somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ও আমার মা

১১ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাধারণত মাকে নিয়ে লেখাগুলোর প্রতিটি শব্দে মিশে থাকে আবেগের ছোঁয়া, পড়লে মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার মাকে নিয়ে যখন লিখতে বসি তখন শব্দগুলোতে আবেগের যায়গাটা দখল করে বসে হাস্যরস। কারন আমার মা হচ্ছে একজন সেই মাত্রার মজার মানুষ! মাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন ঘটনাগুলো আমি বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আঁকারে দেই। নিচের ঘটনাগুলো মূলত ফেসবুকের সি সব স্ট্যাটাস থেকে সংকলিত। পড়লে মজা পাওয়ার নিশ্চিত গ্যারান্টি!

১। ঐটা পাশের বাসার আনটিই ছিল!


পাশের বাসার এক পিচ্চি মাইয়া আইসা আমার আম্মারে বলতেছিল, “আনটি, একটা প্রশ্ন করলে সত্যি উত্তর দিবেন?”

আম্মা আবার পিচ্চি পোলাপাইন খুব পছন্দ করে। আম্মা বলল, “অবশ্যই দিব! কি প্রশ্ন?”

“আপনি কি গান করেন?”

আমি আম্মারে জীবনে গান গাইতে শুনি নাই। কিন্তু আম্মা হাসিমুখে বলল, “হ্যা, আমি গান গাই, নাচতেও পারি”!

পিচ্চি মাইয়া আবার জিগাইল, “আপনি কি রবিন্দ্র সঙ্গীত গান?”

আমার আম্মা রবিন্দ্র সঙ্গীতের নামও শুনতে পারে না! আম্মা কইল, “হ্যা গাই তো”!

“আজকে আমাদের স্কুলের অনুষ্ঠানে যে শিল্পী রবিন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছে ওইটা আপনি ছিলেন তাইনা?”

আম্মা হাসতে হাসতে কইল, “হ্যা আমিই তো ছিলাম!”

মাইয়া তার বাসার দিকে এমন এক দৌড় দিল! অনেক দূর থেইকাও তার গলার আওয়াজ পাচ্ছিলাম, "আম্মা আম্মা! দেখছ আমার কথাই ঠিক! আজকে অনুষ্ঠানে যে শিল্পীটা রবিন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছে ঐটা পাশের বাসার আনটিই ছিল"!

আম্মা মুখে আঁচল চাপা দিয়া হাসি আটকাইল! আর আমিতো হাসতে হাসতে কাইত!!!

***
২। “তুমি গল্পের কচুও বুঝনা!”

আম্মা বলল, “তুই তো অনেক গল্প লেখস! আমার লাইফের হিস্টোরি নিয়া একটা গল্প লিখে ফেল!”

আমি বললাম, “শুনাও তোমার হিস্টোরি!”

আম্মা প্রায় সাড়ে ১ ঘণ্টা (দেড় ঘণ্টা) ধইরা আমারে তার বিরাট এক হিস্টোরি শুনাইল!

আমি হিস্টোরি শুনা শেষে বললাম, “আম্মা! তোমার এই বিরাট স্টোরি গল্প তো দুরের কথা উপন্যাসেও বেরাইব না! ধারাবাহিক ১০ খণ্ডের উপন্যাস লেখন লাগব!”

এইটা শুইনা আম্মাতো রাইগা পুরাই ফায়ার, “মাইনসে হুদাই তোমার গল্প পইড়া লাফায়! তুমি গল্পের কচুও বুঝনা! রাস্তার গাজাখোরও তোমার চাইতে ভাল গল্প লিখতে পারব!”

আমি মনে মনে কইলাম, “আল্লাহ! তুমি আমারে উডায় লও, নাইলে দড়ি ফালাও আমি বাইয়া উডি!”

***
৩। “তুমি নিজে নাক ডাকলে তোমার ঘুম ভাঙবে কেন?”

আম্মা আজকে আমার পিচ্চি ট্যাঁটনা ভাইটারে বলতেছিল, “বাবা তুমি তো দেখি ঘুমালে নাক ডাক!”

ভাই কইল, “হুহ! মিথ্যা কথা”!

আম্মা কইল, “মিথ্যা না বাবা, আমি সত্যি বলতেছি!”

ছোটভাই কইল, “তাহলে নাক ডাকার আওয়াজে তো আমার ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা!”

আম্মা কইল, “আজব! তুমি নিজে নাক ডাকলে তোমার ঘুম ভাঙবে কেন?”

এইবার ছোট ভাই কি কইল জানেন? কইল, “কিন্তু তুমি যখন নাক ডাক, তখন তো আমার ঘুম ভেঙে যায়”!!!!!!

আমি বহুত কষ্টে হাসি আটকাইলাম আর আম্মার চেহারা তখন দেখতে কেমন হইসিল সেই বর্ণনা নাই বা দিলাম!

***
৪। “দাঁতওয়ালা অপূর্ব”

ডিনার করার সময় আম্মা আর আমি একটা বাংলা নাটক দেখতেছিলাম। নাটকের একটা দৃশ্যতে দেখলাম, নায়িকাকে এক পোলা ফোন দিয়া ডিস্টার্ব করতেছে। পোলার গলার আওয়াজ শুনে চিনা চিনা লাগতেছিল, কিন্তু নাম মনে আসছিল না!

আমি তখন মাত্র একটা লোকমা মুখে দিতেছি, আম্মা হঠাৎ চিল্লাইয়া বলল, "বুঝছি! ঐ দাঁতওয়ালা!"

