১
ওর সাথে ফেসবুকে কথা হয়- ভালো। কিন্তু ভুলেও বয়ফ্রেন্ড এর কথা জিজ্ঞাসা করিস না। কারণ বয়ফ্রেন্ডের উত্তর সে যেটাই দিক, তোর কথা বলার আগ্রহ কমে যাবে। পুরুষ মানুষের সমস্যা হল- যদি সে জানতে পারে, মেয়েটি কারো সাথে কথা বলে কিংবা কারো সাথে প্রেম করে, সে ধরেই নেবে- সে অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক করেছে তার সাথে। আর ‘না’ বললে মিথ্যা বলছে- ধরে নেবে সে। অথবা পটানোর উদ্দেশ্যে তার রূপ-লাবণ্যের অতিরিক্ত বয়ান চলতে থাকে। রফিক বলল।
আমি বললাম- শোন, প্রত্যেক ব্যর্থ প্রেমিকের উপদেশ হল- প্রেম করিস না। তুমি এমন হিংসুক ক্যান? নিজে করতে পার নি- ভালো কথা। যারা পারে, তাদের হতাশ কর ক্যান?
আমার কথাগুলো ওর পছন্দ হয়েছে বলে মনে হল। রফিক সবসময়ই হিংসার বিরোধী। এবং সে হিংসুকও না। কিন্তু এমন করছে কেন- জানিনা।
রফিক অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল। কিছু ভাবছিল হয়তোবা। কারণ একজন সাধারণ গল্প লিখিয়ে হিসেবে রফিকের মনে ভাবনা বলে দেয়াটা অতিরিক্ত হয়ে যায়। তবে আমি তার ভাবনা নিয়ে ভাবছিলাম। হঠাৎ বলে উঠল- এমন করি ক্যান, জানিস? তোর এমনটি ঘটলে তুইও আমার মত হয়ে যাবি। বেশ জোর দিয়েই বলল। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলেও বললাম- ‘তোমার মত অবস্থা হবে’ দ্বারা কী বুঝাচ্ছ? এভাবে ঝিমায়ে বেড়াব? কক্ষনো না।
“এটা পড়” বলে কাঠের শো-কেস থেকে পুরাতন একটা ডাইরী বের করে হাতে দিল। খুব বেশি দিন আগের ডাইরি নয়- এটা মলাট দেখেই বোঝা যায়। এটা বোঝার আরো সহজ উপায় হল- কোন সালের ক্যালেন্ডার আছে ভিতরে সেটা দেখা।
কারো সামনে বসে পড়ার মত মনযোগ আমার নাই। ভাবলাম- সামনে দু-একটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বাসায় পড়ার জন্য নিয়ে যাব। কিন্তু প্রথম লাইনটা সাতাশ বছরের একটা যুবককে আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। পড়া শুরু করলাম। পৃষ্ঠা উল্টানো মানেই অনেক কিছু মিস হয়ে যাওয়া।
২
বাসাতে ঢুকেই দেখি অধোরার জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে আদর করছে ললাট। অধোরা হাসতে হাসতে গলে পড়ছে। ললাট দু-হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরছে। আমাকে দেখেই ললাট পাশ কেটে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম সামনে।
মাথার মধ্যে কী হল- জানিনা। আমি নিজের চোখ-কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চোখের সামনে বোনকে নিয়ে যৌনতার সুখ পাচ্ছে, আমার বোনও পাচ্ছে বলেই মনে হল- কিন্তু আমি বেপরোয়া হয়ে উঠলাম।
বাসাতে মা নেই। হাসপাতালে দাদিকে নিয়ে গেছে। আমি গিয়েছিলাম- অফিসে। আজ তাড়াতাড়িই চলে আসা হল। আজ জীবনের একমাত্র দিন, যেদিন আগে ছুটি পেয়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর মানুষ মনে হয়েছিল।
