কিছু কমন প্রশ্ন, বিশেষত রাজনৈতিক, যা নিয়ে বিতর্ক চলছে বছরের পর বছর। এতে কোনো সিদ্ধান্ত বা ঐকমত্য বেরিয়ে না আসুক, অন্তত মিডিয়া ব্যবসা করছে। যারা কলামাদি লেখেন, টকশো করেন, আমি স্বাধীনতার অনেক আগের কলাম আর এখনকার কলাম ও রাজনৈতিক ফেল্লাপ মিলিয়ে দেখেছি। কোনো পরিবর্তন নেই। অথচ তারা বিশাল জনপ্রিয়তাসহ অনেক কিছুই পেয়েছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কবরই সবার শেষ ঠিকানা। এসব লেখালেখিতে আসল-নকল পার্থক্য করা যায় না। কারণ তেমন বিশ্লেষণ ও স্বাতন্ত্র্য নেই। মনে হয় সবই কপিপেস্ট। সেদিক থেকে পিস ফর বাংলাদেশ ‘মানুষ’, ‘সমাজ’ ও ‘শান্তি’র ইস্যুতে কিছু নতুন লেখা ও চিন্তার বিকাশ ঘটাতে পারে।
নিজেদের বিশেষ একটা পরিবর্তন ছাড়া বা অন্তত এটার প্রাধান্য ছাড়া জনগণের ময়দানে কাজ করতে গেলেই অর্থ-ক্ষমতা-নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব গ্রাস করে। আর কোনো মানুষ নিজের সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান না রাখলে তার দ্বারা যেকোনো অপকর্মই হতে পারে। আমরা দাবি করব না যে, আমরা বিশেষ একটা কিছু করছি। কারণ দাবি শয়তানে স্বভাব, মানুষের নয়। তবে চ্যালেঞ্জ অবশ্যই করতে হবে যে, এ তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে কে কতটুকু কিভাবে কাজ করছে বা এ সম্পর্কে কার কী দৃষ্টিভঙ্গি। অবশ্য বিশেষ প্রয়োজনে আমরা মুহূর্তে মাঠে নামতে দ্বিধা করব না।
আজ এত এত কাজ! এত এত আওয়াজ- শুধুই জনগণ জনগণ। সবাই জনগণের জন্য করছেন। তারপরও বেচারা ‘জনগণের’ কী যে অবস্থা সবাই তো দেখতেই পাচ্ছেন। কোনো সমন্বয় নেই, ঐক্যবদ্ধতা নেই। থাকবে কী করে? জ্ঞানগত আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় না করে, নিজেদের মত ও দাবি যাচাই না করে, মুক্ত ও স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ না ঘটিয়ে, নিজেদের মধ্যে কেবলই মূর্খতা লালন করে, বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করে, নতুন নতুন দল ও গ্রুপ সৃষ্টি করে ‘কাজ’ করে আসলেই জনগণের এবং আমাদের নিজেদের কতটুকু উপকার হচ্ছে? এগুলো কি আসলেই কাজ? আমার কথা হয়তো বিশ্বাস হবে না। তাই মুক্তভাবে যাচাই করুন এ কথাগুলো, এ গ্রুপের কথাগুলো। ঠিক এ ধরনের চিন্তা-চেতনার প্রয়োজন কতটুকু এবং আর কোথাও কতটুকু আছে খোঁজ করুন। আমাদেরসহ সবাইকে কড়া সমালোচনার নজরে দেখুন। নইলে সত্য বেরিয়ে আসবে না। যারা দাবি করছে তারা সমালোচনা কতটুকু চায়? নিজেদের যাচাই করতে কতটুকু চায়? নিজেরা নিজেদের সমালোচনা কতটুকু করে? নাকি কেবল নিজেদের কথিত “ভালোগুলো’ বলে বলে একশ্রেণির যুবসমাজ ও বয়স্কদের ব্রেনওয়াশে মগ্ন? আজকের যুব সমাজের প্রায় সবাই কোনো না কোনো কর্তৃপক্ষের দ্বারা ব্রেনওয়াশকৃত। এমনকি আমিও এর বাইরে কি না তা কিভাবে প্রমাণ করব? প্রশ্নগুলো করা কি যৌক্তিক নয়?
