এর আগেও পেপারে দেখেছিলাম ব্যাপারটা। কিন্তু আমি বাংলালিঙ্ক এর প্রিয়জন সাবস্ক্রাইবার হওয়ার সুবাদে ১০% ছাড়ের এসএমএস টা পাওয়ার পর মাথায় ঢুকে গেছে এবার আইস্ক্রিম ফ্যাস্টিভালে যেতেই হবে। হ্যা, আমি ঈগলু-রুপসী বাংলা আইস্ক্রীম ফ্যাস্টিভাল ২০১৩ এর কথা বলছি। গত ১৩ থেকে ২১ জুন ২০১৩ তে স্বনামধন্য আইক্রীম কোম্পানী ঈগলু আর হোটেল রুপসী বাংলা এর যৌথ উদ্যোগে হোটেল রুপসী বাংলার লবীতে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। মাত্র ৫০০ টাকায় বিভিন্ন স্বাদের অফুরন্ত আইসক্রীম খাওয়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি বলেই মাথায় চিন্তাটা আসা মাত্রই আমাদের গ্রুপ পেটপূজারী (
পেটপূজারী) তে একটা পোষ্ট দিয়ে দিলাম। যদিও আমাদের গ্রুপ মেম্বার হাতে গোনা কয়েকজন তবুও আশা করেছিলাম ৪/৫ জন হয়তো যেতে পারবো শেষ পর্যন্ত। কিন্তু জিসান ঠান্ডার অজুহাতে প্রথমেই সরে গেলো। এরপর যথারীতি মুক্তার ভাই আর নিশানও সটকে পড়লো। শুধু অনিক আর তনয় যেতে রাজি হলো। যদিও নরসিংদিতে থাকার কারনে অনিক আর আসতে পারলোনা, কিন্তু শেষ মুহুর্তে মুক্তার ভাই আমাদের সাথে জয়েন করলো।
১৮ জুন অফিস শেষে আমি আর তনয় গুলশান থেকে সরাসরি ভেন্যুতে চলে গেলাম। রাস্তায় মুক্তার ভাইয়ের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করে উনার আসা নিশ্চিত করে নিলাম। সেই সাথে উনাকে আসার সময় ক্যামেরা নিয়ে আসতে বলে দিলাম। তো রুপসী বাংলাতে গিয়ে বাইরের গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আমি আর তনয় মুক্তার ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা না করে সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ ভিতরে ঢুকে গেলাম। এন্ট্রি টিকেট আমার জন্য ৪৫০ আর তনয়ের ৫০০ টাকা।

গেইট দিয়ে ঢুকতেই একজন আমাদের এন্ট্রি পাস চেক করে নিলো এবং আরেকজন হাতে সিল দিয়ে কি একটা মার্ক করে দিলো। ঢুকেই প্রথমে একটু হতাস হয়ে গেলাম জায়গা স্বল্পতা দেখে। মনে হচ্ছিলো আয়োজনটা আরো একটু বড় পরিসরে করলে আরও ভালো হত। যাই হোক, মোট চারটা কাউন্টার নিয়ে বসেছে আইসক্রিম মেলা। প্রতিটাতে ২০ টার মত ট্রে তে বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রিম সাজানো আছে। আমরা প্রথমে কিছুক্ষন ঘুরে হাবভাব বুঝে দুইজন দুইটা ফ্লেভার টেস্ট করলাম। দুটোই খেতে ভালো ছিলো, তনয়ের খাওয়া দেখে অন্তত এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম। এরপর তনয় একসাথে ৪টা ফ্লেভার নিলো আর আমি দুইটা। এগুলো শেষ হতে না হতে মুক্তার ভাই এসে জয়েন করলো। মুক্তার ভাই আসার পর আমাদের ম্যারাথন আড্ডাবাজি আর ফটোগ্রাফির মাঝে মাঝে চললো আইসক্রিম খাওয়া। ক্রিম এন্ড কুকিজ, ক্যারিবিয়ান কোকোনাট, অরেঞ্জ স্টারবাস্ট, ব্ল্যাক ফরেস্ট, ডাবল চকোলেট, প্রালাইন আন্ড ক্রীম, চকোলেট এন্ড অরেঞ্জ, চকোলেট ফাজ, স্ট্রবেরী ইয়োগার্ট সহ আরোও অনেক স্বাদের আইস্ক্রিম ছিলো ফ্যাস্টিভালে। প্রায় প্রতিদিনই একটা না একটা নতুন ফ্লেভার যুক্ত হতো এই আয়োজনে। আইসক্রিম খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ছিলো লাইভ গান শোনার সুযোগ। অল্প বয়সী পাঁচজন ছেলে জনপ্রিয় কিছু বাংলা আর ইংরেজী গান গেয়ে শোনাচ্ছিলো অতিথিদেরকে। জায়গা স্বল্পতার কারনে অনেকেই বসার সুযোগ পাচ্ছিলোনা। আবার অনেকেই জায়গার তোয়াক্কা না করে বন্ধু বান্ধব নিয়ে ফ্লোরে বসেই আড্ডাবাজি আর আইসক্রিম ভোজন চালাচ্ছিলো।
এমনিতে আয়োজনটা খুব ভালো ছিলো। নানান বয়সী আইসক্রিম প্রেমিদের কলকাকলীতে ভরে উঠেছিলো সেই ক্ষুদ্র পরিসর। বেশ কয়েকজন ভীনদেশী আইসক্রিম প্রেমীকেও দেখা গিয়েছে আইসক্রিমের স্বাদ নিতে। তবে যতটুকু আশা নিয়ে গিয়েছিলাম তার অনেকখানিরই গুড়ে বালি পড়ে গিয়েছে ওদের সংগ্রহ দেখে। সচরাচর পাওয়া যায়না এমন অনেক ফ্লেভারই হয়তো ছিলো তবে মুখে দিলেই চোখ বুজে আসে বা অসাম টাইপের কোনও ফ্লেভার চোখে পড়েনি। আর ছোট পরিসরে আয়োজনটা হওয়ার কারনে প্রায় সময়েই আরেকজনের গায়ে ধাক্কা লেগে যাচ্ছিলো। চারদিকে সবচেয়ে বেশি যে শব্দদুটো উচ্চারিত হচ্ছিলো তা হলো “এক্সকিউজ মি”।
মোটামুটি দুই ঘন্টা ধরে আড্ডাবাজি আর খাওয়ার রেজাল্ট অনেকটা এরকম। আমার স্কোর ১৫, তনয়ের ২৫ আর ফেল্টুশ মুক্তার ভাইয়ের মাত্র ৪। তবে আমার মনে হয়েছে দুএকটা ঝাল স্বাদের আইসক্রিম থাকলে আমি হয়তো আরেকটু বেশী স্কোর করতে পারতাম।
ছবি কৃতিজ্ঞতাঃ মুক্তার ভাই
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩৮