somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~ ~ নিরব কথন ~ ~

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)



মহুয়ার সাথে আমার পরিচয়টা আর যাই হোক সাধারন ছিল না । অসাধারনও ছিল না । বলা যেতে পারে ভয়াবহ ছিল । আচ্ছা কেমন লাগবে বলুন তো , যদি একটা প্রায় অচেনা অজানা একটা মেয়ে হটাত্‍ করে এসে খচ্ করে কেচি দিয়ে চুল কেটে দিয়ে বলে "বড় বড় চুল রাখে তো ছাইয়্যারা । তুমি কি ছাইয়্যা ?" মেজাজের টেম্পারেচার নিশ্টই তখন গলনাংক পেরিয়ে স্ফুটনাংকে পৌছে যাবে ! মজার ব্যাপার হলো আমার এমনটা হয়নি । আমি আসলে অবাক হয়েছিলাম । আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে আমার কি করা উচিত । এই হিরক রাজার দেশের একবিংশ শতাব্দী ভার্সনে যে আরো কতো কি দেখা লাগবে সেই চিন্তাও বোধহয় মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছিলো । আমি বুঝতে পারছিলাম যে এহেন পরিস্থিতিতে আমার রাগ করাটা স্বাভাবিক ছিল । আর যখন মেয়েটার বাম হাতে মুঠো করে ধরে রাখা চুলগুলো দেখলাম , তখন রাগের টেম্পারেচর এমন হওয়া উচিত ছিল যাতে মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকে । মহুয়া সেদিন লাল রংয়ের থ্রি পিস পরে ছিল । ব্যাপারটা তখনকার পরিস্থিতির সাথে চমত্‍কার খাপ খায় । লাল রংটা বিধ্বংসী ভাবনার প্রতিক । আগুনের সাথে কখনো আগুনের যুদ্ধ হয় না , আপনি যদি আগুনের সাথে পাল্লা দিতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে বরফ হতে হবে । তাই হয়তো আমি আশ্চর্য রকমের শান্ত ছিলাম । মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিলো রাগত ভঙ্গিমায় ।



আমি মনে মনে একটা মোক্ষম জবাব তৈরি করে কয়েকবার ইতিমধ্যে রিহার্সেলও দিয়ে ফেলেছি । রিহার্সেল করতে গিয়ে বোধহয় ঠোটের কোণে হাসির সূক্ষ রেখা ফুটে উঠেছিল । আমি হয়তো তাও বুঝতে পারতাম না , যদি মহুয়া ধমক না দিতো । "হাসছো কেন ? আমি কি হাসির কিছু বলেছি ?" রাগত গলায় বলল সে । আমি আরেকবার থমকে গিয়েছিলাম । একবার ভেবেছি মেয়েটাকে একটা কথার খোঁচা দিই । তাকে বলি যে "আপনি কার্টেসি জানেন না ? আপনাকে ঠিকমত চিনি না পর্যন্ত , অথচ আপনি আমাকে তুমি করে সম্মোধন করছেন ! আপনি কি আন্টি শ্রেণীয় নাকি ?" নিঃসন্দেহে মেয়েটার আঁতে ঘা লাগতো । ফলাফল সরূপ হয়তো ক্ষুর দিয়ে সমস্ত মাথাই ন্যাড়া করে দিত সে । আমি মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে বলেছিলাম "না মানে , কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম চুল কাটবো । নাপিত ব্যাটা বড়ই পাজি , ভালভাবে কাটতেও পারে না । আপনি কেটে দিলেন , ভাবলাম বাকিটুকুও........" এবার মহুয়ার থমকানোর পালা । রেগে গেলো সে । যতটা না আমার কথায় তার চেয়ে বেশি আমার শান্ত মুখের ভঙ্গিমায় । বৃথা আস্ফোলনে হাত ছুড়লো সে । তারপর কোন কথা না বলে ইউটার্ন নিয়ে হাটা শুরু করলো ।

