somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : কবি-টা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলে মেজাজ ধরে যায়, আমার জন্য সকাল মানে মধ্যদুপুর। ঠিক বেলা বারোটার সময় ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল দারোয়ান মনতাজ। মেজাজ খারাপ করার বদলে অবাক হয়ে আছি। এক ভদ্রলোক এসেছেন আমার সাথে দেখা করতে। ভদ্রলোক মানে কিতাবী ভাষার ভদ্রলোক না। একদম স্যুাট বুটের ভদ্রলোক। ফর্সা গায়ের গালে, সকলে শেভ করা আলো ছড়াচ্ছে।

-আপনি কবিতা লিখেন?
ঘুম থেকে উঠে সিগারেট ধরাবার অভ্যাস, “বসুন” বলে আরেকটা বিছানা দেখিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়েই বললাম “দুঃখিত বদ অভ্যাস”
-আপনি কী কবিতা লিখেন?
দ্বিতীয়বার প্রশ্নটি করে ভদ্রলোক বুঝিয়ে দিলেন তার তাড়া আছে। মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালাম।
-আমি আহমেদ হাসিব জিতু, আমি আপনার কবিতা কিনতে চাই। বিক্রি করবেন?
অবাক হলাম “ আমিতো অত বড় কবি নই, ছোটখাটো কবি, আজেবাজে লিখি।
-আপনি আজে বাজে কবি আমি জানি, বড় কবি হলে চলবে না। তাই সস্তা কবির কাছে আসলাম।
ভদ্রলোকের কথাকে খোঁচা হিসাবে নিবো কিনা বুঝতে পারছি না। কিছুটা কনফিউজড আমি। সিগারেটটা ফেলে দিলাম। দারোয়ান নাস্তা নিয়ে এসেছে। গতকাল মুখ না ধুয়েই খেয়ে ফেলেছিলাম। আজ এই কান্ড করা যাবে না। ভদ্রলোক কষ্ট পাবেন। ফ্রেশ হবার জন্য সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।

-আসুন নাস্তা করুন, লাল লাল ঠান্ডা পরোটা, তেলে ভাসা ভাজি, টাকা নেই বলে আজ ডিম আসেনি!
-না আমি সকালেই খেয়েছি!
সকালে বললেই হত। ভদ্রলোক একটা ই লাগিয়ে বুঝিয়ে দিল এখন সকাল না। পরোটা ছিড়ে ভাজি নিয়ে মুখে ঢুকাতে যাবো ফোনটা বেজে উঠলো। সে ফোন করেছে,
-শুভ সকাল
-উঠেছে তাহলে!
-না উঠেনি, সেই কবে থেকে পড়ে আছে। টেনে তুলবে?

সে বুঝে না। আমি আসলে তার ভিতর পড়ে আছি। উঠা সম্ভব না। সে হল নীলা, নীলা হল সে। আমার একমাত্র প্রেমিকা, কবিতা অথবা কেউ একজন। চোখের ভিতর সব সময় রাজহাঁস খেলে, একদিন রাজহাঁসটা আমি খেয়ে ফেলবো। এই কথা শুনলে সে ঝিনঝিন করে হাসে, তখন হাসিটাও খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। ইদানীং নাকি আবার খাদক হয়ে গেছি। তার সাথে আমার কথোপকথনের ধরণটা অদ্ভুত। করেছে, খেয়েছে সম্বোধনমূলক কথা বলে আসছি গত সাড়ে তিন বছর যাবত। এই মেয়েটি দিন শেষে সারাদিন কি করেছি খোঁজ নেয়, কীসে শরীর খারাপ হবে বলে দেয়। ফোন রেখে ভদ্রলোকের দিকে মনযোগ দিলাম। আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে শুরু করে দিলেন

-দেখুন রোমেল সাহেব, আমি একটা মাধ্যমে শুনেছি আপনি কবিতা লিখেন। অত আলাপে আমি নেই। সরাসরি বলছি আমি আপনার কবিতা কিনতে চাই।
বেশ কিছু পত্রিকায় আমার কবিতাসহ বেশ কিছু লেখা ছেপেছে তখন। নিজেকে সামান্য বিখ্যাত মনে হচ্ছে। তাই জানতে চাইলাম না কোন মাধ্যমে সে আমার খবর পেয়েছে। বিখ্যাতদের কতজনই না চিনে।
-পত্রিকার জন্য?
-না, কোন পত্রিকার জন্য না
-তাহলে
-সেটা জেনে আপনার খুব একটা লাভ হবে না। শুনুন আপনি আমাকে কবিতা দিবেন যখন চাইবো, মানে অনেকটা বলতে পারেন একটা কাজ কিংবা চাকরী। আপনি যেভাবেই নেন। আপনার কাজ হল কবিতা লেখা। কবিতা লিখে দিবেন, পে করা হবে!
বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছি। কবিদের মাথা খুব দ্রুত কাজ করে না, দ্রুত কাজ করে গণিতের শিক্ষকদের মাথা। অনেক প্রশ্ন, অনেক ভাবনা। লোকটার কি কবিতার দোকান আছে? পাইকারি দরে আমার থেকে কিনে মোটা দামে বেচবে। না তা হবে না। আমি গরীব কৃষক হতে পারি, রক্তে কিন্তু বিদ্রোহ আছে। ভদ্রলোকের তাড়া আরেকবার প্রকাশ করলেন
-প্রেমের কবিতা হতে হবে, কত নিবেন প্রতি কবিতা?
-৫০০ টাকা
গরীবদের চাহিদা কম হয়, গত দুদিন পকেটে টাকা নেই। রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। দারোয়ান মনতাজ বড় মনের মানুষ। মাঝে মাঝেই নিজ টাকা খরচ করে আমাকে নাস্তা করায়। আজও তেমন একটা দিন। পাঁচশো টাকা বলেই লজ্জায় পড়ে গেলাম। কবিতার দাম হিসাব করা কঠিন! বেশী চেয়ে ফেললাম? না কম চেয়ে ঠকে গেলাম। এমন দ্বিধা কাটিয়ে দিলেন জিতু সাহেব
-প্রতি কবিতা এক হাজার পাবেন!
চোখ কপালে তুলতে হল। কী বলে? আমার কবিতার দাম দেখছি জীবনানন্দের কবিতার চেয়ে বেশী। হায় জীবন, জীবন দেখলে কিন্তু আনন্দ দেখলে না।
-রোমেল সাহেব, আপনার সাথে একটা চুক্তিতে আসবো। আপনাকে আমি পনেরশ টাকা দিবো প্রতি কবিতায়। চুক্তি হচ্ছে আপনি এসব কবিতা কখনো নিজের বলে দাবি করতে পারবেন না। কোথাও প্রকাশ করতে পারবেন না। ভুলে যাবেন এগুলো আপনি লিখেছেন।
আসল ঘটনা বেরিয়ে গেছে। ব্যাটা আমার কবিতা নিজের নামে চালাতে চাচ্ছে। এতক্ষন এরকম স্মার্ট জিতু সাহেবের কাছে নিজেকে তুচ্ছ লাগছিল। এইমাত্র ব্যাটার দিকে তাকিয়ে খুব করুণা হচ্ছে। আহারে! বেচারা কবিতা লিখতে পারে না!

এক ঘন্টার আলাপ, চিন্তা সবকিছু করে ভেবে দেখলাম। টাকাটা আমার প্রয়োজন। কবিতা কেন লিখি জানিনা, কবিতা লিখতে খুব বেশী কষ্টও হয় না। খুব বেশী ভালো জিনিস করতে বেশী কষ্ট হয়। তাই বিক্রি করে দিলাম না হয় অ-কষ্টের সৃষ্টি। সকালে দারোয়ান এর স্পন্সরে আর কতদিন নাস্তা করা যায়। খুব বেশী কঠিন বিষয় না, সে আগে থেকে বলে দিবে কখন কবিতা লাগবে, আমি তখন ডেলিভারী দিয়ে দিবো। ডেলিভারী মানে মেইল। অনেকটা হোমমেড খাবার বাইরে বিক্রি করার মত। দেখি ব্যবসা কতদূর যায়!


*******
সন্ধ্যায় নাগাদ ভদ্রলোকের ফোন আসলো। অর্ডার এসেছে দেড়ঘন্টার মধ্যে শহর এবং প্রেমিকা নিয়ে একটা কবিতা লিখে দিতে। রিকশা ভ্রমণের বিষয়টা যেন থাকে এটাও বলে দিলেন ফোন রাখার আগে। এটা কয়েক মিনিটের মামলা।

