মানুষের স্বপ্ন বার বার বদলায়। যেমন বদলেছিল বাঙ্গালীদের স্বপ্ন। শুরুটা কত আগে হয়েছিল তা হয়তো আমাদের জানা নেই। তবে সাধারণ ভাবে বলতে গেলে ১৭৫৭ সালটাই ধরা যেতে পারে। মূলত সেদিনইতো বাংলার স্বাধীনতার সুর্য় দীর্ঘ দিনের জন্য ডুবেছিল। যে স্বাধীনতার আলো জ্বালতে বাঙ্গালীদের লেগেছে যুগের পর যুগ। দেশ ভাগ হলো। বাঙ্গালীরা মনে করলো এবার নিশ্চই তাদের ভাগ্য বদলাবে। নতুন একটা দেশ হলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাই আবারও তাদের আশা ভঙ্গ হলো। শাষক গোষ্ঠি তাদের ওপর চাপিয়ে দিল নানা অত্যাচার। দেশকে ভালবাসার মানুষের অভাব ছিলনা। বর্তমানে যারা দেশকে ভালবাসে বলে বড় বড় কথা বলে তারা আসলে কতটা দেশকে ভালবাসে তা চোখ কান খোলা রাখলেই উপলব্ধি করা যায়। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারটুকু যখন শাষক গোষ্ঠি কেড়ে নিতে চাইলো তখন বাঙ্গালীরা রুখে দাড়ালো। রাজ পথ বুকের রক্ত দিয়ে ধুয়ে দিল। যার স্মৃতি ধরে রাখতে আজ আমরা শহীদ মিনার বানিয়েছি। কালের পরিক্রমায় সাহসী বাঙ্গালীরা যে সুখের আর সমৃদ্ধির স্বপ্ন নিয়ে দেশ গড়ার কাজে মনোযোগি হয়েছিল তারা হারিয়ে যেতে লাগলো। হারিয়ে যাওয়ার আগে ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেল একটা স্বাধীন বাংলাদেশ। তাদের স্বপ্ন ছিল বুকের রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে তারা যে স্বাধীন দেশটা আমাদের হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছে তা আমরা রক্ষা করবো এবং আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলবো। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন আমরা সত্যি হতে দেইনি। তাদের সে স্বপ্নকে আমরা মিথ্যে করে দিতে প্রতিনিয়ত ব্যাস্ত ছিলাম। সেই সব মানুষ যারা ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ অবধী জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য একটা লাল সবুজের পতাকা এনে দিয়ে গেল এবং আমাদের হাতে সেই সোনার বাংলার দায়িত্ব দিয়ে গেল তাদের এই দিয়ে যাওয়াটা অনেকটা শেয়ালের কাছে মুরগী বরগা দেয়ার মত। যে শেয়াল প্রতিনিয়ত তার কাছে রেখে যাওয়া মুরগীর ছানাকে খেয়ে ফেলতে লাগলো। আমাদের হয়েছে তাই। যে মানুষগুলো জীবনের সব সুখ বির্সজন দিয়ে আমাদের হাতে তুলে দিয়ে গেল একটা স্বাধীন পতাকা আজ আমরা সেই পতাকা খামচে ছিড়ে নষ্ট করছি।
দেশ এই স্বাধীনতা পরবর্তী বছর গুলোতে কতটা উন্নত হয়েছে সেটাতো আমরা দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু কতটা হারিয়েছে সেটাও নিশ্চই আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের চেয়ে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা দেশও এখন আমাদের থেকে অনেক উন্নত। তাইতো আমাদের দেশের সম্পদশালীরা সেই সব দেশে ছুটি কাটাতে যায়। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিলনা। বরং অন্য দেশের মানুষদেরই আমাদের দেশের সৌন্দর্য দেখতে আসার কথা ছিল।
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কসতে গেলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এখন আমরা দেখি স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে বাজে কথা বলা হচ্ছে এবং সেটা যে কেউ বলছেনা বলছেন তারাই যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খুব কাছে ছিলেন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে যাদের অবদান কোন অংশেই কম নয়। এখন স্বাধীনতার ঘোষক নিয়েও তর্ক বিতর্ক হতে দেখা যাচ্ছে। এটাতো ন্যুনতম জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিরও জানা থাকার কথা যে স্বাধীনতা লাভের পরও চার বছর জীবিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি কি কখনো বলেছেন যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক। জিয়াউর রহমান বেচে ছিলেন আরো অনেক দিন। তিনিকি কখনো বলেছিলেন যে তিনিই স্বাধীনতার ঘোষক? আমরা নিজেরাই আসলে কুলাঙ্গার। তাই যারা আমাদের জন্য এরকম সুন্দর একটা দেশ সুন্দর একটা পতাকা এনে দিয়েছিলেন তাদের আমরা সকাল সন্ধ্যা পদদলিত করছি অপমান করছি। স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া না দেওয়া যদি বড় কিছু হতো তবে বঙ্গবন্ধু কিংবা জিয়াউর রহমান দুজনেই জীবিত থাকা কালিন এমন কিছু করে যেতেন যে সেটা নিয়ে কারো কিছু বলার থাকতোনা। আমরা কেন তাহলে এতো কথা বলছি। আজকে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি কেউ কাউকে সম্মান করতে চায়না। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষনাটি পড়ে শোনানো হয়েছিল সেখানে জিয়াউর রহমান স্পষ্ট বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। তার পরও সেটা যেমন আওয়ামীলীগ অস্বীকার করে তেমনি জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমানও অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা। এমনকি যে মানুষটা না হলে বাংলার স্বাধীনতার সুত্রপাতই হতনা তাকেও স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষ বলে আখ্যায়িত করতে দ্বিধা করেনা। আমরা নিজেরাই আমাদের সেই সব অসাধারণ মানুষগুলোকে দিন রাত কলুসিত করছি। যারা চলে গেছে তাদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছি। অথচ তাদেরকে সব সময়ের জন্য সম্মানের আসনে বসানোর কথা ছিল।