মহুয়া চলে যাওয়ার পর আমি মাথায় হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলাম যে আমার চিকুর প্রবরের কতখানি ক্ষতি হয়েছে । দেখলাম যে ঠিক মাথার মাঝামাঝিতে কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে । ভাবলাম , ব্যাপার না । হকার্স মার্কেট থেকে কমদামি একটা ক্যাপ কিনে মাথায় লাগিয়ে নিলেই চলবে । সুতরাং যেই ভাবা সেই কাজ । পরদিন সবাই আমাকে মাথায় ক্যাপ পড়া অবস্থায় আবিস্কার করলো । আমি তখনও জানতাম না যে মহুয়া আমার পিছু ছাড়েনি । অতএব ক্যাফেটেরিয়ায় যখন চা খাচ্ছিলাম , কখন যেন পিছন থেকে এসে আমার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিল সে । সেই সাথে ক্যাফেটেরিয়ার সবাই একই সাথে উচ্চ লয়ে হাসির প্রেক্টিস করতে লাগলো । আমার তখন ভয়াবহ অবস্থা । আমার চুলও গেল , সাথে সাথে ক্যাপটাও শুধু শুধুই কেনা হলো । ব্যাপারটা অনেকটা আমও গেলো ছালাও গেলো টাইপ অবস্থা । জীবনে প্রথমবার মনে হলো হায় ! ঈশ্বর কেন চুলের মধ্যে নিউরন পয়দা করার সিস্টেম বন্ধ করে দিলেন ! দিলে হয়তো আজকে আমার চিকুরসমগ্র এভাবে শহীদ হতো না !


আমি চাইলাম সবার সাথে হাসিতে যোগ দিতে । কিন্তু পারলাম না । সব সময় মহান হতে যাওয়ার দরকার নেই । অথবা আপনি হতে চাইলেও প্রকৃতি , পরিবেশ আপনাকে হতে দিবে না । আমার মুখটা বোধহয় করুন দেখাচ্ছিলো । বোধহয় বলেছি কারন আমার সামনে কোন আয়না ছিল না । আর অনুমান করেছি কারন মহুয়ার হাসি হটাত্‍ই যেন ব্রেক কষে থেমে গিয়েছিল । মহুয়ার এই চুল কাহিনির জন্ম দেওয়ার পিছনে বিশাল এক ব্যাখ্যা ছিল । সংক্ষিপ্ত করে বললে সারমর্ম যা দাড়ায় তা হলো , সে শুনেছে যে আমি পত্রিকায় টুকটাক কবিতা লিখি । কথাটা মিথ্যা নয় । সে আরো শুনেছে যে আমি নাকি সবসময় নির্লিপ্ত থাকি । সে দ্বিতীয় কারনটাকে চেলেন্জ হিসেবে নিয়েছিল । অনেক সময় দ্রুত বিজয় মানুষকে শক্তিশালী করার চেয়ে দূর্বল করে দেয় । মহুয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা হয়েছিল ।


মহুয়ার সাথে কিভাবে যেন বন্ধুত্বটা হয়ে গেল আমি জানি না । হয়তো চায়ের কাপ থেকে চা ভাগাভাগি করে খাওয়া , কিংবা ক্লাস নোট শেয়ার করার মাধ্যমে ব্যাপারটার শুরু । আমি খেয়াল করিনি তেমন । সর্ম্পকটা বন্ধুত্বের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ ছিল । আমার মধ্যে প্রথম পরিবর্তনটা আমি লক্ষ্য করেছিলাম সেদিনই , যেদিন প্রথম মহুয়া শাড়ি পড়ে এসেছিল বসন্ত বরন উত্‍সবে । শাড়িটার রং ছিল হালকা হলুদ । তার চোখে ছিলো পুরু করে দেওয়া কাজল রেখা । আমি মুগ্ধ ছিলাম সেদিন । তারপর দিন যায় , রাত যায় । সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে । আমি বুঝতে পারি , আসলে সম্পর্কটা অনেক দূর পর্যন্ত ব্যাপ্তি পেয়েছে । সে এখন বন্ধুত্বের বেড়াজালে আবদ্ধ নয় । এ যেন এক সদ্য ডানা মেলে উড়তে শেখা পাখি , যে পাখি নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে চায় না । আমার অনুভূতিরা আস্তে আস্তে ফিরে আসছিল । আমি টের পাচ্ছিলাম তাদের অস্তিত্ব । হ্যা , ভালবেসেছিলাম আমি মহুয়াকে ।


(২)



