বিয়াম ল্যাবরেটরী মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সামান্য চোট পেয়েছিল জাহিন। এ নিয়ে বাবা মায়ের সে কি রাগারাগি। পারলে ওকে যেন ঘরেই বেধে রাখে। কিন্ত এই বয়সী ছেলেদের ঘরে বন্দী রাখা যায়না। মাত্র তের বছর বয়স ছেলেটার। এর মধ্যেই সে বিভিন্ন বিষয়ে মেধার পরিচয় দিয়েছে। বাবা মায়ের বকা খেয়ে তাই সে বাসার সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি সে তার একমাত্র বোন ফারিনকে পযর্ন্ত তার কাছে ঘেষতে দিচ্ছেনা। ঐ দিন রাত তিনটার সময় ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙ্গার পর যে দৃশ্য দেখলো তা তার কোন দিন ভুলে যাবার কথা নয়। যে কোন মানুষ এ দৃশ্য দেখলে হার্টফেল করবে চিৎকার করে চারপাশের মানুষ জড় করবে। কিন্ত জাহিন নামের তের বছরের ছেলেটা কোন কথা বললোনা। সম্ভবত সে ভয়ে বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। খেলতে গিয়ে সে আঘাত পেয়েছিল তার বা পায়ে। সে ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার বা পায়ে ব্যান্ডেজ বাধা। প্রথমে ভাবলো ওর আম্মু এসে বেধে দিয়ে গেছে। কিন্ত এরপরই আসলো রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ার পালা। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো খেলার মাঠ থেকে ফিরে এসে সে কিকি করেছে। দেখা গেল তার স্পষ্ট মনে আছে মাঠ থেকে ফিরে আসার পর পরই বাবা মায়ের বকুনি খেয়ে সে কোন কথা না বলেই নিজের রুমে এসে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে শুয়ে পড়েছিল। এমনকি রাতে ওর আম্মু খাবারের জন্য ডাকাডাকি করার পরও ও বাইরে বের হয়নি। ওর রুমের জানালাটা খোলা ছিল। এবার ও উঠে গিয়ে দরজাটা পরীক্ষা করে দেখলো। না দরজা ভেতর থেকে আগের মতই বন্ধ করা আছে। ওর রুমে আসার আর কোন পথ নেই। তাহলে ওর পায়ে ব্যান্ডেজ বাধলো কে? ও কেবল মনে মনে এ কথা বললো। আশে পাশে কেউ নেই কিন্ত হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠলো আমি বেধেছি। জাহিন চমকে উঠে চারপাশে তাকালো। কিন্ত না কোথাও কেউ নেই। ওর রুমে একটুও অন্ধকার নেই যে কেউ লুকিয়ে থাকবে আর তাকে দেখা যাবেনা। একেতো ওর পায়ে ব্যান্ডেজ বাধা যা ও নিজে বাধেনি আবার মনে মনে ও কিছু একটা ভাবছে তার উত্তর কেউ একজন জোরে জোরে দিচ্ছে। ব্যাপারটা ভুতুড়ে মনে হতে লাগলো। জাহিন বিজ্ঞান ভালবাসে তাই ও ভুতে বিশ্বাস করেনা। ও মনে মনেই বললো না কেউ কিছু বলেনি আমি মনে মনে ভুল শুনছি। এবার কন্ঠটা আবার শোনা গেল এবং আগের চেয়ে একটু জোরে। না জাহিন তুমি ভুল শুনছোনা আমি সত্যিই আছি। আমিই তোমার পায়ে ব্যান্ডেজ বেধে দিয়েছি। এবার জাহিন একটু সাহসী হয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি বলে আসলে কোন কিছুই নেই। থাকলে আমি দেখতে পেতাম। অদৃশ্য কন্ঠটি এবার বিকট শব্দে হেসে উঠলো। সে হাসি শুনে জাহিনের বুকের ভেতর ধকধক করতে লাগলো। এবার জাহিন সত্যি সত্যিই ভয় পেতে শুরু করলো। চিৎকার করে মাকে ডাকতে ইচ্ছে করলো কিন্ত মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হলোনা। একটু সাহস সঞ্চার করে ও শব্দ করে বলে উঠলো না এটা কিছু না আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। কন্ঠটা আরো ভয়ংকর ভাবে হেসে উঠলো এবং ধমকের সুরে বলে উঠলো তোমাদের এই একটা সমস্যা। কোন কিছুতেই আমাদের বিশ্বাস করতে চাওনা। একটু কিছু হলেই তোমাদের একটাই কথা হ্যালুসিনেশন। আমরা আছি এবং তোমাদের আসে পাশেই আছি। জাহিন মনে হয় ভয়ে একেবারে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিল। সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো আচ্ছা আমি বিশ্বাস করলাম তুমি বা তোমরা আছ কিন্তু আমার কাছে কি চাও। ভয়ংকর সেই কন্ঠটি এবার সাদামাটা গলায় বললো আমি তোমার কাছে কিছুই চাইনা কেবল এসেছিলাম তোমাদের বোঝাতে যে আমি এবং আমার মত আরো অনেকে আছে। মনে মনে তুমি এখনো ভাবছো আমি নেই। জাহিন দ্রুত মাথা দুলিয়ে বললো না আমি তা ভাবছিনে। তখন সেই কন্ঠটি কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে গেল এবং আবার কথা বলে উঠলো। তোর হাতটা সামনে উচু করে ধর। কথা মত জাহিন ওর হাত উচু করে ধরলো। একটা শীতল হাত এসে ওর হাত ছুয়ে দিল। সেই হাতটা রোমশ এবং বরফের মত ঠান্ডা। এবার জাহিনের শরীর কেপে উঠলো। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সমস্ত রুম অন্ধাকারে ছেয়ে গেল। জাহিন প্রাণ পনে চিৎকার করে উঠলো। তার চিৎকারে ওর বাবা মা জেগে উঠলো। ফারিন জামিল ওরাও জেগে উঠলো। একটা চিতকার দেয়ার পরই জাহিন অজ্ঞান হয়ে গেল। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা তাই কারো ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা নেই। এদিকে জাহিন জাহিন করে ডেকে ডেকে ওর বাবা মা ভাই বোন অস্থির। কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে শেষে দরজা ভাঙতে বাধ্য হল জাহিনের বাবা।
ভেতরে ঢুকে তাদের চোখ ভিজে গেল। নিস্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে জাহিন। কোন সাড়া শব্দ নেই। অনেক ডাকাডাকির করেও ওকে জাগানো গেলনা। চিন্তায় অস্থির হয়ে ওর বাবা মা ওকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তারদের অনেক চেষ্টার পর ওর জ্ঞান ফিরলো। সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এভাবে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল। যখন জাহিন সেরে উঠলৈা তখন ওর কোন কথাই মনে নেই। তবে অদ্ভুত একটা কান্ড ঘটে গেছে যা কেবল ও ছাড়া আর কেউ বুঝে উঠতে পারছেনা। অপরিচিত কোন লোককে দেখলেও জাহিন তাকে চিনতে পারছে এবং লোকটির যাবতীয় কিছু জাহিনের চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছে। লোকটার নাম বাবার নাম মায়ের নাম বাসার ঠিকানা ও যেন লোকটার কপালের দিকে তাকালেই পড়ে ফেলতে পারছে। ব্যাপারটাকে সে হ্যালুসিনেশন বেবে উড়িয়ে দিচ্ছিল কিন্ত বার বার সেটা মাথাতে এসে ভর করছিল। সত্যিই ও একজনের সব কিছু বলতে পারে কিনা তা পরীক্ষঅ করে দেখা দরকার। ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকলো। ঠিক এর দুদিন পর ওদের বাসায় একজন অপরিচিত লোক আসলো যাকে জাহিন কোন দিন দেখেনি। জাহিন ওর রুমে পড়ছিল। ওর বাবা ওকে ডেকে আনলো এবং সেই লোকটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে যাবে এমন সময় জাহিন বলে উঠলো আমি ওনাকে চিনি। অপরিচিত সেই লোকটির সাথে সাথে জাহিনের বাবাও ভীষন অবাক হলো। কারণ এই লোকটা এর আগে কখনো জাহিনদের বাসায় আসেনি। লোকটিই যেখানে জাহিনকে চেনেনা সেখানে জাহিন নামের তের বছরের ছেলেটা তাকে চেনে কিভাবে। ওর বাবা ওকে জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা তুমি যদি চিনেই থাক তবে বলোতো ওনার নাম কি। এ কথা বলার সাথে সাথে জাহিন লোকটির কপালের দিকে তাকাল। সেখানে স্পষ্ট ভাবে দেখলো লোকটির নাম হাসানুজ্জামান। ও আরো দেখলো লোকটির বাসার ঠিকানা ছেলে মেয়ের সংখ্যা তাদের নাম এবং যাবতীয় বিষয়। জাহিন এবার বলতে শুরু করলো ওনার নাম জনাব হাসানুজ্জামান। ওনার বাসা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। উনি একজন উকিল। ওনার তিন ছেলে। বড় ছেলে আমেরিকাতে থাকে তার নাম রাফিন,মেজ ছেলে আরমান এবার এস এস সি পরীক্ষঅ দেবে। সে গত বারও পরীক্ষা দিয়েছিল কিন্ত অংকে ফেল করেছিল। আর সবার ছোট ছেলে সুমন এবার ক্লাস ফোরে পড়ে। উনি এখানে এসেছেন একটা মামলা কোন ভাবেই পেরে উঠছেন না দেখে তোমার সাহায্য নিতে। এইটুকু বলে জাহিন থেমে গেল। আসলে ও আরো অনেক কিছু জানে কিন্ত আর বলতে ইচ্ছে করছেনা। আর তা ছাড়া ও এখনো জানেনা ওর বলা কথা গুলো আসলেই সত্যি কিনা। এতক্ষন ওর সব কথা খুব মনোযোগ দিয়ে ওনারা দুজন শুনছিলেন। আর অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছিলেন। কিভাবে সব কথা হুবহু মিলে যাচ্ছে। তাদের দুজনের বাক রুদ্ধ হবার অবস্থা। কিছুক্ষণ তারা কোন কথা বলতে পারলেন না। একটু ধাতস্থ হয়ে হাসানুজ্জামান সাহেব ওর কাছে জানতে চাইলেন তুমি আমার এত সব জানলে কি করে। এ প্রশ্নের কোন উত্তর জাহিন দিলনা। সে বরং উল্টো আরো বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে বাবা এবং বাবার বন্ধুকে বললো আংকেল আপনি যখন ক্লাস এইটে পড়তেন তখন একবার আপনি ক্লাসে পড়া পারেননি বলে স্যার আপনাকে বেঞ্চের ওপর দাড় করিয়ে রেখেছিল। আর সে জন্য আপনার খুব রাগ হয়েছিল। স্কুল থেকে ফিরে আপনি মনে মনে ফন্দি এটেছিলেন ঐ টিচারকে শায়েস্তা করবেন। এ জন্য পরদিন আপনি স্কুল থেকে সোজা বাসায় না এসে কুমুদীনি নন্দির বাড়ির পাশের জংলা জায়গাটাতে একটা উচু গাছের ডালে গুল্টি নিয়ে বসে ছিলেন যেন ঐ টিচার আসলেই তাকে গুল্টি মারতে পারেন এবং দেখা গেল ঐ দিন স্যার আর ঐ পথ দিয়ে আসলেনই না। জাহিনের বাবা এবার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন এই ঘটনাটাকি আসলেই ঘটেছিল নামি আমার ছেলেটা বানিয়ে বানিয়ে বলছে। হাসানুজ্জামান সাহেব কাপা কাপা গলায় বললেন কথা গুলো একশোতে একশো ভাগ সত্যি। কিন্ত তোমার এই তের বছরের ছেলেটা তা জানলো কি করে সেটাই বিস্ময়। আমি নিজে ছাড়া আর কেউ ঐ ঘটনাটা জানতো না। এমনকি আমি কাউকে বলিনি। জাহিনের বাবা সাহান ইমাম এবং তার ঘনিষ্ট বন্ধু হাসানুজ্জামান তের বছরের ছেলেটার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন।এর পর হাসানুজ্জামান ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন বাবা তুমি কি আরো কিছু জান? জাহিন বললো জ্বি আমি আপনার সব ঘটনা জানি। হাসানুজ্জামান সাহেব এবার মাথায় হাত দিলেন। তার সব গোপন কথা যা সে কোন দিন কাউকে বলেনি সে সব কথাও এ ছেলে জেনে গেছে। এবার আর তার এই বাচ্চার কাছে মুখ দেখানোর উপায় থাকলোনা।
ওনাকে উদ্বিঘ্ন দেখে জাহিন জানতে চাইলো কি হয়েছে আংকেল আপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? অনেকটা উপায়হীন মানুষের মত হয়ে হাসানুজ্জামান সাহেব বললেন চিন্তা হবেনা! তুমি আমার সব গোপন বিষয় জেনে ফেললে আমারতো লজ্জা হচ্ছে। এবার জাহিন জানালো আপনার লজ্জা পাবার কোন কারণ নেই। আমি আপনার কোন খারাপ বিষয় জানতে পারিনি। শুধু এই মজার কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। কিন্ত কিভাবে জানতে পেরেছ এটা জিজ্ঞেস করলেন ওর বাবা। কোন না কোন ভাবে এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে হবে চিন্তা করে জাহিন বললো বাবা আসলে আমি কল্পনা করে এসব বলেছি। এগুলো যে সত্যিই ঘটেছিল তা কি আর আমি জানতাম। আমি প্যারানরমাল একটিভিটি দেখেছি হয়তো তাই এরকম কল্পনা করেছি। এ কথা বলেই ও নিজের রুমে চলে গেল। এবার চিন্তার সাগরে ডুবে গেলেন জাহিনের বাবা এবং তার বন্ধু। কোন ভাবেই আর তাদের দরকারী বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারলেন না। কেবল একটু আগে ওর বলা কথাগুলোই কানে বাজতে লাগলো।