আমি খুজতে বেরিয়ে ছিলাম আসলে নূপুর শর্মা নবী হযরত মুহাম্মদ সা: কে নিয়ে ঠিক কি বাক্য ব্যবহার করেছিল , যেটাকে বলা হচ্ছে কটুক্তি এবং কিসের প্রেক্ষিতে এমন শব্দ ব্যবহার করেছিল তিনি। মূল ভিডিও টি শরিয়ে নেওয়া হয়েছে ওয়েব সাইট থেকে। যারা মূল ভিডিওটা দেখেছে , তাদের কয়েক জনের সাথে কথা বলে , যা জানতে পাই সেটা নিম্ম রুপ ।
গত কিছু দিন পূর্বে Zee News এর এক প্রোগ্রামে নুপুর শর্মাকে আমন্ত্রণ করা হয়! উক্ত অনুষ্ঠানে হিন্দুদের হয়ে উপস্থাপনা করছিলেন মহন্ত মহারাজ, মুসলিম স্কলার ছিল দুই জন, কংগ্রেসের একজন, এবং সর্বশেষ বিজেপির প্রতিনিধি ছিলেন নুপূর শর্মা!
টক শোয়ের আলোচ্য বিষয় ছিল - কাশী জ্ঞানব্যাপী "মসজিদ না মন্দির"!
আলোচনা তর্কের এক পর্যায়ে দুই মুসলিম স্কলার বিভৎস ভাবে রেগে গিয়ে আলোচনার বাইরে গিয়ে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন দেব-দেবী নিয়ে অশ্রব্য কটুবাক্য করতে থাকেন, যেগুলো ছিল শিব লিংগ নিয়ে কটুক্তি এবং কৃষ্ণ লিলা নিয়ে কটুক্তি যেটা শ্রী কৃষ্ণের নারী সম্ভোগ সংক্রান্ত কটুক্তি ---এর পরিপেক্ষিতে নুপুর শর্মা বলেছে তোমাদের নবী ৬ বৎসর বয়সের আয়েশার সাথে পেয়ার করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি
--
এখানে দেখা যাচ্ছে দুইজন মুসলমান নেতা প্রথমে শিব লিংগ এবং কৃষ্ণলিলা নিয়ে কটুক্তি করে ---- এখন অবাক করার বিষয় এই বিষয় নিয়ে কোন হিন্দু বা বিজেপি বা অন্য কোন হিন্দু সংগঠনের কোন মাথা ব্যথা নেই , কোন প্রতিবাদ নেই এবং মুসলমান ২ জন নেতাকে বিচারের কোন দাবি নেই । ২ জন মুসলমান নেতার দেবদেবি নিয়ে কটুকথার পরিপ্রেক্ষিত নূপুর শর্মার পাল্টা উত্তর নিয়ে গোটা দুনিয়া মাতিয়ে দিয়েছে , আমাদের মমিন মুসলমানরা। কারন এইভাবে প্রতিবাদ করার নির্দেশ তো হাদিসে আছে ।
এবার দেখি নূপুর শর্মার কথার ভুল কোনখানে, যেটা নিয়ে মমিনদের আপত্তি -- সেটা হোল সে বলেছে-- মহা নবী সা: ৬ বৎসরের মেয়ের সাথে পেয়ার করেছে । এখানে পেয়ার শব্দটি আপত্তিকর এবং এটাই হোল সেই কটুক্তি । যদি নূপুর শাদী শব্দটা ব্যবহার কোরতো তাহোলে কটুক্তি হোত না । নবী সা: পেয়ার করেছে বা প্রেম করেছে -- এই কথা বলে তার সম্পর্কে কটুক্তি করা হয়েছে । তিনি পেয়ার করেন নি তিনি করেছেন শাদী । তার মানে শাদী শব্দটির বদলে পেয়ার শব্দটা ব্যবহার করা হোল কটুক্তি ।
এখানে আরেকটা ঘটনাকে খুব বিস্ময়কর লাগছে কেন বিজেপি বা হিন্দু সংঘগুলো প্রথমে মুসলমান ২ জননেতার কটুক্তি গুলো হাইলাইট করছে না ।
এখানে যদি ইসলামিক পয়েন্ট অব ভিউতে দেখি --- প্রথমে মুসলমান ২ জন নেতা সুরা আনামের ১০৮ আয়াত লংঘন করেছে এবং সাথে সাথে তার উত্তর পেয়েছে, যেটা ঐ আয়াতেই লিখা আছে ---
৬--১০৮ তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কটুক্তি বা বিদ্রুপ মোকাবেলা করার জন্য পবিত্র কোরান শরিফে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে -- সেই কোরানের নির্দেশ হুবুহু হিন্দুরা অনুসরণ করেছে -- তাদের দেব দেবি গালাগালি করার প্রসংগে । দেখুন কোরেনর আয়াত কি বলে --
সুরা মোজ্জামেল ( ৭৩--১0 ) কাফেররা যা বলে, তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং সুন্দরভাবে তাদেরকে পরিহার করে চলুন।
সুরা নিসা আয়াত ১৪0- আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রুপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
সুরা আল আনাম ( ৬--৬৮)
যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহ নিয়ে উপহাস করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভূলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না।
সুরা আহযাব ( ৩৩ -৪৮)
আপনি কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করবেন না এবং তাদের উৎপীড়ন উপেক্ষা করুন ও আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ কার্যনিবার্হীরূপে যথেষ্ট।
সুরা ক্কাফ (৫০-- ৩৯) অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন। --
আপানার নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন উপরের কোরানের আয়াত গুলোতে ইগনোর করা, চুপ থাকা, কোন প্রতিক্রীয়া না দেখানো বা পাত্তা না দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে ।
সুরা আহযাব (৩৩-৫৭) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। --- এই আয়াতে শাস্তি দানকারি স্বং আল্লাহ তালা কোন মানুষ নহে ।
দেখুন সুরা হিজরে আয়াত ৯৫ তে আল্লাহ কি বোলছেন -- বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট"----- সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ঠ করে বলেছে বিদ্রুপকারীদের আল্লাহ নিজে শাস্তি দিবেন ।
