somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব ক্রিকেটের ঘুটি ২০ জানুয়ারীর ম্যাচ !!!

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়দিন ধরে আমরা যারা দেশের ক্রিকেট ফলো করছিলাম, তারা বুঝতে পারছিলাম জাতীয় পতাকা ধারীদের নিয়ে কি সুসাইডাল পরিকল্পনা করছিলো হাতুড়ে। বার বার ভাবছিলাম, কি তার উদ্দেশ্য হতে পারে।
ফুটবল দলের সাথে ঘটা লোপেজের কথা বার বার মনে হচ্ছিলো। এখনও মনে আছে কোন একদিন হঠাৎ করে বাফুফে ঘোষণা করলো, আজ থেকে লোপেজ কোচ। অপমানিত ক্রুইফ সেদিনই চলে গেলো ঢাকা ছেড়ে। পরের সপ্তাহ থেকে পত্রিকায় খবর জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত সব খেলোয়াড়কে দিয়ে নতুন নতুন পজিশনে প্র্যাক্টিস করানো হচ্ছে। স্ট্রাইকারদের ডিফেন্স পজিশন, মিডফিল্ডারদের স্ট্রাইকিং এ রাইট আউট কে লেফট উইং য়ে! সিনিয়র খেলোয়াড়েরা দ্রুত এর কুফল সম্বন্ধে বুঝে ফিসফাস করতে বসলেন। বাফুফে থেকে কড়া ধমক লাগানো হলো। টিম কম্বিনেশন, প্লেয়ার কনফিডেন্স নষ্ট এবং পারফরম্যান্স নষ্ট যখন নিশ্চিত হলো তখন বাফুফের টনক নড়লো।

লোপেজকে বিদায় করা হলেও ততক্ষনে সে যা ক্ষতি করার করে দিয়েছে। এবার মারুফুলকে ভাঙা গাড়ী ধরিয়ে দেয়া হলো। বেচারা প্রাণপন চেষ্টা করেও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেন না। দোষ গিয়ে পড়লো সেই খেলোয়াড়দের হাতে, অধিনায়কের হাতে। অথচ বাফুফের ডিসিশন মেকারেরা গা ঝাড়া দিয়ে তাদের ময়লা ঝেড়ে ফেললেন। সাফ গেমসে বোঝা গেলো লোপেজ কে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো তাতে সে বেশ সফল (!) পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু কাপেও বাচ্চা ছেলেদের সাথে হিমশিম খেয়ে জাতীয় দল বুঝিয়ে দিলো, তৈরী করার চেয়ে ধ্বংস অনেক সহজ ।

ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ার সময় একই ঘটনা ঘটানোর প্রেক্ষাপট তৈরী হলো ক্রিকেট কে ঘিরে। লোপেজ কে নিয়ে যেসব দেশ এই চক্রান্ত করেছিলো তারা এবার ক্রিকেটকে ঘিরে একই চক্রান্ত শুরু করলো।

যে জিম্বাবুয়ে মাত্রই আফগানিস্তানের কাছ থেকে ক্রিকেট শিখে এলো, তাদের কাছে খুব দ্রুত ম্যাচ হারবার প্রচন্ড তাগিদ অনুভব করছিলো হাতুড়ে। পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে টীম কম্বিনেশন চুড়ান্তভাবে ভেঙ্গে চুড়ে নিশ্চিত করলো হার। হাতুড়ের উদ্দেশ্য গুলো ২০ তারিখ ম্যাচ হারার পর মোটামুটি ভাবে এভাবে গোছানো যায়-

১. পৃথিবীর যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় সিরিজ নিশ্চিত হবার পর। চতুর্থ ম্যাচ বাকী থাকার পরও তৃতীয় ম্যাচেই মরিয়া হয়ে পরীক্ষার নামে দলকে হারিয়ে দিয়ে বুকিদের সাথে হাতুড়ির যোগ সাজসের সম্ভাবণা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

