somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব ইজতেমা : সমালোচনামূলক পর্যালোচনা অপরিহার্য

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৃষ্টির অসংখ্য স্তর পেরিয়ে একসময় পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহটি মানুষের বসবাসোপযোগী হয়। সেই থেকে মানবজাতি বহু উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আজ একবিংশ শতকে উপনীত। তবে ঐতিহাসিক ক্রমধারার একবিংশ শতকের এই সময়টি বড়ই নাজুক। সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের পৃথিবীতে এ মুহূর্তে বইছে বাঁধভাঙ্গা সমস্যার স্রোত। একদিকে গুটিকতক মানুষের অহঙ্কার ও স্বৈরাচারিতার পদভারে ভূপৃষ্ঠ কম্পিত; জমিনের উপরিভাগও দূষিত। অন্যদিকে কোটি আদমের বুকফাঁটা আর্তনাদে স্রষ্টার আরশ পর্যন্ত টলছে। একদিকে জালেম-মজলুম উভয়দলের স্বভাবধর্ম-পূজায় পৃথিবী নরকে পরিণত। অপরদিকে ধর্মের নামেও হানাহানি কম হচ্ছে না। যেন এই ধর্ম-অধর্মের পারস্পরিক সংঘাতই হাজার বছর ধরে বিকশিত কথিত সভ্যতার পরম উপহার। এমতাবস্থায় স্বঘোষিত ‘ধর্মীয়’ প্রতিটি দল-সংগঠন, গোষ্ঠী ও কার্যক্রমের স্ব স্ব দাবিগুলো অবশ্যই সমালোচনামূলক পর্যালোচনার অপেক্ষা রাখে। সেটা বিশ্ব ইজতেমা হোক আর ঘরোয়া ওয়াজই হোক।

অবশ্য এটা সত্য, শর্ত মোতাবেক সঠিক সমালোচনার যোগ্যতা ও অধিকার আমার মতো অনেকেরই নেই। আর যাদের থাকার কথা, তারা দেখা যাচ্ছে অন্ধ সমর্থন অথবা কট্টর বিরোধিতায় আশ্রয় খুঁজছেন। মোটকথা একটি বৃহত্তর মুসলিম জামাত ও কার্যক্রমকে সঠিক সমালোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে কেউই এগিয়ে আসছেন না; তা যে কারণেই হোক। সেজন্য আমার মতো অনেক নগণ্য সাধারণ মুসলমান এ নিয়ে কথা বলতে দুঃসাহস প্রদর্শন করে। তাই ভুলত্রুটি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

হাদীস শরীফে স্পষ্ট বলা আছে, উম্মতে মোহাম্মদীর তেয়াত্তরটি দল হবে, এর মধ্যে একটিই জান্নাতী, বাকিগুলো জাহান্নামী বা বাতিল। এ সূত্রে প্রতিটি দলই মহান আল্লাহর ভয়ে কম্পমান থাকার কথা। প্রতিটি দল অন্যান্য দলের নিকট সমালোচনা চাওয়া, নিজেদের আরো বেশি পরিশুদ্ধ করতে ধর্ণা দেওয়া, উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর, দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক আহ্বান, কেন্দ্রিয় নেতা ও মুরব্বিদের পারস্পরিক আন্ত-সংলাপ অনুষ্ঠান ইত্যাদি দূরের কথা, এসবের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাবোধও কারও মধ্যে দেখা যায় না। অথচ ধর্মের নাম ব্যবহার করে পৃথিবীজুড়ে হাজারো দল ও মত-পথের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আসমান থেকে যে ধর্ম মানবের স্বভাবধর্ম, প্রবৃত্তি বা নফ্সকে জবাই করতে এসেছে, আমরা তাই সানন্দে প্রতিপালন করছি।

আজ ইসলামের এতগুলো দল, এতগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত কার্যক্রম। কেউ কারও সঙ্গে সমন্বয় ও সংযোগ ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। সবাই নিজেদের সঠিক বলে দাবি করছেন। কেউ দাবি করছেন তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, কেউ বলছেন তারাই একমাত্র ‘আল্লাহর দল’। কেউবা বলছেন ওটাই কেবল নবীওয়ালা ও সাহাবাওয়ালা কাজ। যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই ধর্মকে ব্যবহার করেেছন। এভাবে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কোরআনে উল্লেখিত শয়তানের উক্তি থেকে যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, এর মধ্যে তুলনাত্মক অনুভূতিতে উত্তমতার দাবি, হিংসাত্মক মানসিকতা এবং এবাদতের বিনিমেেয় দুনিয়া চাওয়া অন্যতম। দেখার বিষয় আমরা এর বাইরে কি করছি।

তাবলীগ জামাতের শুরুটা হয়েছিল বিশ্বজনীন কয়েকটা চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে। সে উদ্দেশ্য আলহামদুলিল্লাহ সফল। কিন্তু এর বর্তমান অবস্থা ও কার্যক্রম নিয়ে দু’কথা না বললেই নয়। তারা যেভাবে খুশালিত হালে মসজিদের ভেতর সময় কাটান, গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের ভেতর হাসি-মজাক করেন, কৌশলে অন্যকে তিরস্কার ও আক্রমণ করেন, তাদের নিয়মে আলেমদের উঠাতে চান (যত বড় আলেমই হোন তিনচিল্লা/একসাল না লাগালে গণনায় আসেন না), ফাযায়েলে আমল ও ছয় নাম্বারের উপর গৎবাঁধা বয়ান করেন এবং দূষিত আমল দিয়েও নিশ্চিত ফাযায়েলের দৃঢ়তা পোষণ করেন, আর এই গৎবাঁধা বয়ান শুনতে যখন প্রত্যেক নামাজের পর মুসল্লিদের জোর-জবরদস্তি করেন তা সত্যিই আশচর্যজনক এবং চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে যারা জ্ঞানগত চিন্তা ও গবেষণায় যুক্ত তাদের নিকট এসব গৎবাঁধা বক্তব্য কোন্ পর্যায়ে বিরক্তিকর তা বলে বোঝানো যাবে না। তাই এলাকার মসজিদে তাবলীগ এলে অনেক নিয়মিত মুসল্লি মসজিদে জামাত পড়তে আসেন না।

বিশ্ব ইজতেমা : ইসলামের শিক্ষা ও বাণী ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশে যানজট সৃষ্টি করে, জনসাধারণকে কষ্ট দিয়ে, প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করে প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দুর্বল-সবল, যুবক-বৃদ্ধ লাখ লাখ মানুষকে একত্রিত করা- এটা ইসলামসম্মত নয়। এর প্রমাণ নামাজে অত্যধিক মুসল্লির ক্ষেত্রে ‘মুকাব্বির-পদ্ধতির’ মধ্যেই আছে। শক্তিশালী, সামর্থবান, ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিতদের মধ্য থেকে বাছাই করে সামান্য একটা অংশকে একত্রিত করা যেতে পারে। তারপর তারা বাকিদের নিকট তা’লীম পৌঁছে দেবেন। আমভাবে সবার একজায়গায় জড়ো হওয়া সঠিক পদ্ধতি নয়। আর ইসলাম কখনো সংখ্যা ও আবেগ দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় না বা এর সত্যতা প্রমাণিত হয় না। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য ও সঠিক বুঝ দান করুন।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×