শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে সাফল্যটা আনেননি সাহারা। শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি আর পরিশ্রম করার শক্তিই তাঁকে নিয়ে এসেছে এত দূর।
কিন্তু ইমেজজনিত ব্যর্থতা অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছিল। সাফল্যের মুখ দেখেন বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। শাকিব খান অনেক আগে থেকেই আলোচনায় থাকলেও সাহারার ক্যারিয়ারের জন্য সে ছবিটি ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ ছবিতে সাহারার সাফল্যের কারণে এরপর থেকেই সাহারা ছবি করছেন বেছে বেছে। ছবিতে নিজের কো আর্টিস্ট কে তা আগে না ভাবলেও এরপর থেকে তিনি ভাবতে শুরু করেন। শুধু তাই নয় গল্পের ধরন কেমন সেদিকেও তিনি বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে শুরু করেন। শাকিবের বিপরীতে কাজ করা প্রসঙ্গে সাহারা বলেন, শাকিবের সঙ্গে আমার উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে- ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ এবং ‘প্রেম কয়েদী’। দু’টি ছবিতেই দর্শক জুটি হিসেবে আমাদের বেশ ভালভাবেই গ্রহণ করেছে। গুরুত্ব দেন বলেই নিজের শরীরের প্রতিও এখন অনেক বেশি যত্নবান। নিয়মিত জিমে যাচ্ছেন সাহারা। আগের চেয়ে অনেক সচেতন বলেই তিনি এখন তার পরবর্তী ভাল একটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। আর এসব কারণেই আবারও নতুনভাবে আলোচনায় এসেছেন সাহারা।
স্বীকারোক্তির প্রয়োজনটা কখনোই গুরুত্ব দেননি সাহারা। এক মিনিট দুই মিনিট তারপর ঘন্টা। তারপর কেটে গেলো দিন, মাস, বছর, বছরের পর বছর। ঠিক এভাবে সময়ের ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্রে তার অবস্থান যে ভালো হচ্ছে তা কেউ স্বীকার করুক আর নাইবা করুক তিনি তার কাজের প্রতিই খেয়াল দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই সময়ে এসে দর্শক, প্রযোজক পরিচালকদের স্বীকারোক্তিই যেন সাহারার কাছে অনেক মুগ্ধতার। দেশীয় চলচ্চিত্রে এই সময়ে নায়িকাদের কাতারে সাহারার নামটাই আসছে সবার আগে। যেন এমনই একটা সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন সাহারা। হয়তো একারণেই সাহারা চুপি চুপি এগিয়ে চলছিলেন নির্বিঘ্নে। আর এখন তার সহাস্য যাত্রা। যেখানে কিছুদিন আগেও সময়ের সেরা নায়ক শাকিব খান অপু বিশ্বাস ছাড়া কোন ছবিতেই কতাজ করতেন না সেখানে শাকিব নিজেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তার অধিকায়ংশ ছবিতেই তার বিপরীতে সাহারাকে রাখছেন। এটি সাহারার জন্য সৌভাগ্যই বলা চলে। চলুন শুনি সাহারা কি বলেন। 'দেখুন, আমি আসলে সবসময়ই নিজেকে শুধুই চলচ্চিত্রের একজন বলেই মনে করি। যে কারণে আমার এমনও সময় গেছে যখন আমার হাতে ছবির সংখ্যা ছিল খুবই কম। তারপরও কিন্তু আমি নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনে কাজ করিনি। কারণ আমার বারবার মনে হয়েছে যে চলচ্চিত্রই আমার মূল জায়গা। যদি কাজ করতেই হয় তাহলে চলচ্চিত্রেই কাজ করবো। ' বললেন সাহারা। এটা সত্য যে সাহারা চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে কখনোই তাকে কোন নাটক কিংবা বিজ্ঞাপেন কাজ করতে দেখা যায়নি। তবে নাটকে কাজ না করলেও বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার প্রচন্ড ইচ্ছে আছে তার। সেক্ষেত্রেও একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি। হতে হবে ভালো কোন প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন। এছাড়া তিনি কাজ করবেন না। ফিরে যাই সাহারা চলচ্চিত্রের শুরুর সময়কালের কথা। ২০০৪ সালে শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ' রুখে দাঁড়াও' ছবিতে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে একজন নায়িকা হিসেবে সাহরার অভিষেক ঘটে দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে। সেই সময় শাকিব খানের অবস্থা আজকের অবস্থানের মতো না থাকলেও শাকিব অনেক ছবিতে কাজ করছিলেন তখন। রুখে দাঁড়াও ছবিতে শাকিবের সাথেই জুটিবদ্ধ হয়ে কাজ করেছিলেন সাহারা। নাহ্, বব্যষা সফল হতে পারেনি ছবিটি। না জেনে না বুঝে সে সময় অনেক ছবিতে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন সাহারা শুধুই টিকে থাকার জন্য। থেকে থেকে সময় যখন এলো ২০০৮ তখনই মুক্তি পায় তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি ' প্রিয়া আমার প্রিয়া'। ছবিটিতে সাহারা নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। দেশজুড়ে তৈরী হয়ে গেলো তার নিজস্ব কিছু দর্শক যারা এখন সাহারা অভিনীত কোন ছবি মুক্তি পেলেই হলমুখী হন। তার বিপরীতে কে আছেন সেটাও যেন বিবেচনা করেন না তারা। এ প্রসঙ্গে সাহারা বলেন, 'প্রায় আটবছর হতে চলেছে আমি চলচ্চিত্রে কাজ করছি। বিগত দিনে চলচ্চিত্রে আমার নিজস্ব কিছু দর্শক তৈরী হয়েছে যারা আমার অভিনীত ছবি দেখে আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দর্শকের এই ভালোবাসা আমি আজীবন ধরে রাখতে চাই। ' এমন একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেবার পাশাপাশি সাহারা গত ১৯ জুন তার জন্মদিনে আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশেষ এই দিনটি যেমন তার জন্মদিন ঠিক তেমনি এই দিনটি বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবেও পালিত হয়। জন্মদিন এলেই তার বাবার কথাই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে; কারণ তার জন্মদিনে তার বাবাই তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। নানান রকম খেলনা কিনে দিতেন। কিন্তু সাহারা খুব অল্প বয়সেই তার বাবাকে হারান। তার জন্মদিন আর বাবা দিবস একই দিনে হওয়ায় বিশেস এই দিনটিতে বাবাকে প্রচন্ড মিস করেন সাহারা। তাই সাহারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমাজের অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করবেন। খুব শিগগিরই সে কাজ শুরু করবেন তিনি। তবে এখনই সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চাচ্ছেন না তিনি। শাকিব সাহারা জুটির ভালোবেসে মরতে পারি ছবিটিই ছিল সর্বশেষ দর্শক গ্রহণযোগ্য ছবি। যে কারণে অনেক প্রযোজক পরিচালক এই জুটিকে নিয়ে বেশ কিছু ছবি নির্মাণ করছেন। খুব ছোটবেলা থেকেই সাহারা নাচ শিখেছেন নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার কাছে। আর সে সুবাদেই একসময় পরিচিত হন পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন লিটনের সাথে। পারিবারিক নাম রুনা মুছে গিয়ে নতুন নাম ' সাহারা ' হিসেবেই দর্শকের কাছে পরিচিত হতে থাকেন। সাহারার মা রাবেয়া বেগমই তাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়েছে চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে আর সম্ভব হয়নি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। তাই এই সময়ে এসে কিছুটা হলেও পড়াশোনার জন্য আফসোস করেন সাহারা। প্রচন্ড রকম ইচ্ছে তার অভিনয় সর্বস্ব একটি ছবিতে কাজ করার যে ছবিতে কাজ করে তিনি যেন ছিনিয়ে আনতে পারেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেই সময়ের প্রতীক্ষায় সাহারা আর সাহারার অগণিত ভক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


