somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি ইয়াসমিন বা তনু হয়ে যাও, তাতে কি যায় আসে......

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ঈশ্বরের মত নিঃসঙ্গ থাকি
তুমি ইয়াসমিন বা তনু হয়ে যাও, তাতে কি যায় আসে......
অর্থহীন ঈশ্বরের সিংহাসনে, ঈশ্বর সমাসীন থাকে।

আমি প্রেসক্লাবে খুব সরব একজন কে বললাম, দ্যাখেন ওই যে ইয়াসমিন। সে বলল, ইয়াসমিন? কে? কোথায়? আমি বললাম ওই যে ভ্যানগাড়িটার উপরে। লোকটা অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার আঙ্গুল বরাবর তাকিয়ে দ্যাখে। তারপর আমার দিকে দ্যাখে। "যা শালা পাগল !" হয়ত মনে মনে বলে। পাগলকে এইশহরে খুব কমই ঘাটায়। তাই সে আবার ফিরে যায় তার গোলাকার সঙ্ঘে, সেখানে সে চিৎকার করে। আমি পিছু ফিরে "ঢাকা পরিবহনে" ফের উঠে পড়ি। পেছনে শুনি লোকটা সমানে বলে যাচ্ছে, এই শুয়োরের বাচ্চা ধর্ষকদের ফাসি দিতে হবে। এদের বিচার করতে হবে...। আরও কিছু, বাস ছেড়ে যায়, শোনা হয় না সবটা। আমি বিষন্ন ভাবনায় চেপে ফিরে আসি আমার শহরে।

কথা হচ্ছে টিএসসি তে। মানববন্ধন প্রেসক্লাবে। ছড়িয়ে শহর এখন মানুষের ভীড়ে জড়িয়ে পড়েছে ফিসফিস মত শব্দ। তারা এক থেকে অনেকে ছড়িয়ে সবাইকে জানায় তনুর কথা। সবাই জেনে গেছে তনুর শরীর, জীবন, সম্মান, বোধের অর্থমূল্য ছিল বিশ সহস্র টাকা। সবাই সব জানে, সবাই তাই খুব রেগে আছে। তারা শহরময় তাই বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। যেমন করেছিল গতকাল, কিম্বা তার আগের দিন, কিম্বা আরও অনেক অনেক দিন আগে। যেমন ইয়াসমিন এর সময়। ইয়াসমিনকে ভুলে যায় এই শহর আর জনপদের মানুষেরা। তনুকেও ভুলে যাবে।আমি জানি, কারন গত দুই দশক আমি এই জনপদের মানুষদের জানি।

ধর্ষণের এই ধারা বদলাবে না। কাল আরও একজনকে ধর্ষিত হবে। আমি জানি। আমরা স্বীকার করিনি যৌনতা আরও দশটা স্বাভাবিক জৈবিক প্রবৃত্তির মতই। আমরা স্বীকার করিনি যৌনতা তেমনি উপভোগ করা যায়, যেমনি করা যায় চমৎকার কোন খাবার। আমরা স্বীকার করিনি স্বাভাবিক যৌন আনন্দের কথা। সন্তান উৎপাদন, প্রথামত বিয়ের প্রয়োজনেই আমরা কেবল যৌনতাকে রেখেছি।

ধর্ষণের এই ধারা বদলাবে না। কাল আরও একজনকে ধর্ষিত হবে। আমি জানি।
আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের শেখাইনা, যৌনতার কথা। আমরা জানাইনা আমাদের কিশোরদের তাদের মাসিক বা স্বপ্নদোষের মত বয়সন্ধীকালীন ব্যপারের কথা। আমরা ঢেকে রেখেছি আমাদের সত্যিটা যে, আমরা সবাই যৌনতার মধ্যে দিয়ে যাই।আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জানাই যে, নারী আপাদমস্তক এক যৌন সামগ্রী। একে ঢেকে রাখতে হবে দুর্মূল্য রত্নের মত।

ধর্ষণের এই ধারা বদলাবে না। কাল আরও একজনকে ধর্ষিত হবে। আমি জানি।
কারন পুরুষরা তো বটেই এমনকি মেয়েরাও মনে করে, তারা যতখানি মেয়ে, ততখানি মানুষ মোটেই নয়।

ধর্ষণের এই ধারা বদলাবে না। কাল আরও একজনকে ধর্ষিত হবে। আমি জানি।
কারন আমরা যে প্রথা, সমাজব্যবস্থা, ধর্ম রেখে দিয়েছি আমাদের জন্য তাতে নারী বরাবর ছায়া আর পুরুষ অবয়ব। এই প্রথা-ধর্ম-সংস্কার যতদিন আমরা স্পস্টভাবে অস্বীকার না করতে পারব, ধর্ষণ থাকবে। আমি বলেছি এটা থাকবে।

আমার ধরে নেয়া এই অপরিবর্তন, আছে বলেই ধর্ষন আছে। কারন এই সব নিয়ে এই সমাজে একটা শিশু, একটা ছেলে হয়ে ওঠে, এবং পুরুষ হতে হতে জেনে যায় এই সব অপরিবর্তন যা আমরা রেখে দিয়েছি। যা দিয়ে সেই পুরুষকে আমরা তৈরী করে ফেলি এমনভাবে যে, এই ব্যবস্থার মধ্যে সে চিন্তা করে ধর্ষনের। এবং আমাদের শুনতে হয়, তনু ছিল, ইয়াসমিন ছিল, আর নেই।

কিনসের কথা পাড়ি, যা কিছু চরম আনন্দদায়ক, এবন তা যদি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়, তবে সেই সব কিছু অবশ্যই বিকৃত রুপ নিয়ে আসে। ধর্ষন সে রকমই।

আমরা তো পচে গেছি, আমাদের আর বদলাবার নেই কিছুই, আমি জানি। কিন্তু বদলাবার আছে তাদের যারা একদিন মেয়েমানুষ হবার বদলে মানুষ বা পুরুষমানুষ হবার বদলে মানুষ হবে। তাদের যারা জীবনকে কোন ঈশ্বরে, কোন মতাদর্শে সপে না দিয়ে উপভোগ করবে। বয়সন্ধীকালে থাকা সেই সব মানুষের কাছে পৌছে যাক এই সব কথা। অন্য অনেক সমস্যার মত এখানেও আমি মনে করি সমাধান হতে পারে বই। বই এবং বই। আপনি যে কথাগুলো আপনার সমাজ বাস্তবতায় তাদের জানাতে পারেন না, আমি যৌনতা সংক্রান্ত ব্যপারে বলছি, বই জানাতে পারে অনেক চমৎকার ভাবে। শুধুমাত্র বই, এবং অনেক অনেক বই এর প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে পারে একটা ছেলের ধর্ষক হওয়া ঠেকাতে। খুবই সম্ভব। আমি জানি তাই আমি জানি।

অথচ এই সব কথা খুব কাজে দেবে না। এমনকি কাজে দেবে না, প্রেসক্লাবের ঐ লোকটার কথাও, কারন আর সবার মত কারন অনুসন্ধান ছাড়া সে রোজ ওখানে আসবে, কারন কারনের মূল অনুসন্ধান না করলে তনুরা, ইয়াসমিনরা রোজ নস্টদের অধিকারে যাবে।

আমি জানি তাই আমি জানি। কারন আমি ধর্ষক নই। আমি খুব উচু রেখে মাথাটা বলতে পারি, আমি মানুষ হতে চাই। আমি প্রায়ই ভুলে যাই, আমি বসবাস করি এক ফ্যান্টাসীর জগতে। এখানে আমি ঈশ্বরের মত নিঃসংগ থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×