ঝোপঝাড়, আধার আলো, অনাদর অবহেলা আর সবার অলক্ষ্যে জন্মে যে কালি কচু, তাহার জীবনের অর্থ খুঁজি। শুধুমাত্র বাতাস পরিশোধনেই কি তাহার জীবনের সার? এ কেমন অন্যায্য কথা! বাতাসের সেবা করেই জীবন পার। যে কচু ঝোপের মধ্যে আধারের কালিতেই সিক্ত থাকে, পুর্ন জীবনে কদাচ সুর্যালোকের দেখা পায়, কোন রকমে নিজের জীবন বাচানোর শক্তিটুকু যোগাড় করে সে আলোর সংশ্লেষণ ঘটিয়ে, সেই গাছ বাতাস পরিচর্যার সুযোগটুকুও পায়না, সে আরও বড় অভাগা। একেবারে অর্থহীন জীবন আর নালার পানিকে নষ্ট করাতেই যেন তাহার ধ্যান জ্ঞান, শুরু আর সমাপ্তির গল্প। মনে’রে বুঝাই- ও মন দেখো। শেখো, কিছু অন্তত শেখো। কিভাবে কোন অভাব, অনুযোগ ছাড়াই নিরলে বিরলে এক জনমের আয়ু তারা পার করে যায়। অশান্তির কোন প্রকাশ নাই, অপ্রাপ্তির ভুরু কুঞ্চিত নাই, ভাগাভাগির মাতামাতি নাই, রক্তরঞ্জিত হাত আর ভায়ের মত এতবড় শত্রু নাই। তবুও সামান্য একটু বাতাসেই কেমন সুন্দর দোল খায়, প্রশান্তির গাঢ় সবুজ পতাকা উড়ায়। সামান্য বৃষ্টিতেই সিক্ত হইয়া নিষিক্তের রেনু ছড়ায়। নতুনের স্থান দিতে একেবারে নি:শব্দে, নির্বিবাদে কেমন সুন্দর মাটির সাথে মিশিয়া মাটি হইয়া যায়। নতুন প্রজন্মের পুষ্টি হইয়া একেবারে অন্য রুপে অনন্য হইয়া ফিরিয়া আসে। কোন কিছুতেই, কোন বেলাতেই কোন ওজর আপত্তির চিহ্নটুকুও নাই। ও মন, মন’রে কেদো না। লজ্জায়- লাঞ্ছনায়, অপরাধীর দম্ভে দমে যেও না। ক্ষতের দগদগে ঘা’তে মাছির মত প্রানসংহারী রুপ ধরিয়া নিজেকে জ্বালিয়ে দিও না। তাকে দেখো, অনুধাবন করো, শুকরিয়া কর। সে না পাইল সবজির মর্যাদা, না হইল পশুখাদ্য, না হইল জ্বালানীর কাঠ, তবুও তাহার অবদান দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত যেন বিরাট একটা শস্যদানার মাঠ। তুমি কি একবারও দেখো নাই কচু পাতায় জমে থাকা এক ফোটা জলে সুর্যের বিকিরন? এমন ঝিলিক এক জনমে একবারই হয়ত দেখানোর সুযোগ সে পায়। আলোর এই বিচ্ছুরিত ঝিলিমিলির কাছে হীরকের খন্ডও যে তাহার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করিয়া যায়। পানি কনা সর্বদা টলটলে, অনুগুলো তাহার পলে পলে স্থানান্তরিত হয়। আর সেই মাহেন্দ্রে সামান্য এক ফোটা জল কি ভয়ংকর মোহনীয়া আলোর খেলা জমিয়ে তোলে অবহেলিত অচেনা একটা কালি কচু পাতায়। ইহাই অচেনার আনন্দ, ইহাই ঘাসের শীষে জমে থাকা সেই 'একটি শিশির বিন্দু'। গোমতীর চরে
ও, মন বিশ্বাস রাখো এবং যথাসাধ্য পরিচর্যা করিয়া যাও। অভিমান হেতু ফিরিয়া গেলে, তোমার প্রজন্ম ধংস হইতে পারে তোমারই কারনে। নিজেরে মানুষ হিসেবে মানিয়া লইতে না পারিলে, চরের অবহেলিত জংলায় বেড়ে উঠা অন্ধকারের কচু-ই না হয় ভাবো। তবুও কিছু ভাবো। আমি বুঝিয়া লইব, মন আমার কিছু পারুক আর না পারুক ভাবিতে শিখিয়াছে। শুধুমাত্র এইটুকু ভাবনা-ই তোমার সাধের চরায় আলোয় আলোয় আলোর জলসা