somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি গোলাপ ভূ-তলে পতিত হবার ইতিহাস / গোলাপ ভাইয়ের পাঁচালী

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। তখনো ঘরে ঘরে বোলগ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু হয় নাই। তেমনই এক সময় বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ নামক জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন একটি পুত্র শিশু, যাকে নিয়ে আমাদের আজকের পাঁচালী। তিনি জন্মগ্রহণ মাত্রই ওয়া ওয়া চিৎকার ছাড়িয়া জানাইতে চাহিয়াছিলেন যে , আমি আসিয়াছি তোমাদের জীবনের আরাম এইবার হারাম করিয়া ছাড়িব। কিন্তু নবজাতকের আগমনে বাড়ির সকলে এতটাই খুশি ছিলেন যে এই ওয়া ওয়া’র নিগুঢ় অর্থ কেহ অনুধাবন করিতে পারেন নাই। উপরন্তু তখন বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি বিতরণের হিড়িক পড়িয়া যায়। ফুটফুটে গোলাপের মতো বদন ছিলো বলিয়া পিতা-মাতা তাহার নাম রাখিলেন - গোলাপ।




যাহোক, পিতা-মাতার অন্ন ধ্বংস করিয়া নবজাতক ধীরে ধীরে বড় হইয়া উঠিতে লাগল। এবং পাড়া-প্রতিবেশীরা তাহার বাঁদরামির ফলাফল হাতে নাতে প্রত্যক্ষ করিতে শুরু করিল। শোনা যায়, হাটিতে শিখিবার কিছুদিনের মধ্যেই নাকি পাড়াপ্রতিবেশীর ফলবাগানে তাহার বিরূপ-প্রভাব শুরু হইয়াছিল। এবং তাহারা শিশু গোলাপের বাড়িতে নানা অভিযোগ নিয়ে আসিতেন।



এভাবে সময় অতিক্রান্ত হইতে থাকিলে গোলাপের বাঁদরামি চরমে উঠিল। প্রতিবেশীর পুকুর, ফলবাগান, ঘরের চাল ইত্যাদিতে গোলাপ স্বীয় বাঁদরামির সাক্ষর রাখিতে থাকিল। কিছুদিনের মধ্যেই সে গ্রামের বাঁদর ছেলেপেলেদের সর্দার ‘গোলাপ ভাই’ হইয়া উঠিল। তখন তাহার পিতা-মাতা অতিষ্ট হইয়া তাহাকে স্কুলে ভর্তি করিয়া দিলেন। স্কুলে গিয়া তিনি ‘এক কাঠি সরেস’ হইয়া উঠিলেন। শিক্ষকের দিকে না থাকাইয়া তিনি ক্লাসের সুন্দরী সহপাঠীদের দিকে হা করিয়া তাকাইয়া থাকিয়ে কিসের যেন পাঠ নিতেন। বাড়িতে যথারীতি আবার অভিযোগ পৌছাইল। তখন গোলাপ ভাইয়ের বাবা স্থির করিলেন ছেলেকে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও কলেজে ভর্তি করিয়া দিয়া তাহারা বিদেশগমন করিবেন।




ঢাকায় আসিয়া গোলাপ ভাই যেন এতদিনে স্বর্গের সাক্ষাৎ লাভ করিলেন। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু বিজ্ঞান তাহাকে গ্রাস করিতে পারে নাই। কোনোদিনও মনে প্রাণে তিনি বিজ্ঞানকে গ্রহণ করিতে পারেন নাই। তাই পাঠদানের সময় সহপাঠী সুন্দরীদের মেঘবরণ ঘনকালো কেশের ভেতর কবিতা খুঁজিয়াই তিনি কলেজ জীবন শেষ করিতে থাকিলেন।




