somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তার কারখানা ৭ঃ 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' এর ৩০০ বছরের পথ পরিক্রমণ

০৪ ঠা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা পরিসদের ফেসবুক পেইজের কাভার ফটো

১।

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে, খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা তাদের ফেসবুকের পোস্টে 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করা শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে এই বাক্য বাংলা না। সারা বছর আমাদের ভাষার ব্যবহার নিয়ে অবস্থান যাই থাকুক, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের একটা আলাদা সচেতনতা থাকে সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করার। এমন সময়ে, ডিজিটাল প্লাটফর্মে এমন একটা শ্লোগানকে হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা, যা হয়তো আরবি, বা ফার্সি, অথবা উর্দু (আমার ভাষা বিষয়ক সংকীর্ণতার কারনে নিশ্চিত হতে পারছি না), কারন কি হতে পারে?

ফ্রেইজটা গুগল করলে মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত অফিশিয়াল পেইজের একটা লিঙ্ক এলো। সেই লিঙ্কের সূত্রে পাওয়া পোস্টে জানা গেলো, মাওলানা ভাসানি নিজের বক্তৃতায় প্রায়ই এই বাক্যটা শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতেন। 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' শ্লোগানটার কাব্যিক বাংলা অনুবাদ এরকম - 'বিদ্যমান সকল শোষণ ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও'।

সোশ্যাল মিডিয়ায় গণ সংহতির পেইজে ঘোরাঘুরি করে দেখলাম, বিগত কয়েকমাস ধরে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, এবং ডিজিটাল অ্যাক্টে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ইস্যুতে তারা রাজপথে সোচ্চার। তাদের মধ্যে অনেকেই এই শ্লোগান, বা শ্লোগানের বঙ্গানুবাদকে ব্যবহার করে সরব হয়েছেন রাজপথে।

মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত পেইজ থেকে শেয়ারকৃত স্ট্যাটাসের সূত্রে আরও জানা গেলো, ভাসানি এই শ্লোগানের জন্মদাতা নন। বিদ্যমান জুলুম নিপীড়ন ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দেয়ার আওয়াজ জিনি তোলেন, তার নাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ)।

২।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রঃ, (১৭০৩ - ১৭৬২) - এর নাম প্রথম শোনা স্কুলজীবনে। তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন, যখন ক্লাস নাইনের থাকতে, মাধ্যমিক সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরোধী গ্রাসরুট আন্দোলনগুলির একটা হিসেবে উল্লেখ করা হয় মুসলিম ফকির সন্ন্যাসীদের আন্দোলনকে। সে টেক্সট বইয়ে মীর নিসার আলী তিতুমীর (১৭৮২ - ১৮৩১), হাজী শরিয়তুল্লাহের( ১৭৮১ - ১৮৪০) উপর আলাদা অনুচ্ছেদ ছিল, যেমন ছিল মাষ্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতার ওপর।

তিতুমীরের জীবনীর আলোচনায় সংক্ষেপে একটা নাম আসে, যার মতাদর্শ দ্বারা তিতুমীরকে প্রভাবিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি হচ্ছেন, শাহ আহমদ শহীদ বেরেলভী (১৭৮৬ - ১৮৩১) । শাহ আহমদ শহীদ বেরেলভীর ব্যাকগ্রাউন্ড ট্রেস করে পাওয়া যায়, তিনি ছিলেন দিল্লীর শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রঃ (১৭৪৬ - ১৮২৪) এর ছাত্র।

শাহ আবদুল আজিজ সাহেব, শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের পুত্র, এবং স্থলাভিষিক্ত দেহলভী (দেহলভী অর্থ 'দিল্লীর' ) মুহাদ্দিস, বা হাদিসের শিক্ষক, যিনি ব্রিটিশ ভারতকে দারুল হারব বলে ফতোয়া দেন, এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়াকে ভারতীয় মুসলমানদের জন্যে প্রয়োজনীয় বলে ঘোষণা করেন।

এভাবে, শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ) এর সঙ্গে আমাদের বাংলা অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসীদের একটা সরাসরি সূত্র তৈরি হয়। সূত্র তৈরি হয় অভিন্ন পরিচয়ে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের।

"শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব মুহাদ্দিসে দেহলভী - শাহ আবদুল আজিজ সাহেব - সৈয়দ আহমদ সাহেব শহীদ - সৈয়দ ইসমেইল সাহেব শহীদ - বালাকোটের ময়দানে শিখদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় - সিপাহী বিদ্রোহ - থানাভবন, সাহারানপুর এলাকায় সংঘটিত ব্রিটিশ বিরোধী শামলির যুদ্ধ - হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী - হাফেজ যামেন শহীদ - মাওলানা কাসেম নানুতবী - মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি - দেওবন্দ মাদ্রাসা - মাওলানা ভাসানি" এই চেইনে ফুক্কা কুল্লে নেজামিন শ্লোগান আজকের গণ সংহতি আন্দোলনের মুখে।

৩।

কোন প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' , বা 'বিদ্যমান সকল শোষণ গুঁড়িয়ে দাও' বাক্যটি প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন, তার ব্যাপারে দু' একটি কথা বলা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

মাওলানা ভাসানির পেইজ থেকে শেয়ার করা পোস্ট দাবী করে এই মতবাদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী সাহেব প্রদান করেন ১৭৪৮ সালে। অপরদিকে বাংলাদেশের লেখক মনযূর আহমাদ, ভারতের মাওলানা উবাইদুল্লাহ সিন্ধী সাহেব বিরচিত শাহ ওয়ালীউল্লাহের সিয়াসতি (রাজনৈতিক) মতবাদ সংক্রান্ত বইয়ের বরাতে উল্লেখ করেন, শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব এই 'ফুক্কা কুল্লে নেজামিন' বা, 'ফুক্কা কুলা নিজাম' মতবাদের প্রবর্তন করেন ১৭২৮ - ২৯ খৃস্টাব্দে, যখন তিনি মাতৃভূমি ভারত ছেড়ে আরব ভূখণ্ডের হিজাজে ২ বছরের জন্যে গমন করেন হজ্জ, হাদিস শিক্ষা, আত্মিক ও আধ্যাত্মিক সাধনে উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের জন্যে। পৃথিবীর নানা অঞ্চল থেকে আসা মুসলিমদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, তাদের স্ব স্ব দেশের রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক - ধর্মীয় - আধ্যাত্মিক অবস্থার ব্যাপারে ওয়াকেফহালিয়ত তাকে ভারতে সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের চিন্তাধারার দিকে নিয়ে যায়।

ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের এই মতবাদের পেছনে প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করে সম্রাট আওরাঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারতভূমে উদ্ভূত অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তারমধ্যে আছে মুঘল সাম্রাজ্যে বিদ্যমান শিয়া - সুন্নি বিভেদ, একেরপর এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে ১৭০৭ থেকে ১৭৫৭ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০ জন সম্রাটের পালাবদল, যাদের মধ্যে কেবল ৪ জনের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছিল, বিভিন্ন রাজ্যের সুবাহদাররা দিল্লীর কেন্দ্রীয় শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের স্বাধীন শাসক হিসেবে ঘোষণা করা, দক্ষিণ ভারতে মারাঠা বিদ্রোহী শক্তিসমূহের এক সংঘবদ্ধ রূপ ধারন, দিল্লীর উত্তর পূর্বাঞ্চলে রোহিলা পাঠানদের স্বাধীনতা ঘোষণা, দিল্লীর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে জাঠদের শক্তিবৃদ্ধি, এবং দিল্লীর উত্তর পশ্চিমে শিখ খালসার এক প্রবল শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিরূপে আবির্ভাব। এরই মধ্যে ইরানী নাদির শাহ, আর আফগানি আহমদ শাহ আবদালির মুহুর্মুহু ভারত আক্রমণ যাতে হিন্দু - মুসলিম জনসাধারণের জীবন প্রায় একইভাবে আক্রান্ত হয়।

এই প্রেক্ষিতে, "ফুক্কা কুল্লে নেজামিন" মতাদর্শের বিস্তারিত - বিস্তৃত দার্শনিক ব্যাখ্যাসম্বলিত বই "হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা" তে শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব তার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মৌলিক মানবাধিকার, পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতি সংক্রান্ত দর্শন তুলে ধরেন। এই গ্রন্থের 'সিয়াসাতুল মদিনা' বা 'নগর প্রশাসন' নামক অধ্যায়ে তিনি রোম/ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, এবং প্রাচীন ইরানের সম্রাটদের জাঁক- জমক, বিলাসব্যাসন, প্রজাদের উপর অত্যাচার ও অন্যায়ভাবে কর আরোপের উদাহরণ দেখান, তার সঙ্গে তৎকালীন (১৮শ শতকের আওরাঙ্গজেব পরবর্তী) ভারতের শাসকদের তুলনা করেন, এবং উল্লেখ করেন, এই যুগে ( অর্থাৎ তার যুগে) রাষ্ট্রের অধঃপতন ঘটবে মূলত দুটি কারনে -