আমি ভিমরি খাইলাম! কারে আবার দাতওয়ালা বলে ডাকে আম্মা? একটু পরেই সিনেই পোলারে দেখাইল এবং আমি আবার ভিমরি খাইলাম! এইটা তো দেখি "অপূর্ব!"

আমি জিগাইলাম, "আম্মা তুমি এরে দাঁতওয়ালা বলতেছ ক্যান?"

আম্মা কইল, "এর মুখে দাঁতের কোনও অভাব আছে? দেখলেই মেজাজ গরম লাগে!"

আমি দাঁত বাইর কইরা হাসতে গিয়াও নিজেরে থামাইলাম! পাছে যদি আমারেও দাঁতওয়ালা বলা শুরু করে আম্মা!

৫। এই প্রতিভা এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল?!?

ওই পিচ্চি মেয়েটা আবার আসছিল আমদের বাসায়। আম্মা তখন রান্নাঘরে। পিচ্চি সেইখানে গিয়া আম্মারে বলতাসে, “অ্যান্টি! একটা গান গেয়ে শোনাবেন, প্লিজ!”

আমি মনে মনে কইলাম, “এইবার খাইস ধরা আম্মা! গানের তো “গ” ও জান না!চাপাবাজির ফল পাইবা এইবার”!

আম্মা কইল, “মা মনি আমার গলা ভাঙছে! গান গাওয়া যাবে না”!

পিচ্চি তো নাছোড়বান্দা! “কিচ্ছু হবে না। প্লিজ গান না। একটা রবিন্দ্র সঙ্গীত গান”।

“ভাঙ্গা গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ভাল হবেনা”।

“তাহলে একটা হিন্দি গান গান”।

মাইয়া কি একটা “সাথ নিভানা সাথ নিভানা” মার্কা গানের কথা কইল? গানটা নাকি তার অনেক ফেভারিট!

আম্মা গুন গুন গলায় গান ধরল। আমি ২ মিনিটের জন্য বাকরুদ্ধ হইয়া গেলাম! আজব! আম্মার গানের গলা তো খারাপ না!

এই প্রতিভা এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিল???

***
৬। “হ, আমার তিন পোলা! কিন্তু আপনে কেডা?!!!”

ঢাকা শহরে বাসা পালটানো যে কি ঝামেলা সেইটা তো মোটামোটি সবাই জানেন। গত দুই দিন যাবত ব্যাপক দৌড়াদৌরি করতে করতে জানটা ফাতা ফাতা হইয়া গেছে!

অবশেষে সব কিছু গুছায় নিয়া আমি আর আম্মা একটু দম ফেলতেছিলাম, এই সময় এক মহিলা আসল বাসায়। নতুন বাসা! কাউরে তো ঠিকানা দেই নাই! মহিলা কি জন্য আসছে কে জানে! মহিলা আম্মারে জিজ্ঞেস করল, "ওহ! তাহলে আপনিই নতুন ভাড়া আসছেন"!

আম্মা হ্যা-বোধক মাথা নাড়ল, খুব একটা আগ্রহ দেখাইল না। মহিলা আবার জিগাইল, "আপনার তো তিন ছেলে, তাইনা?

মহিলারে আম্মার পছন্দ হইতেছিল না। বিরস মুখে কইল, "হ, আমার তিন পোলা! কিন্তু আপনে কেডা? কই থাকেন?"

মহিলা মনে হয় এরকম টোনে কোনও কথা আশা করে নাই। তার মুখের হাসি মুইছা গেল। রোবটের মত কইল, "আমি আপনাদের বাড়িওয়ালি"!

আম্মা তো থত মত খাইয়া গেল, "ওহ তাই? ভাবি! আসেন ভাবি আসেন, বসেন ভাবি......"

মহিলা সংক্ষেপে "পরে আসব" বইলা চলে গেল। মহিলা যাওয়ার পরও আমি আর আম্মা মিনিট দুয়েক ভাবলাম, "এইটা কি হইল?" তারপর পরস্পরের দিকে তাকাইয়া অট্টহাসি দিলাম!!!

***
৭। "ও তো মেয়েমানুষ!!!”

ছোটভাই অন্যান্য দিনের মত আজও স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে জুতা,মোজা, স্কুলের ইউনিফর্ম, ব্যাগ সহ সবকিছু এদিক ওদিক ফেলে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল।

আর আম্মাও কিচেন থেকে দৌড়ায় আসল, "বদমাশ কোথাকার! পাশের বাড়ির মেয়েটাকে দেখেছিস? স্কুল থেকে ফিরে কি সুন্দর ব্যাগ কাপর চোপড় গুছিয়ে রাখে! জুতাটা যায়গা মত রাখে, মোজা গন্ধ হলে ধুয়ে দেয়! আর আমি এত করে বলার পরও তুই প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে বেচ্চের (আম্মার উদ্ভাবিত শব্দ) কইরা শুয়ে পড়িস!"

ছোটভাই হাসিমুখে কইল, কিন্তু আম্মা! ও তো মেয়েমানুষ! ওর কাজ কি আমাকে দিয়ে হবে?

আম্মা মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল, বদমাইশ! ও মেয়ে মানুষ? ওর বড়ভাইটাও তো তাই করে, তারে কি বলবি!

ছোটভাই শয়তানের হাসি দিয়া কইল, "আম্মা তুমিযে কি কওনা! ঐটা তো হিজলা!"

আম্মা আর কিছু কইতে পারল না! এই কথা শুইনা কি না হাইসা পারা যায়!

***
৮। কন্ডিশনারের ভক্ত!!!

আম্মারে জিগাইলাম, "আম্মা তুমি গোছলের সময় চুলে এইটা কি দেও?"
আম্মা কইল, "এইটা হইল কন্ডিশনার"।
আমি কইলাম, "এইটা দিলে কি হয়?"
আম্মার উত্তরঃ "চুল সিল্কি হয়, দেখতে ভাল দেখায়"।
আমি কইলাম, "আমিও দিমু তাইলে, এইটা দেওয়ার সিস্টেম শিখায় দেও"।

আম্মা হাইসা পুরা জিনিসটা আমারে বুঝায় দিল। "প্রথমে চুলে শ্যাম্পু করবি, তারপর কন্ডিশনার মাখবি। মাইখা শরীরে পানি দিবি, গোসল করবি কিন্তু চুলে পানি লাগাবি না। গোসল শেষে মাথাটা ভাল কইরা ধুইয়া ফেলবি, ব্যাস"।

আমি খুশি মনে কন্ডিশনার মাইখা গোসল করলাম। গোসল শেষে দেখি চুল কেমন জানি তেলতেলা হইয়া গেছে। মেজাজ খারাপ হইয়া গেল, এমনিতে চুলে তেল দেওয়া মার পছন্দ না। আজকে সাধ কইরা তেল মাখাইলাম!

কিন্তু মজাটা টের পাইলাম চুল শুকানের পর। চুলে হাত দিয়া দেখি চুল কেমন জানি সিল্কি সিল্কি লাগে! আয়নার সামনে খাঁড়াইলাম, আমার সেই রুক্ষ চুল থেইকা এখন দেখি গ্লেজ মারতাছে! বাইরে বাইর হইয়া দেখলাম অল্প বাতাসেই চুল উরতাছে! "আরি বাপরে! কন্ডিশনার তো কঠিন জিনিস!"

এইটা ছিল এক সপ্তাহ আগের কথা। এর পর থেইকা প্রতিদিনই চুরি কইরা চুলে কন্ডিশনার মাখি! আম্মা অবশ্য টের পাইছে, তয় কিছু কয় নাই! বুইঝা গেছে এর পর থেইকা একটু বেশি কইরা কন্ডিশনার কিনা লাগব, মানে কন্ডিশনারের জন্য বাজেট বাড়াইতে হইব আর কি! পোলা কন্ডিশনারের ভক্ত হইয়া গেছে!

***
৯। বুদ্ধিটা খারাপ না।

অপর্ণাপুঃ গ্রাম থেকে বাসায় ফিরছে তোমার মা?

আমিঃ হ্যা আপু। ফিরেছে। এই কয়দিন অনেক কষ্ট গেছে রান্না করা আর কাপড় ধোঁয়ার।

অপর্ণাপুঃ এই চান্সে মা কে বলতে পারতা , আম্মা তুমি বাসায় ছিলা না বহুত কষ্ট হইছে ! একটা বৌ আনো বাসায়,খ্যাক খ্যাক!

আমিঃ সেটা তো বলতেই পারি। আম্মা হয়ত রাজিও হবে কিন্তু বলবে নিজের বউরে নিজে খাওয়াবি! তখন কই যাব? বউরে খাইতে দিমু কি?

অপর্ণাপুঃ বলবা আম্মা কাজের বিনিময়ে থাকতে দিবা , সে রান্না করবো , আর তোমার বাজার আমি করে দিবো-- এই হিসাবে খাইয়াইবা!

বুদ্ধিটা খারাপ না। আমি গেলাম আমার আম্মারে কইতে। আপনেরাও টেরাই করে দেখেন!

বি. দ্রঃ মায়ের হাতে ধোলাই খেলে দোষ কিন্তু আমার না। সব দোষ বড়াপুর!

***

১০। “ছাতা বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা”

আমার বাসায় দুইটা ছাতা। কিন্তু বৃষ্টি হলেই ভিজে যাওয়ার ভয়ে সারাদিন ঘরে বসে থাকা লাগে।

কারন কি?

কারন আমার মা ছাতা ভেজানো পছন্দ করেন না। মায়ের শুচিবাই টাইপের আছে। একান্তই বাধ্য না হলে তিনি ছাতা ভেজাতে পছন্দ করেন না। তাই বৃষ্টি হলে বেশির ভাগ সময় বাসাতেই বসে থাকতে হয়।

কেউ বাইরে গিয়ে ছাতা ভিজিয়ে এলেই, তাকে একগাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়:

“কোথায় গিয়েছিলি?”
“কেন গিয়েছিলি?”
“কি কাজ ছিল?”
“কাজটা কি এতই জরুরি ছিল?”
“ছাতা না ভেজাতে হতনা?”
“ভেজা ছাতা এখন রাখবি কই?”
“ছাতা শুকাবে কি করে?”

ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত প্রশ্ন!

কিছুক্ষন আগে মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা মা। ছাতা কিজন্য ব্যবহার করি আমরা?”

মা বলল, “বৃষ্টিতে যেন না ভিজে যাই সেজন্য”।

আমি বললাম, “ছাতা না ভিজালে, বৃষ্টিতে তো নিজেই ভিজে যাব। তাহলে ছাতা না ভিজিয়ে উপায় কি?”