বসাইয়া দিবে। তোমার ঈশ্বর তোমার বিশ্বকে তাহার পবিত্র জলে সিক্ত করাইয়া পরিশুদ্ধ করিয়া দিবেন। ও মন, তুমি কেদো না। সংসার কোন লাঞ্ছনার বাস্তুসংস্থান নয়। গ্রীষ্মের তাপ যতবার তোমায় পোড়াইবে ততবার তোমার নব নব জন্ম হইবে নব নব রুপে। জগত সংসারের কেউ তোমার শ্রমের মুল্যায়ন করেনি। করিবে কিভাবে? শ্রম এখানে বিক্রি হইয়াছে শ্রম ঘন্টায় অর্থনীতির ধারা মানিয়া শুধুমাত্র লাভের খাতায়। ভাবনা আর ঝোপের আড়ালে নিরবে কাজ করিয়া যাওয়া হাজার প্রজন্ম কচুর কথা কে কবে ভাবিয়াছিল ? শীতল আচারের নিরব কচুর রুক্ষ প্রতিক্রিয়া কেহ আশা করেনা। আবর্তনের ২য় স্তরে যখন তোমার সাথে দেখা হয়, তোমার চেহারা দেখিয়াই নিভৃতে মায়ার যে বিষ্ফোরন ঘটে তাহা অর্থ কিংবা মোহের নয়। টাকা পয়সা কোনকালেই আমার ছিল না। তুমি একজন সন্যাসীর দেখা পাইয়াছিলে ধরিয়া নিও। তাহাকে কিভাবে মুল্যায়ন করিবে তাহা একান্তই তোমার। আধুনিকের আবর্তে জন্মানো একজন প্রাচীন সাধুজাত সদস্য তোমার অলংকার কিংবা অহংকারে অপরিহার্য নাও হইতে পারে। আমি শুধুমাত্র ক্ষনে ক্ষনে হাত ধুইবার রীতিই জব্দ করিতে পারিয়াছিলাম, উপকার করিতে গিয়া ভুলেও তোমার কোন অনিষ্ট যেন না হয়। এক জনমের সাধনায় সাধু প্রাপ্তি হয় না, হইত যদি তবে এতদিনেই আমার সৌরভ আকাশ বাতাস মুখরিত করিত। ভুবনের সকল ফুলে আমার সুবাস থাকিত। আশি বছরের জনম চল্লিশে নামিয়া আসিয়াছে সাধনার ক্ষয়ে। পরের জনমে আবার মানুষ হইয়াই ফিরিব এবং জাতিষ্মর হইব, তাহার পরে এ জনমের শেষ দিন হইতে নব সাধনার শুরু করিব, এত এত গ্যারান্টি আমারে কে দিবে? তুমি যে সন্যাসীর দেখা পাইয়াছ তাহার সাধন সিদ্ধ হইয়াছে এই দাবি কখনোই সে করে নাই। তবে আকাশের মত ছেলের গায়ে হতাশার গন্ধ সে ঠিক ঠিক ধরিল, সেই কথা তুলিয়াও ইচ্ছের ভুলে পাশ কাটাইল। আমার কথায় যদি দু:খিত হইতে শেখো তবে দু:খিত বলিতে এত ছল এত বল কোন নলে কোথা হইতে আসিল? এ আমার জন্য বড়ই অসম্মানের ছিল।
দু:খের কথা শুধুমাত্র আকাশকে বলিব। আকাশেই গল্পের ছলে কথাগুলি এমনভাবে ছিটাইয়া দিব, আকাশ ছাড়া আর কেহ যেন কিছুই বুঝিয়া লইতে না পারে। আজ আকাশের চোখে আমার প্রতিরুপ দেখিয়া বড় বিচলিত হইয়া পড়িয়াছিলাম। ধরা পড়িয়া যাইবার ভয়ে কোন কারন ছাড়াই খেয়ালের বশে সত্য মিথ্যার গালগল্প জুড়িয়া, এইটা সেইটা দেখাইয়া তাহাকে এক প্রকার তাড়াইয়া দিয়াছি। তবুও তার চেহারায় নিজ রুপ দেখিবার মত যন্ত্রনা ভোগ করিতে চাই নাই।সে কেন আমার মত হইবে? দশ দিগন্ত আলোকিত করিবার যোগ্য পাত্রে কেন পরাজিতের ছাপ পরিবে ? নব প্রজন্ম যদি সেই প্রাচীনের একই ধারার দহনে জ্বলিয়া পুড়িয়া ছাড়খার হয়, তবে নতুনের তরে কি করিলাম? কিছুই না। না হইলাম তোমার, না হইলাম আকাশের না হইলাম রক্তখেকো বিভিষনের।
১৫।০৮।১৭ ইং
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৯