বাংলাদেশে ডিস ক্যাবল এন্টেনা এর গ্রাহক কত? দশকোটি/বার কোটি এর বেশি হওয়ার কথা নয়। তার মধ্যে আবার ভারতীয় চ্যানেল এর ভক্ত অর্ধেকও হবে না কম হবে। কিন্তু ডিস ব্যবসায়ী কয়জন? দশলাখ? কোন ভাবেই নয় সর্বোচ্চ দুই তিন লাখ হলে হতে পারে। তাহলে দেশে ভারতীয় চ্যানেল (বিশেষ কয়েকটা)/ ভারতীয় সিরিয়াল বন্দ করার জন্য এত আন্দোলন, এত কথা, এত আইন করার কি কোন দরকার আছে? দশকোটি বা তার অধিক মানুষকে সচেতন করার চেয়ে দুই তিন লক্ষ্য মানুষকে সচেতন করা সহজ।
এই ডিস ব্যবসায়ীরা যদি ভারতীয় এই গুটি কয়েক চ্যানেলগুলো বন্দ করে দেয় তাহলেই সমাধান হয়ে গেল। এই জন্য তাদের ব্যবসা যে বন্দ হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়, ভারতীয় কিছু চ্যানেল এর জন্য মানুষ নিশ্চয় অন্য সব চ্যানেল দেখা বন্ধ করে দিবে না।
বিটিআরসির একটা কাজ আছে, ইউটিউব বা অন্য ভিডিও সাইটগুলোতে যাতে এই সব সিরিয়াল দেশে ঢুকতে না পারে বা ঐ সব চ্যানেলগুলোর সাইট ব্যান করে দিতে পারে। সমাধান হয়ে গেল। এত মাথা ঘামানোর কি দরকার আছে।
আচ্ছা এই টপিক বাদ। তারচেয়ে চলুন ভারতীয় মিডিয়ার কিছু পজেটিভ দিক খুজে বের করি।
একটা দেশের মিডিয়াকে বলা হয় সবচেয়ে বড় যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রচার মাধ্যম। মিডিয়াই পারে একটা দেশকে অন্যদেশের সামনে ভাল মন্দ দুই ভাবেই উপস্থাপন করতে। আবার সেই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনীতিক অবস্থা তুলে ধরতে। পারে অন্যকে দেশের প্রতি আকৃ্ষ্ট করতে।
আপনি কি জানেন? ভারত তাদের মেধা দিয়ে বিশ্ব শাষণ করছে। আপনি কি এটাও জানেন যে ভারত হচ্ছে সবচেয়ে বড় স্বার্থপর জাতি? এটা দোষের কিছু না বরং দেশের জন্য ভালো একটা দিক।
আপনি কি জানেন? ভারতীয়রা যদি আমেরিকাতেও থাকে তবু তারা নিজদেশের বাইরে পন্য ব্যবহার করে না।
আচ্ছা মাইকোসফট এর বর্তমান সিও এর দেশ কোনটা জানেন? এটা জানেন কি যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দশজন উপদেষ্টার মধ্যে তিনজন ভারতীয়।
আপনি কি এটা জানেন যে বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যে ভারতীয়দের অবস্থান অনেক বেশি।
আপনি জানেন কোন তিনটা দেশের বাজেট ট্রিলিয়ন ডলারে হয়? ভারত, চীন আর আমেরিকা।
এত উন্নতি করল কিভাবে? বেশ কিছু কারণ আছে।
বাংলাদেশের সাথে তুলনা করি।
বাংলাদেশ যেখানে শ্রমিক তৈরি করে সেখানে ভারত সিও তৈরি করে। বাংলাদেশে যেখানে হয় কলেজ, ভার্সিটি সেখানে ভারতে হয় ইনস্টিটিউড,ট্রেনিং সেন্টার।
বাংলাদেশে যেখানে ২৬-২৭ বছর বয়সে একজন গ্রেজুয়েট হয় আর অবস্থান হয় ম্যনেজার সেখানে ভারতে ২৩-২৪ বছর বয়সে হয় এমডি, আর ২৬-২৭ বছরে হয় সিও।
মিডিয়া ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির আরেকটা বড় কারণ। কিভাবে? চলুন এই বিষয়েই কথা বলব।
আমরা জানি ভারতের মিডিয়া বাজারে মূল কেন্দ্র হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে সার্কভুক্ত দেশগুলো। এই দেশগুলোতে ভারতীয় মিডিয়ার প্রচুর চাহিদা। আর এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ভারত কি পরিমাণ উন্নতি করছে আপনি চিন্তাই করতে পারবেন না।
ভারতীয়রা তাদের নিজস্ব চ্যনেল কয়টা দেখে বলতে পারবেন? দেখেনা বললেই চলে। আর এই যে বলিউড এর এত সুনাম, এত অর্থের ছড়াছড়ি কাদের জন্য জানেন? ভারতীয়রা বলিউডের কয়টা সিনেমা দেখে?