এর পর আরও কিছুক্ষন তাকে বিষয়টা বুঝালাম। মা দেখলাম কথাগুলো শোনার পর থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে আর কিছু একটা ভাবছে। সম্ভবত বুঝতে পেরেছে ছাতার জন্মই হয়েছে নিজেকে ভিজিয়ে অন্যকে শুকনা রাখার জন্য। কাল থেকে আশাকরি ছাতা বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে! বৃষ্টি হলে আর গোমড়া মুখে ঘরে বসে থাকা লাগবে না! :)

***
১১। "জর্দা থেকে আড্ডার শক্তি বেশি""

মায়ের এক বান্ধবী এসেছিলেন বাসায়। এর মধ্যে পাশের বাসার আর এক আন্টি চলে এসেছেন। তিনজনে স্টার জলসা আর স্টার প্লাসে দেখা যতসব বস্তাপচা সিরিয়ালগুলো নিয়ে বিশাল আড্ডা জমিয়ে ফেলল। খানিক বাদেই আম্মা তাদের জিজ্ঞেস করল, "কি খাবেন ভাবীরা?"

মায়ের বান্ধবী হঠাৎ বলে উঠলেন, "পান খাওয়ান ভাবী, বহুদিন পান খাওয়া হয়না"।

যথারীতি আমার ছোটভাইয়ের উপর পড়ল পান আনার দায়িত্ব। ছোটভাই পান কিনে আনল। আম্মা পান খায়না। বাকি দুজনে মিলে মজা করে পান খেল। বিপত্তি ঘটল কয়েক মিনিট বাদে।

মায়ের বান্ধবী হঠাৎ বলে উঠল, "কিরে মাথা ঘোরে কেন?"

মা ছোটভাইকে জিজ্ঞেস করল, "কি রে? পানে কি জর্দা দিয়ে আনছিস?"

ছোটভাই সৃজনশীল শুভ নিরীহ চেহারা করে বলল, "তোমরা তো আমাকে নিষেধ কর নাই। দোকানদার আমাকে জিজ্ঞেস করল, জর্দা দেব কিনা? আমি ভাবলাম বেশি জর্দা দিলে স্বাদ ভাল হবে। টাকা দিয়েই যখন কিনছি, কম নিব কেন ? তাই বেশি করে জর্দা দিতে বলেছি"।

এই কথা শুনে মহিলা বলতে গেলে মাথা ঘুরে পড়েই গেল। তাড়াতাড়ি আম্মা আর পাশের বাসার আন্টি তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি দিয়ে নিয়ে এল। মহিলা মায়ের বেডে হাত পা ছেড়ে শুয়ে থাকলেন।

আমি হাসি চেপে রেখে একফাকে ছোটভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, "কিরে? জর্দার কাহিনী কি?"

ছোটভাই তার ত্যাঁদড় মার্কা হাসি দিয়ে বলল, "ইচ্ছা কইরা জর্দা বেশি দিয়া আনছি। সারারাত হাবিজাবি দেখে এসে সারাদিন গল্প করে! এইবার মজা বুঝুক!"

হাসিমুখে ছোটভাইয়ের সাথে একটা হাইফাইভ দিয়ে দিলাম!

অবশ্য কামের কাম কিচ্ছু হলনা। মহিলা মিনিট দশেক বাদেই ঠিক হয়ে গেলেন। তারপর তিনজনে বিছানায় শুয়ে শুয়ে দুনিয়ার আলাপ করলেন। ৪ ঘন্টার জম্পেস আড্ডা সেরে তারা এইমাত্র উঠেছেন।

***
১২। পিতা মাতা আর একটু উদার হলে হয়ত…

আমেরিকান অভিনেতা কাম সিঙ্গার কাম ডান্সার জনি হোপকে একবার জিজ্ঞাসা করা হল, “আপনি নাচ শিখলেন কীভাবে?”

সে উত্তর দিল, “আমরা বাড়িতে ছিলাম ৬ ভাই। এ কারনেই আমি নাচ শিখতে পেরেছিলাম”।

প্রশ্নকর্তা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, “বাড়িতে ৬ ভাই থাকা আর নাচ শেখার মধ্যে সম্পর্ক কোথায়?”

জনি হোপ উত্তর দিল, “প্রতিদিন সকাল বেলা টয়লেটের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হত কিনা!”

আমারও ছোট বেলা থেকে নাচের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু পিতার নিষ্ঠুর চোখ রাঙ্গানির ভয়ে ইচ্ছেটার কথা কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। ঘটনা হচ্ছে, আমরা বাড়িতে তিন ভাই। পিতা মাতা আর একটু উদার হলে হয়ত আরও তিনটা ভাই জুটে যেত। আর মাঝখান থেকে ফ্রি ফ্রি নাচ শিখে ফেলতে পারতাম।

এই কথাগুলো এতক্ষন খুব মজা করে মায়ের সাথে বলছিলাম। শুনে মা মজা পেল নাকি রাগ করল আল্লাহ মালুম! কথা শেষ হতে যা দেরি, আমাকে ধরার জন্য কতক্ষন আমার পিছন পিছন এঘর থেকে ওঘরে দৌড়াল। ধরতে না পেরে এখন বসে বসে হাপাচ্ছে! আমি জানি একটু পর মা আমাকে আবার ধাওয়া করবে। কতক্ষন বেঁচে থাকতে পারব জানিনা, মনে হচ্ছে আজকে আমার কপালে মাইর নিশ্চিত! হুদাই কেন যে মজা করতে গেছিলাম! :'(

***
১৪। "সওয়াব পাওয়ার আশায়"

আম্মা প্রায়ই নামাজ শেষে তসবি পড়েন। আজ মাগরিবের নামাজ শেষে আমাকে এসে বলল, "আমি আজকে মাগরিবের পর ১০০০ বার তসবি পড়েছি"।

আম্মা কথাটা এমনভাবে বলল যেন কি এক অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে! আমি বললাম, "মাত্র ১০০০ বার কেন? আরও বেশি পড়তে পারলে না?"

আম্মা ঠোঁট উল্টে বলল, "নাহ! এর বেশি পড়লে মাথা ঝিম ঝিম করে"।

আমি দেখলাম একটা বিটলামি করার সুযোগ এসেছে! আম্মার সাথে এমনিতে কথায় পারিনা আমি। এমন সুযোগ সাধারণত খুব একটা পাওয়া যায়না। বললাম, "আচ্ছা আম্মা! মানুষ তসবি পড়ে কেন?"

"সওয়াব পাওয়ার আশায়"। আম্মার সরল উত্তর।

"যত বেশি পড়বে তত বেশি সওয়াব পাবে তাইনা?"

"হ্যা"।

"তারপরও ১০০০ বার এর বেশি পড়লে মাথা ঝিম ঝিম করে?"

"হুম"।

এইবার আমি মোক্ষম একটা চাল দিলাম, "আচ্ছা! তোমাকে যদি বলা হয়, এখানে অনেক টাকা আছে। তুই গুনতে শুরু কর। যত টাকা গুনতে পারবি সবটাকা তোর। তাহলে তো তুমি সারাদিনই টাকা গুনবে! তসবি গুনতে সমস্যা কই?"

আম্মা চোখমুখ গোল করে তাকিয়েছিল। ভয় পাচ্ছিলাম এখনই না আবার রাগে ফেটে পড়ে! আমি "বিসমিল্লাহ" বলে আস্তে করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আড্ডাবাজি শেষে এই মাত্র ফিরেছি। আম্মা এখনও কিছু বলে নাই, টিভি দেখছে। রাতে খেতে দিবে কিনা আল্লাহ মালুম!

***
১৫। আমি ঢাকাইয়া মাইয়া!

আম্মা অনেক দিন ধরে নানুবাড়ি যাবে যাবে করতেছে। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারনে যেতে সাহস পাচ্ছেনা। এই শুক্রবার বা শনিবার যাবে শিওর ছিল, কিন্তু সাহস করতে পারে নাই। এমনিতে অবশ্য আমার আম্মা খুব সাহসী মানুষ। কিন্তু অবরোধের মধ্যে সাহস না দেখানোই ভাল!

আম্মা মাঝে মাঝে আমার সাহস নিয়ে কথা শুনায়। এই পচানোর সুযোগ আমি হাতছাড়া করব কেন? গতকাল রাতে অনেকক্ষণ “ভীতুর ডিম”, “বুকে সাহস নাই” আরও নানান কথা বলছি তাকে।

আজ সকালে উঠেই দেখি আম্মা ব্যাগ ব্যাগেজ গুছাতে শুরু করেছে। আর আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে, “আমারে কয় আমার সাহস নাই! আমি ঢাকাইয়া মাইয়া! ঢাকায় বড় হইছি! আমার লগে লাগতে আসে এমন বুকের পাটা কয়জনের আছে? এইসব হরতাল অবরোধ আমার লেইগা কোন বিষয়? আমি কি ককটেলের ভয় পাই নাকি? এই ভেজালের সময় পোলায় কই না কই যায়, ঠিক নাই। কাছে থাকলে একটু দেইখা শুইনা রাখতে পারমু! এই চিন্তা কইরা খালি যাই নাই! আর আমারে কয় কিনা আমার সাহস নাই...”

আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। খাইছে রে! এই হরতালে বাইর হলে তো আর রক্ষা নাই। আমি বয়ান দিতে শুরু করলাম, “আম্মা, দেখ হরতালের মধ্যে সাহস দেখানোটা বোকামি। প্লিজ এর মধ্যে বের হইয়ো না...”

অনেক রিকোয়েস্ট করে তাকে একটু শান্ত করছি। আম্মা আবার ব্যাগ থেকে কাপড় চোপড় বের করে গুছায় রাখল।

আমি আরও একবার সুযোগ নিলাম! হে হে!

আবার বয়ান দিলাম, “হরতাল অবরোধ দেখে কি ঘরে বসে থাকতে হবে? দেশের সব মানুষ কাম কাজ ফেলে যদি ঘরে বসে থাকে তাহলে তো দেশটা অচল হয়ে যাবে! দেশের সব মানুষ এমন ভীতুর ডিম হয়ে গেল কেন কে জানে! হে হে হে!”

বয়ান দিয়াই বুঝলাম বুদ্ধিমানের কাজ হয় নাই! আম্মা অবশ্য আর বের হওয়ার জন্য ব্যাগ ট্যাগ গুছায় নাই। কিন্তু যেভাবে গাল ফুলায় রাখছে, আল্লায় জানে আজকে দুপুরে আমার কপালে খাবার জুটে কিনা! ফ্রেন্ডরা কেউ আছস নাকি? আজকে দুপুরে কেউ একজন আমারে দাওয়াত দেরে ভাই! অভুক্তরে খাওয়াইলে আল্লায় সওয়াব দিবে!

***
১৬। “প্রকাশ করলেই ফায়দা হয়”

দুদিন আগে আমার স্কুলজীবনের কাছের এক বন্ধুর বিয়ে হল। বন্ধু মহলে এটাই প্রথম বিয়ে। এর আগে অবশ্য বেশ কয়েকজন বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে কিন্তু বন্ধুর বিয়ে হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

ঐ দিন বিকালে আম্মাকে বলছিলাম, “আম্মা, আজকেআমার এক বন্ধুর বিয়ে”।

আম্মা নাক সিটকে বলল, “তোর বন্ধুর বিয়ের বয়স হইছে?”

