somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসা ই কি প্রথম বাংলাদেশি?

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসা ই কি প্রথম বাংলাদেশি?
ঘরকুনো বাংগালির মানুষ হওয়া নিয়ে রবীন্দ্রনাথ অনেক খোঁচা মারা কথা বলেছেন। “তৈলঢালা স্নিগ্ধ তনু, নিদ্রারসে ভরা” টাইপের কথাবার্তা বলে বাংগালির চরিত্রের বারোটা বাজিয়েছেন। এতে হয়ত সে যুগে কিছুটা সত্যতা ছিল। তবে এ যুগের বাংগালি হয়ত ততটা নিদ্রারসে ভরা নয়। বাধানো হুকা যতনে মাজা কিংবা, মলিন তাস সজোরে ভাজা ছাড়াও বাংগালি এখন আরো কিছু করে। ছড়িয়ে পরেছে তারা সারা দুনিয়ায়। আমি নিজে খুবই আশাবাদী আমাদের জাতি নিয়ে। অনেক ব্যর্থতা আছে, অনেক অপূর্ণতা আছে। সাময়িক সমস্যা নিয়ে আমরা জেরবার থাকি। বিদ্যুত, পানি, রাজনীতি এগুলো নিয়ে ক্যাচাল করতে থাকি। কিন্তু প্রতিদিনের হট্টগোল থেকে সরে যদি একটু দশক হিসাবে দেখি তাহলে দেখব যে আমরা এগুচ্ছি। আশির দশক, তারপর নব্বই এর দশক এভাবে দেখলে আমরা এগুচ্ছিই বটে। এই যে ব্লগ লিখছি এটা কি আমাদের বাবারা ভাবতে পেরেছিলেন?

যাই হোক এখনো বাঙ্গালির অনেক কাজ বাকি। তার মধ্যে একটা হল এভারেস্ট জয়। আমরা এমনিতেই সমতলের মানুষ। পাহাড় পর্বত ঠিক আমাদের জিনিস নয়। মুজতবা আলী বলেছিলেন যে মাটির ঢিবি দেখলেই নাকি আমরা পাহাড় পাহাড় বলে চিৎকার করে উঠি। তাছাড়া ভাটির দেশের কৃষিকাজ করে আমরা মানুষ। দৈহিক গঠন, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস এসব দিক থেকেও আমরা ঠিক পাহাড়িদের মত নই। পাহাড়ের চূড়ায় উঠার চেয়ে তীর হারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেয়া আমাদের জন্য সহজ।

তো সেই এভারেস্ট জয়ও আমরা করতে চাই। কিন্তু কাজটা এত সোজা নয়। পাহাড় সম্বন্ধে আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা নেই আমরা কল্পনাও করতে পারব না ঊনত্রিশ হাজার ফুট (২৯০২৯ ফুট, ৮৮৪৮ মিটার) বলতে কি বোঝায়। যেখানে তাপমাত্রা শুন্যেরো প্রায় বিশ ডিগ্রি নিচে থাকে। সে পাহাড়ের পথে পথে থাকে আলগা বরফের মৃত্যুফাঁদ আর তুষার ঝড়ের বিভীষিকা। এর পরে আছে উচ্চতা জনিত রোগগুলো (আলটিচ্যিউড সিকনেস)। ৭০ ভাগ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেরোতে হয় সে রহস্যময় পথ। কত জন যে প্রাণ হারিয়েছে আজ পর্যন্ত তার লেখাজোকা নেই।

নেপালিরা এভারেস্টকে বলে সাগর মাথা। তিব্বতীরা বলে কমুলাংমা। তৎকালীন বৃটিশ আমলের রয়্যাল জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভের বাংগালি অফিসার রাধানাথ শিকদার প্রথম এভারেস্ট এর উচ্চতা মেপে ঠিক করেন যে এভারেস্ট ই পৃথিবীর উচ্চতম শৃংগ। কিন্তু শৃংগটির নাম দেয়া হয় তার বস জর্জ এভারেস্ট এর নামে।

আমরা সবাই জানি যে নিউজিল্যান্ড এর স্যার এডমন্ড হিলারি ও নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগে ১৯৫৩ সালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন। হিলারি এছাড়াও আরো অনেক অভিযানে ছিলেন। যেমন নৌকায় করে গংগার উৎসমূল থেকে মোহনায় যাওয়া, দক্ষিন মেরুর কেন্দ্রে যাওয়া ইত্যাদি। আরেক পর্বতারোহী আপ্পা শেরপা কিছুদিন আগে ঊনিশ বারের মত এভারেস্ট এ উঠে রেকর্ড করেছেন। শেরপারা হিমালয়ের পাদদেশে থাকে। তাদের আদিবাস তিব্বতের উচু পাহাড়ি এলাকায়। তারা বড় হয় সে পরিবেশে। সেই বরফে মোড়া বিপদসংকুল পরিবেশে ঘোরাঘুরি তাদের জন্য ডালভাত।