একটা কথা বলি, বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দিক্ষিত এর স্বামী উনাকে বিয়ের আগে কোনদিন হিন্দি সিনেমাই দেখেনি।
মুকেশ আম্বানী, রতন টাটা, কিংবা মাইক্রোসফট এর বর্তমান সিও সত্য নাদেলা তারা কেউ হিন্দি সিমেনা দেখেছে কিনা একটু খোজ নিয়ে দেইখেন।
আমি অস্বীকার করছি না যে ভারতীয়া সিনেমা দেখে না বরং বলছি দেখে কিন্তু কতজন? কোন পর্যায়ের মানুষেরা?।
ভারতীয় একটা সিনেমা নিজ দেশ ভারতে যতটা ব্যবসা করে তার থেকে চারগুন বেশি ব্যবসা করে বাইরের দেশগুলো থেকে। কর্পোরেট চিন্তা ভাবনা। বাদ দেই।
ভারত খুব সুক্ষ্ম চিন্তাবিদদের দেশ। তারা কোন কিছু একটা উদ্দেশ্যে প্রচার করে না।
ভারতীয়রা জানে উপমহাদেশের মানুষগুলো কেমন? তারা কি চায়? তাদের চাহিদা আর স্বপ্নগুলো কেমন।
এই যে বাজরাঙ্গী ভাইজান মুভি মুক্তি পেল তা নিয়ে ভারতে যতটা না আলোচনা হয়েছে তার থেকে বেশি বাংলাদেশে হয়েছে। কারণ কি জানেন? মুখে আমরা ভারত বিদ্বেষী হলেও অন্তরে আমাদের ভারত প্রীতি। কিছু বিষয় সুক্ষ্ম ভাবে এই সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে আর যা আমাদের দেশ সহ অনান্য দেশগুলো মুগ্ধ হয়ে গিলে খেয়েছে।
ভারতীয় সিরিয়াল নিয়ে কথা বলা শুরু করেছিলাম সেই বিষয়েই কথা বলি। আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে মেয়েরা ( কিছু ছেলেও আছে) ভারতীয় সিরিয়ালের অন্ধ ভক্ত। সিরিয়াল না দেখতে পারলে সুসাইড করে, খাওয়া বন্দ করে দয়ে, ডির্ভোস দেয়, আরো কত কি? সত্যিই সেলুকাস এই সব চরিত্রগুলো।
আপনি ভারতে যান, বিশেষ করে কলকাতায়। সেখানের মানুষগুলো কিন্তু এই সব বস্তা পচা সিরিয়ার দেখে না বা দেখলেও নিজেদের জীবনে টেনে নিয়ে আসে না। ভারতের রাস্তায় আপনি দেখতে পাবেন, মেয়েরা পুরুষের পায়ে পাড়া দিয়ে জীবনের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা বাইক চালায়, জিন্স পড়ে সাথে গেঞ্জি বা তাদের জন্য সহজবোধ্য পোশাক। কখনই তাদের দেখানো সিরিয়ালের সেই নারীদের অনুকরণ বা অনুসরণ করে না। শুরুতেই বলেছি নেগেটিভ চিন্তা করবেন না, পজেটিভলি ভাবুন।
ভারতীয় নারীরা এখন আর সেই ঘরের কোণে আবদ্ধ নারী নয়। তারাও পুরুষের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
আমাদের দেশের জন্য এই সব সিরিয়াল খুব সুন্দর ভাবে কিছু পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অস্পষ্ট ভাবে। যেগুলো সাধারণ চোখে কেউ দেখছে না কিন্তু সেই বিজ্ঞাপনগুলো গ্রহণ করছে।
ভারতীয়রাও জেনে শুনেই এর প্রচার করছে। কারণ তারা জানে কোন কাজ কিভাবে করলে তাদের লাভ হবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এখনো এক তৃতীয়াংশ নারীর অবসর সময় কাটে টিভি দেখে। আর এই অলস সময়টাতে তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা।
