somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙ্গালির আত্মপরিচয়

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বাঙ্গালির আত্মপরিচয়
পৃথিবীতে আজ বাঙালির সংখ্যা কত?
প্রায় ৩০-৩৫ কোটি তো হবেই। হুন চীনাদের পরে ২য় বৃহত্তম জাতিস্বত্বা! কতজন বাঙালি জানে এটা?
উপমহাদেশের ২০-২৫ টি মেজর জাতির মাঝে একমাত্র বাঙালিরই একটি রাষ্ট্র রয়েছে। কতজন খেয়াল করেছেন এটা? আজকে আপনাদের একটা গল্প বলবো। ঠিক গল্প না।
নিজের আত্মপরিচয়ের বাস্তব গল্প।
২) আপনাদের কারো মনে কী কোনো দিন একটা প্রশ্ন উঠেছে যে, জাতি হিসেবে আমাদের বাঙালি বলা হয় কেনো? এর শুরুটা কীভাবে?
-চলুন সেটাই বলা যাক।
চলে যাই সুদূর অতীতে, যখন ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটেছে কয়েকশ বছর হয়ে গেছে। উত্তর ভারত দিয়ে প্রবেশ করে ওরা একে একে সব অঞ্চল জয় করে নিচ্ছিল। ফলত, দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী ক্রমশ ভারতের দক্ষিণে সরে যেতে লাগলো। [এই বিষয়টা খেয়াল করলে আজও উপলব্ধি করতে পারবেন। দক্ষিণ ভারতের মানুষগুলো, উত্তর ভারতীয়দের তুলনায় কিছুটা ডার্ক হয়।] সেসময় ভারতের পূর্ব অঞ্চল জয়ের প্রচেষ্টাও তারা চালাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই পারছিল না।
সেজন্য ওরা নানা উপায়ে এই অঞ্চলের মানুষদের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছিল।
যেমনঃ কোনো আর্য সন্তান এই ভূমিতে পা রাখলে তার জাত যেতো। ওরা আমাদের বলতো 'বয়াংশি' অর্থাৎ এই অঞ্চলের(বঙ্গ) মানুষজনের পা পাখির মত সরু এবং এরা পাখির মত কিচিরমিচির করে।
এই 'বয়াংশি' শব্দটা সর্বপ্রথম পাওয়া যায় ঐতরেয় আরণ্যক নামক গ্রন্থে এবং শব্দটা থেকে ক্রমে ক্রমে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি।- ১ম মতবাদ অনুযায়ী।
২য় মতবাদ অনুযায়ী, বং নামক একটি ট্রাইবের থেকে বঙ্গ শব্দের উৎপত্তি।
তবে, বলে রাখি 'বঙ্গ' বলতে আজ আপনি যা বুঝেন অতীতে তেমন ছিল না। নিচের ম্যাপটা দেখুন। তখন বঙ্গ বলতে সেটুকুই বুঝাত।
বাংলার প্রথম সার্বভৌম নৃপতি শশাঙ্ক বাংলার ক্ষমতায় আরোহন করার আগে এই বাংলা অনেকগুলো জনপদে বিভক্ত ছিল। যেমনঃ বঙ্গ, সমতট (কুমিল্লা সমতটে ছিল। আর সমতটের রাজধানী ছিল দেবীদ্বারের বরকামতা), হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ, গৌড়, রাঢ়.........
(মহাভারতে আমরা পুন্ড্ররাজ ও বঙ্গরাজের উপস্থিতি দেখতে পাই)।
এই ছোটো ছোটো অঞ্চলগুলোকে এক করে শশাঙ্ক নামকরণ করেন 'গৌড়'। যার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
এবং তিনি 'গৌড়াধিপতি' উপাধি নিয়েছিলে। তাঁর পর মৎসন্যায়,পাল যুগ, সেন যুগ এবং ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের আমল অব্ধি সমগ্র বাংলায় গৌড় নামটি প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এই বিশাল সময় গৌড় নামটি রাষ্ট্রীয় ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার দরুন আধুনিক যুগ অব্ধি ছিল। উদাহরণঃ রাজা রামমোহন রায় বাংলায় রচিত বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ'। অর্থাৎ তিনি বাংলা ভাষাকে গৌড়ীয় ভাষা বলেছেন।
ফফখরুদ্দীন মোবারক শাহের পর কী এমন ঘটলো যে আমরা গৌড়ীয়, সমতটী, রাঢ়ী, হরিকেলী না হয়ে বাঙালি হলাম?
এর নেপথ্যে রয়েছেন সুলতান শামস-উদ্দিন ইলিয়াস শাহ। তিনিই প্রথম বাংলার সবগুলো জনপদ কে এক করে নাম রাখেন 'বাঙ্গালাহ' এবং মানুষজন 'বাঙ্গালী' হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর আমলে দিল্লির সেনাকে বলা হতো মুসলমান সেনা, আর তাঁর সেনা কে বলা হতো বাঙ্গালী সেনা। তিনি নিজেও পরিচিত ছিলেন 'শাহী বাঙ্গালী' নামে।
এই কারণেই তিনি বাঙালির ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ পঠন এবং চর্চায় তিনি সবসময়ই আলোচিত হয়ে থাকেন।

সূত্রঃ
১) বাঙ্গালার ইতিহাস
-রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
২) বাংলাদেশের ইতিহাস
- রমেশচন্দ্র মজুমদার
মূল লেখক ::: জাহিদুল হক অমি
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩
১৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×