আমি যেখানে বসবাস করি, সেখানে একাকীত্ব নামক বিলাসিতায় গা ভাসানো অসম্ভব। এই যে ধরেন, সকাল সকাল উঠে বাথরুমে প্রবেশ করলাম, সারারাত ধরে আমার অপেক্ষায় থাকা মশকীরা একত্রে আমারে দেখে গুন গুন করে গান গেয়ে উঠলো - ' আও না, পাস আও না ...' আমি অবশ্য আজকে সতর্কই ছিলাম। বেরসিকের মত হাতে বাথরুমেও নিয়ে গিয়েছিলাম মশকী নিধনের একটি ইলেকট্রিক ব্যাট।
.
বাথরুমে পা রেখেই ভীমের গদার মত উক্ত ব্যাট মাথার উপর কয়েকবার ঘুরাবার ফলে মশকী গোষ্ঠীরা কিছু সঙ্গীসাথী প্রাণহারায় এবং তাদের মধ্যে হতাশার সঞ্চার হয়। প্রাথমিক সাফল্যে আপ্লুত আমি হাইকমোড নামক সিংহাসনে সমারুঢ় হই। কিন্তু খেয়াল করি , উক্ত মশকীবৃন্দ বিবিধ দূরবর্তী স্থানে বসে আমার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
.
কিছুক্ষণ পর, তাদের গ্রুপের একটি মশকী আমার দিকে জেট প্লেনের মত ডানে বামে নড়ে চড়ে উড়ে উড়ে এগিয়ে আসলে আমি একটি আমার হাতের ব্যাটের একটি সার্থক বাড়িতে তাকে ভূপতিত করি। কিন্তু সারারাত ধরে সার্ভিস দেয়ার পর চার্জ না খাওয়ানোর ফলে আমার ব্যাটটা তাকে পুরোপুরি নিহত করতে পারে নাই। উক্ত মশকী মাথাপাগলার মত বেশ কয়েকটা চক্কর দিলো মাটিতে পড়ে। সেকেন্ড পাঁচেকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে পাবার পর সে সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় হামলে পড়লো আমার পায়ের উপর, রক্তপানের নিমিত্তে। এবার আর ব্যাটের উপর নির্ভর না করে আমি আদিম পন্থায় হাতের নিখুঁত এক চপাটে তার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেই এবং তার সংক্ষিপ্ত ইহজীবনের ইতি টেনে দিই। মারা যায় উক্ত মশকী। কিন্তু তার সংগ্রামময় জীবন আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়া গেল সকাল সকাল।
.
আমাদের মধ্যেও যারা জীবন নামক ইলেকট্রিক ব্যাটের বাড়ি খাবার পরেও উক্ত মশকীর মত প্যাশান নিয়ে জীবনের কাঙ্খিত লক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি, তারাই জীবনে সফলে হই। হয় সাফল্য অর্জিত হয়, নতুবা আমরা মারা যাই, কিন্তু প্রতিপক্ষের সম্মান অর্জন করে। আমাদের মৃত্যু, আমাদের আত্মত্যাগ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে উদাহরণ হয়ে থাকে
সংগ্রামী নিম্নবর্গীয় স্পিসিসের মৃত্যুতে অপর এক বুর্জোয়া স্পিসিসের তরফ থেকে লাল সালাম।