আমি নেমে যাবো আলো হয়ে, ল্যাম্পপোষ্টের শরীর বেয়ে
উড়ে যাবো তোমার রিকশার ছায়ার শরীর ছুঁয়ে!
পিছু নিবো পুরো পথ, দরজা আঁটকে শরীর আঁটকে ফেলবে ঠিক
আমি ল্যাম্পপোষ্ট থেকে নেমে আসা প্রেমিক আলো
যেভাবে ঢুকে সকালের পত্রিকা, সূর্য্যের আলো, গাছের ছায়া
এভাবেই ঢুকে ঘাপটি মরে থাকবো, তোমার ঘরের জানলার পর্দায়
শীতল মেঝেতে, বিছানার আঁটসাঁট বালিশে কিংবা ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়!
না, আমি কেন নীলাকে ভেবে লিখছি? এটাতো বিক্রির কবিতা! ব্যবসায় কেন প্রেমিকা আনছি। পারবো না, এটা লিখে বরং নীলাকে দিই। টাকাটা ভীষন প্রয়োজন। বন্ধু টাকা পায়, দেনায় মরি বাচি অবস্থা। নীলার জন্য বরং আরেকটা লেখা যাবে। এটা বিক্রির জন্য হোক, কিছু কবিতা বিক্রি হোক পেটের দায়ে! নিজেকে হঠাৎ পতিতা মানে হচ্ছে কেন?

রাত তিনটা, কোন বিলম্ব নেই, দৈনিকের টাকা দৈনিক পকেটে। কাল দেড় হাজার টাকা পাচ্ছি, তবুও এটা দৈনিক। খুশী লাগছে। নীলাকে জানাবো না। চমকে দিবো ভাবছিলাম। কাল বরং একটু নৌকা ভ্রমণ করে আসি। বহুদিন পানির শব্দে সাথে প্রতিযোগীতা করে চুমুর শব্দ করা হয় না। কাল বরং পানিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেয়া যাক আরেকবার।
-আজকাল আমাকে কবিতা শোনাচ্ছে না যে
-কাল কবিতা শুনাবো, ঘোর লাগা কবিতা। নেশা ধরে যাবে
-আমার নেশা চাই না, ভালো লাগা চাই, আজ কোন কবিতা লিখেনি?
-নাহ, আজ মুড ছিল না
মিথ্যা বলতে আমি অভ্যস্থ না। কিন্তু এই মিথ্যেটি বলতে ভাবতে হয়নি । আমি মোটামুটি সৎ মানুষ। মানুষের সাথে চুক্তি ঠিক রাখি। নীলা আমার সংসারে সাজানো একটি ফুল, ওর কাছে এসব জটিলতা প্রকাশ করার কোন মানে নেই।

****

নীলার ব্যস্ততার কারণে আজকে লাঞ্চ একসাথে করা হল না। নিজেই খেয়ে নিয়েছি একা একা। দিনটি ভালো যাচ্ছে। বেনসনের একটি প্যাকেট, আর তিন হাজার টাকা সকালেই চলে এসেছিল। দেড় হাজার টাকা দেয়া হয়েছে অগ্রীম। দু ঘন্টার মধ্যে আরেকটা কবিতা লিখে দিতে হবে। কবিতার বিষয় একটি ভোর এবং প্রেমিকা। এখন ভর সন্ধ্যা। আমার রিকশায় ঘুরতে ইচ্ছা করছিল। সান্ধ্যকালীন সোডিয়াম লাইটগুলোর নীচে বসে বাদাম খাবো, ল্যাম্পপোষ্ট ভৃত্যের মত আলো দিবে কেবল। নীলার ব্যস্ততা শেষ হয়েছে।
-সোডিয়াম লাইটের আলোয় বিষন্ণতা আছে তাই না?
-মোটেও না, এই যে আমার শক্ত হাত তোমার নরম হাত ধরে আছে, এতে কোন বিষণ্নতা থাকতে পারে না। সোডিয়াম লাইটের বাপের সাধ্য নাই বিষণ্নতা দেয়।
-হিহিহি, মাঝে মাঝে তোমার কথায় মুগ্ধ হই, একদিন নিশ্চয় তুমি অনেক বিখ্যাত হবে তাই না?
-ঠোঁট দিবে?
-কেন?
-বিখ্যাত হবার আগে আরো একবার অট্রোগ্রাফ দিব
-অসভ্য! আজ হবে না।
সেদিন অটোগ্রাফ হয়নি। ফোন পেয়ে আমাকেও দ্রুত বাসায় ফিরতে হয়েছে। অর্ডার এসেছে। নীলাকে সেদিন বাসায় পৌছে দেয়া হল না। মেয়েটা বড্ড ভালো। মেনে নিয়েছে। তার ঘাড়ে অবিন্যস্ত চুলে এজন্য মাঝে মাঝে দুএকটা ডুব বেশী দিতে ইচ্ছা হয়।
এবারের কবিতার বিষয় রাতের নির্জনতায় কাউকে মিস করা। বড় রসালো বিষয়। লিখে পাঠিয়ে দিলাম।