আসলে অনেকেই প্রচলিত রাজনৈতিক খামছা-খামছি, দলাদলি-গালাগালি, ধর্মীয় গ্রুপিং ইত্যাদির বাইরে কিছু বলতে বা লিখতে অনভ্যস্ত। তাই সম্ভবত গ্রুপে পোস্টে আসে কম। চিন্তা করে দেখুন, আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্ম ও সমাজ আমাদের কী শিখিয়েছে? এসবের বাইরে আমরা চিন্তাই করতে পারি না। এসব ঝগড়া-বিবাদ, বিম্পি-আম্লীক, নাস্তিক-আস্তিক বিতর্কের বাইরে কিছুই নেই? তাহলে এই স্বয়ং “আমরা” কী? আর যুগর পর যুগ ধরে যেসব বিতর্কে সমাধান আসছে না, সেসবে আমরা কেন অংশ নেব? প্রচলিত ‘মাঠ গরম’, আন্দোলন-সংগ্রাম আর হুমকি-ধামকি পাশ কাটিয়ে আমাদের শান্তি ও আলোচনার ডাক- আসলে বেখাপ্পাই লাগে। লাগারই কথা। কারণ এতে শরীর বল পায় না, রক্ত গরম হয় না। সব কিছু হিম হিম লাগে। তারচে বরং রাস্তায় নেমে শেয়াল কুকুরের মতো মরি এবং মারি, কি বলেন? এত হতাশা, অশান্তি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিয়ে বেঁচে থেকে লাভ আছে? আমরা তো মানুষ নই, মানুষ চিনি না, মানুষ বুঝি না, ‘মানুষ’ নিয়ে কথা মূল্য পায় না। বেঁচে থেকে লাভ কী? আসুন মারি অথবা মরি। মাঠ গরম হবে।
‘শান্তি’র দুটো অর্থ আছে। এক. ভেতরের শান্তি, দুই. বাইরের শান্তি। ভেতরের শান্তি শারীরিক সুস্থতা, পারিবারিক শৃঙ্খলা, আর্থিক সংগতি, মানসিক স্থিরতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত। আর বাইরের শান্তি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা তথা নিয়ম-নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনাদের সহযোগিতা পেলে “পিস ফর বাংলাদেশ” এ দুটো ক্ষেত্র নিয়েই কাজ করতে চায়। একটি সর্বজনীন মানবিক ও সামাজিক সংগঠন। এখানে বিশেষ দলীয়-ধর্মীয় পরিভাষা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ কোনো স্থান বা অঞ্চল নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না আশা করি। তাই সবার বুঝার উপযোগি ভাষা, শব্দ ইত্যাদি ব্যবহার করতে আমরা সচেষ্ট থাকার চেষ্টা করি। “পিস ফর বাংলাদেশ” একটি সামাজিক-গণনৈতিক ফেসবুকভিত্তিক জাতীয় সংগঠন। বিভিন্ন সংঘ-সংগঠনের মতো নারী, অর্থ, নেতৃত্ব ও ক্ষমতার গতানুগতিক দ্বন্দ্ব পাশ কাটিয়ে, সর্বপ্রকার উত্তেজনাতাড়িত তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা-সমালোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মৌলিক ইস্যু চিহ্নিত করে জাতীয় ঐক্যের ভিত রচনায় আমরা বিশ্বাসী। এ লক্ষে ব্যাপক অহিংস সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তোলা যেতে পারে।
একটি সত্যিকার পরিবর্তন খুবই জরুরি। বিশেষত সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও নিরাপত্তার বিকল্প নেই। “সংঘাত নয়, শান্তি চাই” আমাদের স্লোগান। ‘শান্তি’ যদিও কেবল বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়, তবে প্রতিটি দেশ ও জাতি আলাদা আলাদাভাবে অভিন্ন কর্মসূচি নিতে পারে। আমরা যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেব, তবে চূড়ান্ত লক্ষ্য বৈশ্বিক শান্তি রক্ষা। কেননা ‘মানুষ’ ও মানুষের ‘সমাজ’ আমাদের অন্যতম মৌলিক ইস্যু। তাই পৃথিবীর যেখানেই মানুষ, সেখানেই আমরা। যেখানেই নির্যাতন-বঞ্চনা, যেখানেই হতাশা, লুণ্ঠন, সেখানেই আমরা। অবশ্য সবার আগে নিজেদের মন-মস্তিষ্কের পরিবর্তনটা জরুরি। সেজন্য থাকবে জ্ঞানগত বিভিন্ন পদক্ষেপ- আলোচনা-পর্যালোচনা, আত্মসমালোচনা, পড়াশোনা, প্রশ্নোত্তর, কনফারেন্স, সামাজিক সভা ইত্যাদি।
আমরা বিশ্বাস করি, ৯৫% মানুষের বিচার-বিবেচনা ও মানবিক অনুভূতি এখনও মরে যায়নি। মানুষের গঠনের মৌলিক উপাদানে সত্যকে গ্রহণের শক্তি নিহিত আছে। কেবল নিরপেক্ষ, স্বার্থহীন ও ব্যাপকভাবে উপস্থাপনের অভাব। আমাদের দাবি সমাজব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতি, মিডিয়ার ভূমিকা প্রভৃতি- প্রতিটি বিষয়ের নতুন ও সামগ্রিক পর্যালোচনা। কায়েমি স্বার্থবাদীরা যতই জনগণের কথা বলুক, অন্তরে সম্পূর্ণই ব্যক্তিস্বার্থ লালন করে। আমি আপনি যে ব্যতিক্রম তা পরীক্ষা না দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। কেউই আপনার আমার জন্য জায়গা ছেড়ে দেবে না, বরং আমাদের জায়গা করে নিতে হবে। কায়েমি স্বার্থবাদীদের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। যদিও প্রকৃত অর্থে এটা তাদের বিপক্ষে নয়, কিন্তু তারা তা বুঝতে রাজি নন। সবার মঙ্গল কামনা করি।
ফেসবুক