সারারাত ভাবলাম। আমার কী করা উচিৎ- বুঝে উঠতে পারছি না। মাকে বলব নাকি বাবাকে। নাকি নিজেই একটা ব্যবস্থা নেব। কোন সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতে পারছিলাম না। সারারাত বিছানায় গড়াগড়ি করলাম। মনে হল- ললাটকে বটি দিয়ে একটা কোপ দিলেই সে শেষ হয়ে যাবে। পরের ঘরের মেয়েকে তার ঘরে গিয়ে উত্যক্ত করা অনেক বড় অপরাধ। কিন্তু দু-রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিল আমার ভেতরেই।
প্রথমত, অধোরাকে উত্যক্ত করেছে- কথাটা সঠিক মনে হচ্ছে না। কারণ যখন সে স্তন চাপছিল, সুখ ছড়িয়ে পড়ছিল ওর চেহারায়। তাছাড়া সে বাধা দেয়নি একবারের জন্যেই। সবচেয়ে বড় কথা হল- ঘটনাটা আমার ঘরেই। অর্থাৎ অধোরার বাড়িতে। নিশ্চয় অধোরা আসতে না বললে এই ঘেরা বাড়িতে আসার সাহস সে পাবে না।
দ্বিতীয়ত, শারমিন এর কথা মনে পড়ল। ললাটকে শাস্তি দেয়াটা যৌক্তিক। কিন্তু নিজেকে মাফ করব কীভাবে- জানিনা।
শারমিনের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল মানিকের বিয়েতে। ও এসেছিল ওর মায়ের সাথে। অনেক মেয়েই ছিল সেখানে। কিন্তু সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের সময় খুব নেচেছিল শারমিন। নাচ ভালো লেগেছিল। ভালো লেগেছিল তাকেও। ফোন নাম্বার নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। ফেসবুকে তাকে খুজে পেয়েছিলাম। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ম্যাসেজ করেছিলাম। সে এ্যাক্সেপ্ট করলে কথা বলা শুরু করি। একদিন বলেই দিলাম- তোমাকে ভালো লাগে।
সে খুশি হয়েছিল বোধ হয়। বলল- অনেকেই বলে। তাছাড়া মেয়েদের সুন্দর লাগাই স্বাভাবিক। কারণ, মেয়েদের কে আপনাদের স্বাদ-আহ্লাদের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। আপনারা।
আমি বলেছিলাম- এটা সত্য বলছ না। কিছু মানুষ যা বলে, সেটা দিয়ে সবাইকে বিচার করতে পার না।
প্রতিদিনই কথা হত তার সাথে। একদিন দোস্ত বলে ফেললাম। গ্রামের মেয়ে হলেও শহরে থেকে মানুষ। তাই মাইন্ড করেনি। খুব সহজভাবেই নিয়েছিল ব্যাপারটা। এখনকার মত হরহামেশায় মেয়েদের দোস্ত বলার রেওয়াজ তখনো খুব বেশি চালু হয়নি।
কী করছে- জানতে চাইলাম। বলল- শুয়ে আছি। একটা সেলফি চাইলাম। বন্ধুদের সাথে তোলা আগের একটা ফটো দিল। আরেকটা সিঙ্গেল ফটোর কথা বললাম। কেন জানি মনে হত- গ্রুপ ফটোতে ওকে মানায় না। অথবা অন্য ছেলেদের সাথে সে ছবি তুলুক- এটা মন থেকে কখনোই চাইতে পারিনি।
‘না না’ করেও একটা সিঙ্গেল ফটো দিল। কিন্তু সেটা কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে তোলা। আমার মনে হল- আনুষ্ঠানিক ছবিগুলো অন্য মানুষকে দেখানোর জন্য। আমার জন্য মেকাপ আর অতিরিক্ত পোজ ছাড়া ছবিগুলো।
সে কোনভাবেই রাজি না। আমি সেন্ডু গেঞ্জি পরা একটা ছবি তুলে পাঠালাম। আর বললাম- প্লিজ এবার দাও। সে দিয়েছিল। সেলফি। চেয়ারে বসে পড়ছে- এমন পোজ দিয়ে তোলা।
আমি বললাম- তুমি না শুয়ে আছ। তাইলে বসে থাকা ছবি দিলা ক্যান?