“এইটা কি বললা?” আমি তো অবাক! “সরকারী হিসেবে ২১ বছর বয়সেই বিয়ে করা যায়। জানতো নিশ্চয়ই?”

“বুঝলাম। কিন্তু বন্ধুর বিয়েতে তোর মুখ তো থাকবে হাসি হাসি! মুখ এমন কাল করে রেখেছিস কেন?”

“হাসি না আসলে জোর করে হাসব? মানুষ জন বিয়া কইরা ফেলতাছে আর আমার দিন কাটে মোটা মোটা বই পড়ে!”

আম্মা কথাটা শুনে মজা পেল। জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বলল, “আহারে! তুই কি বিয়া করতে চাস নাকি? প্রেম ট্রেম করিস? মেয়ে কেমন দেখতে?”

আমি রাগী গলায় বললাম, “প্রেম করার আর সুযোগ পাইলাম কই? সারাজীবন তো কাটল বই পড়ে! ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদেরকে মেয়েরা ভয় পায়!”

“আচ্ছা! তো এই কথা আগে বলবি না?”

আমার মনের ভেতর আশার আলো সঞ্চারিত হল! জিজ্ঞেস করলাম, “আগে বললে কি করতা?”

আম্মা হাসি মুখে বলল, “আমার কত বান্ধবীদের সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে! একদিন আমার সাথে যাস! তোর সাথে খাতির করায় দিব”।

আমি ভেতরে ভেতরে আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেও বাইরে সেটা গোপন রাখলাম। বললাম, “কি যে বলনা তুমি! আইচ্ছা ঠিক আছে! এত করে যখন বলছ... নিয়ে যেও একদিন!”

(আজকের শিক্ষাঃ বাবা মায়ের কাছে মনের ইচ্ছাগুলো গোপন রাখা ঠিক নয়, প্রকাশ করলেই ফায়দা হয়!)

১৭। “বদমাইশের দল!”

আম্মা প্রথমে ছোটভাইকে ধরল।

-ঘুমাইছিস কয়টা বাজে?
-২টা।
-উঠছিস কয়টা বাজে?
-১১টা।
-বাইরে গেছিলি কয়টায়?
-৪ টায়।
-ফিরলি কয়টায়?
-৯ টায়।

আম্মা এইবার আমার দিকে ফিরল।

-ঘুমাইছিস কয়টায়?
-৩ টায়।
-উঠছিস কয়টায়?
-১২টায়।
-বাইরে গেছিলি কয়টা বাজে?
-৩টা।
-এখন কয়টা বাজে?
-সাড়ে ১০টা।
-বদমাইশের দল! তোদের জন্য আমি যুদ্ধ করতেছি, আর তোরা গায়ে বাতাস লাগাইয়া ঘুইরা বেড়াস! যেমনে খুশি সেইভাবে চলিস!

আম্মা খেইপা গেছে। এখন চুপ থাকা ভাল। কিছু বলতে গেলে রাতের খাওয়া বন্ধ করে দেবে! আমি বুদ্ধিমানের মত চুপ করে থাকলাম।

কিন্তু আমার ত্যাঁদোড় ভাইটা চুপ থাকল না। সে বলল, “তুমি যুদ্ধ কর কি দিয়া? তোমার তো পিস্তল নাই!”

আমি মনে মনে বললাম, “কি করলি রে? নিজের কপাল নিজে পুড়াইলি!”

আম্মা কতক্ষন রেগে মেগে বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছিল। তারপর শান্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, “রাতে দুই জনেরই ভাত বন্ধ!”

আমি মিন মিন করে বললাম, “আমার কি দোষ? আমি তো কিছু বলি নাই”।

আম্মা আবার ফুঁসে উঠল, “তোরই তো আসল দোষ! এই সব শয়তানি ফাইজলামির আইডিয়া তোর কাছে শিখছে। ভাল কিছু তো শিখাস নাই!”

অবশ্য শেষ পর্যন্ত আম্মা সহজ(!) শর্তে দুইজনরে খাবার দিছে! কাল থেকে ভোর ছয়টা বাজে ঘুম থেকে না উঠলে আমাদের খাওয়ার উপর লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চলবে!

***
১৮। “ভাগ্যিস ব্যাটা সত্যিটা গোপন করছে!”

বাড়িওয়ালার ছেলে আজকে আমার আম্মার কাছে বিচার দিয়েছে, আমি নাকি তার সাথে বেয়াদবি করেছি।

আম্মা জিজ্ঞেস করছে, "কি বেয়াদবি করছে?"

বাড়িওয়ালার ছেলে বলছে, "আপনার ছেলে রাস্তার মানুষজনকে ডেকে বলেছে যেন আমাকে পুলিশ ডেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়"!

আম্মা বাসায় এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, "তুই নাকি বাড়িওয়ালার ছেলেকে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে দিতে বলছিস?"

আমি একটু আগে ছোট ভাইয়ের সাথে বাজি লেগে এই হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে একটা পাতলা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে রাস্তা থেকে ঘুরে আসছি। প্রচণ্ড শীতে আমার মেরুদন্ড প্রায় বাকা হয়ে গেছে! আমি বাঁকা মেরুদন্ড সোজা করার কসরত করতে করতে মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিলাম, "ঐ পাগল ছাগলের কথা তুমি বিশ্বাস করছ?"

আমার বাড়িওয়ালার ছেলে আসলেই একটু পাগল কিসিমের। মাথায় সামান্য সিট আছে, দুই চার জন আরাম করে বসা যায়। কিন্তু আম্মা আমার কথা বিশ্বাস করল না। রেগে মেগে বলল, "তুই কিছু না বললে সে খামাখা মিথ্যা বলবে কেন?"