এক, বিশেষ কোন কাজকর্ম না করে, যোগ্যতার পরিচয় না দেখিয়ে বংশানুক্রমে, বা বৈশিষ্ট্যানুসারে পদ - প্রতিপত্তি, ও ধন সম্পদের অধিকারী হওয়া। যেমন রাজার অযোগ্য সন্তানের রাজা হওয়া, উজির , সুবাহদারদের অযোগ্য সন্তানদের পিতার স্থলাভিষিক্ত হওয়া, পীরের ছেলে গদ্দিনশিন পীর হওয়া ইত্যাদি।

দুই, রাজন্যবর্গের বিলাসব্যাসনের চাকা সচল রাখতে কৃষক, বণিক, কারিগরি ও হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের ওপর ভারী অঙ্কের করারোপ, এবং কর আদায়ে অত্যাচারের আশ্রয় নেয়া।

এছাড়াও, মালিক - শ্রমিক সম্পর্কের আলোচনায় শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব তার হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাতে এমন অনেক বক্তব্য রাখেন, যার মূল সুর অনুরণিত হয় তার প্রায় একশো বছর পর কার্ল মার্ক্স - এঙ্গেলস প্রণীত ডাস ক্যাপিটালে, যদিও তার অর্থ এ নয় মার্ক্স - এঙ্গেলস শাহ ওয়ালীউল্লাহের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

মার্ক্সের চিন্তা, আর শাহ সাহেবের চিন্তার এপিস্টেমোলজিও ভিন্ন।

মাওলানা ভাসানির পেইজ থেকে শেয়ার করা পোস্ট থেকে যদি কোট করি -

"শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রঃ) এবং কার্ল মার্ক্সের মতবাদের এক জায়গায় বিশাল পার্থক্য- ধর্ম। তাঁরা যার যার সময়ে, নিজ নিজ দেশে, আপন ভঙ্গিমায়, নিজস্ব ভাষায় নিজের মতবাদটি ব্যাখ্যা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন।"

অর্থাৎ, মার্ক্সের চিন্তা ইউরোপিয়ান মূলধারার দার্শনিকদের সূত্র হতে উৎসারিত, যেখানে শাহ সাহেবের চিন্তার এপিস্টেমলজিক্যাল রুট ইসলামি থিওলজিক্যাল স্ক্রিপচারস। ভিন্ন ভিন্ন সমাজবাস্তবতায় তারা নিজ নিজ মতামত প্রদান করেছেন, দাঁড়িয়েছেন লুণ্ঠিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে।

মাওলানা ভাসানির রাজনীতির সার, তার ফেসবুক পৃষ্ঠার উক্ত পোস্ট দাবী করে, শাহ সাহেবের হুজ্জাতুল্লাহিত বালেগার ফুক্কা কুল্লে নেজামিনের সঙ্গে মার্ক্স এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর শেষ লাইন - 'ওয়ার্কিং মেন অফ অল কান্ট্রিস, ইউনাইট!' বা 'দুনিয়ার মজদুর এক হও' - এই দুই স্লোগানের সংমিশ্রণ। যেহেতু শহুরে বিলাসপ্রবণ, পিছুটান সম্বলিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী সংগ্রামে লিপ্ত হবে না, ধনিক পুঁজিপতি শ্রেণী ঘৃণার চোখেই দেখবে শ্রেণী সংগ্রাম, মাওলানা ভাসানির চিন্তা ছিল বাংলা ভূখণ্ডের খেটে খাওয়া কৃষক - শ্রমিক গোষ্ঠীর উপর। তাদের ধর্মবিশ্বাস থেকে বের করে আনার বদলে তাদের ধর্মবিশ্বাসকেই শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছিল তার 'হুকুমতে রব্বানিয়া' - র মূলনীতি

