কত বিচক্ষন হন তার প্রমান পাওয়া যায় এ ঘটনার বর্ননায়।
বাবরের চরিত্রে কবি ও শাসক দুটি সত্ত্বা অস্তিত্বশীল ছিল।তিনি অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখে গিয়েছেন।কবিতা অনেক শাসকই লিখেছেন,সেগুলো হারিয়েও গিয়েছে।বাবরের কাব্যগ্রন্থ দিওয়ান এবং আত্ম-জীবনী বাবর নামা হারিয়ে যায়নি।বাবর শিল্পী,কবি,স্থাপত্যবীদ ,নকশাকার, বিজ্ঞানী,ইতিহাসবিদদের সমাদর করতেন।তিনি এসব গুনী ব্যাক্তিদের আমন্ত্রন করে নিজ রাজ্যে নিয়ে আসতেন,তাদের কাজের সুযোগ করে দিতেন। কবি আলিশেরে নবাই কে তিনি তার গুরু হিসাবে পেতে চেয়েছিলেন। আবার তিনি শাসক হিসাবে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।কবি ও শাসকের অপূর্ব সংমিশ্রন ছিল তার চরিত্রে।
বাবর ভারতকে তার দ্বিতীয় জন্মভূমি মনে করতেন।তার পূর্বসুরী তৈমুর লঙের মত ভারত লুঠ করে চলে যাননি।ভারতে তিনি সম্ভাবনা দেখেছিলেন মহান কিছু করার এবং বড় সমাজ্য গড়ার।
জহিরুদ্দিন বাবরকে তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী কাবুলে পাহাড়ের উপর বাগানে সমাহিত করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪০