somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত জাগি...

২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু আগেই রাতে জাগা নিয়ে ছিমছাম একটি ব্লগ পড়লাম। বেশ ভালো লাগলো। ‘রাত জাগা’ ব্যাপারটা আসলেই খুব ভালো লাগার। সারাদিনের কর্মক্লান্ততার পর, রাত যেন নিজের হয়ে আসে। শুধুমাত্র নিজের।

স্কুলে যখন পড়তাম, খুলনা শহরের কোন এক গলির শেষ প্রান্তে ছিলো আমাদের বাসা। সমস্ত গলি ঘুমে তলিয়ে গেলেও রাত জেগে পড়তাম। সকালে পড়তে পারতাম না যে! জানালা খুলে দিলে আসতো হু-হু বাতাস। যেন হাড়ের উপর সরাসরি কোমল ছোঁয়া লাগিয়ে দেবার অনুভূতি। এক বাসা ডিঙ্গিয়ে পাশের বাসায় গরু পুষতো। দো’তলার জানালা দিয়ে আমার দৃষ্টি তখন পাশের একতলা বাড়ির ছাদ টপকে শুধু গরুটিকেই দেখতো। গরুটাই তখন রাত জাগার একমাত্র সাথী। নানা’কে তাই গোটাগোটা অক্ষরে চিঠি দিয়েছিলাম, “সারা পাড়ায় আমি আর গরুটা ছাড়া আর কেউ জেগে নেই।” শুনে সবাই খুব হেসেছিলো! তাতে কী? ‘আর্লি-টু-বেড’ মেনে চলা পুরো চেনাজানা-স্বজনে নানা-ই যে রাতজাগা-ভালোলাগা একমাত্র মানুষ তখন। অন্য কাউকে কী ভাবে লিখি একথা?

এখন আমার ঘরটা অনেক বড়। পাশের ঘরটা আরও বেশি বড়। সেটি ফাঁকা থাকে। কখনও কখনও অনেক রাত ধরে আমার একা একা হেঁটে বেড়াবার অনেক প্রিয় জায়গা হয়ে পড়ে এ দু’ঘর। আটপৌরে জীবন, তার বোধগম্যতা বা বোধহীনতা, কিংবা অনিশ্চিত ভবিষ্যত- এসব নিয়ে বিছানায় গিয়ে চিন্তা করতে গেলেই ঘুমিয়ে পড়ি। হেঁটে হেঁটে ভাবলে, সেই ভয়টা থাকেনা। ভাবনাগুলো ডানা মেলে ইচ্ছেমত। কখনও বারান্দায় যাই। দিনের বেলা যে টবগুলোর দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর সময় পাইনা, সেগুলোর উপর জন্মানো গাছগুলোকেই ছুঁয়ে দেখি। ভালো লাগে। কখনও অনেক রাতে বন্ধুদের ফোন করি। প্রায় সবাই এখন নিদ্রাদেবীর কোলে মাথা রাখে-দেহ রাখে বিছানায়। তবুও, কেউ কেউ জেগে থাকে। যেমন, ব্লগার অদ্ভুতুড়ে ! মাসের মধ্যে অনেকগুলো রাত অফিসে কাটায় সে-নাইট শিফট থাকলে, কখনও তাকে ফোন করা হয়। গল্প হয়। পাশের বাড়ি কোন বাচ্চাও কেঁদে ওঠে কখনও। মা তার তাকে শান্ত করার জন্য ফিসফিস করে ওঠেন। ক্রমশ সেটিও মিলিয়ে যায়। কুকুরের ডাক শোনা যায়। বাসাটা মেইন রোডে না হলেও কেন জানি সারারাতই মানুষ চলে সামনে। গাড়ি চলে। রাতপ্রহরীর বাঁশি বাজে। তারা আমার জানালার নিচেই বিড়ি ফুঁকে। অন্ধকারে ভালো দেখিনা তাদের। ঈদের বখশিসের মৌসুমেই শুধু দিনের চেহারায় দেখি তাদের। গত শীতে এক পাগলী এসে জানালার নিচে ইচ্ছে মত কী সব জানি বলতো। শুনতাম। বাসার সবার ঘুমের সমস্যা হতো। আমার হতনা। ঘুমিয়ে পড়লে পৃথিবী দুলে উঠলেও হয়তো টের পাবোনা হয়তো। ক্লান্তিসুখের ঘুম! সুখী মানুষ? পাগলীটা এখন আর আসেনা। মনে হয়, সে সেই সব পাগলদের একজন-যারা শুধু শীতকালেই পাগলামো করে।

আমার পিসিতে একটা গানের ফোল্ডার আছে- ‘তন্দ্রাহারা রাত’। পুরনো দিনের বাংলা গানের ছোট্ট একটা সংগ্রহ। নিস্তব্ধতা আরও নেমে এলে চালিয়ে দিই উইন্যাম্প-এ। শাফল মুডে বাজতে থাকে, যতক্ষণ আমি জেগে থাকি, কিংবা যতক্ষণ ইলেকট্রিসিটি থাকে। ইউপিএস নেই যে আমার! ইলেকট্রিসিটি’র যাওয়া আসাটা আমার রাতের রুটিনকেও পরিবর্তন করে দিয়েছে। রাত দশটায় সে চলে গেলে ঘুমিয়ে পড়ি। কখনও রাত শেষ হবার ঠিক আগের প্রহরে উঠে পড়ি। নেটে ঘুরি। ব্লগ পড়ি। গান শুনি। কখনও একবারে সকালটাকেই দেখি।

গানেরও হাজার রকম পছন্দভেদ আছে। কত ধরণের গান। কত ধরণের শ্রোতা। তবে বিরহের গানগুলো-ই মনে হয় বেশির ভাগ শ্রোতার মন ছুঁয়ে যায়। ‘তন্দ্রাহারা রাত’ ফোল্ডার থেকেই একটি গান। গানের গলা- খুব সম্ভবত হৈমন্তী শুক্লা’র।

গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
দূর গগনে প্রিয় তিমির পারে।।

জেগে যবে দেখি হায় তুমি নাই পাশে
আঙ্গিনায় ফোটে ফুল ঝরে পড়ে আছে।।
বান বেঁধা পাখি সম
আহত এ প্রাণ মম
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে

দূর গগনে প্রিয় তিমির পারে।।
গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে।

মৌন নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে
এসো প্রিয় এই বেলা বক্ষে নিরবে
কত কথা কাঁটা হয়ে বুকে আছে বিঁধে
কত অভিমান কত জ্বালা এই হৃদে
দেখে যাও, এসো প্রিয়
কত সাধ ঝরে গেলো
কত আশা মরে গেলো হাহাকারে।

গভীর রাতে জাগি খুঁজি তোমারে
দূর গগনে প্রিয় তিমির পারে।।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:১৪
৩৪টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×