"আরেহ! আজকে আমি সারাদিন বাইরে যাই নাই। তার সাথে আমার দেখাও হয় নাই!"

আসলেই তাই। আজকে সারাদিন আমি বাসায় বসে আছি। আগামীকাল মিডটারম পরীক্ষা আছে, পরীক্ষার টেনশনে বাইরে যাওয়া হয়নি। অবশ্য এখন পর্যন্ত বই নিয়ে বসিনি। :P

আম্মা রাগী দৃষ্টিতে কতক্ষন তাকিয়ে থাকল। আর কিছু বলল না।

আমি ভেবে কুল পেলাম না বাড়িওয়ালার পোলা হঠাৎ আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার পিছনে কারন কি? সকালে বাসার সামনের গাছ থেকে ফুল ছেঁড়ার সময় দেখে ফেলছিল। এটাই কি কারন? কিন্তু আম্মার কাছে "আপনার ছেলে ফুল ছিঁড়েছে" বলে বিচার দিলেই তো হত! তার কাছে হয়ত মনে হয়েছে ফুল ছেঁড়াটা আমার আম্মার কাছে বড় কোন অপরাধ বলে মনে হবেনা।

ভাগ্যিস ব্যাটা সত্যিটা গোপন করছে! আসল কথাটা আম্মা জানলে "কেন ফুল ছিঁড়েছিস?" "কার জন্য ছিঁড়েছিস?" "আগে কতবার ছিঁড়েছিস?" ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করতে করতে আমার অবস্থা কাহিল করে দিত! :P

***
১৯। “চাপার দাঁত ফালায় দিমু”

গতকাল হঠাৎ আননোন নম্বর থেকে আসা একটা কল রিসিভ করে বললাম, “হ্যালো। কে বলছেন?”

ওপাশ থেকে বলল, “আমি তোর দুলাভাই”।

আমার রাগ হল খুব। কেউ একজন অচেনা নম্বর থেকে ফোন দিয়ে যদি বলে আমি তোর দুলাভাই তাহলে কেমন লাগে? নিশ্চয়ই কোন বন্ধু বিটলামি করতেছে। “কোন বদমাইশের বাচ্চা ফাইজলামি করতাসস?”

ওইপাশ থেকে বলল, “তুই নাজিম না?”

আমি বললাম, “হ্যা”।

“ঠিক ই তো আছে! আমি তোর দুলাভাই”।

এইবার মেজাজ সাংঘাতিক খারাপ হল। “ঐ হা..... নাতি। আমার লগে বিটলামি করলে একদম চাপার দাঁত ফালায় দিমু! তুই আমার দুলাভাই হইলি ক্যামনে রে?”

ওইপাশ থেকে উত্তর দিল, “আমি তোর দুলাভাই কারন তোর বইন রে বিয়া করছি। একটা বাচ্চাও হইছে”!

এইবার একটু বিষম খেলাম যেন। খাইছে রে! আমি যে ছোটভাইয়ের সাথে মোবাইল এক্সচেঞ্জ করছি। সিমে তো কোন নম্বর নাই! সব নম্বর মোবাইলে রয়ে গেছে। এইটা তাহলে সত্যি সত্যি দুলাভাই!

জিভে কামড় দিয়ে বললাম, “ওহ! দুলাভাই! সরি, আমি তোমারে চিনি নাই। ভাবলাম কে না কে ফাইজলামি করতেছে! আসলে ফোনটা চেঞ্জ করছি তো! কারো নম্বর সেভ নাই...”

এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। কারন দুলাভাই আমার কাছাকাছি বয়সের। উনিও ব্যপারটায় মজাই পেয়েছেন। কিন্তু এর পর যে ঘটনাটা ঘটল সেটা থেকে আর বাঁচা গেলনা!

আম্মা ফোন দিয়েছিল। আমি তো নম্বর চিনিনা। বললাম, “হ্যালো কে?”

আম্মা বলল, “আমার সাথে ফাইজলামি করিস? আমাকে জিজ্ঞেস করিস আমি কে?”

আমি ঠিক চিনলাম না! আমার সাথে কোন মেয়ে চিল্লায় চিল্লায় কথা বলার সাহস রাখে! এইটা নিশ্চয়ই বান্ধবী মৌরী! আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “কে মৌরী? দোস্ত আমি তো মোবাইল চেঞ্জ করেছি। তোর নম্বর চিনতে পারিনি!”

আম্মা রেগে ফায়ার! “হারামি! আমার কণ্ঠ তুই চিনিস না? আয়! আজকে বাসায় আয়!”

পুরাই ধরা খাইলাম! নম্বর চিনি নাই সেটা সমস্যা না। মায়ের কণ্ঠ চিনি নাই এই জন্য কি শাস্তি দেয় কে জানে? অবশ্য রাতে বাসায় ফিরে দেখলাম আম্মা কাজের ঝামেলায় সব ভুলে গেছে! মানীর মান আল্লাহ রাখে!

ঢের হয়েছে ভাই! নিয়ে যা তোর ব্লাকবেরি, ফিরিয়ে দে আমার নকিয়া!

***
২০। পাকিস্তানি দরজা

বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে আম্মা আপত্তি করছিল দরজাগুলি নিয়ে। আম্মার আবার কাঠের দরজা পছন্দ না।

কিন্তু বাড়িওয়ালা বার বার বলতে থাকল, "এই গুলা পাকিস্তানি দরজা, সহজে কিছু হবেনা ভাবি। কারো ভাঙার সাধ্য নাই। এমন নিরাপত্তা কই পাবেন?"

অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও আম্মা বাসাটা ভাড়া নিল। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে কি ভুল করে ফেলছে!

পাকিস্তানী দরজা শালা খানদানি মাল! অল্প কয়েকদিনের মাঝেই কীভাবে যেন সাইজে বেড়ে গেছে। এখন দরজাগুলা বন্ধ করতে তিনজনের হাত লাগাতে হয়! খুলতে লাগে চারজন! কিন্তু আমরা বাসার ভেতর মানুষ হচ্ছি তিন জন! অন্য সব দরজার কথা না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু বাথরুম? প্রচণ্ড প্রকৃতির ডাক যখন আসে, তখন কি প্রেসার দিয়া দরজা আটকানো যায়??

আম্মা আজকে বারিওয়ালারে দরজা ঠিক করার আল্টিমেটাম দিয়া আসছে! কোন শালার মাথায় বুদ্ধি আসছিল পাকিস্তানী দরজা আমদানি করার? হায়রে পাকিস্তান! স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও তোদের জ্বালায় আর শান্তি পাইলাম না!

***
২১। “প্রতিশোধ”

আমার ডেস্কটপের মনিটরের পাশে একটা প্ল্যাস্টিকের ঝুড়ি ছিল। তাতে আমি মোবাইল, চার্জার, পেন ড্রাইভ, মানিব্যাগ, পকেট চিরুনি সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে দিতাম। আজ বাইরে থেকে বাসায় ফিরে দেখি ঝুড়িটা গায়েব। ভেতরের জিনিসপত্র সব টেবিলের ড্রয়ারে রাখা! ঘটনা কি?

ছোটভাইয়ের মুখে শুনলাম আমাদের বাসার গেটের সামনে এক ফেরিওয়ালা আসছিল। সে ভাঙাচোরা কাঁচ আর প্ল্যাস্টিকের জিনিসের বদলে পেঁয়াজ বেঁচে। আম্মা তার কছে আজ বেশ কিছু প্ল্যাস্টিকের জিনিস বেঁচে দিয়েছে। আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার মা? তুমি আমার ঝুড়িটা বেঁচে দিছ?”

আম্মা বলল, “হ্যা, দিয়েছি”।

“কিন্তু কেন?”

“আমার একটা বাটি হারায় গেছে তাই”। আম্মার সোজাসাপ্টা উত্তর!

গেলাম তো ফাঁইসা! ঘটনা হইছে আম্মা কিছুদিনের জন্য নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। ঐ সময় আমি একা ছিলাম বাসায়। একদিন রান্নার চেষ্টা করতে গিয়ে একটা সুন্দর দেখতে বড় সাইজের বাটি ভেঙে ফেলছিলাম। আম্মা আজ আবিষ্কার করছে তার একটা সাধের বাটি গায়েব! আমি একটা ঢোঁক গিলে বললাম, “কি আজব! বাটি হারায় গেছে বইলা ঝুড়ি বেঁচে দিবা?”

“তুই আমার বাটি হারায় ফেলছস, আর আমি তোর ঝুড়ি থাকতে দিব?” মায়ের কণ্ঠে প্রতিশোধের সুর!

আমি এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারলাম না। তবে কিছুদিন আগে ছাঁদে কাপড় শুকাতে দিয়ে আম্মা আমার একটা জিন্সের প্যান্ট হারাইছে। আমিও হুমকি দিলাম, “আমিও তোমার একটা দামী শাড়ি নিয়া গুলিস্তানে বিক্রি করে আমার প্যান্ট হারানোর প্রতিশোধ নিব! সেই টাকা দিয়ে গ্রিল চিকেন খাব”! :v

***
২২। নতুন গেঞ্জি পাবিনা।

-মা, ১০০ টাকা দিবা?
-কেন? কালকে না তোরে ২০০ টাকা দিলাম? কি করসস টাকা দিয়া?
-বন্ধু বান্ধবদের চা খাওয়াইছি।
-চা খাইতে ২০০ টাকা খরচ হয়? আমারে মক্কা চিনাও?
-২০/২৫ জন ফ্রেন্ডরে একসাথে চা খাওয়াইতে গেলে কত খরচ হয় হিসাব করে দেখ।
-২০/২৫ জন ফ্রেন্ড চা খাইতে চাইছে তোর কাছে?
- খাইতে চায় নাই কিন্তু ফ্রেন্ডরা তো আমার আশে পাশেই থাকে! নিজে একলা চা খাওয়া যায়? তাই সবাইরে খাওয়াইছি।
- ভাল কাজ করছ, সমাজের অনেক উপকার হইছে। এখন হাইটা ভার্সিটি যাও, টাকা পাবা না।
- ঠিক আছে টাকা লাগবে না। নতুন গেঞ্জি যেটা কিনছি ঐটা কই? বের করে দাও, পড়ব।
- নতুন গেঞ্জি পাবিনা। গতকাল যেটা পড়ছিলি ঐটাই পইড়া যাহ।
-কিন্তু ঐটাতে তো ঘামের গন্ধ!
- ঐটাই তো ভাল হবে। ঘামের গন্ধে তোর আশে পাশে কোন ফ্রেন্ড আসবে না, আর কাউরে চা খাওয়াইতেও হইব না!

মজার ঘটনার তো অভাব নাই! সব দিতে গেলে তো সারাদিন শেষ!
পৃথিবীর সকল "মা" দেরকে জানাই মা দিবসের শুভেচ্ছা! :)
১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×