বিদ্রুপ মোকাবেলায় হিন্দুরা যে পন্থা অনুসরন করেছে -- সেটাই কোরানে উপদেশ ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এবার দেখি আমাদের মুসলমানরা অনুসরন করেছে কিসের নির্দেশ --- জী হ্যা তারা কোরান নহে , অনুসরন করছে হাদিসের নির্দেশ । কোরানের বাণী এখানে অসহায় কেউ বা কোন মমিন তাকে গ্রাহ্য করে না , সবাই মানে হাদিস --- এবার দেখুন কিছু হাদিস ------
(১) আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (সা.) এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিককে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত।
(২) হজরত ইকরামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আলী (রা.)-এর খিদমতে কয়েকজন জিনদিককে (ধর্মদ্রোহী) উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ খবর হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতাম না। রাসুল (সা.)-এর নিষেধ থাকার কারণে। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিও না। তবে অবশ্যই আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করবে তাকে হত্যা করো। (বোখারি, জামউল ফাওয়ায়েদ ১/৪৮৪)
জিনদিক ওই সব মোনাফেককে বলা হয়, যারা রাসুল (সা.)-এর জামানার পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত ওপরে ওপরে নিজেকে মুসলমান প্রকাশ করবে; কিন্তু তার অন্তরে থাকবে না ইমানের লেশমাত্র।
(৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)
(৪) মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওমর (রা.)-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসুল (সা.)-কে গালি দিয়েছে। হজরত ওমর (রা.) তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (আসসারিমুল মাসলুল-৪/৪১৯)
(৫) আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব ওই ব্যক্তি, যে ইমান আনার পর কুফরি করে। (কানজুল উম্মাল-১/২৩)
(৬) ওই জাতির ওপর আল্লাহর গজব অবতীর্ণ হোক, যারা রাসুল (সা.)-এর চেহারা মোবারককে আহত করে। (কানজুল উম্মাল ৫/২৬২)
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অপরাধ সত্ত্বে ও এ অপরাধের জাগতিক কোন শাস্তির বিধান নেই বরং মানুষ যাদেরকে আল্লাহতায়ালার সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে তাদেরকে পর্যন্ত মন্দ বলতে বা গালমন্দ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন।
ধর্মঅবমাননার ধৃষ্টতার আরেকটি উদাহরণ দেখুন- পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন- ‘তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং এরা বলত, আমরা কি এক উন্মাদ কবির কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?’ (সুরা সাফফাত: ৩৬) এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হলো, সবচেয়ে সম্মানিত, নবীকূল শিরোমণি, খাতামান্নাবেঈন রাসুলকে (সা.) ধৃষ্টরা ‘উন্মাদ’ বলার আস্পর্ধা দেখিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে আল্লাহপাক কোন জাগতিক শাস্তি প্রদানের বিধানের উল্লেখ করেননি।
বিশ্বনবীর (সা.) বিরুদ্ধে কাফেররা বিভিন্ন সময় কটূক্তি করতো (নাউযুবিল্লাহ)। এ সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ আছে যে, ‘এরা বিস্ময়বোধ করছে যে, এদেরই নিকট এদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী এসেছে এবং কাফেররা বলে, ‘এ তো এক জাদুকর, মিথ্যাবাদী।’ (সুরা সাদ: ০৪) এর কয়েক আয়াত পরেই আল্লাহতায়ালা আদেশ দিয়ে বলছেন-‘এরা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর। আর প্রবল শক্তির অধিকারী আমাদের বান্দা দাউদকে স্মরণ কর। নিশ্চয় সে আল্লাহর দিকে সব সময় বিনত থাকতো।’ (সুরা সাদ: ১৭)
লক্ষ্য করুন, উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কাফেররা মহানবীকে (সা.) উন্মাদ এবং যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি (নাউযুবিল্লাহ) বলা সত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা তাদের বিরুদ্ধে জাগতিক কোন শাস্তির কথা উল্লেখ করেননি। এছাড়া পূর্বের নবীদের (আ.) ক্ষেত্রেও আল্লাহপাকের একই আদেশ ছিলো।
মূলত রাসুল অবমাননার কাজটি এমন গর্হিত এক অপরাধ যার শাস্তি আল্লাহ স্বয়ং নিজ হাতে রেখেছেন আর অপর দিকে তিনি তার রাসুলকে ধৈর্য ও উপদেশ প্রদানের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
গালাগালি শুরু করলো মুসলমান ২ জন নেতা --- তার উত্তরে নূপুর শর্মা শাদী না বলে পেয়ার বলায় উতপ্ত হয়ে উঠলো মুসলমানবৃন্দ কিন্তু হিন্দুদের তাদের দেবদেবিকে কটুক্তি করা নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই । কোন দাবি নেই ঐ ২ জন মুসলমান নেতার শাস্তির ।
হিন্দুরা অনুসরন করে কোরানের বাণী এবং মুসলমানদের কাছে কোরানের বাণী অসহায় , সবখানে হাদিসের জয় জয়কার ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২২ ভোর ৪:৫২