এবার আসি বাংগালিদের কথায়। ভারতীয় সাবমেরিন কমান্ডার সত্যব্রত দাম প্রথম বাঙ্গালি হিসাবে এভারেস্ট জয় করেন। কিন্তু কোন বাংলাদেশি আজ পর্যন্ত তা করে উঠতে পারেনি। এক্ষেত্রেই আসছে আমার বন্ধু মুসা ইব্রাহিম এর নাম।
মাঝারি উচ্চতার, শক্ত গড়নের মুসা বেশ হাসিখুশি উচ্ছ্বল ধরনের মানুষ। তার স্বপ্ন এভারেস্ট এ উঠবে। দার্জিলিং এ মাউন্টেনিয়ারিং এর উপর দুমাসের ট্রেনিং ও করে ফেলল। (এ প্রসংগে বলে রাখি, এ ট্রেনিংটা খুবই সস্তা। মাত্র দুশ ডলারে একমাসের ট্রেনিং। থাকা খাওয়া সহ। যে কারুরই ইচ্ছা থাকলে এই ট্রেনিংটা করে নিতে পারেন)। কিন্তু শুধু ট্রেনিং করেই এই বিশাল কাজটি করা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার প্র্যাক্টিস। মুসা গত ছয় সাত বছর ধরে এই প্র্যাক্টিস করে আসছে। প্রথমে ছোট ছোট পাহাড় গুলোতে ওঠা। তার পর আরেকটু বড় পাহাড়। আরেকটু বড়। গত বছর (২০০৯ এর জুলাই মাসে) মুসা ও তার দল উঠেছিল অন্নপূর্না -৪ এ। এটি প্রায় ২৪৬৮৮ ফুট।

অন্নপুর্না ৪। দেখতে মনোহর হলেও আসলে ভয়ংকর
নেপালের তৃতীয় উচ্চতম শৃংগ। অন্নপূর্ণাতে উঠা ছিল তাদের জন্য শেষ পরীক্ষা।

অন্নপুর্না ৪ এর পথে। চারিদিকে বরফ। তার মাঝে সাহস নিয়ে এগিইয়ে যাওয়া


অন্নপুর্না ৪ এর চুড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে মুসা

চব্বিশ হাজার ফুট উঠার পর লক্ষ্য হল ঊনত্রিশ হাজারের এভারেস্ট। মুসা এবার যাত্রা করেছে সেই ভয়ংকর সুন্দর এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে।
কিন্তু এত সহযে বিষয়টি হবার নয়। প্রথমত এভারেস্ট-এ ওঠা একটি বিশাল খরচ স্বাপেক্ষ ব্যপার। সরকারি ফি অত্যধিক বেশি। এছাড়া আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, বিশেষ ধরনের তাবু ও পোষাক, শেরপা গাইড এবং কুলির খরচ, খাবার দাবার, বিশেষ ধরনের চুলা, আরো অনেক কিছু। সব মিলিয়ে এভারেস্ট এ ওঠার খরচ প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার কাছাকাছি। এত টাকা জোগাড় করা ছিল একটা অসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু যার মাথায় রয়েছে স্বপ্নের ঘোর, আর বুকে সাহসের আগুন সেকি অতশত ভাবে? কিছু স্পন্সর, বাকিটা ধার দেনা করে মুসা চলে এসেছে এভারেস্ট জয় করতে।গত ১০ এপ্রিল ও রওয়ানা হয়ে গেছে এভারেস্ট এর পথে। সাথে আছে শেরপা গাইড সোম তামাং। আরো রয়েছে জনা তিনেক শেরপা কুলি। সোম তামাং এর আগে প্রায় ছয়বার এভারেস্ট এ উঠেছে। অত্যন্ত অভিজ্ঞ এই শেরপার গাইডেন্স-এ মুসা হতে চলেছে প্রথম বাংলাদেশি এভারেস্ট বিজয়ী।

এভারেস্ট যাত্রার প্রাক্কালে মুসা (মাঝে) সোম তামাং(নীল টি শার্ট) ও অন্যরা
আমাদের ইতিহাসে যোগ হতে যাচ্ছে আরেকটি মাইল ফলক। আমরা হয়ত পাব আমাদের আরেক অভিযাত্রী নায়ককে। ৪৫ দিনের এই অমানুষিক অভিযাত্রার শেষে মুসা যখন বিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে আমরা কি তখন রবীন্দ্রনাথের ছবির দিকে আরেকটু শ্লেষ ভরে হাসব? আশা করি ৪৫ দিন পরে আপনাদের সেই দারুন খুশির খবরটি দিতে পারব। আর হ্যা, সবাই মুসার জন্য শুভকামনা রাখবেন। দেশে ফেরার পর ওর সাহায্য লাগবে ধার দেনা গুলো শোধ করতে। আপনাদের হৃদয়ের প্রতিনিধি হয়ে মুসা হয়ত উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা পৃথিবীর সবচেয়ে উচু জায়গায়। নিজেদের প্রমাণ করার জন্য এগিয়ে যাব আরেক ধাপ।

বাংলাদেশের নাম নিয়ে মুসা যাচ্ছে তার স্বপ্নের যাত্রায়
২১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×