এভাবেই চলছিল। খরচের চাকা সচল হয়েছে। দেখতে দেখতে পনেরদিন হয়ে গেল, বেশ কিছু জামা কাপড় কিনে ফেলেছি। কবিতা ভালো হলে আবার বোনাসও জুটে। যেন শব্দে শব্দে টাকা। ভাবতেই ভাল্লাগছে। কীবোর্ডের শব্দে টাকা আসছে। টাকার কথা নীলাকে বলা হয়নি, বললে উৎস জানতে চেয়ে পাগল বানিয়ে ফেলবে। কিন্তু তার জন্য কেনা শাড়ীটা পেলেতো হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সাদা পাড়ের শাড়ীর সাথে নুপুর পরে ঘুরবে। এক সাথে বসে চা চক্র শেষে, কোন এক উড়াল রিকশাওয়ালার রিকশায় চেপে শহরের আয়তন মাপবো দুহাত দিয়ে।


সামান্য মন খারাপ। বিকালের ভ্রমণটুকু হয়নি। সে ভীষণ ব্যস্ত। আমিও ভীষন ব্যস্ত। টাকা লাগবে অনেক টাকা। সপ্তাহে নীলার সাথে দেখা হয় দু একদিন। চাকরীতে জয়েন করেছে। দিনের বেলা ব্যস্ত। সন্ধ্যায় দ্রুত বাসায় ফিরতে হয়। ইনকাম করা মেয়ে পেলে মধ্যবিত্ত মা বাবারা খুশী হন। মেয়ের প্রতি কেয়ার বেড়ে যায়। তাই নীলাকে খুব সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরতে হয়। পুরো নগর ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত। মনে হচ্ছে কেবল আমি না, এই শহরের কেউ ঘুমাতে পারছে না। কেউ না। একাউন্টে বেশ টাকা জমেছিল। চাকরীর বয়স এক মাসে এত টাকা আমার সার্টিফিকেট আমাকে দিত না। আজ তাই বিশ্ব হুইস্কি রাত। বন্ধুদের ডাকতে পারতাম, কিন্তু সেখানে মাতলামি হতো। একা খেয়ে নিজেকে আবিস্কার করবো। দুর্দান্ত কোন কবিতা লিখে কিছু বোনাস নিবো। নীলাকে শাড়ী দেয়া হয়নি নানা কারণে। কাল আরেকটা কিনে দুটো এক সাথে দিতে হবে। সবচে বড় কথা কাল ছুটি!
প্রতিরাতে বেলা করে ঘুমাই। তাও আজ মনে হচ্ছে রাত জাগবো, কাল ছুটির দিন। ব্যস্ত মানুষদের ছুটির দিনের রাতটা অন্যরকম হয়। কাল অবশ্যই নীলকে নিয়ে ঘুরতে হবে। বেচারীকে সময় দেয়া হয়নি এই একটা মাস। মাত্র মনে পড়লো নতুন কোন কবিতা দিইনি তাকে গত একমাস। ভীষন মিস করছি, রাত বড় ভারী। মিস করার দীর্ঘশ্বাস মাপার মেশিন থাকলে রাতের সাথে পাল্লা দিত।

একদিন এক গভীর রাতে, দীর্ঘশ্বাসের রেলগাড়ী উল্টে
পেয়ে যাবো একটি খাঁমচি,
নখের দাগের আঁচড়ে লেখা আছে জপে যাওয়া নাম
পেতে পেতে পাইনি তাকে কতদিন ,কতকাল
হিসাব রুখে দিই, ক্রমশ ঘন হয় না পাওয়া
দীর্ঘরাত হিসাবে ঘোষনা করে দিই তুমিহীনা

না হচ্ছে না, কিছুতেই হচ্ছে না। কবিতা না হলে কাগজ ছিড়ে ঘরে ফেলে দেবার নিয়ম কবিদের। কিন্তু কম্পিউটার ফেলে দেবার কোন উপায় নেই। বেকস্পেস দিই আবার লিখি। শেষ পর্যন্ত লিখলাম একটা কিছু। ভালোবাসার মানুষের জন্য কবিতা দুর্বল হলে সমস্যা নেই। হৃদয়ের কবিতাতো দুর্বল না। তরতাজা যুবকের মত সবল। হৃদয়ের কবিতা আমার মত করে রবীন্দ্রনাথও লিখেননি।