যাদের তেমন কোন কাজ থাকে না তারা খুব সৌখিন প্রিয় হয়। আর বাংলাদেশের নারীরা ত এই সৌখিনতায় তিনধাপ উপরে আছে। আর সৌখিনতাকেই কাজে লাগাচ্ছে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে অনুকরণ? এই কাজটা আমাদের দেশের মেয়েরা এতটাই ভালো পারে যে বিশ্বে যদি কোন অনুকরণ প্রতিযোগীতা হত তাহলে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথম হত।
এই সব সিরিয়াল দেখে আর তার অনুকরণ করার চেষ্টা করে।
আচ্ছা বাংলাদেশ বিশ্বে পোশাক রপ্তানীতে কত তম অবস্থান ধরে আছে? পোশাক রপ্তানী কারক দেশগুলোর প্রথমসারিতেই আছে।
যদি তাই হয় তাহলে বাংলাদেশ কেন অন্যদেশ থেকে পোশাক আমদানী করবে? করবে কারণ ব্যবসায়ীক চাহিদা আছে তাই। এই সব সিরিয়ালের একটা দিক হচ্ছে পোশাকের বিজ্ঞাপন।
একটা লেহেঙ্গার দাম ভারতে ৫০০ রুপি সেই একই লেহেঙ্গার দাম বাংলাদেশে এসে ৫০০০ টাকা। কেন? কারণ নাটকে দেখে মেয়েরা ঐটার জন্য পাগল। কিনবেই যে কোন মুল্যে। আরো কিছু কারণ আছে। কিন্তু চাহিদাটা বড় এখানে।
আচ্ছা একটা প্রশ্ন থাকল, যে দেশে তারা নিজেরই দাম দেয় না এমন বস্তাপচা জিনিস আমরা গিলে খাই কিভাবে?
ভারতীয় সিরিয়ালের আরো অনেক ইফেক্ট আছে আমাদের দেশে। অনেক মানুষই এইটা নিয়ে অনেক লিখালেখি করছে, ফেইজবুক, ব্লগ গরম বানিয়ে ফেলছে লিখে বিশেষ করে ঈদের আগে। তাই আর ঐ দিকে না যায়। বরং একটা সমাধান করার চেষ্টা করি।
ধরুন বাংলাদেশের সব মেয়েরা কাজ করছে ঘরে বাইরে সমান তালে? অথবা আমরা তাদের সুষ্ঠ বিনোদন দিতে পারছি তাহলে কি তারা সেই সব দেশের এইসব বস্তাপচা জিনিস দেখবে? দেখবে না।
পরনির্ভরশীল না হয়ে যদি আত্মনির্ভরশীল হয় তাহলে জীবনের অনেকটা অলস সময় বেচে যাবে এই সব নারীদের আর অলস সময় না থাকা মানেই এই সব অনুকরণ বন্ধ হওয়া।
আমরাও ত ভারতীয়দের এই সব পজেটিভ দিকগুলো গ্রহণ করতে পারি? তাই নয় কি?
আমাদের দেশের মিডিয়াগুলো যদি এই ভারত প্রীতি বন্দ করে দেশ প্রীতি বেশি প্রচার করত তাহলে অবস্থাটার উন্নতি হত খুব দ্রুত কিন্তু তা করে না বরং কোন বলিউড নায়িকা কত বার বিয়ে করছে? কোন নায়িকার স্ক্যান্ডল বের হল, ভারতের কোন রাজ্যে কি হচ্ছে তার খবর বেশি প্রচারে ব্যাস্ত।
শুরুতেই সিরিয়াল বন্দের একটা সমাধান দিয়েছি তাই আর এই দিকে কথা না বাড়াই। এমনিতেই পাঠকের ধৈয্যচুত্তি হয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ আমার স্যারের একটা কথা, ঢাকার যানজট দেখে মানুষ বিরক্ত হয়, হতাশ হয় আর আমি আশায় বুক বাদী। একটা দেশে যানজট হওয়া মানেই মানুষগুলো কাজ করার জন্যে বের হচ্ছে। যানজট মানেই দেশের উন্নতি হচ্ছে।
আমি বলি, আমরা আশাবাদী মানুষ, আমরা আশা করি দেশটার সত্যিই একদিন উন্নতি হবে। আর সেটা সম্ভব হবে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াসে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২০