টুসির ঘরের বড় জানালায় সেদিন একটা মাকড়সা এসে বসল। মা দেখেই বললেন,
- টুসি, শিগগির ওটাকে তাড়া। সেই আবার লম্বা ঝুল টুল - আমার ঘর দোর সব নোংরা করে ছাড়বে।
মা সরে যেতেই টুসি আর ওকে বাধা দিল না। মাকড়সাটা চুপ করে এসে আলমারির পেছনটায় মাথা লুকিয়ে ফেলল।
এরই মধ্যে ভালো ফলের জন্য দাদু একটা ঘড়ি দিলেন উপহারে। খুব আনন্দের সাথে টুসি ওটা দেওয়ালে লাগিয়ে নিল।
রোজ ডং ডং ঘন্টায় সে ওকে জানান দিত, টুসি এখন তোমার খেলার সময়, এখন তোমার কোচিন ক্লাস ও ছুটির দিনগুলোতেও সে একটানা বেজে চলত।
একদিন হঠাৎ চোখ পড়তে টুসি দেখে মাকড়সাটা আলমারির পেছন থেকে সরে এখন দেওয়াল ঘড়ির পেছনে জায়গা করেছে।
দু দুটো প্রিয় জিনিস এত পাশাপাশি পেয়ে টুসি খুব খুশি হল। ঘরের অনেকটা সময় এখন ওদের দেখেই কেটে যায়। মাকড়সাটা বেলা অবেলায় ঘড়ির পাশে বসে ওর সুখ দুঃখের গল্প শোনে - আবার কখনও সে বড় হাত পা গুলো দিয়ে পরিশ্রান্ত ঘড়িটির মাথা টিপে দেয়।
এসব দেখে টুসিরও খুব ভালোলাগে।
দুটো আলাদা আলাদা জীবন যেন মানে খুঁজে পেয়েছে ...
এমনই এক কোচিন বেলায় টুসির পনেরো মিনিট লেট - এই নিয়ে ঘড়ি ও মাকড়সার মধ্যে যুদ্ধ লাগে প্রায় ...
ঘড়ি দাঁত খিচিয়ে বলে,
- দেখলি তো, তোর জন্য টুসির আজ বকা খেতে হবে।
মাকড়ও ছাড়াছাড়ির পাত্রী নয়, তাই সে ঘড়ির গায়ের উপর উঠে ঝগড়া করতে শুরু করে,
- কে বলল, নিজেই সকাল থেকে কেমন ঝিমিয়ে ছিলে! আর এখন সব আমার দোষ তাইনা!
ঘড়ি যদিও মাকড়ের মন খারাপ করতে চায়না তাও দোষটা যে ওরই এ কথা সত্যি। সেই ভোর রাত থেকে যে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে এ কথা খেয়ালই নেই। ওর বড় পা-টা তখন আট এর কাঁটাটাকেই আটকে রেখেছিল।
টুসিও ঘুম চোখেতে এসব খেয়াল করতে পারেনি।
মা যদিও খুব রেগে যান। এত জরুরী ক্লাসগুলোতে একটু লেট মানে গোটা অঙ্কটাই হয়তো বুঝতে পারল না মেয়েটা। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন ঘড়িখানা এবার থেকে বসার ঘরেই থাকবে।
এ কথায় সবচেয়ে দুঃখ হল টুসির কারণ প্রিয় বন্ধুর আলাদা হওয়াটার কষ্ট একমাত্র ওরই জানা।
তাই মা-কে পাক্কা প্রমিস দিল, আজকের পর থেকে আর কখনও লেট হবেনা শুধু ঘড়ি ও মাকড় যেন আলাদা না হয়, ওর ঘরের দেওয়ালে ওদের হুটোপুটি দেখে অনেক কিছুই ভুলে থাকা যায়।
থাঙ্কস টু ঝর্না

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




