প্রথম পৃষ্ঠায় লেখার অধিকার পাওয়ার পর এটিই আমার প্রথম লেখা। আজকের লেখাটি প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হবে জেনে ভালো লাগছে। ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। গাউছিয়া মার্কেটের নূর ম্যানসনের নীচতলায় একটি খাবারের দোকান। দুইজন মহিলা আর একটি মেয়ে আমার পাশ দিয়ে গিয়ে ঐ দোকানটায় ঢুকলো আর দোকানি খাবার নাই বলে ওদের বিড়াল- কুকুর তাড়ানোর মত তাড়িয়ে দিল। কোন বাদ প্রতিবাদ না করে তারা দোকানের অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। দোকানে অনেকে বসে খাচ্ছে অখচ ওদের কেন তাড়িয়ে দিল? মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম ,ওদের সাজ পোষাক দেখলেই চেনা যায় ওরা সুইপার,তাই দোকানি ওদের তাড়িয়ে দিল। প্রতিবাদ করলাম, দোকানি বলল সুইপার বসলে অন্যরা প্রতিবাদ করবে আমার দোকানে খাবে না তাই আমি আমার ব্যবসার ক্ষতি দিতে পারি না। মোক্ষম যক্তি! সুতরাং কথা বাড়িয়ে লাভ নাই। এরকম খবর প্রায়ই কাগজে দেখা যায় যে-নিম্ন শেণী-পেশার মানুষদের হোটেলে বসে পান আহার করতে দেওয়া হয় না। এমনও শোনা যায় যে কলেজ ছত্রাবাসে নিম্ন শেণীর বলে আলাদা বাসনে খাবার দেওয়া হয়। সুইপাররা কি মানুষ নয়? ওরা নোংরা পরিস্খার করে আমাদেরকে পরিচ্ছন্নতা উপহার দেয়। নোংরা ঘাটলেও ওদের দেহ-মন নোংরা নয়। কারো চেয়ে কম পরিস্খার নয তারা। যারা জানেন তারা স্বীকার করবেন। আমার একবার সুইপার কলোনীতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তাদের ঝকঝকা ঘরবাড়ি ও সাজানো গোছানো পরিচ্ছন্ন আসবাব পত্র দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছিলাম। আর ওদের মন আরও বেশী পরিস্কার। চুরি, দুই নাম্বারি এসব ওরা বোঝেনা। লক্ষ টাকা পড়ে পেলেও নেবে না, দরকারে ২/৫ টাকা চেয়ে নেবে। নোংরা পরিস্কার করে বলে ওদের আমরা মানুষ মনে করি না,ওদের গায়ে নোংরা লেগে থাকে বলে সবাই মনে করে। ওদের সেবা নিতে গন্ধ লাগে না অথচ ওদের গায়ে গন্ধ লাগে। ওরা ছাড়াও আজকাল অনেকেই নোংরা পরিস্কার করার কাজ করে তাদেরকে তো আমরা ঘৃণা করি না বা আলাদা করে দেখি না। এটা কি বৈষম্য নয়, মানবাধিকারের লংঘন নয়? বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ' কুলি ও মজুর' কবিতায বলেছেন--দেখিনু সেদিন রেলে / কুলি বলে এক বাবুসাব তারে / ঠেলে দিল নীচে ফেলে / চোখ ফেটে এল জল / এমন করিয়া জগত জুড়িয়া / মার খাবে কি দুর্বল? ..... নজরুলের সময় থেকে আমরা কি একটুও এগুতে পেরছি? যাদের শ্রমে আমরা পরিচ্ছন্ন থাকি তাদের কি দিতে পারি না মানুষের অধিকার? যারা কাজ না করলে আমরা নোংরা থাকি , তাদেরকে একবার মানুষ বলে স্বীকার করে নেই না কেন? সমাজের সকলের সাথে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনে আইন তৈরী করে হলেও এসকল শ্রমজীবি মানুষদেরকে মানুষ হিসেবে মর্যদা দেওয়া উচিত আমাদের সকলের।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





