somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুন্ডি পতনের চৌদ্দ বছর ধরে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের অনেকেই রাজধানী ঢাকাতে পালিয়ে থাকেন। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। এদের মধ্যে একজন আলমগীর হোসেন। ১৯৯৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি জড়িয়ে পড়েন কাজলের হুন্ডি ব্যাবসায়। নিজ এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। ২০০০ সালে হুন্ডি ব্যবসার পতন ঘটলে মানুষের অর্থ ফেরত দিতে না পেরে ১৪ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া। বাড়িতে পাওনাদারদের তাগাদার পাশাপাশি আজও চলছে পৈতৃক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা। আলমরে মতো কয়েকশ যুবকের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করেছে তথাকথিত হুন্ডি ব্যাংক। কোটচাঁদপুরের চাঞ্চলখ্যর এই হুন্ডির জের ধরে ঝিনাইদহসহ এ অঞ্চলে এখনো লেগে আছে বিবাদ। চলছে জমি দখল, খুনখারাবি, আত্মহত্যার মতো সামাজিক নানা অস্থিরতা। গ্রামের হাজার হাজার পরিবার বয়ে বেড়াচ্ছে হুন্ডিধসের ক্ষত। হুন্ডির পরও মানুষের হুস ফেরেনি। বর্তমান সময়ে আদম ব্যবসায়ী, এহসান এস বাংলাদেশ, যুবক, ই-লিংক, ইউনিপেটুইউ, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন মাল্পিপারপাস সিন্ডিকেটে নিঃশ্ব হচ্ছে মানুষ। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়া পুরোটাই অনিশ্চিত হয়ে দাড়িয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গ্রামের অল্প শিক্ষিত সাধারণ মানুষের অর্থ হারানোর বেদনা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির ঝিনাইদহের সভাপতি শরিফাতুন নেছা বলেন, এ ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিতে থাকা মধ্যবিত্তরা বিনিয়োগ করে, যারা কিনা দ্রুত তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে চায়। কিন্তু পতনের পর সবকিছু হারিয়ে হয়ে ওঠে ধ্বংসাত্মক। এর প্রভাব থাকে দুই ধরনের। প্রথমত, সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়, যার প্রভাব থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। দ্বিতীয়ত, পরবর্তী সময়ে ভালো কোনো কর্মসূচি নিলে আস্থাহীনতায় ভালো ফল পাওয়া যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো সাধারণত যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি সবসময়ই গৌণ থেকে যায়। হুন্ডি কাজলের উত্থান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৫-৯৬ সালে অদ্ভুদ আর রহস্যজনক এক ব্যবসার জন্ম দেয় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের হুন্ডি সম্রাট ফারুক আহমেদ কাজল ওরফে হুন্ডি কাজল। এ ব্যবসায় ১ লাখ টাকার বিপরীতে প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকার লাভ বা সুদ দেয়া হতো। ২০০০ সালের ফেব্রয়ারীর প্রথম সপ্তাহে পতনের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ জেলার প্রায় ২৫ লাখ পরিবার জড়িয়ে পড়ে এ ব্যবসায়। ছয় বছরে হুন্ডি ব্যবসার নামে এতে লেনদেন হয় আনুমানিক ২৫ হাজার কোটি টাকা। হুন্ডি পতনের পর গঠন হয় সার্ভে ও নিষ্পত্তি কমিটি। অর্থ আদায়ে গঠন হয় লগ্নিকারী সংগ্রাম পরিষদ। পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি সংস্থার আমন্ত্রণে ২০০০ সালের ৫ জুলাই কোটচাঁদপুর সফর করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি অর্থ আদায়ের মাধ্যমে লগ্নিকারীদের তা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্র“তি দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্র“তির কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ বিষয়ে লগ্নিকারী সংগ্রাম পরিষদের এক নেতা জানান, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পরও এলাকার মানুষ ভুলতে পারেনি অর্থ হারানোর যন্ত্রণা। এখনো জমি দখল কিংবা খুন, বিবাদের যেসব ঘটনা ঘটছে, তার পেছনে হুন্ডির বড় প্রভাব রয়েছে। হুন্ডি এ এলাকার তরুণ সমাজকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ঝিনাইদহ পুলিশের একটি সুত্র জানায়, হুন্ডি ব্যবসার পতনের পর জেলায় বেড়ে যায় খুন ও আত্মহত্যার প্রণতা। ২০০৪ সাল পর্যন্ত অপমৃত্যুতে মামলা বাড়তে থাকে। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত কিছুটা কমতির দিকে থাকে। গত দুই বছর তা ওঠানামার মধ্যেই ছিল। আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছে সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিস (শোভা)। প্রতিষ্ঠানটির এক জরিপে দেখা গেছে, ২০০৩ থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ জেলায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে প্রায় ৩০ হাজার নরনারী। এ বিষয়ে শোভার নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, গত এক দশকে হুন্ডি ধস আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায় একটি বড় প্রভাব বিস্তার করেছে। সামাজিক ও পারিবারিক কলহ নিরসন ও হতাশাগ্রস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়ানোর মাধ্যমে আত্মহত্যার পওবণতা রোধ করা সম্ভব। হুন্ডিতে সর্বস্বান্ত হওয়ার ভুরি ভুরি নজীর রয়েছে ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মাগুরাসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। হুন্ডির অভিশাপ বয়ে বেড়ানো তেমনি একজন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আতাউল (ছদ্মনাম)। পরিবারসহ প্রতিবেশীদের অর্থ ফেরত দিতে না পেরে দীর্ঘ ছয় বছর ভারতে পালিয়ে থেকেছেন। এ সময় তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছে। হুন্ডির টাকা নিয়ে প্রতিবেশীর কাছে হারিয়েছেন জমি। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর মহেশপুর এলাকার রাজনীতিবিদরা মনে করেন অবৈধ একটি ব্যবসার প্রলোভনে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছিল এ এলাকার মানুষ। কিছু মানুষ এর সুবিধা নিলেও প্রকৃত হোতারা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। সামাজিক অবক্ষয় রোধে ঘটনার পরপরই জোরালো পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×