তারপর কোন একদিন এক শান্ত বিকেল বেলা আমাদেরকে লেকের পাড়ে দেখা যায় । মহুয়ার অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে ছিল । সে জানতে চেয়েছিল যে একটা মাস আমি কোথায় ছিলাম । আমি তখন চুপচাপ লেকের জলে বুদবুদের খেলা দেখছিলাম । পরন্ত বিকেলে সূর্যের অপূর্ব সুন্দর রশ্মির প্রতিফলন হচ্ছিলো সেখানে । আমি উত্তর দেইনি কিছুই । মহুয়ার মুখে রাজ্যের উত্‍কন্ঠা এসে ভর করেছিল । সে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে । আমি তখনও চুপচাপ বসে ছিলাম । আকাশ হটাত্‍ করেই কালো হতে শুরু করেছিল সেদিন । আস্তে আস্তে যেন থমথমে ভাব এসে গিয়েছিল পৃথিবীর সবখানে । বৃষ্টি নেমেছিল ফোটা ফোটা । মহুয়া আমাকে একটা ছাউনির নিচে প্রায় ধমক দিয়ে নিয়ে গেল । আমার সাইনোসাইটিসের সমস্যা আছে । বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরও আসে অনেক সময় । সে এসব জানতো । আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম সেদিন । খারাপ লাগা বোধটা এতোটা সক্রিয় হয়নি আগে । মহুয়া উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করেছিল "নিরব তোর কি হয়েছে ??" আমি উত্তর দেইনি । ম্লান হেসে বলেছিলাম "মহুয়া কবিতা শুনবি ?" মহুয়া কিছু না বলে শুধু ঘাড় কাত করে সায় দিয়েছিল । আমি আবৃতি শুরু করলাম................



"ওর চিকন হাতের গাঢ় আলিঙ্গনে গলে গলে যায় আমার হাত , হিসেব পাল্টে যায়

দীঘিতে চাঁদের ছায়া পরা আর অদৃশ্য হবার মধ্যবর্তী সময়ে গাঢ় আলিঙ্গনে চিকন ক্ষোভ জমে, ওর চলে যাবার পরও ক্ষোভগুলো দুপুর রোদে রোদ পোহায় যেটুকু আবেশ আর গোধূলির প্রণয় রয়ে যায় অতৃপ্তি বাকি...

নারী, এসো তোমার কেশে খানিক কলঙ্ক মাখি ।"


আবৃতির পরও মহুয়া চুপ করে বসে ছিল । চুপচাপ ছিলাম আমিও । হয়তো অতি নিরব কথনে মত্ত ছিল দুটি মানব হৃদয় । হটাত্‍ করেই ফিক্ করে হেসে ফেলল মহুয়া । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে । এই হাসির কোন অর্থ যদিও খুঁজে পেলাম না , তবুও মুগ্ধতার বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না আমার । ভাল লাগার ক্ষুদ্র কণার ছোটাছুটি মিশে ছিল সেই হাসির মাঝে । জলতরঙ্গ ঢেউ তোলা কন্ঠে মহুয়া বলেছিল "তোর চুল কেটে দিয়েছি দেখে এই কবিতা লিখেছিস ?"বলেই আবার খিল খিল শব্দে হেসেছিল মহুয়া । ভাবাবেগ ব্যাপারটা আমার মধ্যে ছিল না । জিনিসটা পয়দা হতে যে বেশি সময় লাগে না তা সেদিন টের পেয়েছিলাম আমি । হটাত্‍ই আমার মুখ ফসকে বের হয়ে এলো "আমি তোকে ভালবাসি মহুয়া ।" মহুয়া যেন থমকে গেলো এবার । হাসি থামিয়ে গম্ভীর হয়ে গেল । প্রকৃতি আর মহুয়ার মিলটা এখানেই , ঘন ঘন রূপ বদলায় । মহুয়ার হাসি থেমে গিয়েছিল , পৃথিবীর মাঝে তাই হয়তো বৃষ্টির শব্দ আর বাতাসের শো শো শব্দ ছাড়া কোন শব্দই অবশিষ্ঠ ছিল না । লেকের পানিতে বৃষ্টি জলের উদ্দামতা আর একজোড়া চোখের দৃষ্টির মৈত্রিই হয়তো সেদিন প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল । মহুয়া বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলো না আমার দিকে । চোখ নামিয়ে নিল সে । কিন্তু আমি তার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলাম । মহুয়া হটাত্‍ মুখ তুলে তাকিয়ে বলল "আচ্ছা নিরব বল তো জীবনের রং কি ??" আমি অনেকক্ষন চুপ করে ছিলাম । জীবন শব্দটার নিগূঢ় অর্থই যেখানে স্পষ্ট নয় , তখন তার রং কেমন হতে পারে তার ধারনাটাই কখনো জন্মে নাই আমার কাছে । তবুও বললাম "আমার কাছে সাদা । কারন সাদা থেকেই সকল রংয়ের উত্‍পত্তি আবার সাদাতেই শেষ । সাদা ধরলে তোর কথাটার অনেকগুলো ধাপের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । সাদার মাঝে তুই আঁকতে পারিস । আবার সাদার মাঝেই শূন্যতা খুঁজতে পারিস । সাদার পটভূমিতেই তুই সব খুঁজে পাবি" ।