অতঃপর একদিন আসিল সেই অন্তিম মূহূর্ত। গোলাপ ভাই একদা নীলফামারীতে স্বীয় প্রতিভার সাক্ষর রাখিতে গমন করিয়াছিলেন। সেই ক্ষণে এক অপরূপা সুন্দরীর রূপ দর্শন করিয়া তাহার যেন কি হইতে কি হইয়া গেল, উনি নিজেও কিছু বুঝিলেন না। দুই দিন পর হুশ ফিরিলে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে শুধু গো গো করিয়া বলিয়াছিলেন, - চাইলাম, আর সব ধান্দা বাদ দিয়া আমি শুধু উহাকেই চাইলাম। বন্ধুরা গোলাপ ভাইয়ের অবস্থা বেগতিক দেখিয়া সেই অপরূপা সুন্দরী নারীর নিকট অতিসত্ত্বর যোগাযাগ স্থাপন করিলেন। তারপর সেই মহিয়সী গোলাপ ভাইয়ের সুন্দর মুখশ্রী আর অন্তরের কবিত্বের সন্ধান পাইয়া তাহার প্রেমের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। গোলাপ ভাই তখন বত্রিশ দন্ত বিকশিত করিয়া বলিলেন – আহা, পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম।
তারপর দিবস রজনী নিজ নিয়মে অতিবাহিত হইতে হইতে কোন দিক দিয়ে যে প্রেমের বয়স চারি বৎসর কাল অতিবাহিত হইলো তাহারা কেহই ঠাহর করিতে পারিলেন না। কিন্তু গোলাপ ভাই ঠিকই বুঝিতে পারিলেন, এবার জাহাজ নৌংগর করিতে হইবে।



আকস্মাৎ বাড়িতে প্রস্থান করিয়া তিনি একদিন সশব্দে আপন বিছানা করাত সহযোগে ভস ভস শব্দ করিয়া দুই ভাগ করিতে শুরু করিলেন। তৎক্ষণাৎ তাহার বিচক্ষণ চাচা-চাচী(পিতা-মাতা গোলাপ ভাইকে চাচার জিম্মায় রাখিয়া বিদেশগমন করিয়াছিলেন) পুত্রের মনের ইচ্ছা সম্বন্ধে জানিতে পারিয়া মুচকি হাসিয়া বলিলেন, গোলাপ, বিবাহ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? ’
গোলাপ ভাই বলিলেন, চাচাজান, বিবাহ একটি অতি উত্তম কার্য। আমি ইহা সঠিক সময়ে আমার উপযুক্ত ও নির্বাচিত পাত্রীর সাথেই করিতে ইচ্ছা পোষণ করি।
গোলাপ ভাইয়ের চাচাজান বাকরুদ্ধ হইয়া গেলেন বটে, কিন্তু তিনি ভাতিজার সাহসেরও তারিফ করিলেন। বলিলেন, আচ্ছা, সে দেখা যাবে। তারপর উভয় পক্ষের মুরুব্বীরা সম্মত হইলে খুশিতে গোলাপ ভাইয়ের রাত্রির নিদ্রা শিকেয় উঠিল।

তৎপরবর্তী ঘটনা এক ইতিহাস। যথাসময়ের অনেক আগেই গোলাপ ভাইয়ের বিবাহ হইয়া গেল। এবং বিবাহের কিছুকাল বৎসরকাল পরেই গোলাপ ভাইয়ের ঘর আলো করিয়া ফুটফুটে একটা পুত্র সন্তান আসিল। তখন গোলাপ ভাই বুঝিতে পারিলেন , যাহা ভাবিয়াছিলাম, তাহা নয়, সংসার বড়ো কঠিন। পদে পদে দায়িত্ব আসিয়া ছোবল মারিতে চায়।




তখন তিনি ভাবী ও সন্তানকে নীলফামারীতে দুঃখের নীল সাগরে ডুবাইয়া রাখিয়া ঢাকায় আসিয়া একটি বাসা ভাড়া করিলেন। ততদিনে পৃথিবীতে বোলগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানোর সুবিধা আসিয়া পড়িয়াছে। মনের দুঃখের কথা জানাইতে তখন গোলাপ ভাই সামহোয়্যার ইন ব্লগে একটি ‘আমিনুর রহমান’ নামে একটি নিক খুলিলেন। এবং মনের সকল বেদনা জাতিকে জানাইয়া একটু শান্তি পাইতে চাহিলেন।
শোনা যায়, গোলাপ ভাই এখনো পরিবার ও পারিবারিক দায়িত্ব হইতে শতহাত দূরে থাকিবার ধারা বজায় রাখিতেছেন। এও শোনা যায়, নিন্দুকের মুখে কুলুপ আঁটিতে তিনি এখন নানা ধরণের সামাজিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখিতে মনস্থির করিয়াছেন।
তবে আমরা খবর পাইয়াছি আজ সেই বিখ্যাত গোলাপ ভাইয়ের বিবাহ-বার্ষিকী। তাই গোলাপ ভাইয়ের কেচ্ছা জাতিকে জানাইবার প্রয়াস পাইলাম। আশাকরি, এই পাঁচালী পাঠে গোলাপ ভাই সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করিয়া তাহার নিকট হইতে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করিতে জাতি সচেষ্ট হইবে।




প্রচারে আমিনুর ভাইয়ের শুভাকাঙ্ক্ষী
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩৮
৫০টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×