somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও কিছু নৈঃশব্দের আর্তনাদ: এক লেবাননী তরুণের বয়ান

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(রোয়া নাবলুসি: লেবাননের অধিবাসী, ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের শিক্ষার্থী)

কাল রাতে প্যারিসে যা হয়েছে যা শোচনীয়। আমি এক ধরণের অবিশ্বাসের সাথে যেই খবরগুলো আসছিলো সেগুলো রাত জেগে অনুসরণ করছিলাম এবং আমি খুবই দুঃখিত যে-কারো জন্য যারা এই ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, অনুমিতভাবেই, প্যারিসের সাথে তাদের নিঃশর্ত সংহতি প্রকাশ করে।


তার আগের রাতে, একটা বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিলো আমার দেশে, লেবাননে, যাতে মৃত্যুবরণ করেছিলো ৪৩জন মানুষ। কেউ আমাদের জন্য প্রার্থনা করে নি। কেউ আমাদেরকে তাদের স্মৃতিতে রাখে নি। কোনো বিশ্ব নেতা আমাদের জন্য শেষরাতের বিবৃতি দেন নি। কেউ তাদের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে নি। কোনো হ্যাশট্যাগ ছিলো না। ফেসবুকে “সুরক্ষিত আছি” জাতীয় অপশন ছিলো না। স্রেফ নৈঃশব্দ।


শব্দে মাপা যাবে এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসে রূপান্তরিত করা যাবে তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা সয়েছে সিরিয়া। তারা কিছুই পায়নি। আরো অধিকতর নৈঃশব্দ।
অক্টোবরে এক ইজরায়েলই ৭৩জন ফিলিস্তিনিকে খুন করেছে। নৈঃশব্দ।
গত মাসে আংকারায় একটা শান্তি সমাবেশে ১০০ জন মানুষ খুন হন। স্রেফ নৈঃশব্দ।


নাইজেরিয়া, ক্যামেরন, চাদ, আর নাইজারে এই বছর সংঘর্ষে মারা গেছে কমপক্ষে ৩,৫০০ মানুষ। স্রেফ নৈঃশব্দ।


এই মুহূর্তে এসে আমি এমনকি রাগান্বিতও নই, স্রেফ ক্লান্ত। নিঃশেষিত...

নিঃশেষিত এই কারণে যে গাজার মতো একটা ওপেন এয়ার প্রিজনে ২৩০০ মানুষ খুন হলেও তেমন কোনো দৃষ্টিই আকর্ষণ করে না সেটা, কিন্তু যখনই ইওরোপে কিছু হয়, সাদাদের সাথে কিছু হয়,দেখা যায় (আমি মনে করি আন্তরিকভাবেই) প্রত্যেকে কি ভীষণ ভেঙে পড়ছে।


আমি বলছি না আপনারা ভেঙে পড়বেন না। আমি বলছি না যেই মানুষগুলো কাল রাতে প্রাণ হারালো তারা শোক পাওয়ার অধিকার রাখে না কারণ আমি জানি অবশ্যই তারা সেই অধিকার রাখে। তারা নিষ্পাপ ছিলো এবং এখন তারা মৃত।


একজন আরব হিসেবে, আমরা অন্য যে-কারো চেয়ে ভালো জানি এটা কতোটা আঘাত করে এবং আমাদের সকলের উচিত তাদেরকে আমাদের স্মৃতিতে রাখা।


কিন্তু আমাদের ব্যাপারে কি? আমরা কি শোক পাওয়ার অধিকার রাখি না? আমরা কি তাহলে যথেষ্ট পরিমাণে মানুষ নই? আমরা কি আপনাদের জন্য খুব বেশি আরব? খুব বেশি কালো? খুব বেশি অপর? আপনাদের কি আমাদের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করা অসম্ভব মনে হয় শুধুমাত্র আমাদের গায়ের রঙের জন্য? একটা শব্দ আছে এটার জন্য।


আর তারপর, এই সবকিছুর পর, সবকিছু বলা এবং করা হয়ে যাওয়ার পর। আমাদেরকে যখন এটা আঘাত করে, আমরা কতো তুচ্ছ। আমরা কতো গুরুত্বহীন এবং মানুষ হিসেবে আমরা কতো নিকৃষ্ট। ঠিক তখন বেস্ট পার্টটা আসে। আমার ফেভারিট পার্ট।


ক্ষমাপ্রার্থনা।


আমাদের বলা হয়ে ক্ষমা চাইতে! এটা আমাদের কাছে দাবি করা হয়! আমাদেরকে সেই বর্বরদের কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয় যারা তাদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজগুলো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিরুদ্ধে করে আসছে।


আমরা ভিকটিম। আপনারা এই উগ্রপন্থীদের হাতে যেই অভিজ্ঞতা লাভ করেন তা সিরিয়া যেই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে তার একটা ফ্র্যাকশন মাত্র। লেবানন যেই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে। আমরা প্রতিদিন এদের মোকাবেলা করে টিকে আছে। আর এখন, এক ধরণের অসুস্থ, বিকৃত রসিকতায়, আমাদেরকে বলা হয় ক্ষমা চাইতে। আমাদের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। এই ট্র্যাজেডির মূল ভিকটিম আর রিফিউজিদেরকে মূল্য দিতে হবে। যেনো আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত, জমি, আর আত্মমর্যাদা দিয়ে মূল্য দেই নি।


দুঃখিত। আমরা দুঃখিত যে আপনাদের আমাদের ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছেন, সেগুলো লুঠ করেছেন, নিজেদের মধ্যে সেগুলো স্বর্ণের মতো ভাগ করে নিয়েছেন।

আমরা দুঃখিত যে আমরা আমাদের কাছ থেকে আমাদের সম্পদ, আমাদের আত্মমর্যাদা, আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছেন।

আমরা দুঃখিত যে অরাজকতা আর আক্রোশ ছাড়া আর কিছুই ফেলে রেখে যান নি আপনারা চলে যাবার সময়। আমরা দুঃখিত যে সেই আশাহত আর অধিকারহীন জনতা, যাদেরকে আপনারা ফেলে গেছিলেন, তাদের একাংশ উগ্রপন্থার দিকে গেছে।

আমরা দুঃখিত যে তাদের বর্বরতা থেকে আপনারা ফায়দা লোটেন।

আমরা দুঃখিত যে আপনাদেরকে তাদেরকে এইসব কাজ করতে দেন আমাদের সাথে, তাদেরকে উৎসাহিত করেন এবং আমাদের ক্ষতি করার জন্য দরকারী উপকরণ তাদেরকে সরবরাহ করেন।

আমরা দুঃখিত যে তারা শেষ পর্যন্ত আপনাদের দিকেই ঘুরে যায়। আমরা দুঃখিত যে তারা আপনাদের খোঁজে ফিরে আসে।

আমরা দুঃখিত। আমরা আশা করি, আপনারা আপনাদের ভেতর সেই মহান সত্তাটিকে খুঁজে পাবেন, যা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবে।


অনুবাদ : ইরফানুল হক রাফি
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×