সে বিরক্ত হয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু একটু পরেই শুয়ে তোলা একটা ছবি দিল। আমি আবার বায়না করলাম- ছবিটা আরেকটু সামনে থেকে তোল। আর আামকে ছবি পাঠাতে হলেও ওড়না গায়ে রাখতেই হবে? এখনো সেকেলে কেন তুমি? যত্তসব। সবজায়গায় ফরমালিটি।
এটা বলার উদ্দেশ্য ছিল। আমি মেয়েদের সাথে ফেসবুকে কথা বললেই অন্যরকম ইমোশনাল হয়ে পড়ি। যে ছবিটা সে পাঠিয়েছে- সেখানে তার গলা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। আর ওড়না ছাড়া যে ছবিটা তুলেছে- সেটা বুঝতে পারছি। যেহেুতু ওড়না ছাড়াই তুলেছে- আরেকটু নিচ থেকে তুলতে আমার অনেক পাওনা পেয়ে যাই- মনে হয়েছিল। সে দেয়নি। অনেক অনুরোধেও সে দেয়নি। বলেছে- এত ব্যক্তিগত ছবি সে কখনোই তুলেনি। তুলবেও না।
সে তখন শহরে মেসে থাকতে শুরু করেছে। বললাম- ভোরে নামাজ পড়তে পার?
- উহু
- কেন?
- জাগতে পারিনা।
- আচ্ছা। নাম্বার দাও। আমি ডেকে দেব।
নাম্বার দিল। সে ভাবেনি- ভোরে ডাকব। ডাকতে শুরু করলাম। নামাজের পর প্রতিদিনই ফেসবুকে ৮টা ৯টা পর্যন্ত থাকতে শুরু করলাম। দু-জনেই গল্প করি।
- ওড়না ছাড়া ছবিগুলো সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে। তোমার যৌবন ঢেকে রাখলে পিচ্চির মত লাগে।
সে বললÑ ওড়না ছাড়া ছবি তুমি কোথায় দেখলে?
- দেখিনি। ধারণা করেছি। স্বপ্নে কল্পনা করেছি।
তারপর সেদিন ওড়না ছাড়া ছবি পাঠালো। অনেক সুন্দর লেগেছিল তাকে। কিন্তু মনে হল- ওর কাছে আমার এখন দাবীর সম্পর্ক। অনেক কিছু চাইতে শুরু করলাম। প্রথম প্রথম রান্না করা খাবার খেলাম। কলেজের মাঠে ও নিয়ে আসত। খেতে চাইতাম না ইচ্ছা করে। সে খাইয়ে দিত।
- তোমার মুখ থেকে খাবার না দিলে খাব না।
এটা বলেই গোমড়া মুখ করে বসে থাকলাম। ‘প্লিজ না। মানুষ খারাপ ভাববে। এভাবে খেলে তোমার পেটে অসুখ করবে।’ অনেক বোঝাল।
যে বোঝেনা, তাকে বোঝানো সহজ। কিন্তু যে না বোঝার ভান করে, তাকে বোঝানোর সাধ্য পৃথিবীর কারো নাই। আমাকে বোঝাতে না পেরে সে রেগে খাবার ফেলে চলেই গেল।
কিন্তু তার পরের দিন এসে নিজে থেকেই মুখে খাবার নিয়ে আমার মুখে দিল। খেলাম। প্রথমের দিকে অরুচি লাগত। তারপর যেদিন প্রথম ঠোঁট রাখি ওর ঠোঁটে, সেদিন ওর ঠোটের রশের সুবাস পেয়েছিলাম। তারপর থেকে ওর মুখের সবকিছুই অনায়াসে খেতে পারি।
এভাবে আমাদের দিন যাচ্ছিল। কলেজের মাঠে বসতে আর ভালো লাগে না।
- শারমিন, কলেজের মাঠে এতো মানুষ গিজগিজ করে। তোমার সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলতেই পারিনা।
- তাহলে কোথায় যাবা?
