একদা গৌতম বুদ্ধ সকালে ঘুম থেকে উঠে, তাঁর সবচেয়ে কাছের শিষ্য ( ভ্রাতস্পুত্র) কে বললেন,
" দেখ, ঈশ্বর নেই!"
" ঈশ্বর নেই!" তাঁর শিষ্য অবাক হয়ে শুনলেন একি কথা বলছেন বুদ্ধ! সঙ্গে সঙ্গে সারা গ্রাম, নগর, বাজারে কথা প্রচার হয়ে গেল, বুদ্ধ বলেছেন ঈশ্বর নেই!
তা বাজারে একজন বৈষ্য ছিলো, সে শ্রী রামের ভক্ত ছিলো এবং বুদ্ধকে রামের মত অবতারই মানতো। তো এইসব বৈষ্যদের ব্যাপার ছিল, এরা সবমসময় রাম নাম জপ করতেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত " রাম রাম " বলতেন। টাকা নেয়ার সময় রাম রাম বলতেন আবার গোনার সময় রাম রাম বলতেন, টাকা দেয়ার সময় রাম রাম বলতেন। সব সময় কোন ধরনের শর্ত ছাড়াই তারা রাম নাম যপ করতেন।
সে সময় আরেক ধরনের লোক ছিল, যারা পঞ্চ ইন্দ্রিয় কর্তৃক যা উপলব্ধি না করেছে তার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। এদেরকে বলা হতো চর্বাক বা তার্কিক। এরা হাটে বাজারে, মন্দিরে, গাছ তলায় তর্ক করতো যুক্তি দিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই তারা ঈশ্বর বিশ্বাস করতেন না। এই রকম একজন চার্বাক ও ছিল সেই নগরে।
যখন বুদ্ধের কথা বাজারে পৌছালো। তখন সেই রাম ভক্ত বৈষ্য শুনেই বিপদে পড়ে গেল, বলে কী স্বয়ং বুদ্ধ বলেছেন ঈশ্বর নেই! তার মনে মধ্যে দ্বিধা তৈরি হল। সে স্বয়ং উপস্থিত হল বুদ্ধের আশ্রমে। বুদ্ধের সামনে বসে হাত জোর করে জিজ্ঞেস করলো,
" হে মহামতি বুদ্ধ, ঈশ্বর কি সত্যিই তাহলে নেই? "
বুদ্ধ হাসলেন, বললেন,
" ঈশ্বর নেই! "
নিজ কানে শুনে বৈষ্য উঠে চলে গেল, বুদ্ধ যখন বলেছেন ঈশ্বর নেই, তাহলে আর রাম নাম নিয়ে লাভ কি। তিনি রাম নাম নেয়া ছেড়ে দিলো।
এদিকে সেই চার্বাক যখন বাজারে শুনলেন, বুদ্ধ বলেছেন ঈশ্বর নেই। তখন তার সন্দেহ হল।তার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হলো না।সেও ছুটে চলল বুদ্ধের কাছে। সেও একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো,
" ঈশ্বর আছে না নেই?"
এবার বুদ্ধ হাসলেন, বললেন,
" ঈশ্বর আছেন! "
" তবে যে আপনি সকালে বললেন ঈশ্বর নেই?"
বুদ্ধ এবার হেসে দৃঢ়তার সাথে বললেন,
" অবশ্যই ঈশ্বর আছেন!"
ব্যাস লেগে গেলো তর্ক বিতর্ক। বৈষ্য বলছে আমি নিজে কানে শুনেছি বুদ্ধ বলেছেন ঈশ্বর নেই। চার্বাক বলছে, আমিও শুনেছি তিনি বলেছেন ঈশ্বর আছেন, অবশ্যই আছেন।
এমন সময় বুদ্ধের সেই কাছের শিষ্য জিজ্ঞেস করলেন,
" মহামতি বুদ্ধ, আপনি সকালে একজন কে এক কথা বললেন, বিকালে আরেকজন কে আরেক কথা বললেন, আসলে সত্যটা কি? "
এবার বুদ্ধ একটু জোরে হাসলেন,বললেন,
" দেখ, যে লোকটি সারাজীবন, প্রতিটি মূহুর্তে ঈশ্বর নাম জপ করে, সে এক সাধারণ ভিক্ষুকের কথায় মনে দ্বিধা নিয়ে ঈশ্বর কে যাচাই করতে আসে এবং এক মূহুর্তে ঈশ্বর নাম জপ করা ছেড়ে দেয়। তার জন্য কোনদিনই ঈশ্বর ছিলো না এবং নেই।
অপর দিকে যে লোকটি সারাজীবন যুক্তি দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে এসেছে ঈশ্বরের কোন অস্তিত্ব নেই, সেই আবার শত যুক্তি জানা সত্বেও এক ভিক্ষুকের কথায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যাচাই করতে আসে যে সত্যিই ঈশ্বর আছে না নেই, তার মনে অবশ্যই ঈশ্বর আছেন এবং সর্বদাই ছিলেন। "
বুঝলে বুঝ পাতা, না বুঝলে ত্যাঝ পাতা
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