মহুয়া আবারও চুপ করে থাকে । তারপর খুব আস্তে আস্তে বলে "নিরব তুই হয়তো বলতে ভুলে গেছিস যে ঠিক সাদার অপর প্রান্তেই কালোর অস্তিত্ব । কালোর কাছে কখনও যেতে নেই । সে সব রং শুষে নেয় । মানুষ তার জীবনের দেয়াল সাদা করতে গিয়ে হটাত্‍ করেই কাল রং দিয়ে রাঙ্গিয়ে ফেলে । আমিও হয়তো সেই ভুল করা মানুষের দলে চলে গিয়েছি । হয়তো তুইই সেই পথেরই পথিক । আমার এঙ্গেজমেন্টটা হয়ে গেছে গত মাসে । তোকে বলতে পারিনি ।" মহুয়ার চোখজোড়া ছল ছল করছিল । বিষন্নতায় ছেয়ে ছিল তার কন্ঠস্বর । তাকে থামিয়ে দেওয়ার শক্তি আমার ছিল না । খুব ইচ্ছা করছিল তার হাত ধরতে । ভয়াবহ কষ্ট হচ্ছিলো । কষ্টের দাড়িপাল্লা প্রায় ছিড়ে যাচ্ছিলো তখন । বেশি কষ্টে থাকলে আমি খুব প্রিয় মানুষের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বসে থাকি । আমি একটু অবলম্বন খুঁজি । কিন্তু আমার ইচ্ছেরা কখনই এতোটা বড় রূপ নিতে পারেনি যার ফলে আমি স্বপ্ন দেখবো । তাই হয়তো তার হাত শক্ত করে ধরার সাহস হয়ে উঠেনি । সেদিন দুজনের পথ পরস্পর বিপরিতমুখি হয়ে গিয়েছিল । কেউ তাকায়নি কারো দিকে ।


আরো দুটি মাস কেটে যায় । তারপর কোন একদিন সন্ধ্যায় মহুয়ার নামে একটা চিঠি আসে । দিনটি ছিল মহুয়ার গায়ে হলুদের দিন । চিঠিটা ধিরে ধিরে খোলে সে , সেখানে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা ছিল ,



"মহুয়া
অলস দুপুরে কখনো আলো ছাঁয়ার খেলা দেখেছিস ? যদি না দেখে থাকিস তাহলে বলবো তুই অনেক অপূর্ব কিছু দেখিসনি । আলো সব সময় অন্ধকার মুছে দিতে চায় , গ্রাস করতে চায় অন্ধকার কায়াকে । আর অন্ধকার ঠিক আলোর পিছনে থেকেই আলোকে ধোঁকা দিয়ে যায় । তবুও তাদের সত্তা কিন্তু একই । হয়তো একই সূত্রে জন্মও হয় তাদের । আমি ধরে নিয়েছি আমরা দুজন আলো আধাঁরের মতো । অনেক কাছে থেকেও বহুদূরে । গত দুটি মাস প্রতিটা রাত খোলা আকাশের নিচে বিস্তৃত রাজপথে হেটেছি আমি । আমি বৃষ্টি ধারার মাঝে হেটে বেড়িয়েছি । আমি বুঝেছি এই ঘন বৃষ্টি অথবা ঘন মেঘের মাঝে তারা দেখতে পাওয়ার আকুলতা বোকামির নামান্তর । তোকে ভালবাসাটাও বোধহয় ঘন মেঘের ফাঁকে ছোট্ট তারা খোঁজার মতই একটা ব্যাপার । সেদিন তোর কন্ঠ কেন বাষ্পরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল সেটা বুঝতে পারিনি । এই অনুর্বর মস্তিস্কের কাছে ঘটনাটার ব্যাখ্যা চেয়ে হতাশ হয়েছি । তোর বলা উচিত ছিল আমাকে এটার ব্যাখ্যা । অনেক বেশিই উচিত ছিল । তোর হাত ধরতে খুব ইচ্ছে করছিল জানিস ? তোর কষ্ট হচ্ছিলো বুঝি ? আচ্ছা পাগলি শোন , তুই অনেক ভাল থাকবি । আমাকে তোর ভাল বাসা লাগবে না । তুই তোর আশেপাশের মানুষগুলোকে হুলস্থুল ভালবেসে এই অপূর্নতা পূরন করে নিস । তবুও যদি কোন দিন মনে হয় আমাকে ভালবাসা তোর খুব উচিত ছিল , সেদিন একদম কাঁদবি না । তুই কাঁদলে যে আমি ভাল থাকি না ।"



