১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর সকাল চারিদিকে মাত্র আলো ফুটে উঠছে ।চারিদিকে মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি।ঠিক সেই সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঘটছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ ঘটণা।বাংলাদেশের সারে সাতকোটি মানুষের মধ্যে একজন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক মানুষ যদি জানতে পারতো ,তাহোলে নিজের জিবন বিপন্ন করে হলেও রুখে দিতে চাইতো সেই বর্বরোচিত ঘটনাকে।শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার জন্য কতটা নিষ্ঠুর ও হ্রদয় বিদারক ছিলো তা কি আমরা উপলব্দি করতে পারি?শুধুমাত্র একটি নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডে পৃথিবির কেউ কি তাদের সকল আপন জনকে হারিয়েছে? এমনকি দৈব দুর্বিপাকেও ইতিহাসে এমন ঘটণা বিরল।এমনকি তাদের অবস্থান তখন বাংলাদেশ থেকে বহুদুরে।শেষ বিদায় জানানোর দুর্ভাগ্যটুকু তাদের হয়নি।আমার মনে হয়না আমি এতবড় শোক নিয়ে বেচে থাকতে পারতাম।ঘুড়ে দাড়ানো'তো বহুদুরের কথা তাদের নিজের জিবনেরও শংকা ছিলো।
লন্ডন,জার্মান হয়ে তারপরে দিল্লিতে ঠাই মিলে তাদের।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ১কোটি মানুষ স্বরণার্থি হয়ে আশ্রয় পেয়েছিলো ভারতে।ইন্দিরা গান্ধির সেই ভারতই আবার পাশে দাড়ালো জাতির জনকের দুই কণ্যার।হায়রে ইতিহাস ।যখন ৭৫-এর ঘাতকরা সদর্পে বিচরণ করেছে পৃথিবি জুড়ে ।তখন হাসিনা ও রেহানাকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে নিজেদের নাম পাল্টিয়ে।কতটুকুইবা জানি আমরা তাদের কঠিন সময়ের কথা।একজন জাতির পিতার সন্তানকে বাঁচতে হয়েছে আত্মপরিচয় গোপন করে।অথচ কত সহজে একজন শেখ হাসিনা ও জাতির জনকের সমালোচনা করি নির্দিধায়।আমাদের মত অকৃতজ্ঞ জাতি আর দ্বিতীয়টি আছে কি পৃথিবিতে ? এতই হতভাগী যে পিতা হত্যার বিচার পর্যন্ত চাইতে পারে নাই দু'টি বোন।বঙ্গবন্ধুর নয়নের মনি একরাতের মধ্য হয়ে গেলেন এতিম অসহায় আশ্রয়হীন মানুষ।
এত কিছুর পরেও কোনদিন তারা জানতে দেয়নি তাদের সংগ্রামের কথা।তাদের জিবনের অধ্যায় অরচিত রয়ে গেছে,রয়ে গেছে অন্তরালে।এত কষ্ট বুকে চেপে ফিরে এলেন জাতির জনকের স্বাধিন বাংলায়।তারপরেও প্রবেশাধিকার ছিলোনা ৩২ নম্বরের পিত্রগৃহে।বাড়ির পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে মাগফেরাত কামণা করতে হয়েছে পরম স্বজনদের জন্য।সেটা কি তৎকালীন শাসকদের উদারতা ছিলো ! এই প্রশ্নটা কি কখনও করেছি আমরা নিজের বিবেককে? এই নিষ্ঠুরতার জবাব কে দেবে ? ছাত্র জিবনে ক্ষুদ্র সংশ্পর্স ছিলো রাজনিতির সাথে।সেটুকু সম্বল করেই দায়িত্ব নিতে হলো বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের।শেখ হাসিনা মুলত ভাঙন রুখতেই দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।এরপরের ইতিহাস শুধুই সংগ্রামের ইতিহাস।সামরিক শাসকদের অত্যাচার আর বারবার জিবনের উপরে নেমে এসেছে হুমকি।বৈরিতার সেই সময়ে শক্ত হাতে হাল ধরে রেখেছেন নৌকার।১৯ বার ফিরে এসেছেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে।তবুও ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে পালিয়ে যাননি।হিমালয়ের মত শেখ মুজিবের কণ্যা অবিচল ছিলেন লক্ষের প্রতি।মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখে ঘুড়ে দাড়ালেন ২০০৪ সালের একুশে আগস্টের পর।আজকের শেখ হাসিনা যেখানে দাড়িয়ে সেই পর্যন্ত আসতে তাকে কতটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তা কি আমরা ধারনা করতে পারি? প্রকৃতপক্ষেই শেখ হাসিনা একজন সাহসী রাষ্ট্রনায়কে পরিনত হয়েছেন আজ।
আমরা'তো দেখেছি শেখ মুজিবুর রহমানকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা।ইতিহাসের কোথাও খুজে পেতামনা আমরা ।অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ ছিলেন তারই সৃষ্ট সোনার বাংলায়।২২টি বছর কোথাও তাকে খুজে পাইনি।বইয়ের পাতায় ,টিভির স্ক্রিনে ,রেডিওর কথোপকথনে।ছিলেননা তিনি সংবাদের পাতায়ও।কিন্তু তিনি ছিলেন আমাদের মত কিছু অসহায় বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের বুকের মাঝে।৭ই মার্চ,১৫ই আগস্ট,দশই জানুয়ারি ও জন্মদিনের তিথিতে তিনি ফিরে আসতেন আমাদের মনের মন্দিরে।তিনি বেচে ছিলেন দশজন ফকির মিসকিনকে খাওয়ানোর মধ্যে।বেচে ছিলেন তার নামে দেওয়া আল-কোরানের খতমের মাঝে।ও ঘরোয়া ভাবে করা মিলাদের আসরে।হিমালয়ের মত বিশাল মানুষটির জন্য কত ক্ষুদ্র আয়োজনই না ছিলো আমাদের।প্রতিটি দিনে চোখে অশ্রু নিয়ে ছুটে যেতাম ৩২ নম্বরে।আর ভেতরের কান্নাগুলো চেপে ফিরে আসতাম ।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম পিতা তোমার ঋন পরিষোধ করার পতাকাটা যেনো দিয়ে যেতে পারি প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাতে।তুমিই হবে তাদের প্রেরনা জন্ম জন্মান্তরে।এই পিতার ঔরষে জন্ম বলেই হাসিনা হয়েছেন আজকের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।ঘাতকরা আমাদের যতটা পিছিয়ে দিয়েছিলো।তার চাইতে দ্বিগুন গতিতে পথচলা শুরু হলো শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে ।আশা করি আর কোন দিনই পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।আর কোন শকুন বাংলাদেশের মানচিত্র বা পতাকা খামচে ধরতে চাইলে তার ধ্বংস অনিবার্য।
মার্গারেট থেচার,মর্কেল,কুমারাতুঙ্গা ,ইন্দিরা গান্ধির মত আলো ছড়িয়ে পথের দিশা দেখাবে বাংলাদেশকে।আমাদের একান্ত আপনজন জাতির জনকের সুযোগ্য কণ্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা।
পুর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে,
রক্ত লাল,রক্ত লাল,রক্ত লাল।
জয় বাংলা ,
জয় বঙ্গবন্ধু।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