২. আন্তর্জাতিক ম্যাচ মানেই জাতীয় পতাকা নিয়ে লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও সিরিজ নিশ্চিত হবার পরও ভারতের সাথে চতুর্থ ম্যাচে লড়াই করবার জন্যে সবচেয়ে সেরা দল নিয়েই মাঠে নেমেছে। জাতীয় পতাকার ইচ্ছাকৃত অবনমন কোন জাতিই মেনে নিতে পারে না। ফলে জাতীয় পতাকা নিয়ে লড়াই করা ছেলেদের মানসিক ধাক্কা দেয়াটা ওর জরুরী ছিলো।

৩. মাশরাফির ক্যাপ্টেনসি- এই হাতুড়ের হাতের এই দলটিই যখন দিনের পর দিন নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছিলো ২০১৪ সালে, তখন মাশরাফির অনবদ্য ক্যাপ্টেনসিতেই দল ঘুরে দাড়ায়। মাশরাফির ক্যাপ্টেনসি যে বিশেষ কিছু তা আবারও প্রমাণ হয়ে যায়, যখন বিপিএল এ প্রায় নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে সাধারণ মানের একটি দলকে মাশরাফি চ্যাম্পিয়ন করে ফেলে। গতকাল ম্যাচ হারার পর ফেসবুক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের কাতারে যেই কথাটি এই প্রথম চলে আসলো - তা হলো মাশরাফি এই দলে চলে না। এই রকম একটি সাউন্ড হাতুড়ির জন্যে খুব বেশী প্রয়োজন ছিলো। সাধারণ দর্শকদের বেশীর ভাগই কোচের এই আকাম খুটিয়ে দেখবে না। তারা দেখবে খেলোয়াড়দের আর ক্যাপ্টেন কে। এমনকি হাতুড়ের সর্বনাশা প্লানের ব্যাখ্যা দিতেও সেই মাশরাফিকেই সংবাদ সম্মেলনে পাঠানো হয়। হাতুড়ের কুটচালের হাতেনাতে ফল এবং শিকার মাশরাফির গ্রহনযোগ্যতা সাধারণ মানুষদের মাঝে কমানো।

৪. শুরু থেকেই সাকিবের অসাধারণ খেলার ক্ষমতা হাতুড়ে (যার খুবই লজ্জ্বাজনক ক্যারিয়ার স্ট্যাট) র ইর্ষার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যে হাতুড়ে নিজেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য একাধিকবার শ্রীলংকা জাতীয় দল থেকে একাধিকবার বহিস্কৃত হয়েছে, সেই হাতুড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে সাকিবকে বিভিন্ন অছিলায় সাসপেন্ড করার জন্যে বিসিবিকে উস্কে দেয়। তার সাথে যোগ দেয় প্রায় একই ধরনের লজ্জ্বাজনক ক্যারিয়ার গ্রাফধারী অথচ অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন সাবেক বাংলাদেশী অধিনায়ক। তারপরেও জাতীয় দলে অসাধারণ পারফরম্যান্স অব্যাহত থাকায় সাকিবকে বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে দুই জায়গায়ই তার পজিশন থেকে সরিয়ে কনফিডেন্স নষ্ট করবার সব প্রক্রিয়া চালিয়ে যায় হাতুড়ে।

৫. মুশফিকের ইনজুরী হাতুড়ের কাজকে আরও সহজ করে দেয়। আগের করা প্লান থেকে তামীমকে সরিয়ে, ফিনিশার নাসিরকে দলের চারপাশে ঘেষতে না দিয়ে , সিনিয়রদের মধ্যে অফ ফর্মে থাকা মাহমুদুল্লাহকে তার পজিশন থেকে সরিয়ে আরও বিপর্যস্ত করে পাহাড়সম চাপ তৈরী করে মাশরাফি আর সাকিবের উপর। ফলে, ম্যাচ শেষে দেখানো সহজ হয়, তার পরীক্ষা নিরীক্ষায় দল হারলেও জুনিয়র রা তুলনামূলক ভালো করেছে সিনিয়রদের চেয়ে। বাংলাদেশ দলের সব বড় সাফল্যেই টীম ওয়ার্ক ছিলো দেখার মতো (উদাহরণ- পাকিস্তানের সাথে বিশ্বকাপে জেতার ম্যাচেও কিন্তু দলের কোন ফিফটি ছিলো না) । ফলে টীম ওয়ার্ক ভেঙে দিয়ে ম্যান টু ম্যান পারফরম্যন্সের দিকে সবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া সহজ হয়।