চিঠি ভারি হয়ে উঠেছে । ভারি হয়ে উঠেছে মহুয়ার চোখের পানিতে । টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছিল মেয়েটার । সে পানি কাজল কালো । চোখের কাজল ধুয়ে নিয়ে পানি গড়িয়ে নেমে যাচ্ছিলো গাল বেয়ে । হটাত্‍ কারেন্ট চলে গেলো । বাইরে জোছনার আলো অদ্ভুত শুভ্রতার চাদরে ঢেকে রেখেছে এই অবাক পৃথিবীকে । মহুয়া চোখ মুছে জানালার কাছে এগিয়ে যায় , চাঁদের আলোয় দেখতে পায় তাদের বাসার পাশে গলির মোড়ে আবছা আধাঁরে দাড়িয়ে আছে ঝাকড়া চুলওয়ালা একটা ছেলের অবয়ব । সে একমনে তাকিয়ে থাকে আকৃতিটার দিকে । হটাত্‍ই যেন নড়ে উঠে ছেলেটার মূর্তিটা । ধীরে ধীরে বাকের আড়ালে ঘন অন্ধকারে হারিয়ে যায় একসময় । অবাক চাঁদের আলোয় তখনো পৃথিবী মতোয়ারা । শুধু দুটি মানব হৃদয়ের নিরব কথনের মাঝে সেই মায়াবি আলোর কোন প্রতিফলন ঘটে না ।



কিছু কথাঃ

আমি জানি না কেন , হটাত্‍ করেই আমার পৃথিবী বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে খুব বেশি মাত্রায় । বিক্ষিপ্ত পৃথিবীর আধাঁর কোণে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি , আমার আশেপাশের মানুষগুলো । মায়ার নগরীতে , জোছনার অদ্ভুত শুভ্রতার মাঝে গা ঢাকা দিয়ে থাকা কষ্টরা মাথা তুলতে পারে না । আমার বন্ধুমহলের সবাই কেন যেন বিষন্ন । তাদেরকে শিহাব ভাইয়ের একটা উক্তি বলি "একদিন তোমার জন্য পৃথিবী সাজবে । সেদিনের অপেক্ষায় থাকো ।"



উত্‍সর্গঃ



উত্‍সর্গ অবশ্যই অবশ্যই নিরব ভাইকেই করবো । গল্পে ব্যাবহৃত কবিতা এবং চিঠির শেষ লাগটা নিরব ভাইয়ের লেখা । গল্পটা ভাল হয়নি । কখনো ভাবতেই পারি না আমার ছাইপাশ লেখাতে নিরব ভাইকে উত্‍সর্গ করবো । আজকে কিভাবে যেন করে ফেললাম । মানুষটাকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি , ভালবাসি । এই মানুষটা কিভাবে যেন এক অদ্ভুত মায়ার বাধঁনে আটকে রেখেছে অনেকগুলো মানুষকে । নিরব ভাই আপনাকে ভালবাসি । আপনাকে শুধু বলবো আপনার ছায়া , আপনার স্নেহমাখা হাত যেন আমাদের মাথার উপর থেকে কখনো সড়ে না যায় । আমরা চাই সারা জীবন অন্তরের মাঝে , আপনি এমনিভাবেই আমাদের সবাইকে মায়ার বাধঁনে আটকে রাখুন ।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডোডোরা আমার পোষ্টে এসে আমাকে ভৎসনা করেন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৬



ব্লগ এখন নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে ১/২টা পোষ্ট আসে, মৃতের মতো পড়ে থাকে, সামনের পাতা থেকে পেছনে পাতায় যায় না। তবে, আমার পোষ্টগুলো সেইদিক থেকে কিছুটা সুখী,... ...বাকিটুকু পড়ুন

৪–৫ আগস্ট : রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোশ খুলে দেওয়া রাত ও দিন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০১

৪–৫ আগস্ট : রাষ্ট্রক্ষমতার মুখোশ খুলে দেওয়া রাত ও দিন

৪ আগস্ট রাত — আশ্বাসের আড়ালে ছদ্ম-অভ্যুত্থানের নীরব নকশা
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কোটা-আন্দোলনের বিশৃঙ্খলাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যখন রাষ্ট্রজুড়ে উত্তেজনা,... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=চলো দেখি সূর্য উদয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫০


শীত কুয়াশা ফুটো করে,
সূর্য যখন উঠে নীলে
দেয় ছড়িয়ে সোনা আলো,
দেখলে মনে শান্তি মিলে।

একটি সকাল ফের পেয়ে যাই
নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচি সুখে,
পাই প্রেরণা সূর্যের কাছে
আলোর শক্তি তুলি বুকে।

দেখবে নাকি আমার সাথে
রোজ বিহানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×