আমরা, বাংলাদেশে জন্ম নেয়া মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা কি কি মূল্যবোধের মধ্যে বড় হই?
.
সদা সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা, পড়াশোনা করা, গুরুজনকে সম্মান করা, তাদের সঙ্গে বেয়াদবি না করা, নিজের সাধ্যের বাইরে কোন স্বাদ আহ্লাদ না রাখা, ধর্মকর্ম করা, মানুষের সঙ্গে ভদ্রভাবে - হাসিমুখে কথা বলা।
.
এগুলোই তো, মোটামুটি, নয় কী?
.
এখন একটু চিন্তা করুন, চিন্তা করুন বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। রুট লেভেল যারা রাজনীতি করে, ধরেন আপনার এলাকার কাউন্সিলর, ওয়ার্ড কমিশনার, এমপি। স্থানীয় বিবিধ রাজনৈতিক দলের ছাত্র, যুব সংগঠনের নেতা। যেকোনো দলের। ক্ষমতাসীন, বিরোধীদল নির্বিশেষে।
.
এই সমস্ত পদে যারা আছেন, আপনার অভিজ্ঞতা, এবং বিবেকবুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা করে দেখুন - সদা সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা, পড়াশোনা করা, সাধ্যের বাইরে স্বাদ আহ্লাদ না রাখা, ইত্যাদি কী তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য?
.
যদি আপনি রাজনীতি করতে চান, তবে আপনাকে গুরুজনকে সম্মান যেমন করতে হবে, তেমনি দেশের সর্বোচ্চ গুরুজন যারা, তারা ভুল পথে আপনাকে , আপনার দেশকে পরিচালিত করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভদ্রভাবে, হাসিমুখে কথা বলা যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি, রাজনীতি করতে হলে প্রয়োজনে চোখ গরম করে উঁচু স্বরে কথা বলাও শিখতে হবে।
.
আর ধর্ম-কর্ম পালনের কথা যদি বলি, প্রকৃত ধার্মিক যদি আপনি হন, তৃতীয় বিশ্বের কোন অনুন্নত রাষ্ট্রে আপনার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব হবে না। আপনি চেষ্টা করতে পারেন, রাজনীতি করার, কিন্তু আপনি টিকে থাকতে পারবেন না। আপনার পেছনে, আপনার নীচে যারা থাকবে, যারা আপনাকে ঘিরে ধরে, ঠেলে সামনে বাড়িয়েছে, উপরে তুলেছে, তারা তাদের বখরা বুঝে নিতে চাইবে। আর আপনি তাতে বাঁধা দিলেই আপনি তাদের শত্রু। আপনাকে মুহূর্তের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিতে তারা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।
.
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমারও কোন সক্রিয় অংশগ্রহণ নেই, কাজেই পলায়নপর মধ্যবিত্তদের কাতারে আমিও। এ সূত্রে আমিও সমালোচনার বিষয়বস্তু হতে পারি, কিন্তু, আমার স্বপক্ষে আমার এতটুকু বলার আছে যে, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে সচেতনভাবে চিন্তা করে আসছি যে, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় কেন রাজনীতি সচেতন না। কেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো বামপন্থী ধারার লেখকরা আমাদের মতো ছাপোশ মধ্যবিত্তদের এতো অপছন্দ করেন। এতো গালাগাল করেন।
.
তার কারন হয়তো আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের আজন্ম লালিত মূল্যবোধ সমূহই। জীবনে কখনো কখনো যে রুখে দাঁড়াতে হয়, কখনো কখনো গুরুজনদের চোখেও চোখ রেখে কথা বলতে হয়, কখনো কখনো নিজেকে বলা লাগে, আমি আমার সাধ্যের বাইরে গিয়েও চাইবো, কারন আমি নিজের জন্যে না, চাইছি আমার অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে, আমাদের দেশের জন্যে, তাই স্কাই ইজ মাই লিমিট - এ জ্ঞানটুকু আমাদের মস্তিষ্ক থেকে স্রেফ খুলে নেয়া হয়েছে ছোটবেলাতেই, কম্পিউটারের মেমোরি মুছে দেয়া হয় যেভাবে।
.
যতদিন পর্যন্ত মধ্যবিত্তদের আদর্শলিপির তালিকা থেকে এই টিপিকাল মাইন্ডসেট না বদলাবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সচেতন অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হবে না। তাদের রাজা উজির মারা সীমাবদ্ধ থাকবে চায়ের দোকানের টং, পরিবারের আড্ডা, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:১৬