৬. ফুটবল দলকে ধ্বংস করায় বাংলাদেশের মানের দলগুলোর যে অপরিসীম উপকার হয়েছে, ক্রিকেট দলকে ধ্বংস করায় তার হাজারগুন ফল বিশ্বক্রিকেটে দেখানো সম্ভব। এমনিতেই ২০১৫ এর ইর্ষনীয় সাফল্যে বাংলাদেশে একের পর এক দল নাস্তানাবুদ হয়ে গেছে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট দলও বাংলাদেশে এসে খেলার সাহস পায় নি। বৈশ্বিক ক্রিকেটিয় রাজনীতিতে এর একটা ব্রেক করবার জন্যে উঠে পড়ে লাগছে কয়েকটি দল।

৭. মাস ভিত্তিক র্যাংকিং পদ্ধতির ফলে ক্রিকেট যতটা না মাঠের খেলা তার চেয়ে টেবিলের খেলায় পরিণত হয়ে গেছে। এর সবচেয়ে নোংরা উদাহরণ - গত অক্টোবরে , যেখানে পাকিস্তান একদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সাথে ত্রিদেশীয় সিরিজের ভুয়া অফার দিয়ে র্যাংকিংয়ের স্থান ধরে রাখার জন্যে জিম্বাবুয়ের সাথে ওয়ানডে সিরিজ দুইমাস পিছিয়ে দেয়। ঠিক একই কারণে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের ওপরে থাকা দলগুলো বিভিন্ন অছিলায়, ছলে বলে কৌশলে বাংলাদেশের সাথে সমস্ত খেলা এড়িয়ে যাচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত মাশরাফির অধীনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দুর্দর্ষ ক্রিকেট খেলে যাবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের এই পলিটিক্স চালিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই- এটা ক্রিকেট জ্ঞান সম্পন্ন সবাই বুঝে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে তাদের ঘুটি কোচ হাতুড়ে। এমনকি টি টুয়েন্টি প্র্যাকটিসের অছিলায় বিসিএল পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে সে। তাদের সবার মূল উদ্দেশ্য এক- বাংলাদেশের জয়রথ থামিয়ে কোনভাবে ডিস্টার্ব তৈরী করা। এই যুগে তো আর পারফর্মার দের ব্রাশ ফায়ার করা যায় না, তাই বাকা পথের রাস্তায় চলা।

তবে আশার কথা বিসিবি অত্যন্ত প্রফেশনাল একটি সংগঠন। বাফুফের মতো সব কিছু শেষ হওয়ার আগেই তাদের টনক নড়বে এটা এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বিসিবিতে দেশপ্রেমিক যেমন রয়েছেন, তেমনি সাবেক খেলোয়াড়েরাও রয়েছেন। বিসিএল বন্ধে একজন সাবেক অধিনায়ক খুবই প্রশংসনীয়ভাবে প্রতিবাদ করেছেন। বিসিবি সভাপতির চোখেও বিষয়গুলো পড়েছে বোঝা যাচ্ছে। বিশ্ব মোড়লদের সাথে সাহসের সাথে লড়াই করা লোটাস কামাল আছে, ক্রীড়া সাংবাদিক রা আছেন, তারা সবাই চোখ বুজে নাই। ফলে, এখনও সময় আছে, সব কিছু শেষ হয়ে যায় নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×