রাজনৈতিক সংকট ও উত্তেজনা তৈরী হলেই দেশজুড়ে নিরাপত্তার নামে শুরু হয় নাগরিক দূর্ভোগ। প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নারিকদের নিরাপত্তা দিতেই পথে পথে তল্লাশি গণপরিবহন নিয়ন্ত্রন শুরু হয়। হেটে যাওয়া পথচারি থেকে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীদের উপর চালানো হয় তল্লাশী। নিরাপত্তাব্যবস্থার কড়াকড়িতে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়। অতিতের সব সরকারের সময়ে এধরনের হয়রানি হতে হয়েছে জনগনকে। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বরাবরই বলে আসছেন, বিরোধীদল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে রাস্তায় নামার চেষ্টা করছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে নাগরিকদের চরম এ হয়রানি থেকে বের হওয়ার কোন পথ থাকে না। গতকালও একই ভাবে রাজধানীর পথে পথে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারন মানুষকে।
এর আগে গত বিএনপি দলীয় সরকারে সময় একইভাবে নিরাপত্তার কড়াকড়িতে চরম দূভোগের শিকার হতে হয়েছিল সাধারন জনগনকে। এমনকি ২০০৬ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি শুধু রাজধানীতে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৮ হাজার মানুষকে। সে গ্রেফতার অভিযানের সময় হয়রানির শিকার হয়েছিল অসংখ্য নারী পুরুষ। ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিল আওয়ামীলিগের ট্রাম কার্ড আন্দোলনের সময় একই কায়দায় নিরাপত্তার নামে জন হয়রানি চালানো হয়। ২৯ এপ্রিল এক রাতে ঢাকার প্রবেশ মুখ থেকে গ্রেফতার করা হয় দেড় হাজারের অধিক মানুষকে। সেখানে এক হাজারের অধিক ছিল সাধারন পথচারি।
এরশাদের আমলে আন্দোলন প্রতিহত করতে রাতের পর রাত রাজধানীতে কারফিউ এর নামে গন গ্রেফতার ও জন হয়রানি চালানো হয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন গুলোতে রাজধানীর গন পরিবহন সরকারিভাবে অলিখিত নির্দেশেই চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে সামরিক শাষন অবস্থায় থাকায় পরিবহন মালিকরা বাদ্য হয়ে সরকারের অলিখিত নিদের্শ পালন করে। যে কোন আন্দোলনে এরশাদ তার প্রসাশনের পাশাপালি পরিবহন মালিকদের ব্যবহার করে আন্দোলন প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়েছে। জন নিরাপত্তা দিতে দিয়ে বরাবরই সব সরকার সরকারি ভাবে জন দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। পথে পথে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারন মানুষদের।
বিএনপিসহ ১৮ দলের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক সংকটে রাজধানীজুড়ে চরম উত্তাপ-উত্তেজনা বিরাজ করছে। একই সাথে নাগরিক নিরাপত্তার নামে সৃষ্টি হয়েছে নাগরিক র্দূভোগ। ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো প্রকার যানবাহন। রাজধানী জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলেছে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানী। পথচারীদের পরিচয়পত্র দেখে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু রাজধানীতে পর্যাপ্ত গনপরিবহন চলতে না দেয়া দূভোগের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সতর্ক অবস্থান নিয়ে পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করছেন। ঢাকার সবগুলো প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকা রোডে শতশত মানুষের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখান থেকে কোন পরিবহন ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। ঢাকার প্রবেশ মুখগুলোতে রাজধানীমুখী মানুষ ও যানবাহনে ব্যাপকভাবে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তল্লাশি ছাড়া কাউকেই শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে কোনো লঞ্চ না ছাড়ায় সকাল থেকে সেখানে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা ফিরে যাচ্ছেন। সেখানে চরম দূভোগে পরেছেন সাধারন যাত্রী। ঢাকার ভেতরে হাতে গোনা কয়েকটি গণপরিবহন চলায় দূভোগ চরম মাত্রায় পৌছায়। একটি বাসের জন্য অফিস গামি মানুষের অপেক্ষা, এবং অপেক্ষায় হতাশ হয়ে হাটা পথে অফিসে যেতে দেখো গেছে। সন্দেহভাজদের তল্লাশী চলছে সব এলাকায় রাস্তায়। সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবড়ী মোড়ে সিএনজি রিকশা ছাড়া আর কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। বেশির ভাগ লোকজনকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। গাবতলী এলাকা দিয়ে খুব অল্পসংখ্যক যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপক তল্লাশি চারিয়েছে পুলিশ। ঢাকার বাইরে থেকে আসা অফিসগামী যাত্রীদের গাবতলী এলাকায় নামিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। তল্লাশির সময় পরিচয়পত্র কিংবা গন্তব্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাতে ব্যর্থ হলে যাত্রীদের ঢাকায় ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।