somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা ও আমি বাবা

২১ শে জুন, ২০১১ রাত ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা সম্পর্কে কিছু লিখব তা আগে কখনও ভাবিনি। এইবার বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে হঠাৎ মনে হলো আমার বাবা সম্পর্কে কিছু লিখা উচিত। লিখতে গিয়ে পড়লাম বিপদে, কোথা থেকে শুরু করব কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই সন্তান হিসেবে বাবাকে কিভাবে দেখেছি, সেইটাই তুলে ধরতে চেষ্ঠা করলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বাবাকে একজন দায়িত্ববান পিতা হিসেবে দেখেছি। তার ছয় সন্তানের জন্য ছিল সমান মমত্ববোধ। বিশেষ করে সন্তানদের পড়াশুনার জন্য তিনি তার জীবনে অনেক ছাড় দিয়েছেন। আমি যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম বাবা চাকুরি ছেড়ে দিচ্ছেন, কিন্তু কি কারন তা প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমার বাবাকে অফিসিয়ালি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ট্রান্সফার করা হয়েছিল। প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতেন। এক দিন থেকে তিনি আবার ঢাকায় ফিরে যেতেন। এমনি করে আসা যাওয়ার কারনে তার সন্তানদের প্রতি সময় দিতে পারছিলেন না, শুধু এই কারনেই তিনি চাকুরী ছেড়ে চট্টগ্রামে স্থায়ী ভাবে ব্যবসা করতে শুরু করলেন। আমরা ভাই বোনেরা যখন যে আবদার করতাম উনি চেষ্টা সাথে সাথে তা পূরন করতে। তবে সব কিছুর আগে আমার মায়ের মতামত নিতেন। আমার মাযের মতামতকে আমাদের সকল কাজের মধ্যে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করতেন। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। তখন ছবি দেখার জন্য বাজারে ভিসিপি আসলো। আশে পাশের সবাই সেই ভিসিপি কিনল। আমরা ভাই বোনরা বাবার কাছে ভিসিপি কিনে দেবার জন্য আবদার করলাম। বাবার এক কথা তোমার আম্মু বললে কিনে দিব, এই দিকে পড়াশুনার ক্ষতি হবে বলে আম্মু কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেন না। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আম্মু রাজি হলেন এবং ঐ দিনই আব্বু ভিসিপি কিনে আনলেন। আম্মুর প্রতি বাবার ছিল গভীর ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসার নিদর্শন পাওয়া যায় তার বিভিন্ন কার্যক্রমে। যেমন, একদিন ঘোষনা করলেন আমাদের বাড়ীর একটি নাম দেওয়া হবে এবং তা অবশ্যই আমাদের আম্মুর নামে।আর সেই দিন থেকে আমাদের বাড়ী আম্মুর নামে পরিচিতি পেল। রাজনীতি, খেলাধুলা অনেক বিষয় নিয়ে আমার সাথে বাবার মতের অমিল ছিল, যা নিয়ে আমাদের মধ্যে যৌক্তিক অনেক বিতর্ক হতো। টিভিতে খেলা দেখতে বসলে আমি এক দল সমর্থন করতাম আর আমার বাবা ঠিক তার বিপরীত দলকে সমর্থন দিতেন। এই বিষয়টি বাসার সবাই খুব উপভোগ করতো। ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাবাকে আমি একজন প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে দেখে এসেছি। খেলাধুলার প্রতি আমার অনেক আগ্রহের কারনে প্রায় বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলতে যেতাম। বাসায় ফিরতে যখন অনেক সময় দেরী হতো তখন খুব চিন্তা করতেন।রাগ করে অনেক সময় বকাঝকা করতেন। তখন জেদ লাগতো, বাবা কেন এমন করেন? আমাকে কি উনি ভালোবাসেন না? আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র, তখন বাবাকে হার্টের বাইপাস সার্জারির জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই দিনটার কথা আমি কোনদিন ভুলবনা। আব্বুকে বিদায় দেবার সময় তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে যেভাবে কাঁদছিলেন সেই দৃশ্যটা মনে পড়লে এখনো চোখ জলে ভিজে যায়। সেদিন বুঝেছিলাম বাবা আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন।বাবা চেয়েছিলেন তার সন্তানরা সুসন্তান হবে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি জানিনা আমরা ভাই বোনরা তার ইচ্ছার কতটুকু পূরন করতে পেরেছি, তবে একটুকু জানি আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে আমাদের জন্য বাবা মায়ের এতটুকু অসম্মান বা অমর্যাদা যেন না হয়। এখন যখন আমি আমার বাবার কথা লিখছি, তখন বার বার মনে হচ্ছিল আমার ছেলেও কি একদিন এইভাবে আমার কথা লিখবে? গতবছর ২৯ অক্টোবর আমি প্রথমবারের মতো একটি পুত্র সন্তানের বাবা হলাম। সেই দিনের সেই অনুভূতির কথা আমি বর্ননা দিতে পারবনা। যখন অপারেশন থিয়েটার থেকে আমার ছেলে জাদিদ নাসওয়ানকে আমার কোলে দেওয়া হলো তখন আমার চোখ বার বার ভিজে যাচ্ছিল। আমার স্ত্রীকে তখন অন্য রুমে নেওয়া হলো,আর আমি পাশের রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে সারারাত বসে ছিলাম। আমার বাবুকে মশা কামড়াতে না পারে সে জন্য সারারাত সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তারপরও দুশ্চিন্তা লাগছিল। এইতো কিছুদিন আগে আমার ছেলের প্রচন্ড জ্বর হলো, সেই সাথে বমি ও কাঁশি।তখন কি যে টেনশান লাগছিল,বারবার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করছিলাম । তিন দিন অফিসে যাইনি, সারাক্ষণ আমি ও আমার স্ত্রী আমাদের ছেলেকে বুকে আগলে রেখেছিলাম।ছেলের কষ্ট দেখে আর সহ্য করতে পারছিলমনা। সৃষ্টি কর্তার নিকট প্রার্থনা করছিলাম যেন আমার ছেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। এখন বুঝি আমার বাবা আমাদের জন্য কত কষ্ট করতেন, কেন এত চিন্তা করতেন। সন্তান হিসেবে তখন আমি যা বুঝিনি কিংবা বুঝতে চেষ্টা করিনি, এখন বাবা হিসেবে তা উপলব্দি করছি।একটা সময় ছিলো যখন বাবা থেকে কিছু জবাবদিহিতা করতে হবে বলে পালিয়ে বেড়াতে চেয়েছি, আর এখনকার সময়গুলোতে তাকে কাছে পেতে চেয়েও তা সম্ভব হয়ে উঠছেনা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়তো বেশী দূরে নয়,কিন্তু সময় ও বাস্তবতার নিরীখে তা কখনও কখনও অনেক দুরে…। কেননা আমার বাবা চট্টগ্রাম ছেড়ে এই যানজটের ঢাকাতে আসতে তার যথেষ্ঠ অনীহা, আর আসলেও দুই দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যেতেন। বাবাও বাস্তবতা বুঝেন, কবে মাঝে মাঝে খুব অভিমানী হয়ে যান। প্রতিদিনই তার সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। যখন বাবার শরীর খারাপের খবর শুনি, তখন নিজের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট অনুভুত হয়, নিজের অজান্তে চোখ ভিজে যায় আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে বাবা তোমার ছেলে তোমার জন্য কিছুই করতে পারছেনা, তুমি আমাকে ক্ষমা করো, বাবা তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি....
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১১ রাত ১:২৯
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×