somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন একা মানুষ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গাড়ী চালানোতে আমার দক্ষতার একটা ছোটখাটো সুনাম আছে পরিচিত মহলে। সাবধানী ড্রাইভার হিসেবেই নিজেকে চেনাই, তা গাড়ীই হোক, কি বাইক ই হোক। বিপদের কোন মা বাপ নাই প্রমান করলাম গত সন্ধ্যায়ই। বাসার কাছের মোড়েই এক ত্যাড়া সিএনজি ড্রাইভারের সাথে ঝামেলার মধ্যেই একটা মিনিবাস ধাক্কা মেরে আমার বাইক ফেলে দেয় সাথে আমাকেও। কপালগুনে সেই জায়গাটা কাদায় থকথকে থাকায় বেচে যাই। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যামের কথা বিবেচনা করেই বোধহয় বাসড্রাইভার শেষপর্যন্ত গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়নি। ঢাকার জ্যাম এই প্রথমবারের মতো আমাকে কৃতজ্ঞ করে দিলো। আমাকে ফেলে দিয়ে সিএনজি আর বাস দুটিই বাসার সামনে গিয়েই সিগনালে থেকে যায়। বেচে থাকার আনন্দের চেয়ে চরম আক্রোশই আমার মাঝে কাজ করলো বেশী। সিএনজিটিকে একাই আটকে দেই। প্রথমে ঘাড় ত্যাড়ামী করলেও শেষ পর্যন্ত হাতজোড় করে বের হবার চেষ্টা করে সে। বাসার ঠিক সামনে থেকেই হাজার বার চিৎকার করেও বাসার কাওকে বের করে আনতে পারলাম না। বরং দূর থেকে দারোয়ান দেখে ডাক না শোনার ভান করে উল্টো ভিতরে চলে যায়।
সিএনজি আলাকে মাপ করে দিয়ে বাইকটা পার্ক করে নতুন পাওয়া জীবনটাকে দেখতে রাস্তায় হেটে বেড়ালাম কিছুক্ষন। ইট পাথরের নিষ্ঠুর এই শহরের ধুলা আর আলোর গোসলে ভিজলাম কাদায় ভরা পোষাক নিয়ে। ফোনটা বের করে কিছুক্ষন খুজলাম কারও সাথে দুমিনিট খাজুড়ে আলাপ করবার জন্যে। ব্যস্ত শহরে আমার মতোই ব্যস্ত সবাই। এক সময় যে বন্ধুরা দুদন্ড আড্ডা দেবার জন্যে বিভিন্ন উছিলায় কত জায়গায় যেতাম/যেতো, কালের বিবর্তনে তাদের সবাই ব্যস্ত। সন্ধ্যায় অফিস শেষের ব্যাস্ত বেলায় কল ধরার সময় কারও থাকে না, মিসকল নামেই জমে থাকবে হয়তো বা। দুবছর ধরে বিভিন্ন অছিলায় বউয়ের বাড়িতেই থাকছি। বাসায় ফেরার পথে শ্বসুর আব্বার প্রশ্ন -" কি ব্যাপার বাইকের ওপরে রাখা হেলমেট এ কাদা কেন?"
-"কিছুনা, বাস ফেলে দিয়েছিলো"
-" ও আচ্ছা, আমি দারোয়ানকে দিয়ে হেলমেটটা ধুইয়ে রেখেছি।"
সে সময়ের মুখ ঘুরিয়ে যাওয়া দারোয়ান দাত বের করে এসে বললো- "স্যার, একখান ডাক দিবেন না, বাস আলারে ধরইয়া দিতাম"
কিচ্ছু বলার পেলাম না।
বাসায় ঢুকে বরাবরের মতো নিঃশব্দের দুনিয়ায় ঢুকে গেলাম। বাচ্চারা ঘুমায় এই জন্যে কোন কথা এসময় বলা যায় না, মোবাইল সাইলেন্ট রাখতে হয়, আর লাইট জ্বালানো যায় না। শুক্রবার ছাড়া এবাসার কেউ আমার সাথে কথা বলবার মতো সময় নস্ট করবার কাজে যায় না। অবশ্য বিনা বাজারে দুই বছর ধরে বউ পোলাপান নিয়ে উঠে বসে থেকে তিন বেলা খাওয়া পাওয়া যায়, তাই বেশী। এখন অভ্যস্ত হয়েই গেছি, যা কথাবার্তা বলার বাইরেই বলে আসি, চা আলা, রিকশা আলা (কেন জানি অফিস কলিগদের সাথে কখনই আড্ডা মারাটায় মজা পাই না), যা পাই আর কি? আর সকালে কিছু সময়ে ছেলেটার সাথে। প্রতিদিনই ছেলেটা নতুন নতুন একটা দুইটা শব্দ শিখে, শুনতেই ভালো লাগে। অবশ্য তা সকাল নটা পর্যন্ত। নটার আশেপাশেই সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, কখন বের হবো...........।
অ্যাক্সিডেন্টের উত্তেজনায়ই বোধ করি ঘুম কিছুতেই আসছিলো না। এগারোটায় বন্ধু রাজু ফোন করলো- খুব আগ্রহ করে ধরলাম, যাক অ্যকসিডেন্টের কথাটা ওকে বলা যাবে। ফোন ধরেই ও আমার কাছ থেকে এক্সপার্ট অপিনিয়ন চাইলো- একটা গাড়ী কিনতে চাচ্ছে। কেনার আগে আমাকে চালিয়ে দেখতে হবে। অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বললাম, অ্যাক্‌সিডেন্টের কথা বলা হলো না। তাছাড়া একটু আগে গোসলের সময় দেখলাম, বা হাতের তালু ছড়ে গেছে, ডান হাতের কুনুই এ জ্বলুনী। আর কোথায় কোথায় যেন ব্যথা।
সকালে উঠেই ছেলেটার সাথে সময় কাটিয়ে আপিসে চলে আসলাম। এগারোটার দিকে আম্মু ফোন করলো
- কি করিস?
- কাজ করি। বলেন।
- আমার ঢাকায় আসতে দেরী হবে। তুই নাস্তা করছিস?
-হুম। কাজে আছি।
- বাচ্চারা ভালো আছে তো? তুই কেমন আছিস?
-সবাই ভালো, রাখি।
- আচ্ছা কাজ কর তুই। তুই ভালো আছিস তো?
-ধুর। রাখি।