*********
ঘুমিয়েছি কখন জানিনা, কবিতাটা শেষ করতে পেরেছিলাম কিনা তাও মনে করতে পারছি না। মোবাইল হাতড়ে নীলার সাথে কথা হয়েছিল কিনা চেক করলাম। হয়নি। ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। জিতু সাহেবের ডাকে ঘুম ভেঙ্গেছে। আজ আরও বেশী ফিটফাট হয়ে আসছেন। সকালের শেভের চাকচিক্য জ্বলজ্বল করছি। মুখে গোমড়া ভাব নেই, বেশ খুশী খুশী।
-রোমেল সাহেব, খুশীর সংবাদ আছে। দারোয়ানকে বলুন নাস্তা দিতে, চাও আনতে বলুন। নাস্তা খেতে খেতে বলি। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।
লোকটা পাগল হয়ে গেল কিনা কে জানে। যাকগে মনতাজকে নাস্তার অর্ডার দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। পরোটা মুখে দিয়ে জিতু সাহেব শুরু করলেন “আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আজ সোমবার, শুক্রবার রাতে বিয়ে, আমাদের বাড়ীতেই। কাছের অল্প কিছু মানুষ থাকবে, আশা করছি আপনিও থাকবেন”
কারো কাছের মানুষের সম্মান পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের। আমার গর্ব লাগছে। গর্বে অর্ধেক পরোটা একসাথে ঢুকিয়ে দিলাম মুখে। এখন পড়েছি বিপাকে, না পারছি গিলতে, না পারছি এরকম ভদ্রলোকের সামনে বের করতে। ভদ্রলোক না থাকলে বের করে অর্ধেক করে আবার মুখে দিতাম।
-অবশ্যই থাকবো, বিয়ে খাওয়া হয় না অনেকদিন, একদম কবজি ডুবিয়ে খাবো।

জিতু সাহেব পরোটা রেখে হাত ধুয়ে চা নিলেন, সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়েই ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন ইনভাইটেশন কার্ড। অতি সুন্দর একটা জিনিস। বড়লোকদের যেমন হয় আরকি। কবিদের বিয়ের কার্ড হবে না কোনদিন। টেক্সট মেসেজে লেখা থাকবে “অমুক দিন অমুক কণ্যার সাথে আমার বিয়ে আপনি আসবেন আশা করি”। ভালো কথা জিতু সাহেবের পাত্রী দেখা দরকার। মেয়েদের সৌন্দর্য্য দেখার ভিতর একটা মজা আছে।
-ভাবী কী করে? ছবি দেখা যাবে?
-অবশ্যই! দেখুন

টাচ মোবাইল হাতড়ে তার হবু বউয়ের ছবি খুঁজছেন। আমি ততক্ষনি সিগারেট ধরিয়ে উদাস হয়ে গেলাম। দুনিয়ার সবার বিয়ে হচ্ছে। কেবল আমার আর নীলার বিয়ে হচ্ছে না।“দেখুন” জিতু সাহেবের ডাকে সম্বিত ফিরে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকালাম “নীলা”
পুরো পৃথিবীর থমকে যাবার কথা এখন, সেটাই হয়েছে। রাস্তার হর্ণও কানে আসছে না। সিগারেট টেনেই যাচ্ছি। কেন টানছি বুঝতে পারছি না। সিগারেটের স্বাদ যে পাচ্ছি তা না, তবুও অকাতরে টেনে যাচ্ছি। এভাবে সিগারেট টানে অসহায় মানুষেরা। আমি কী অসহায়? বুঝতে পারছি না। জিতু সাহেবের চোখ ট্যারা হয়ে আমাকে দেখছে, তিনিও সিগারেট টানছেন, পায়চারিই করছেন এবং আমার মত সিগারেটের স্বাদ পাচ্ছেন না। হঠাৎ থেমে গেলেন।
-রোমেল সাহেব, সাড়ে তিনবছর আগে ফিরে যান। নীলার সাথে আপনার প্রেম হয়ে গেল।
এতটুকু বলেই দম নিলেন ভদ্রলোক। আমি তখনো নির্বাক। মোবাইল খুঁজছি, নীলাকে ফোন দিতে ইচ্ছা করছে। জিতু সাহেব আবার শুরু করলেন “ আপনি যে বছর নীলাকে আপনার কবিতার ফাঁদে ফেলেছেন, ঠিক তার আড়াই বছর আগ থেকে আমি নীলার পিছনে ঘুরছি। আপনার আর আমার ফারাক হল কবিতা। আজ সাড়ে পাঁচ বছর পর আপনারই কবিতা দিয়ে তা ঘুঁচিয়ে দিলাম! দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনতে পেলাম। বাকি সব শব্দ নিজেরাই বধির হয়ে গেছে।
৪৪টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×