মাওলানা ভাসানি বলেন -

"কমিউনিস্টরা ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ কামনা করেন বটে, কিন্তু তাহাদের মতে উহা আল্লাহর নামে না হইয়া রাষ্ট্রের নামে হইতে হইবে। আলেম-ওলামারা সকল কিছুতে আল্লাহর মালিকানা মানিয়া লইয়া থাকেন বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানার উচ্ছেদ কামনা করেন না। এইভাবে হুকুমতে রব্বানিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী দুইটা মতবাদ রহিয়াছে, ইহা আমার অনুসারীদের বুঝিয়া লইতে হইবে।"

অর্থাৎ, কমিউনিস্টদের রাষ্ট্রের নামের জায়গায় আল্লার নাম প্রতিস্থাপন, আর মাওলানাদের ব্যক্তিসম্পত্তির ওপরে আল্লার মালিকানা, বা আল্লার ভূমিহীন বান্দাদের, বা জনগনের মালিকানা প্রতিষ্ঠা - এভাবে ইউরোপিয়ান ভূমিতে জন্ম নেয়া সমাজতান্ত্রিক মতবাদের সঙ্গে রবুবিয়তের মাসলাক মিলিয়ে মাওলানা ভাসানি মাথা উঁচু করে দাঁড়ান।

৪।

ভাসানি সাহেবকে ভাসানির মাওলানা বলা হলেও রাজনীতিতে তিনি জলে ভাসা পদ্ম ছিলেন না। নিজের দেশের মানুষের পালস হাতের তালুর রেখাসমূহের মতই বুঝতেন। যেকোনো একটি শ্লোগান যখন তিনি ইতিহাসের পাতা থেকে খুঁজে বের করে এনে প্রাসঙ্গিক করতেন, সে শ্লোগানের উদ্গাতা শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেব, এবং তার রাজনীতি - মতাদর্শকে মাওলানা ভাসানি জানতেন না, বা বুঝতেন না - এটা বিশ্বাস করতে আমি রাজি নই।

প্রশ্ন হচ্ছে, #ফুক্কা_কুল্লে_নেজামিন শ্লোগানটি তার অভ্যন্তরীণ বিপ্লবী শক্তির সঙ্গে যে ইতিহাস, যে মতাদর্শকে বহন করে আনে, তার নির্যাস নতুন করে ঝেড়ে মুছে নিজেদের জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করতে বাংলার মানুষ, যারা রাজপথে সংগ্রাম করছে, তারা প্রস্তুত আছে কি না।

নিজের ধর্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়াকে লজ্জাজনক, পশ্চাৎপদ, মধ্যযুগীয়, অনাধুনিক বেদুইন বর্বরতা হিসেবে দেখা এক কিম্ভূতকিমাকার সময়ে বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী কী পারবে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রঃ) -এর সঙ্গে নিজের নাড়ির যোগ খুঁজে নিতে? নাকি শেকড় অস্বীকার করে স্রেফ শাখা প্রশাখা নিয়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে নিজের দায় সম্পন্ন হয়েছে বলে তারা মনে করবে?

#ফুক্কা_কুল্লে_নেজামিন - এর তিনশত বছরের পথ পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে তার পরিণতির দিকেও থাকবে আমাদের উৎসুক চোখ।



ছবিঃ মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এলাকার দেয়াল লিখন

তথ্যসূত্র, ও পরবর্তী পড়াশোনার জন্যে -

১। বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চা, ইসলামি শিক্ষা, ও সমাজ বিপ্লবের জনক শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র: ) -মনযূর আহমাদ, মাকতাবাতুত তাকওয়া
২। হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ - ডঃ মোঃ আকরাম নাদভী, ডিন, ক্যামব্রিজ ইসলামিক কলেজ - view this link
৩। মাওলানা ভাসানির রচনা - খান মাহবুব, পলল প্রকাশনী
৪। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি - সৈয়দ আবুল মকসুদ, আগামী প্রকাশনী
৫। ফকিহুন নফস রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহি, জীবন ও কর্ম - মাওলানা আশিকে ইলাহি মিরাঠী, মাওলানা নিজামুদ্দিন আসির আদরবি (কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক অনূদিত), মাকতাবাতুল হেরা
৬। দেওবন্দ আন্দলনঃ ইতিহাস - ঐতিহ্য - অবদান (বেফাকের পাঠ্যপুস্তক), আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আল আমীন রিসার্চ অ্যাকাডেমি
৭। মাওলানা ভাসানির নামে পরিচালিত অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ - view this link


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:০৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×