somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্থা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার যখন জন্ম হয় তখন পাখির কলকাকলি ছিল কিনা জানিনা। চাঁদ অমবস্যার কারনে লুকায়িত ছিল না পূর্নিমার কারনে দেখায়িত ছিল তাও বলতে পারবনা। যেহেতু আমার জন্ম শীতকালে হয়েছে তাই শৈত প্রবাহ হয়ত থাকতে পারে। জন্মের পর পরেই এত অবাক হয়ে ছিলাম যে পরবর্তি কথা বলতে এক দেড় বছর কেটে যায়। এখন অবশ্য অত অবাক হইনি। বুঝতে পারি পৃথিবী ঘন ঘন অবাক হওয়ার জায়গা না।
জন্ম হয় মধ্যবিত্ত পরিবারে । বাবা সরকারী কর্মকর্তা। লিমিটেড ইনকাম। বেশ হিসেবী মানুষ। পাঁচ বছর পরেও কোন খাতে কি খরচ হবে তা হিসাব করে রাখেন। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। সন্তান হওয়ার কথা জানুয়ারী মাসে কিন্তু আগত বেয়াদব সন্তান যে ডিসেম্বর মাসেই ফেরেফুরে বের হতে চায় সেটা সে মানতে রাজীনা। অগ্যতা উপায় না দেখে আমার আম্মা ফুপাতো বোনকে ফোন দিলেন। তখন তো আর মোবাইল ছিলনা সেই ফোনও অনেক কষ্টে দেওয়া হয়েছিল। ফুপাতো বোন আসলেন, তিনি ডাক্তার। আমি আমার আব্বার অর্থ সাশ্রয় করলাম। কোনরকম খরচ ছাড়াই মায়ের পেট থেকে বের হলাম। আম্মা আব্বাকে জানালেন প্রায় ৪ বছর আগে মেয়ে হওয়ার সময় ৩৬৫ টাকা খরচ হয়েছিল, ছেলেটা টাকা পয়সা তেমন খরুচ করেনি। ছেলে পরবর্তিতে সরকারী স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে পড়ার মাধ্যমে সাশ্রয় অব্যাহত রেখেছে। তবে তার আব্বার প্রতি তেমন কোন রাগ নাই। বাবা সীমিত সামর্থ্য দিয়ে ছেলেকে কম ভাল বাসেননি। অগণিত অর্থ তার ছিলনা। হিসাবের মধ্যে তাকে সবসময় থাকত হয়েছে।

এ হল আমার জন্মের কাহিনি। ২৮ ডিসেম্বর আমার জন্মদিন। জন্মদিন ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে কখনও পালিত হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের বাসায় আগ্রহ কম ছিল। তবে ছোটবেলায় আমি যেখানে জন্মেছিলাম সেখানে অন্যদের জন্মদিন পালন করা হত। সেরকম একজনের জন্মদিনের পার্টিতে একবার সব বন্ধুকে দাওয়াত দেওয়া হলো। আমাকে বাদ দেওয়া হলো। সবাই মিলে একসাথে খেলছিলাম সেখান থেকে সরাসরি আমাকে বাদ দিয়ে সে সবাইকে নিয়ে গেল। কিছু কিছু মানুষ মাঝেই মাঝেই আমাকে অপমান করে মজা পায়। এরকম ঘটনা এর পরেও আমার সাথে ঘটেছে। আর এমনিতেও সব সময় আমার জন্মদিনের দিন কোনো না কোনো কারনে আমার মন খারাপ থাকবেই।

তবে জীবন নিয়ে অসুখী হওয়ার কোনো কারন দেখিনা। জীবন জিনিসটাই একটা উপহার। আজকে থেকে কয়েক বছর আগের জন্মদিনের কথা মনে আছে। রাস্তায় চুপচাপ হাটছিলাম। মন খুবই খারাপ। ভার্সিটি লাইফে উঠে সব কিছু বেড়া ছেড়া লেগে গেছে। লেখাপড়া ভাল লাগেনা। বাসায় আব্বা আম্মা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বন্ধু বান্ধব দুই একজন ছাড়া সবাই এড়িয়ে চলে। আমার সামনে না হলেও পিছনে পিছনে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। মানুষের নিজের প্রতি আস্থা শূণ্যে পৌছানো কি জিনিস সেটা যে কখনো যায়নায় সে বুঝবেনা। খারাপ সময়ে ব্যাপারটা কি হয় বলি, আপনি কোন ভাল কাজ করার চেষ্টা করলেও মানুষ ভাল চোখে দেখবেনা। সারা জীবন কখনো ফার্স্ট সেকেন্ড হইতে পারিনাই তাই বলে বইয়ে ২-৪ টা কথা যা শিখেছি তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে গেলে মানুষ কেন গাধা বলবে? পরার্থে নামক এক কবিতা পড়েছিলাম। কি চমৎকার ভাবে জীবনে অন্যকে উপকার করার কথা বলা আছে। কিন্তু কি আজব ব্যাপার কারো উপকার করতে গেলে মানুষ দূর্বলতা ভাবে। আরেকটা আজব জিনিসের নাম হচ্ছে পরিপক্কতা বা ম্যাচুরিটি। এর মানে হলো আপনি দুঃখ কষ্ট পেলেও সেটা প্রকাশ করতে পারবেন না। জন্মদিনের দিন হাটছি জগন্নাথ হলের মাঠ বরাবর। রাত প্রায় ২ টা। হলে আসছিলাম পড়ালেখার দোহাই দিয়ে। আসলে পড়ালেখার ব্যাপার না। বাসায় মন টিকছেনা। হাটতে হাটতে হল থেকে বের হওয়ার গেট পর্যন্ত আসলাম। এখন কই যাব? কোনদিক যাব? আচ্চাহ আমার জীবনটাও কি এই পথের মতই না। আমি গেট দিয়ে বের হয়ে নীলক্ষেতের দিকে হাটতে পারি ছিনতাইকারী ধরতে পারে। আমার সারারাত এই গেট থেকে সেই গেট হেটেই বেড়াতে পারি। কি করব আমি কোনদিক যাব? আমার পথ আমাকে নিয়তির দিকে নিয়ে যাবে। বাস্তব জীবনও তাই। আমি ফিরলাম। দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে মানুষ ঘুরে দাঁড়ায় আমিও দাড়াব। আমার জীবনে যা উথান পতন হয়েছে হোক। আজ থেকে আমি সব ভাল কাজগুলাই করব। সব সময় যেটা ঠিক সেটাই করব। দৃষ্টিভঙ্গি একটা জিনিস যেটা মানুষকে পরিবর্তন করে। আমি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালাম। আমার আশে পাশে এক গাদা মানুষ। আমাকে দেখতে হবে তাদের মধ্যে ভাল ব্যাপারটা কি আছে। মানুষ ভাল-মন্দ মিলিয়ে কিন্তু আমাকে আকৃষ্ট করবে মানুষের ভাল দিক। আমাকে মনে রাখতে হবে আস্থা একটা বড় জিনিস। আমাকে সেই সব জায়গায় বিচরন করতে হবে যেখানে গেলে আমি আমার আস্থা ফেরত পাব। যোগ্যতা অর্জনের সব থেকে বড় উপায় হল আস্থা অর্জন। যোগ্যতা ধরে রাখার সব থেকে বড় উপায় হল নিরহংকার হওয়া। আমার জন্মদিন ছিল সেটা। সেটার কথা কারো মনে নেই।



জন্মদিন ব্যাপারটা এমন আহামরি কিছু না। প্রতি বছর এই দিনটা আপনার জন্য আসবে। আমার আব্বার সাথে আমি কথা খুব কম বলি। যে কয়টা কথা এই জীবনে বলেছি লিখে দেওয়া যাবে। কয়েকদিন আগে আব্বা আসলেন কথা বলতে।
এই ডিসেম্বর মাসে তুমি কি কি করতেছ?
তেমন কিছুনা আব্বা।
অফিসের কি অবস্থা?
ডিসেম্বর মাস ক্লোজিং এর মাস। একটু ব্যস্ততা থাকবেই।
আচ্ছা। এমবিএর কি অবস্থা।
চলতেছে মোটামুটি। ফাইনাল সেমিস্টার। শেষ পরীক্ষায় পাস করতে ৪০ এ ৫ পাওয়া লাগবে।
সেটা তো পাবাই।
উহু। এই স্যারের কাছে ৫ পেতে গেলেও সেই পরিমান পড়ালেখা করা লাগবে।
এরপর কি?
এরপর থিসিস আছে।
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা দিবা।
দিব মনে হয়।
আচ্ছা এক কাজ করো। বিসিএস রিটেনটা এবার বাদ দাও। এত চাপ নেওয়ার দরকার নাই। (আমি এবার খুবই ব্যস্ত। এই পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নেই। চাচ্ছিলাম এটা আপাতত বাদ দিতে। যে কোন কিছুর পিছনে পরিবারের সমর্থন থাকলে তা সহজ হয়ে যায়)
হা হয়ে আব্বার দিক তাকায় থাকলাম। এই কথা বলার মানুষটা আগে কই ছিলো!
চেষ্টা করব দেওয়ার জন্য।
না থাক।
( এর বাইরে ফেসবুক আর ব্লগে সময় দেওয়ার ব্যাপারটা আব্বার হিসাবের বাইরে। আসল ব্যাপারগুলাই আসলে তার হিসাবের বাইরে)

এই কথোপকথনটার মানে হলো, আগে কেউ আমার উপর আস্থা রাখতনা কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে রাখে। ১-২ দিনের ব্যাপারনা। নিজেকে পরিবর্তন করতে নিজেকে গুছিয়ে আনতে সময় লাগে, কিন্তু লক্ষ্য ঠিক রাখলে পারা যায়। আজকে আমার সেই খারাপ দিন আর নাই। তবে মানুষের ভালবাসা পাওয়াটা ঠিক যোগ্যতার ব্যাপারও না। এটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি ভাগ্যবান। আর ফেসবুকে আমার সকল বন্ধু বান্ধবের কাছে কৃতজ্ঞ। ফেসবুক আর ব্লগ কাকে কি দিয়েছে জানিনা, আমার ক্ষেত্রে আমার পুরা আস্থাটাই ফেরত এনে দিয়েছে। আমার আজকের জন্মদিনে আস্থার কথাই বলে গেলাম।
৪৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×