ঘন্টা খানেক পর আবার ফোন-
- নতুন মোবাইলতো, তাই টেস্ট করে দেখলাম কল করতে পারি নাকি।
- হুম , রাখি, কাজে আছি।
- আচ্ছা রাখি, তোর শরীর ভালো ?
- একটু আগেই তো বললাম, সব ভাল।
দশ মিনিট পর আবার ফোন। এবারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা, গত ৩/৪ বছরেও যেগুলা নিয়ে কোন দিন কথা বলেন নাই।
মাঝে প্রশ্ন -তোর মাথা ব্যাথাটা তো হয় না, তাই না?
- না। ভালো আছে।
-শরীর ভালো তো?
-আরে, একই কথা কতবার বলবো? রাখি।

ফোন টা রেখে চিন্তা করতে বসলাম, গত ৫/৬ বছরে এক ঘন্টার মধ্যে তিনবার ফোন আম্মু কোনদিন করেছে কি না? না, মোবাইল যুগ হওয়ার পরেও এক ঘন্টায় তিনবার আমার খোজ নেন নাই।

দুদিন ধরে বলতে কতজনকে বলার চেষ্টা করেছি- গতকাল একটা ছোটখাট অ্যকসিডেন্ট হয়েছে। এই ছোটখাট কিছু ব্যাথাও পেয়েছি।
কেউ শুনতে চায় নি।

পঞ্চাশ মাইল দুর থেকে আম্মু ঠিকই টের পেয়েছেন। আমি কিন্তু বলতে চাচ্ছি না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×