- চল, পার্কে যাই। তাহলে এত প্যাচাল থাকবে না।
আমাদের খাওয়া-দাওয়া আর গল্প পার্কেই হচ্ছে। সপ্তাহে দুই-তিন দিন অনায়াসে দেখা করি। কিন্তু এত গল্প কোথায় পাব? নজর যেতে শুরু করল অন্য দিকে। গালে গাল লাগিয়ে বসে থাকলে তৃপ্তি পাই। ঠোঁটে ঠোঁট রাখলে আরো বেশি তৃপ্তি।
বর্ষার এক দিনে পার্কেই বৃষ্টি শুরু হল। ছাতা মাত্র একটা। আমার কাছে ছিল। সেটা মাথার উপরে রেখে বেঞ্চে বসে থাকলাম। বৃষ্টির ঝাপটা বেশি হলে ছাতাটা নিচে নামিয়ে নিজেদের ঢেকে নিচ্ছি পুরোপুরি। ‘জান তোমাকে খুব মায়াবি লাগছে।’ আমি বললাম। ও ঠোঁট জোড়া নিয়ে আসছে আমার ঠোঁটের কাছে। বসিয়ে দিল। কতক্ষণ ঠোঁট আমার ঠোঁটে ছিল- জানিনা। তবে অনন্তকাল থাকলেও ক্লান্তির রেশও আমার কাছে আসতে পারত না। ঠোঁট আমার ঠোঁটেই ছিল- আমি ওর জামার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলাম।
ঠোঁট ছাড়িয়ে নিল। ছাতা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করল। ও ভিজে যাচ্ছে।
অনেকদিন ও যোগাযোগ রেখেছিল না। অনেকবার সরি বলায় ওর মনটা নরম হয়েছিল। এরপর অনেকদিন গাছের গুড়ির উপর জড়িয়ে বসে থেকেছি। ওর বুক আর আমার বুকের মাঝে শুধু পাতলা দুটি কাপড়ের আস্তরণ। একটি শার্ট আর একটি কামিজ।
ওর শরীরের তিলগুলো অনেকবার গুনেছি। একবারও হিসাব ভুল হয়নি।
হয়তোবা সেও গুনেছে।
অধোরার মুখটা ভেসে উঠছে শারমিনের জায়গায়। শারমিন অধোরা হয়ে যাচ্ছে।
জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। নিশ্চয় ললাট অনেকবার প্ররোচনা দিয়েছে। কিন্তু আমিই তো ললাট। আমার মধ্যেই ললাট লুকিয়ে আছে।
তা’ই ললাটকে শাস্তি দিতে হলে আগে আমাকে শাস্তি দিতে হবে। এজন্য বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। এ ছাড়া কোন উপায় ছিল কি?
সকালে রান্না করতে দেখি অধোরাকে। ওর হাতের রান্না খাব? আমি? এটা মেনে নিতে পারলাম না।
রান্নাঘরে গেলাম। মা নেই। কেউ নেই। শুধু অধোরা আর একটা বটি আছে। বটিটা দিয়ে একটা কোপ দিলাম ওর গলার ওপর। শব্দ বের হওয়ার রাস্তাটাই শেষ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। আরেকটি কোপ দিলাম ওর বুকের উপর। দু-টি স্তন দু-টুকরা হয়ে পাশেই পড়ে থাকল। আমি বেরিয়ে গেলাম।
রাতে বাসায় আসতেই মা আছড়ে পড়ল আমার বুকের উপর। কাঁদতে থাকল অনেকক্ষণ ধরে। ‘বাবারে, আমার অধোরা শেষ। আমি শেষ।’
বিকেলেই ললাট গ্রেপতার হয়েছিল। স্তনের উপর লোভ থাকলে ওরই ছিল। বুঝলাম- মাও জানত ললাটের কথা।
৩
ডাইরি বন্ধ করলাম। কোন শব্দ আসছে না আমার কণ্ঠে। অনেক কষ্টে জিজ্ঞাসা করলাম- ১৭ তারিখে ওর ফাঁশি হল যে।
- হুম, হলই তো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৪৭